spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদসাম্প্রতিকশেখ হাসিনার কার্ডগুলো

লিখেছেন : আমান আবদুহু

শেখ হাসিনার কার্ডগুলো

আমান আবদুহু

বাংলাদেশে ইন্টারনেট ও ফোন পুরোপুরি বন্ধ থাকার পর যখন ভাঙ্গা ভাঙ্গা ফোন চালু হলো, তখন চেষ্টা করেছিলাম দেশের ভেতরের খবর জেনে লিখতে। তখন একটা পর্যবেক্ষণ ছিলো, টাইমলাইনে কয়েকদিন পেছনে গেলে পাওয়া যাবে, বাংলাদেশের টিভি চ্যানেলগুলোতে সমস্ত ভাঙচুর এবং আগুনের জন্য জামায়াত ও শিবিরকে দায়ী করা হচ্ছিলো। এমনকি বিএনপি, ছাত্রদলের নাম বলা হচ্ছিলো না এসব খবরে। 

সে সময় এই পর্যবেক্ষণটা বিশেষভাবে উল্লেখ করার পেছনে যে ধারণা কাজ করেছিলো, এখন তা বাস্তব হতে যাচ্ছে। শেখ হাসিনা তার জমিয়ে রাখা কার্ডগুলোর মাঝে একটা খেলতেছে। সে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে যাচ্ছে। 

আদালতকে ব্যবহার করে ইলেকশন কমিশনের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করার পর গত দশ বছরে জামায়াত বাংলাদেশের রাজনীতিতে ইফেকটিভলি নিষিদ্ধ, এখন হবে আনুষ্ঠানিক নিষিদ্ধ। জামায়াতের লোকজন এইসবে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। এতোটাই অভ্যস্ত হয়েছে যে অনেক মানুষ কর্তৃক বারবার বলার পরও গত সপ্তাহে উনারা ব্যক্তিগত সুরক্ষায় তেমন কোন চেষ্টা করেননাই। বেশিরভাগকেই বাসা থেকে তুলে নেয়া হয়েছে। 

তথাপি আনুষ্ঠানিক নিষিদ্ধ হওয়ার পর জামায়াতের লোকজন নতুন কিছু সমস্যার মুখোমুখি হবে। সেই সব এখন বলতে চাচ্ছি না। ওভারঅল, তারা দলগতভাবে অনেক বেশি লাভবান হবে। জঙ্গি সন্ত্রাসী কার্ড খেলার পরও হাসিনা এবার খুব একটা সুবিধা করতে পারবে বলে মনে হয় না। অন্তত আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তার লাভ হবে যিরো। জামায়াতের লাভ হবে শতভাগ অর্জন। যদিও নিষিদ্ধ ঘোষণা আসার পরবর্তী কয়েক সপ্তাহ অথবা মাসে দৃশ্যত তাদের সব কিছু ভেঙে পড়বে। যা বাকি আছে আর কি। কিন্তু আওয়ামী লীগের মতো প্রুভেন ট্র্যাক রেকর্ড ওয়ালা স্বৈরাচারী সরকারের হাতে নিষিদ্ধ হওয়ার সুফল ভোগ করবে জামায়াতের পরবর্তী প্রজন্মের নেতাকর্মীরা। 

সাময়িকভাবে হাসিনার মূল উদ্দেশ্য হলো এই নিষিদ্ধ বিষয়টাকে জনগণকে, বিক্ষোভকারীদেরকে এবং ছাত্রদেরকে দমনের জন্য ব্যবহার করা। যে কোন ছাত্র বা সাধারণ মানুষকে হত্যা করার জন্য, গ্রেফতার করার জন্য, কারাগারে রেখে দেয়ার জন্য বলবে, এ হলো জামায়াত শিবিরের সদস্য। সুতরাং “আইনগতভাবে নিষিদ্ধ” দলের পক্ষে কথা বলার সুযোগ অনেকেরই আর থাকবে না। হাসিনা তার সবচেয়ে শক্তিশালী শত্রুর দেখা পেয়েছে ষোল বছর পর এসে, দেশের সাধারণ মানুষ। জনগণ। এইবার সে আসলেই গেছে পাগল হইয়া। সুতরাং তার আর কোন পিছুটান নাই। ক্ষমতায় টিকে থাকতে যা কিছু সম্ভব, সে করবেই। শাহবাগি-বামপন্থীরা বহু বছর ধরে ক্রমাগত ঘেউ ঘেউ করে গেছে কিন্তু এই ট্রাম্পকার্ডটা সে এতোদিন খেলে নাই। নৃশংসতায় সে তার বাপকে ছাড়িয়ে গেছে অনেক আগেই। এবার সে আনুষ্ঠানিকভাবে ইতিহাসে পাতায় শেখ মুজিবের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতেছে। 

এই ঘটনায় অন্য আরেকটা পক্ষ ক্ষতিগ্রস্থ হতে যাচ্ছে, বাংলাদেশের আদালত। নিষিদ্ধ ঘোষণার এই অস্ত্রটা এবার অন্য পরিসরে টার্গেট হবে, ইন্টারন্যাশনালি। সমস্ত কিছু করেও, বন্ধ করে রেখেও, “আমার দেশ” পত্রিকাকে আনুষ্ঠানিকভাবে নিষিদ্ধ করে নাই কেন, চিন্তা করলে বুঝবেন। সুতরাং হাসিনার খুনী বাহিনী বাংলাদেশের আদালতেরও উঙ্গাবুঙ্গা মারা যাবে। কেউ সিরিয়াসলি চেষ্টা করলে এবং লেগে থাকলে শামসু মানিকদের জীবন নরক হয়ে উঠবে পশ্চিমের দেশগুলোতে। এই আন্দোলনে হাসিনার সোনাবাহিনী মারা খেয়েছে, এবার আদালতও মারা খেতে যাচ্ছে। বাকী থাকতেছে কী? 

সবচেয়ে বড় আয়রনি হলো, একাত্তরে দেশের মানুষের গণ-মতামতের বিপক্ষে গিয়ে দেশ ভাঙার বিরুদ্ধে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো যে রাজনৈতিক দল, স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় গণবিক্ষোভ ও গণঅভ্যুত্থানে সাধারণ মানুষের পোস্টারবয় হিসেবে সে দলটিকেই দাঁড় করিয়ে দেয়া হচ্ছে। একাত্তরে জামায়াত রাজনৈতিক ভুল করে নাই, কিন্তু আর্মির দমন-নিপীড়ন হত্যাকান্ডকে সমর্থনের ভুল করেছিলো। সেই পাপ মোচনের সুযোগ জামায়াত বেশ কয়েকবার পেয়েছে, কাজে লাগায় নাই। এইবার মনে হচ্ছে আবারও আরেকটা সুযোগ পেতে যাচ্ছে। যদিও তারা কতদূর কাজে লাগাতে পারবে তা মোটামুটিভাবে সবাই জানে। 

তবে যেইটা হবে, সম্ভবত, তা হলো মাস রিক্রুটমেন্ট। অন্ততপক্ষে সিমপ্যাথাইজার রিক্রুটমেন্ট। রাজনৈতিক দলের জন্য এইটা বড় সুযোগ। যেই ছেলেটাকে আপনি জামায়াত হিসেবে ধরে নিয়ে যাবেন, অত্যাচার করবেন, মেরেও ফেলবেন, তার পুরো চৌদ্দগুষ্ঠি তখন আমি রাজাকারের মতো বলা শুরু করবে, মনে মনে ভাবা শুরু করবে, আর যেহেতু কোন উপায় নাই বাঁচার, তাহলে আমি না হয় জামায়াতও হলাম।

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ