| মাহমুদ নোমান |
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন আশার মোম জ্বালিয়ে দিয়েছে। ছাত্র সমাজ দেশের ভবিষ্যৎ; সে ভবিষ্যৎ যদি বৈষম্য রুখতে কোনও রক্তচক্ষুকে পরোয়া না-করে, এমনকি জীবন উজাড় করে দিতে কার্পণ্য করে না তাহলে বুঝতে হবে দেশ বিপথে যাওয়ার নয় এমনকি ভবিষ্যতে কেউ দেশ নিয়ে লুটপাট করতে কয়েকবার নিজে নিজে শঙ্কিত হতে বাধ্য; ছাত্র যদি সমাজের ভবিষ্যত প্রজন্ম হয় লেখক -কবি সমাজের আয়না বলতে হয়; এখানে বেশ গোলমেলে তথাকথিত সাহিত্যিক লোক দেখানো ভালো মানুষ সেজে তলে তলে ক্ষমতায় লালায়িত হয়ে যায় এমনকি তৈলমর্দন না করলে যেখানে কবিতা ছাপে না একজন সাহিত্য সম্পাদক! পুরস্কার তো লবিং ছাড়া চলেই না! সেখানেই কিছুটা আলো ছড়িয়েছে ব্যক্তি কবি সাজ্জাদ বিপ্লব; নামের সাথে বিপ্লব’ যুক্ত আছে বলেই কী এমন বৈপ্লবিক চিন্তা চেতন কীনা জানি না তবে একজন সত্যিকারের কবি হলেন যত সুন্দরের- সুশাসনের, এই অঙ্গীকার ব্যতিরেকে কবি বৈষম্যের বিরুদ্ধে সদা সোচ্চার; কবি মানে ক~বি( কইবি,বলবি- অর্থাৎ ভেতরের কেউ তাগাদা দেয় সুন্দরের বিরদ্ধে কিছু ঘটলে,কিছু দেখলে 😉
ইতোমধ্যে কবি সাজ্জাদ বিপ্লবের কিছু কবিতার বই পড়ার সৌভাগ্য থেকে বলি সাজ্জাদ বিপ্লবের কবিতায় বারুদ থাকেই তদুপরি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন সেটিকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে গেছে। কেননা স্বৈরাচারের ভয়ে শঙ্কিত যখন,স্বৈরাচারের পা চেটে ক্ষমতার লালায়িত হয়ে পুরস্কার বাগিয়ে নিচ্ছে, নিয়েছে এবং নিবে এমন পরিবেশে এই আন্দোলনে তেমন লেখক কথাই বলেনি, সেখানে সাজ্জাদ বিপ্লব নিজে শ্লোগান তোলা কবিতা শুধু লেখেননি যাঁরা এমত বৈপ্লবিক চেতন ধারণ করে সেসব কবিদের জড়ো করেছে উনার অনলাইন সাহিত্য পত্রিকা ‘bangla review’ এর মাধ্যমে। বাংলাদেশে এই একটি অনলাইন সাহিত্য পত্রিকা সর্বক্ষণ সজাগ দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে, আন্দোলনের আবহ বেগবান বিস্তার করেছে মুহূর্মুহূ বিভিন্ন লেখা আপলোডের মাধ্যমে। অনলাইন পত্রিকার এই একটি চমৎকার দিক সহজে খুব দ্রুত পাঠকের কাছে যাওয়া যায়। ‘bangla review’ বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম অংশীদার বলতেই হবে, এই দাবির সুবাদে আন্দোলন চলাকালীন অনলাইন পত্রিকাটির কয়েকটি লেখার পর্যালোচনা করতে চাই; প্রথমে আসে ১৬জুলাই আবু সাঈদের হত্যাকান্ডের পরে ‘রক্তাক্ত স্বদেশ’ সিরিজটি- সে সিরিজে লিখেন জাকির আবু জাফর, সাজ্জাদ বিপ্লব, সালেহীন শিপ্রা ও তাজ ইসলাম। প্রত্যেকটা কবিতাই উল্লেখযোগ্য- টানটান টিউনিং ভাষার সুষম বণ্টনে পাকাপোক্ত উত্তেজনায় বলিষ্ঠ উচ্চারণ; ঐ সিরিজের কবিতাগুলোর চুম্বক অংশ নিম্নে তুলে ধরছি-
ডাকিনীদের কোন ঘর থাকে না। পরিবার থাকে না। দেশ থাকে না।
তারা মানুষ বোঝে না।
তারা তোমাকে বোঝেনি। আমাকে বোঝেনি। আমাদের কাউকে বোঝেনি।
শুধু রক্ত হাতে বসে থাকে সাধের রঙ্গভবনে…
- এই মিছিলে আমিও ছিলাম; সাজ্জাদ বিপ্লব
উপরোক্ত কবিতার মধ্যে আশ্চর্যরকম একটা হাকিক্বত হচ্ছে ডাকিনী,ডাইনী উল্লেখ করে বলেছে ডাইনী রঙ্গভবন দখল করে আছে আমার কথা তোমার কথা কারও কথা না-শুনে, ডাইনীদের দেশ থাকে না, কী চরম কথাগুলো স্বৈরাচার পতনের মধ্যে সত্যতা জেনেছি। একদম হুবহু। আয়নাঘরে একজন স্বামী যিনি বাবাও সাত বছর জিম্মি ছিল, ছয় বছর স্ত্রী অপেক্ষা করে শাশুড়ী স্ত্রীকে অন্যত্র বিয়ে দিয়েছে, ফিরে এসে স্ত্রীকে পাইনি। কী নির্মম হতে পারে, আমার চোখে জল এসে গেল তৎক্ষনাৎ….
এরপরে আমার পছন্দের কবি জাকির আবু জাফরের কবিতা উল্লেখ করতে পারি। তিনি সত্য উচ্চারণ করেছেন নিবিড়ভাবে-
আফসোস করে ছেড়ে দাও কেনো সব
প্রতিবাদ আজ কেনো এত দুর্লভ!
- তুমি জাগলে জাগবে বাংলাদেশ;জাকির আবু জাফর
সালেহীন শিপ্রার কবিতাটি ফের অন্ধকারে ত্রস্ত সময়ের আর্তির কথা-
হায়েনার হা-মুখের ভেতর
আটকে পড়ে কী দেখতে পায় ত্রস্ত সময়!
গলার দিকে গাঢ় ছায়া
গুম হয়ে যায় পাখিরা অই লকলকানো অন্ধকারে
জংলাপাশে ব্যক্তিগত রক্তমাখা পালক কিছু
ফের পাওয়া যায়।
- ত্রস্ত সময় ; সালেহীন শিপ্রা
তাজ ইসলামের কবিতাটি আন্দোলনে বারুদজ্বলা মুহূর্ত আর রংপুরের রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদের হত্যাকান্ডকে কেন্দ্র করে সেই নির্মম সময়ের দলিল যেন-
শ্লোগানের উপর নেমে আসছে
একদল হিংস্র লাঠি
গরম জলের আক্রমণ
সুসজ্জিত হেলমেট ।
শ্লোগান পড়ে আছে রাজপথে রক্তাক্ত হয়ে ।
একটু আগে মুষ্টিবদ্ধ যে দুটো হাত
উর্ধ্বে উত্থিত হয়েছিল অধিকারের কথা বলে
সে দুই হাতে চেপে ধরেছে বাংলাদেশের রক্তাক্ত মাথা ।
- শ্লোগান; তাজ ইসলাম