তাজ ইসলাম
………..
দেশের এই পরিস্থিতিতে শীর্ষ আলেমরা কেন কথা বলছেন না? এমন প্রশ্ন সাধারণ মানুষ,সাধারণ স্রোতের চেয়ে আলেমদের অনুসারীদের পক্ষ থেকেই বেশি উত্থাপিত হচ্ছে।
চলমান সংকটে সবারই কথা বলা কাম্য। তবে আগবাড়িয়ে আলেম সমাজ, ইসলামী দলগুলো কথা না বলে দুরদর্শিতার পরিচয়ই দিয়েছে
আমরা তাই মনে করি। আলেম সমাজ বা ইসলামী দলগুলো উচিৎ কথাটা বললেও সরকার আন্দোলনটিকে অনায়াসে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করত। সরকারের হাতে দাবার ঘুঁটি ছিল ‘বিএনপি – জামাত’। ঘুঁটি ছিল জঙ্গি ও আগুন সন্ত্রাস।এগুলো ফেল খাইছে। সরকার পালিত, আওয়ামী খুঁদ খাওয়া সুশীল, বুদ্ধিবাজরা এখনও ঢোল পিটায় আন্দোলনে বিএনপি জামাত ঢুকেছে।ধোপে টিকেনি। আলেমরা তুমুল সরব হলে ক্ষীর খাওয়া প্রচার মাধ্যম, গৃহপালিত বুদ্ধিবাজ আর সরকার দলীয় লোকেদের সম্মিলিত আওয়াজে আন্দোলনের মূল ফোকাসটা অন্য দিকে সরিয়ে ফেলত। কাজেই খুব বেশি কথা না বলে মন্দের ভালো করেছে। এমন কি ভালো করেছে সামনে না এসে বিএনপি -জামাত। ছাত্র জনতার আন্দোলন ছাত্র জনতারই থাক। এই আন্দোলনে বিএনপি,জামাত,আলেম সমাজ জনতা হয়ে মাঠে নামলেই বরং ভালো। সামর্থ্য থাকলে তাদের নামা উচিত।
ওয়াজি বক্তারা কেন কথা বলেনি? এরা যত কথা কম বলবে ততই ভালো।প্রথমত অধিকাংশের সময় ও কাণ্ডজ্ঞান কম।পরিমিতিবোধ কম।বাস্তবতা ও রাজনৈতিক জ্ঞান – প্রজ্ঞা কম।শুধু গলাবাজি দিয়েতো সব হয় না।
কথা বলতে হবে আলেম রাজনীতিবিদদের।
এখন সময় এসেছে একাত্ম হওয়ার। কথা বলার। প্রজ্ঞা,পরিমিতি দুরদর্শিতার মিশ্রণে কথা বলা এখন সময়ের দাবী। এবং অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে ব্যক্তি ও দল কোন অবস্থাতেই যেন গণদুষমনে পরিচিত না হয়। দালাল, হালুয়া রুটির স্বীকার না হয়।
যে কথাটা প্রফেসর সলিমুল্লাহ খান বলেছে তা কেন আলেমদের কেউ বলেনি? এ কথাটা সলিমুল্লাহ খান বলে যতটা প্রশংসিত হয়েছেন একজন আলেম রাজনীতিবিদ বললে এই কথাটিকে ভিন্নভাবেই প্রচার করত। সহজভাবে নিত না,সহজ পথে থাকতে দিত না।কোণঠাসা করে ফেলত। আপনি বহুমত হাজির করলেও এদেশের বাস্তবতা,আবহ এমনই।তাই বলে তারা চুপ থাকবে তাও বলছি না। জন আন্দোলনের চরিত্র উপলব্ধি করতে পারলে অবশিষ্ট কথা বলে দেওয়ার প্রয়োজন নাই। আলেম,মুফতি,ইমাম এদেশের নাগরিক,এদেশের জনতা। মাঠে নামলেই স্রোত বেগবান হবে। মাঠে নেমে এসেছে শিক্ষক সমাজ,শিল্পী,খেলোয়ার,অভিনেতা, আইনজীবী, অভিভাবক,কবি,সাহিত্যিক,সাংবাদিক।আলেমরাও আসতে পারে দলে দলে এদের সাথে অথবা নিজেদের ব্যানারে। সংহতি জানাতে পারে।
একেবারে আলেম হয়েই আসতে হবে বিষয়টি এমন মনে করি না।তারা কবি,সাহিত্যিক,সাংবাদিক,জনতা হয়েও আসতে পারে।রাজনৈতিক দলের মুখপত্র হয়ে আসলও আসতে পারে।তবে এখন সবার মতো তাদেরও আসা দরকার।
এ বিষয়টি নিয়ে ভাবার ক্ষেত্র আমার না।আমার জায়গা সাহিত্য। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রশ্নটি ঘুরপাক খাচ্ছে বলে কিছু লিখলাম।
২.
কোন পক্ষ জয়ী হবে? আন্দোলনকারীরা না সরকার? সরকার ক্ষমতায় থাকতে পারবে নাকি পতন বা পদত্যাগ করবে সে প্রশ্নের উত্তরে যাচ্ছি না। আমরা মনে করি জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহ গেল সরকারের ইস্যু ব্যর্থতার সপ্তাপ।ক্ষমতায় আসার পর একের পর এক ইস্যু দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে সক্ষম ছিল সরকার। জনতার চোখ বরাবর ইস্যুর ট্রলে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েছে।গেল সপ্তাহে আর এমনটি হয়নি। আন্দোলনকে বা ছাত্র জনতাকে বিভ্রান্ত করতে নানা রকম ইস্যু এসেছে সামনে।আমরা দু তিনটা উল্লেখ করতে পারি। সমন্বয়কদের ভাতের হোটেল ভাইরাল ডিবি অফিসে নেওয়া।সোফায় বসিয়ে পত্রপাঠ জনতা নেয়নি।তারপর এসেছে হারুন,নানকে উইদাউট জাঙ্গিয়া ছবি।সামথিং ট্রলের পরই আবার ফিরে গেছে আন্দোলনের ‘ মার্চ ফর জাস্টিসে।তার আগে দেয়াল লিখন ও গ্রাফিতি চলেছে সমগ্র দেশে।দুই আড়াই দিন চলল নিষিদ্ধ কাহিনী। আশা করেছিল নিষিদ্ধ পেতে যাওয়ারা ব্যপক প্রতিক্রিয়া দেখাবে।সরকার তাদের একমুখী গ্রেফতারে প্রচার মাধ্যম মাতিয়ে রাখবে জামাত শিবির ফেনা তুলে।মিডিয়ার আড়ালে চলে যাবে আন্দোলন। তারা বিচক্ষণতার সাথে নিরবতায় রয়েছে।অবশেষে আজ নিষিদ্ধের সার্কুলার জারি হল।তারা নিরবই আছে।আন্দোলন মূল গতীপথেই আছে। সরকারের ইস্যু কার্ড ব্যর্থ। এখন পর্যন্ত নিষিদ্ধ ইস্যুতে তাদের কোন কর্মসূচি না থাকায়, তাদের এই কেন্দ্রীক এক্টিভিটি না থাকায় উদ্দেশ্য অসফল রয়ে গেল।আন্দোলনে বিভক্তি আনতে পারেনি।
৩.
ট্যাগের টিক্সেও তারা মারা খাওয়া।কথায় কথায় জামাত শিবির বলাতে ট্যাগটি এখন কৌতুকে পরিনত হয়েছে।পোলাপান এটিকে একেবারে হাস্যকর করে দিয়েছে।তারা সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখছে ‘ অমুক হিন্দু শাখার শিবির সভাপতি’, অমুক সনাতনি শাখার জামত সেক্রেটারি।জাস্ট পাতলা করে দিছে।বেশি চিপলে লেবু তিতা।বেশি খাইলে মিষ্টিও পাইনসা লাগে। আওয়ামী ট্যাগ ঢিবিটাও ভেঙে খান খান।
৪.
জামাত শিবির নিষিদ্ধ হওয়াতে সরকারের বা আওয়ামীলীগের একটা বড় লস হইছে। নিষিদ্ধের যে একটা জুজু ছিল এটা শেষ। জামাত শিবির, জামাত শিবির করছে বলে যে ভাষণ হত এটাও বন্ধ হইছে।আজ থেকে আর এই নামে কোন দল নাই।তাই সব আকাম তাদের ঘাড়ে দেওয়ার মতো মওকাও নাই।
জনগণও বাঁচছে।বিরোধিতা করলেই সে যেই হোক ট্যাগ মারতো জামাত শিবির করছে এটাও করতে পারবে না।
এই দলের লোকদের জন্য আপাতত ভালো হইল তারা নিষিদ্ধ হইছে।এই নামে এ মুহূর্তপ কোন রাজনীতি নাই।কোন দায়ও নাই।এমনিতেই তারা অবরুদ্ধ ছিল বছরের পর বছর।এমন অবস্থা থেকে নিষিদ্ধই ভালো।তাদের দল বন্ধ,কর্মীতো বন্ধ না। তারা এখন ভেবেও দেখতে পারে। নতুন বিকল্পের পথে, পুরাতন বিতর্ক এড়িয়ে পুন: প্রত্যবর্তনের প্রচেষ্টা করবে কিনা। সাধারণ আছে আলোময় ভোরের প্রত্যাশায়। আগামী ভোর হোক নিরাপদ বাংলাদেশে।বাংলাদেশ হোক নিরাপদ।
বাংলাদেশ
বাংলাদেশ।
১ আগস্ট