বাংলা বসন্তে টিএসসির ডালে ডালে উড়ে এসে বসছে কোকিল,টিয়া, দোয়েল,শ্যামা,বউ কথা কও পাখির ঝাঁক।
পাখির কিচিরমিচিরে জেগে উঠেছে রাজধানীর অলিগলি
মুখরিত বাড্ডা,কারওয়ান বাজার,মগবাজার,ধানমন্ডি,
গুলশান, উত্তরা টঙ্গি গাজীপুরসহ সমস্ত নগর ও
তার অভিভাবক বৃক্ষসমূহ ।
তখনও বাংলা একাডেমি ও অন্যান্য দপ্তরে দপ্তরে একদল ছাগমৃগ ( ওরা শাখামৃগ নহে) ছাগমৃগ কাঁঠালপাতার রসাস্বাদে বিভোর। বয়স্ক মুখগহ্বরের ভেতর অথর্ব জিহ্বাগুলো ব্যাস্ত জাবর কাটায়।
বাংলা বসন্তে দুলে উঠছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দরজা জানালাসমূহ।
জাহাঙ্গীর নগরে এলো শতশত পাখির ঝাঁক।জগন্নাথও মুখরিত অগণিত পাখির কলতানে।
তাদের কণ্ঠে কণ্ঠ মিলায় কলকাতার পাখিরা।
পরিযায়ী পাখিরাও মেতে উঠে বসন্ত বসন্ত স্লোগানে
বাংলা বসন্ত উদযাপনে উৎসব মুখর হয় দেশে দেশে বাংলাদেশী টিয়া ও শালিক।
প্রবাসী পাখি যারা তারাও আজ মুষ্টিবদ্ধ হাতে শ্লোগানে স্লোগানে আকাশ কাঁপায়।
সবাই গেয়ে উঠছে গান
বসন্ত বসন্ত বাংলা বসন্ত।
শিমুল ফুটেছে,পলাশ ফুটেছে
রক্ত করবী ফুটেছে,রক্তের স্পর্শ পেয়ে সবুজ দুর্বাঘাসে হেসে উঠছে লাল টকটকে দুর্বা ফুল।
পাখির ডাকে ঘুম ভাঙে নির্জন রাতের
ঘুম ভাঙে বোবা ও কালা সময়ের
এবং জেগে ওঠে রাজশাহীর আমবাগান,বরেন্দ্রভূমির বৃক্ষরা,
দুলে ওঠে দূরে দাঁড়িয়ে থাকা ঝাউবন এবং সুন্দরবনে যে পাখিরা প্রভাতের অপেক্ষায় ছিল তারাও সমস্বরে গেয়ে ওঠে মাঝরাতে সুপ্রভাতের গান।
আর সৈকতের বালুরাশি জলের মৃদু ছোঁয়ায় বাংলা বসন্তের হাওয়ায় হাওয়ায় চিকচিক করে হাসে।
শাহবাগ সংলগ্ন জাতীয় কবির মাজার, তার পাশেই বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের মিনার থেকে ভেসে আসে কালের মুয়াজ্জিনের কণ্ঠে জেগে ওঠার আজান ।
সমগ্র ঢাকা তখন বাংলা বসন্তের খুশবু মেখে উন্মাতাল।
ঢাকার হাওয়া রংপুরে গেছে,সিলেটে গেছে,গেছে বরিশাল,খুলনা,চট্রগ্রাম,নোয়াখালি বিশ্ববিদ্যালয়ের করিডোরে।
এবং দেশের প্রতিটা স্কুল কলেজের কিশোর ফুলগুলো নাচতে নাচতে চলে আসছে বন্দুকের নলের সামনে।
তারা দুর্দমনীয় দুর্দান্ত,অকুতোভয় চব্বিশের সাহসী প্রজন্ম।
যারা মরতে জানে তাদের নামের কসম
যারা শহীদ হয়েছে তাদের রক্তে ভেজা জামার কসম
তাদের বিলাপরত মায়ের কসম
বুক ফাটা আর্তনাদরত বোনের কসম
যারা মরতে শিখেছে আমরা তাদের ছেড়ে কোথাও যাব না।
কসম শাপলা ফুলের
দোয়েল পাখির পাখার কসম
কসম লাল সবুজ পতাকার
কসম মায়ের মতো বাংলাদেশের
যারা মরতে শিখেছে পৃথিবীর কোন দাঁতাল শূয়োর নেই তাদের রুখে দাঁড়ায়!
জয় নিয়ে তারা ঘরে ফিরবে
বাংলা মায়ের বুকে এ আশা হিমালয়ের চেয়েও মজবুত।
বসন্তের হাওয়া লাগলে ঝিমিয়ে পড়া রক্তও টগবগ করে।
রংপুরে আবু সাঈদ দিগন্তে দুই হাত ছড়িয়ে দিয়ে বন্দুকের নলের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়ায়।
আবু সাঈদরা পাখির গানে গান ধরতে চায়।
বসন্ত বাতাসে উড়তে চায়
তারা বাঁধাপ্রাপ্ত হয়, টিয়ার গ্যাস, টিয়ারশেল আক্রান্ত করে তাদের। বন্দুক তাক করে কাপুরুষ।আবু সাঈদরা গর্জে ওঠে।
বন্দুকের সামনে উদোম বুকে দাঁড়িয়ে বলে
‘নে শুয়োরের বাচ্চা গুলি কর’
নিরস্ত্র নিরীহ আবু সাঈদদের বুকে দ্রিম দ্রিম বাজে
রক্তপিপাসু ডাইনি গুলির বাজনা ।
নিথর হয়ে পড়ে থাকে আবু সাঈদ,মুগ্ধ, তাহমিদ ও রক্তাক্ত বাংলাদেশ….
(এখানে গুলিবিদ্ধ কোকিলের নাম লিখে নিও।) ম্যানহোলের ঢাকনা খুলে পাওয়া যাবে কোকিলের যে রূদ্ধস্বর তার নাম লিপিবদ্ধ করো ,
বুড়িগঙ্গায় ভেসে যাওয়া পাখির নাম,
গুম হওয়া ঘুমের নাম,
নিঁখোজ পুত্রের নাম,
দুস্কৃতিকারী বলে খারিজ হওয়া মানুষের নাম,
দুর্বৃত্ত বলে উড়িয়ে দেওয়া খুলির নাম,
চেতনা বিরোধী বলে পায়ে পিষা বক্ষের নাম
কোন নামই যেন বাদ না যায়।
সব লিখে রেখো
এই বসন্তে যোগ দিতে এসে এক ফোঁটা রক্ত ঝরছে যার
আল্লার দোহাই তার নাম লিখে রেখো ভাইয়েরা আমার ,
কোন ফোঁটাই যেন বাদ না পড়ে। প্রতিটা ফোঁটা লিখে রাখো গাছের পাতায় পাতায় ।
আমরা প্রতি ফোঁটা রক্তের হিসাব নেব একদিন, একসময় ইনশাআল্লাহ।)
প্রতিটা হত্যাকারীর নাম জানিয়ে দিব তার প্রজন্মকে।
যেন খুনির প্রজন্ম বলে তারা লজ্জিত হতে পারে
আমরা সে ব্যবস্থাই করব।
হুসনি মোবারক ঢেকে রেখেছিল
তার কালো চাদরে ত্রিশ বছর সমগ্র মিশর।তাহরির স্কয়ারের বাতাসে উড়ে গেলে সে চাদর। হুসনি মোবারক খুঁজতে থাকে পিছনের দরওয়াজা।
তিউনিসিয়ার এক তরুণের আত্মাহুতিতে দিশেহারা হয় বেন আলি। কেঁপে ওঠে তার মসনদ।
আরব বসন্ত স্বৈর পাথরদের দেখিয়ে দিল পালিয়ে বাঁচার পেছনের পথ।
নব্বইয়ে নুর হোসেন ঢাকার রাজপথকে সাত আকাশ সমান সাহস এনে দিয়ে ছিল।
ডাক্তার মিলনরা ঢুলে পড়া মস্তকের কলার চেপে বলেছিল আয় বেটা রাজপথ দখলে নিতে হবে।
বাংলা বসন্তে যোগ দিয়েছে টগবগে ষোল বছর, উদ্যাম আঠারো বছর, স্কুল ড্রেস, কলেজের আইডি কার্ড ,ভার্সিটির তুমুল তারুণ্য,
সমস্ত বুলেটকে উপেক্ষা করে ওরা মিশে গিয়েছে মিছিলে।
দূর থেকে একটা অভিভাবকতূল্য জাম ও জারুলগাছ মিছিলের সামনে ইসরায়েলের মতো কতিপয় জানোয়ার দেখে
অঝোর ধারায় কাঁদছে
ছেলে না মেয়ে, প্যান্ট না শেলওয়ার ওসব দেখছে না সে গাছ। তার চোখে ওরা তার সন্তান।
বাংলার দামাল ভবিষ্যৎ।
ফিলিস্তিনের জলপাই গাছের মতো প্রার্থনায় ডাকছে বাংলাদেশের জাম ও জারুল গাছ
‘আয় আল্লাহ! আমার সন্তানদের হেফাজত কর ক্ষমতার কুকুর ও তার কামড় থেকে।
রক্তে তাদের উত্তাল সমুদ্রের ঢেউ
এই ঢেউয়ে কেউ জল দেখেনি
দেখেছে কেবল আগুন,আগুন,আগুন!
বিসুভিয়াসের আগুন এ মিছিলের আগুনের কাছে ম্লান হয়ে গেছে।
জেনে রেখ রাক্ষসপুরীর রাণী
এই আগুনে তোমার শাড়ি ও সিংহাসন পুড়ে ছাই হয়ে যাবে, আজ অথবা আগামীকাল।
যারা মাতৃভূমির পবিত্রতা রক্ষার শপথ নিয়ে এসেছে।
আশা করি তারা ফিরবে নিশ্চিত করে
তোমার লজ্জাজনক পরাজয়।
শহীদের রক্তের কসম
শহীদের সাথীরা রক্তের সাথে বেইমানী করে না।
আর খুনীর সাথে করে না তারা কখনও আপোষ।
বাংলা বসন্ত তুলেছে দেহে দেহে রক্তের জোয়ার
বুলেট বোমা পায়ে দলে
তারা খুলবেই খুলবে আলোর দুয়ার।
এপিটাফ নয় যেন এক এপিক
সময়ের কবিতা!