spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদসাম্প্রতিকআমি আমি এবং আমি'র পতন

লিখেছেন : আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু

আমি আমি এবং আমি’র পতন


আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু

যেসব দেশে “হাজার বছরের সেরা” কেউ ছিলেন না, সেসব দেশ কি কখনো স্বাধীন হয়েছে? পৃথিবীর যেসব দেশে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী ছিলেন না সেসব দেশে কি বেসরকারি টেলিভিশন, মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট, ফেসবুক ইত্যাদি আছে? পৃথিবীতে আর কোনো দেশের জাতির পিতা কি তার দেশ ও জাতির জন্য স্বপ্ন দেখতেন? সকল কিছু একা করার, একা স্বপ্ন দেখার দায়িত্ব গ্রহণ ও কৃতিত্ব দাবি করার পরিণতি যে কি ভয়াবহ হতে পারে তা বাঙালি আরেকবার প্রত্যক্ষ করলো। শেখ হাসিনা বিগত বছরগুলোতে কত লক্ষবার জনসমক্ষে নিজেই প্রশ্ন করেছেন, ‘কে করেছে? “আমার বাবা করেছে।” কে দিয়েছে: “এই আমি, আমি দিয়েছি!” সবকিছুতে “আমি, আমি এবং আমি!” এই ভয়াবহ আমিত্বের পতন ঘটেছে।

পৃথিবীর সবকিছু ঘটে একটি গতিতে। কোনো “আমি” না থাকলেও যা ঘটার তা ঘটে। আরবি ভাষার সেরা কবি লবিদ বলেছেন: প্রবাহমান নদী, যে সাতার জানে না, তাকেও ভাসিয়ে রাখে “ কোনো দেশ স্বাধীনতা লাভ করে সেই দেশের জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও ত্যাগে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা জন্য যারা জীবন দিয়েছেন, তাদের মধ্যে পালিয়ে যাওয়া প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের একজন সদস্যও ছিলেন না। তার পরিবারের সদস্যরা জীবন দিয়েছেন, স্বাধীন দেশ চালাতে ব্যর্থতার কারণে। আমিত্বের কারণে ও জনগণকে দাস ভেবে তাদের বন্দেগি চাওয়ার কারণে। বন্দেগি কি দাবি করে হয়? পাশের দেশ ভারতের জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধীর কথা একবার ভাবলেও তো বার বার দেশের এত সর্বণাশ হতো না। গান্ধী ক্ষমতার অংশীদার না হয়েও দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন এবং বন্দেগি না চেয়ে মানুষের ভক্তিশ্রদ্ধা লাভ করছেন।

এক উর্দু কবি বলেছেন:
“ও ক্যয়সে লোগ হ্যায় জিনহে বন্দেগি পছন্দ হ্যায়
হামে তো শরম দামনগীর হ্যায় খুদা হোতে।”
(ওরা কেমন মানুষ যারা মানুষের দাসত্ব আশা করে,
আমাকে খোদা বানিয়ে দিলেও তো আমি লজ্জিত হবো।)

গত বছরের ২৬ নভেম্বর প্রকাশিত টাইম ম্যাগাজিনের কভার স্টোরি ছিল শেখ হাসিনার ওপর। চার্লি ক্যাম্পবেলের সাক্ষাৎকার ভিত্তিক স্টোরির শিরোনাম ছিল: “প্রাইম মিনিস্টার শেখ হাসিনা এন্ড দ্য ফেট অফ ডেমোক্রেসি ইন বাংলাদেশ।” তিনি লিখেছেন, “শেখ হাসিনা মনে করেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র মানেই তিনি। দুই ঘন্টার সাক্ষাৎকারে তিনি ১২ বার বলেছেন তার পিতা ও পরিবারকে হত্যা করার কথা। শেখ মুজিবকে ঘিরে তিনি শ্বাসরুদ্ধকর ব্যক্তি পূজার প্রচারণা করছেন। ঢাকার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মেঝে থেকে ছাদ পর্যন্ত প্লাজমা স্ক্রিনে দেখানো হচ্ছে শেখ মুজিবের ভাষণ।”

টাইম আরও লিখেছে যে, বিএনপি প্রধান তিন বারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং তার পুত্রসহ তার দলের ৪০ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার। নোবেল বিজয়ী ড. ইউনুসকে ‘রক্তচোষা’ বর্ণনা করে তার বিরুদ্ধে ১৭৪টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।” ম্যাগাজিনে খ্যাতিমান ফটোগ্রাফার শহিদুল আলমের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে যে, “শেখ হাসিনা যা করেছেন, ও করছেন, তা ভুল বা অন্যায় হলেও তিনি ক্ষমা চাওয়ার বা ভুল স্বীকার করার মতো ব্যক্তি নন।’

গণতন্ত্রের অবাধ চর্চার সুযোগ দেওয়ার দাবি করা হলেও শেখ হাসিনা তার বা তার পরিবারের বা তার সরকারের বিন্দুমাত্র সমালোচনা করার সুযোগ রাখেননি। কেউ টু শব্দ করলে ধরে কারাগারে পাঠিয়েছেন। ক্ষমতায় থাকার জন্য বিগত ৩টি নির্বাচন কীভাবে করেছেন? ৩০ শতাংশ ভোটার নেই তবুও ৮৪ শতাংশ ৮২ শতাংশ ভোটে জয়ী হন। তার গণতন্ত্রের সংজ্ঞাই ছিল ভিন্ন। তার পিতার গণতন্ত্রের সংজ্ঞাও ছিল ভিন্ন। তবে দু’জনের মধ্যে অদ্ভুত মিল হলো দেশবাসীকে বিশ্বাস না করা, কারও মতামতে শ্রদ্ধা না করা। নিজের ইচ্ছা জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার প্রবণতা।

কিন্তু মানুষের সহ্যেরও সীমা থাকে। সেই সীমা ছাড়িয়ে গেলে যা ঘটার দেশে আজ তাই ঘটছে। ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবের হত্যাকাণ্ডের খবর ছড়িয়ে পড়লে আওয়ামী লীগাররা পালিয়েছে। কিন্তু উচ্ছসিত জনতা রাস্তায় নেমে “আলহামদুলিল্লাহ” বলেছে। আজ তার কন্যার পালিয়ে যাওয়ার খবরেও জনগণ রাস্তায় নেমে ‘আলহামদুলিল্লাহ” উচ্চারণ করছে।

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ

Adv. Shahanara on যুদ্ধশিল্প
নয়ন আহমেদ on যুদ্ধশিল্প
কাজী জহিরুল ইসলাম on কবিতার জন্য নির্বাসন