spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদকবিতাদশটি কবিতা : আবু জাফর সিকদার

দশটি কবিতা : আবু জাফর সিকদার

১.
হেলমেট ও অন্যান্য

পরিচিত চেহারাগুলো ঢেকে যায় নিমিষেই
বদলে যায় প্রেমিকের মুখ।
চাপাতি, হকিস্টিকের শৈল্পিক নৃত্যে নারকীয় উৎসবে
মুখরিত হয়ে ওঠে ছায়া-প্রচ্ছায়ার তাণ্ডব
দুলে ওঠে তখতে তাউস,
অট্টহাসিতে ভেঙ্গে পড়ে কাচের
ইমারত। কুচিকুচি হয় স্বপ্নরা।

ট্রয়ের ঘোড়া থেকে নেমে আসে হেলমেট– মুখোশের নতুন ভেরিয়েন্ট। নিরাপত্তার শেষ শিরোপা পরে হেঁটে যায় ওরা জাহান্নামের চৌরাস্তায়।

রক্ত, গুলি, বারুদ ও রক মিউজিকের ঝাঁঝালো তীব্রতায়
পরিচিত চেহারাগুলো ঢেকে যায় নিমিষেই
বদলে যায় প্রেমিকের মুখ।


২.
হায়েনা আসছে

খুব সাবধানে চলো পথ,
হায়েনা আসছে
গভীর ক্ষত মানচিত্রের মতো
রক্ত চিবিয়ে লাল চক্ষুসম বন্ধ্যা সময়
বিবেক বর্জিত অসম লড়াই,
বৃহস্পতি বলয় পেরিয়ে
অর্থহীন গরিমা চাণক্য বিবরে
হারিয়ে যায় সাহসের অনিকেত।

নিয়তির কী নিদারুণ পরিহাস
ভাগ্যের চাকা ঘুরতে ঘুরতে
পর্বতের মূষিক প্রসবের মতো
আগের জায়গায় স্থানুবৎ
হায়েনা আসছে
খুব সাবধানে চলো পথ।


৩.
শিকার ও শিকারি

দাদার খেলা খেলছে দাদা দিদির খেলা দিদি
নদীর জলে হাসবে স্বদেশ নয় তো সহায় বিধি।
আশায় আশায় বুক বেঁধেছি পাবো জলের হিস্যা
শেষ হয় না দাদা দিদির বারো মাসি কিচ্ছা!
ধানাই-পানাই করছে সদা মধু কেবল ঠোঁটে
পড়শি মরে মরুক তবে জল দিবে না মোটে!
চারিদিকে ঘেরাটোপে কাঁটা তারের বেড়া
মন্দ কপাল, আমরা সবাই বেল তলার সেই ন্যাড়া।

জ্যৈষ্ঠ মাসে আম দিলাম বর্ষা মাসে ইলিশ
রসিক বন্ধু কালা সোনা অন্তরে ক্যান বিষ?
বারো মাসের তেরো ছুতোয় দিলাম কতো ছাড়ও
আমার বেলায় উল্টো কষে প্যাঁচটা ঠিক-ই মারো।
প্রতিরোধে জ্বলবে আগুন জাগবে যবে বোধে
দিনে দিনে বাড়ছে দেনা দিতে হবে শোধে।



মানুষগুলো এমন কেন

আমি মানুষ খুঁজি মানুষের মিছিলে
মানুষগুলো এমন কেন?
চোখে, মুখে, নাকে সামগ্রিক অবয়বে অবিকল মানুষের মতো,
অথচ মানুষ নয়!
গোরু তো গোরুর মতো হয়, বাঘ ডোরাকাটা বাঘের মতই ;
গোরু আমান পোষ, বাঘ হিংস্র, মাংসাশী চেনা যায় সহজে।

মানুষগুলো কেন এমন হয়?
অমানুষের ভীড়ে মানুষ চেনা সহজ নয়।

নাম তার সৃষ্টির সেরা,আশরাফুল
প্রেম-ভালোবাসার ফুল,
মায়া মমতায় কমতি নেই এক চুল
পিতৃ-মাতৃ স্নেহের অমিয় ফলগুধারায় সিক্ত মানবকূল।

জ্ঞান, বুদ্ধি, বিবেক আর আবেগে
পূর্ণ, মানুষ ধন্য
তবু কেন মানুষগুলো এমন বন্য?

….

চেতনা ও বৈষম্য

প্রখর,টনটনে শ্রেণি-চেতনা
শিরদাঁড়া বেয়ে ফণা তুলে আছে চন্দ্রচূড়
জীবনের অনিবার্য প্রয়োজনে,
কেউ যদি আসে বন্টনের ন্যায্য প্রতিপক্ষ
ছাড় হবে না সুচাগ্র চেতনার গুড়।

শিথানে দাঁড়িয়ে স্বয়ম্ভূত ভোগ
না খেয়ে মরে শ্রমিক,কৃষাণ,ভিক্ষুক
কিংবা অযুত নিযুত বেকারের হিস্যা
বৃহন্নলা কোটারি ভোগে নিয়েছে তুলে
ছায়া ফেলে নাগরিক অধিকারে চন্দ্রভূক অমাবস্যা।

ঘাই হরিণী ডেকে যায় বিষবৃক্ষ তলে
বৈষম্য বাড়ে শেকড়ে, শিখরে চেতনার জলে।


বুক চিতিয়ে থাকো

থাকো থাকো থাকো
বুক চিতিয়ে থাকো
গুলি এলে ভয় পেয়ো না
বুক চিতিয়ে থাকো।

সাঈদ, শান্ত, মুগ্ধরা সব
পেতে দিলো বুক
স্বাধীন দেশের স্বৈরাচারী
সবাই মিলে রুখ।

থাকো ও ভাই থাকো
বুক চিতিয়ে থাকো
গুলি এলে আসুক গুলি
বুক চিতিয়ে থাকো।

….

শখের তানপুরা

সুর তোলে না আর মা ও মাটির শখের তানপুরাটি
তারগুলো সব ছেঁড়া,
শুকনো স্বর্ণ লতার মতো বিধ্বস্ত।

এক উম্মাদ বাঁশিঅলার সুরে উন্মত্ত সব ইঁদুর এখন ওম দিচ্ছে
বিরান উপত্যকার বিবরে।

উদয় অস্ত ভুলে
পার করে এক একটি বিদগ্ধ প্রহর
ঘুরে এই অপত্য স্নেহ সিক্ত অলি, গলি, শহর;
তুমিও হয়ে যাও আসহাবে কাহাফের মতোই সত্যের সাক্ষী।
শতাব্দীর পর শতাব্দী পেরিয়ে,
বারবার ফিরে এসো ,
হে যুবক যুবতীরা,
শখের তানপুরায় বারংবার তুলবে সুর, সুমধুর।


৮.
কোথায় আছি, কেমন আছি নিও না খোঁজ

লাশ কাটা ঘরে নেই কোন লাশ
থরে থরে সাজিয়ে রেখেছি পৈশাচিক সর্বনাশ।

পরিত্যক্ত ভাগাড়ে জমেছে বিষাদের হট্টগোল
বেদনার নীলাচলে নিস্তব্ধ কান্নার রোল

প্রেমহীন হৃদয় গেয়ে ওঠে গান
সুনসান নীরবতায় দিও না শ্লোগান।

সোনার পিঞ্জরে রেখে দিবে তাই,
লাশের খোঁজে শকুন উঁকি দিয়ে যায়।

লাশ কাটা ঘরে নেই কোন লাশ
নিখোঁজের মিছিল আঁধারে মিলিয়ে গেছে রোজ।

কোথায় আছি, কেমন আছি নিও না খোঁজ।


৯.
শোকের চয়নিকা

হঠাৎ করে বৃষ্টি ঝরে
বৃষ্টিতো নয়,গুলি
ঝাঁঝরা হলো পাঁজরখানি
বন্ধ মুখের বুলি।

বুক চিতিয়ে,হাত উঁচিয়ে
খোকা গেলো তেড়ে
পাষাণ খুনি ছুঁড়ে গুলি
জীবন নিলো কেড়ে।

স্বাধীন দেশে দাবীর কথা
বলতে নেই রে খোকা
বলতে গেলে গুলি খেয়ে
মরতে হবে বোকা!

আকাশ কাঁদে, বাতাস কাঁদে
কাঁদে মায়ের চোখ
বাবা তুমি এসো ফিরে
বইবো ক্যামনে শোক!


১০.
খেপাটে এক তেপাটি
..
দিতে যেন না হয় কোন চড়া মাশুল
ন্যায্য দাবী মেনে নিতে কিসে এতো বাঁধা
দাবানল জ্বেলে করছো ভীষণ ভুল
দিতে যেন না হয় কোন চড়া মাশুল

জেনে রেখো আঁধারেও ফুটবে মুকুল
তুলে দাও বাছা জলদি কোটার ধাঁধা
যেন দিতে না হয় আর চড়া মাশুল
জেনো,দেরি হলে হারাবে মাঝি দুকূল।

| |

আরও পড়তে পারেন

2 COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ