………………
হিন্দের যুদ্ধ এবং আমাদের প্রায়শ্চিত্ত
………………
আমরা কাঁদছি—
কেননা একটা পাখিকে ফাঁদ পেতে হত্যা করা হয়েছে।
আমরা উষ্মা প্রকাশ করছি—
কেননা ক্রিকেটে ছেলেরা ভালো খেলেনি।
আমাদের অভিমান—
কনসার্টের রাতটা দীর্ঘ হলো না!
আমাদের অভিযোগ—
ছোট লোকের দল রিক্সার ভাড়া কেবল বাড়িয়েই চলেছে!
আমাদের ভাব—
ডালহৌসি শহরের শৈলশিখরের মতো গাম্ভীর্যপূর্ণ!
সাইবেরিয়ার শীত আমাদের ছুঁতে পারে না
যেভাবে পারেনি সাদত হাসান মান্টোর কাশ্মীর।
মধ্যপ্রাচ্যের গরম আমাদের ছুঁতে পারে না
যেভাবে পারেনি মাহমুদ দারবীশের ফিলিস্তিন।
চায়ের আড্ডায়; রাজনীতির আলাপে—
জাস্টিন ট্রুডোর মতো আমরা হাসতে জানি।
অংকে তেত্রিশ না পেয়েও অর্থনীতির ছক্কায়
ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো জোকস করতে জানি।
আমরা এমনই এক বীর জাতি;
স্বাধীনতার আলাপে—
আঙুল তুলে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মতো হুংকার;
তুড়িতেই ধরে রাখতে জানি আর বন্ধুত্বের ঋণ পরিশোধে
মীরাবাঈ হতে পারি।
আমাদের জিভ—
তোষামোদ পেলে; হয়ে ওঠে লালাময় দীর্ঘ…
আমাদের স্বপ্ন—
দ্রব্যমূল্য প্রথম আকাশ ফুঁড়ে সপ্ত আকাশে পৌঁছাবে আর
ফেরেস্তার রিফিউজ ক্যাম্পে থালা পেতে আমরা
মান্না ও সালওয়া খাবো।
আমাদের স্বপ্ন—
পদ্মার মতো সমস্ত নদী শুকিয়ে মরুভূমি হবে আর
বুর্জখলিফা’র মতো আমরা বুর্জবাংলার অধিকারী হবো।
আমাদের শিউলী বেলী গন্ধরাজ—
সুরভী ছেড়ে ইউরোপ আমেরিকা থেকে আমদানি করবে
বারুদ তামাক কর্পূর আর বিলিয়ন টন গন্ধ বিলাবে
আমজুম আঁশ গোলাপ জামের বিস্তীর্ণ বাগানে।
আমাদের উড়োজাহাজ ট্রেন স্টিমার বাস
নীল গেরুয়া সাদা সবুজ রঙের ক্যানভাসে
মনোরম হয়ে উঠবে—
যেমন গোধূলির বিকেলটা হয় রমণীয়!
আমাদের রাস্তায় হুইসেল বাজিয়ে
দাপিয়ে বেড়াবে
খাকি ইউনিফর্ম পরিহিত দণ্ড-পাণ্ডব! তারপর—
পোঁদের চামড়া তুলে নেবার গর্বে; আমাদের সিনা
হাওয়াই মিঠার মতো ফুলে উঠবে আর আমরা ভেবে নেবো
আমাদের পিতা বোকা ছিলো!
আমাদের পিতামহ বলদ ছিলো!
আমাদের পরদাদা আবাল ছিলো!
কেননা এমন সব লোভনীয় স্বপ্ন ছেড়ে তারা
পলাশী শ্রীরঙ্গপত্তম নারিকেলবাড়িয়া বালাকোটে
যুদ্ধ যুদ্ধ খেলায় রক্ত ঝরিয়েছে…!
সিনাই উপত্যকার মরুঝড়
ফের বাতাসের আকাশে স্ফুলিঙ্গ ঝরাবে—
মিছে স্বপ্নের মিথ; দুমড়েমুচড়ে
আমাদের টেনে নেবে হিন্দের যুদ্ধে আর আমরা
পিতা পিতামহ পরদাদা’র ঋণ পরিশোধে
যুদ্ধের রক্তসমুদ্রে নিমজ্জিত হবো আগাগোড়া।
…………..
খুলে দিয়েছি বুকের জমিন
…………..
লাল-সবুজে বিষন্নঘন সন্ধ্যা আজ!
অদূরে ঝুলে আছে নিদ্রাহীন গন্তব্যে হেঁটে চলা
কিশোরের মৃত্যুদন্ড; ফাঁসির দড়ি।…
কে তুমি শার্দুল-কুক্কুর! পেছন থেকে
বাড়াও তোমার লিকলিকে কালো নখে গোপন থাবা?
খুলে দিয়েছি বুকের জমিন!
যদি থাকে হিম্মত, দাঁড়াও সম্মুখ
দেনা পাওনার হিসাব হবে রাজপথে।…
ধর্মের গান গাওয়া নীতির রাজড়া আর
বর্জুয়ায় জন্ম জাতীয়তাবাদের চেলা’রা কে কোথায়?
পুরাতন ওষ্ঠে কিসের অঙ্গুরী ঠেঁসে বসে আছো
যখন পড়ে আছে পাথরে রক্তমাখা জাতির ভবিষ্যৎ?
পরোয়া করি না ঢের! -তোমরা সব একই মাফিয়া!
ক্ষমতার কালো কেদারায় যাদের জিহ্বা
চেখে নিতে চায় মসনদ সাদ।
আমাদের আঠারো ছুঁয়েছে; খুলে দিয়েছি বুকের জমিন!
তোমাদের কা-পুরুষতায় পারো যত চালাও সাবল
জমিন স’বে মেলেছে ডানা;
হিংস্রতা ঋজু হয়ে ফিরবে। তারপর একদিন
ইতিহাস তাঁর খুলবে কপাট।…
…………..
অনিবার্য প্রতিজ্ঞার দস্তখত
…………..
সুখআনন্দ কিংবা মার্সিয়া নয়—
একাত্মতার ঘোষণা নিয়ে আজ আমরা
আমাদের বিবাহের পঞ্চ বার্ষিকীর ‘উপল’
ছাত্রশহীদদের মাগফিরাত কামনায় উৎসর্গ করছি…।
যে বিষণ্ণঘন রাত তাদেরকে করে তুলেছে অকুতোভয়
তার প্রতিটি পদক্ষেপকে জানাই লাল সালাম।
তাদের টগবগে রক্তের শপথ করে বলছি—
আমরা আমাদের আনন্দের স’বটুকু; আসন্ন বিপ্লবের
বিজয় মিছিলের জন্য ইতিহাসের ডায়েরিতে লিখে রাখছি।
টিয়ারসেলের ব্যাগ, সাউন্ড গ্রেনেড, গুলির খোসা
আর রাজপথে দাপিয়ে বেড়ানো গামবুট, যন্ত্রদানব
সাক্ষী থেকো: ‘কীভাবে তোমাদের ব্যবহার করা হয়েছে
অধিকার আদায়ের সুষম দাবীর বর্ণিল বাগানে— আর কীভাবে
তছনছ করতে চাওয়া হয়েছে একটি মেধাবী প্রজন্মের স্বপ্নসমেত’!
প্রতিটি জিম্মি জীবন; প্রতিটি ক্যাম্পাসের
ইঁটকাঠ, টেবিল-বেঞ্চ, বৃক্ষরাজি জেনে রেখো;
‘আমার নিষ্পাপ মেয়েকে সাক্ষী রেখে
দস্তখত দিয়ে রাখছি প্রতিজ্ঞাঅলিন্দের সবুজ মালঞ্চে—
ছাত্র-বন্ধুদের অসীম সাহসের তুমুল আয়োজন/
কখনো; না কখনোই পথ হারাতে দেবে না
রক্তের উত্তাল ঢেউ পেরিয়ে কেনা; সাড়ে তিন হাত মাতৃভূমির’!
এ আমার এবং আমাদেরই প্রতিজ্ঞার এক অনিবার্য দস্তখত।
১৯.০৭.২০২৪
একটানে পড়লাম।
ভালো লাগলো।
বেশ দারুন লাগলো