তৈমুর খান
১৯
নিজেকে মনে হয়েছিল স্বপ্নের নায়কের মতো
সালটা ২০০০। জুলাই-আগস্ট পেরিয়েও কয়েকদিন থেকে প্রচণ্ড বৃষ্টি। বাড়িতে থাকার জায়গা নেই। মাটির দেয়াল ধ্বসে ধ্বসে পড়ছে। ঘরের চালের খড় পচে বসে গেছে। কোনো রকমের মাথা বাঁচিয়ে অপেক্ষা করছি কখন বৃষ্টি ছাড়বে। বইপত্র, লেখার খাতা সবকিছুই ভিজে একসা। পাণ্ডুলিপিগুলি নষ্ট হয়ে গেছে। জ্বালানি নেই। উনুন জ্বালানোও হচ্ছে না। একবার কোনো রকম কিছু খাবার পাচ্ছি তো সারাদিন প্রায় উপোষ।একটা পলিথিনের প্যাকেটে একটা ফুল প্যান্ট ও হাফহাতা জামা ভরে রেখেছি। এই দুটো নিয়ে আমাকে ইন্টারভিউ দিতে যেতে হবে পূর্বাঞ্চল জোনের এসএসসি অফিস বর্ধমানে। একখানা ছাতা নিয়ে, একখানা গামছা পরে শুকনো কাপড়টি বগলদাবা করে বৃষ্টির পানি ঠেলে রামপুরহাট আসছি। কেউ কোথাও লোকজন নেই। রামপুরহাটে বিশ্বভারতী ফাস্ট প্যাসেঞ্জার ধরে আমাকে বর্ধমানে পৌঁছাতে হবে। সুতরাং এই বৃষ্টি-কাদায় রাত্রি তিনটে নাগাদ উঠে আমি হাঁটতে শুরু করেছি। রামপুরহাটে এসে পৌঁছালাম তখন আমার সমস্ত শরীর ভিজে গেছে। ট্রেন দাঁড়িয়ে আছে এক নম্বর প্লাটফর্মে। টিকিট কেটে ট্রেনে উঠলাম। হুইসল বাজিয়ে সকাল পাঁচটা দশে ট্রেন ছেড়ে দিল। ট্রেনে কয়েকজন মাত্র যাত্রী। একজন হকারকেও দেখা গেল না।
কয়েকটি স্টেশন পেরিয়েই ট্রেনটি পৌঁছাল এসে আহমদপুরে। তারপরে মাইকে ঘোষণা শুনতে পেলাম: গুসকুরায় লাইনের উপর দিয়ে জলপ্রবাহ বেড়ে চলেছে। রেললাইন ধ্বসে পড়েছে তাই এখান থেকে আর ট্রেন অগ্রসর হবে না। আবার সাঁইথিয়াতে ব্রিজ ভেঙে পড়েছে। সেখানেও রাস্তা বন্ধ। কতদিন ট্রেন চলবে না তা কর্তৃপক্ষ জানেন না। সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন।
অনাহারে ক্লান্তিতে, পরীক্ষা না দিতে পারার উদ্বেগে নিজের হার্টের শব্দ নিজেই শুনতে পাচ্ছি। মাথাটা ভোঁ ভোঁ করছে। কাছে মাত্র ২০০ টাকা আছে। বিকল্প কোনো রাস্তা নেই। কী করা যায়?
প্লাটফর্মে বিচ্ছিন্ন কতগুলি কুকুর ও কাক এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি করছে। কয়েকজন ট্রেনযাত্রী নেমে পড়ে খাবারের অনুসন্ধান করছে। তাদের সঙ্গে সঙ্গে আমিও কোথায় কী পাওয়া যায় তার খোঁজে বেরিয়ে পড়েছি। অবশেষে স্টেশন সংলগ্ন পলিথিনে ঘেরা ক্যাম্পের মতো একটি দোকানে এক প্লেট ভেজাভাত, একটা পেঁয়াজ ও একটা কাঁচা লঙ্কা ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া অন্য কিছু কোথাও নেই। সেই এক প্লেট ভাত কিনে খেতে গিয়ে দেখি, বেশ কিছুদিন আগেকার ভাত, জলে থেকে থেকে গলতে শুরু করেছে। তাই কোনোরকম বাঁচার জন্য খেয়ে, এক গ্লাস পানি পান করে আবার প্লাটফর্মে ফিরে এলাম। কাপড় ভরা পলিথিনের ব্যাগটি মাথায় দিয়ে ঘুমোনোর ভান করে পড়ে থাকলাম।
সারাদিন সারারাত এভাবেই থাকতে থাকতে এবং আরও বার দুয়েক পান্তাভাত কিনে খেয়ে তিন দিন কাটিয়ে ফেললাম। নিজেকে দেখে আর নিজেই চিনতে পারছিলাম না। পথের ধারে পড়ে থাকা একজন ভিক্ষুকের থেকেও জীর্ণ হয়ে পড়েছিলাম। ক্লান্তি ও বিষণ্ণতা আমাকে গ্রাস করেছিল। প্রতিমুহূর্তেই মনে হচ্ছিল, এবার বুঝি মৃত্যু হবে! মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ব!
তিনদিন পর প্রথম ট্রেনটি আবার রামপুরহাট মুখী ছাড়ল। ট্রেনে উঠে দীর্ঘশ্বাস ফেললাম।
বাড়ি এসেই ভীষণ জ্বর। স্যাঁতসেঁতে মেঝে। তবুও পলিথিন পেতে, তালাই পেতে তার উপরেই হুহু করে কাঁপতে লাগলাম। প্রায় সাত দিন কেটে গেল জ্বর ছাড়তে। দেখলাম মুখে স্বাদ নেই। রোগাসোগা পাটকাঠির মতো খিনখিনে হয়ে পড়েছি। এই অবস্থা থেকে সামলে উঠতে প্রায় মাসখানেক লেগেছিল। তারপর একদিন শুনতে পেলাম, বন্যার কারণে যাদের ইন্টারভিউ হয়নি তারা পুনরায় ইন্টারভিউ দিতে পারে। সঙ্গে পুরনো চিঠিখানা নিয়ে গেলেই হবে।
অবস্থা স্বাভাবিক হলে একদিন ওই বিশ্বভারতী ফাস্ট প্যাসেঞ্জার ধরেই বর্ধমান রওনা দিয়েছিলাম। এসএসসি অফিসে ঢুকেই ইন্টারভিউয়ের জন্য এসেছি বলে নিজের নাম এন্ট্রি করিয়েছিলাম। কিছুক্ষণ পর ডাক পড়লে ভিতরে গিয়ে দেখি তিনজন লোক সারিসারি বসে আছেন, তাদের প্রত্যেকের হাতেই খাতা ও কলম। প্রথমজন খদ্দরের পাঞ্জাবি পরা কাল মার্কসীয় চেহারার। ডাকা মাত্রই আমাকে বললেন, ‘বসুন’। তারপর যেমন কথোপকথন হলো:
—আপনার নাম তো দেখছি ‘খান’ যুক্ত। তা আসল বাড়ি কোথায় জানতে পারি?
—আসল বাড়ি তো বীরভূম জেলায়, রামপুরহাট ব্লকের পানিসাইল গ্রামে!
—না সে বাড়ির কথা বলিনি, অরিজিনাল বাড়ি, মানে আপনারা কোথা থেকে এসেছেন—বিহার না পূর্বপাকিস্তান?
—তা-তো আমি বলতে পারব না! আমার জন্ম এখানে, আমি পূর্বপুরুষদের কথা কী করে বলব?
—আপনাদের মাতৃভাষা কী—উর্দু না হিন্দি? এটা বলতে পারলেই আপনাদের আসল ঠিকানা পাওয়া যাবে।
—আমার তো মাতৃভাষা বাংলা! আমি তো হিন্দি উর্দু কিছুই জানি না!
—আপনি বাংলা নিয়ে কেন পড়লেন?
—এটা আমার মাতৃভাষা, এই ভাষার প্রতি আমার যেমন গভীর অনুরাগ, তেমনি গভীর শ্রদ্ধাও।
—’হনুমান’ শব্দের ব্যুৎপত্তি নির্ণয় করুন।
এবার বিভ্রান্ত হয়ে পড়লাম। তখন চোখের সামনে সবই অন্ধকার দেখছিলাম। আরও দু’জন কমবয়সী অধ্যাপক মনে হলো। তারা বললেন, “আপনি আসতে পারেন।”
আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বেরিয়ে এলাম। এ কী ইন্টারভিউ ছিল, নাকি অন্য কিছু জানার প্রয়াস? কতজনকে সাহিত্যের কত রকম প্রশ্ন ধরা হয়, আর আমাকে এইসব? শেষ পর্যন্ত নিজেও হনুমান হয়ে ফিরে এলাম।
পরে জেনেছিলাম ‘হনু’ শব্দটি সংস্কৃত ভাষা থেকে এসেছে। ‘হনু’ শব্দের অর্থ ‘চোয়াল’ বা ‘চিবুক’। ‘মান’ অর্থ অহংকার। বিকৃত বা ভাঙা মুখ নিয়ে রামের সেবক হয়েছিলেন। তাই হনুমান। হনুমানের অহংকার চূর্ণ হয়েছিল। এরকম প্রশ্ন আমি আশা করতে পারিনি।
সেবার চাকরিও আমার হয়নি। এত কষ্টের পরও কেন যে চাকরি হয়নি তা ভেবে অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম। তখন বামফ্রন্টের যুগ। কিন্তু মানুষের মনেও সাম্প্রদায়িকতার ঘন অন্ধকার আরও জমাট বাঁধছিল। বিদ্বেষের একটা চোরা স্রোতের বহমানতা উপলব্ধি করতে পারছিলাম। মুসলমান ঘরে জন্ম নিয়ে আমি যতই ভালো মানুষ হই না কেন, যতই উদারতা দেখাই না কেন, যতই উপকার করি না কেন—দিন শেষে আমাকে জিহাদি,সন্ত্রাসী, পাকিস্তানি, মৌলবাদী অভিধাগুলি শুনতেই হয়। আমার নাম, আমার ভাষা, আমার ধর্ম, আমার খাদ্য সবকিছু নিয়েই কটাক্ষ করা হয়। কোথাও ভদ্রভাবে, কোথাও ইতরভাবে। তাই এত ভয়ে ভয়ে থাকি, কখন কী দোষ করে ফেলি এই ভাবনা থেকেই অনবরত সতর্কতাও আমাকে অবলম্বন করতে হয়।
চাকরির ভরসা ছেড়ে কলেজ পার্টটাইমার হিসেবেই বেঁচে থাকতে চাইলাম। আবার এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য জোর প্রস্তুতি নেওয়ারও প্রয়োজনীয়তা বোধ হলো না। বরং হতাশায় নেশার পানীয়তেই আসক্ত হয়ে পড়লাম। এমনি করেই ২০০২ সাল এসে পড়ল। যথারীতি এসএসসি পরীক্ষা দিতে চললাম এবার মুর্শিদাবাদে। সিট পড়ল বহরমপুরের ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে। বাসে গিয়ে রিকশা ধরে তারপর কলেজ পৌঁছালাম। আমার সিট একেবারে আগের দিকে। প্রশ্নপত্র হাতে পেয়ে বুঝলাম, এসব তো সবই জানা, উত্তর দিতেও বেশিক্ষণ লাগবে না, কিন্তু তবু কি চাকরি হবে? যা হোক পরীক্ষা তো দিই! আর এই উত্তরাঞ্চল জোনে পরীক্ষা দিচ্ছি প্রথম। সুতরাং ভাগ্য ভালো হলে হতেও পারে। ক্ষীণ আশা নিয়েই সেদিন পরীক্ষা দিয়ে এসেছিলাম।
মাস দুয়েকের মধ্যেই ভাইবার চিঠি এসে পৌঁছাল। মালদহতে এসএসসি অফিসেই ইন্টারভিউ। একদিন আগেই গিয়ে উপস্থিত হলাম দূর সম্পর্কের এক আত্মীয়ের বাড়িতে। সারারাত চোখে ঘুম এলো না। একটা চিন্তা মাথায় ঘুর ঘুর করতে লাগল। কী প্রশ্ন করবেন? গতরবারের মতো করবেন না তো? নেওয়ার ইচ্ছা না থাকলে তো কত রকমভাবেই অপদস্ত করেন। জানি না এবার কী হয়। দুরু দুরু বুকেই ভিতরে প্রবেশ করলাম।
এবার ইন্টারভিউ বোর্ডে একজন অধ্যাপিকা এবং দু’জন অধ্যাপক। অধ্যাপিকাই প্রশ্ন করলেন:
—এর আগে এসেছি দেননি?
—হ্যাঁ দিয়েছিলাম, পাসও করেছিলাম। কিন্তু চাকরি হয়নি।
—আশ্চর্য লাগছে! এরকম রেজাল্টেও চাকরি পাননি!
—গত সংখ্যা ‘দেশ’ পত্রিকায় ‘ঘাসকাটা’ নামক কবিতাটি কি আপনি লিখেছিলেন?
—হ্যাঁ, আমিই লিখেছিলাম। জানেন আপনি কী লিখেছিলেন?
—নিজের জীবনকথাই লিখেছিলাম। এতোটুকু ছলনা ছিল না।
—কিন্তু একটা ঐতিহাসিক পট পরিবর্তনের ইঙ্গিত আছে, বামফ্রন্টের শাসনের একটা মারাত্মক সমালোচনা আছে। কোন লাইনটি বলতে পারবেন?
—না, তা পারব না। আমি সেরকম কিছু ভেবেও লিখিনি।
—ওই যে “আর একটু দাঁড়াও কার্ল মার্কস/ কয়েক শতাব্দী আরও কেটে নিই ঘাস।” এই দুটো লাইন পড়েই চমকে গেছিলাম।
—আচ্ছা প্রসঙ্গ পাল্টাই, মাধ্যমিকে উচ্চ মাধ্যমিকের বাংলার সিলেবাসটি বলুন।
এই প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দেবার পর তিনি আর প্রশ্ন করলেন না। আরও যারা দু’জন ছিলেন তারা কয়েকটি প্রশ্ন করেছিলেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—বাংলা সাহিত্যে মালদহের অবদান। মালদহ জেলার একটি লোকসংস্কৃতির পরিচয় ইত্যাদি। কেন আমি উত্তরাঞ্চল জোনে আবেদন করেছি তাও জানতে চাইলেন।
ইন্টারভিউ দেওয়ার প্রায় এক বছর পর প্যানেল প্রকাশিত হয়েছিল । জেনারেল ক্যাটাগরিতে আমার র্যাঙ্ক হয়েছিল ৩৬। ২০০৪ সালের জানুয়ারিতেই জয়েন করেছিলাম জঙ্গিপুর দু’নম্বর ব্লকের খামরা ভাবকি উচ্চ বিদ্যালয়ে। চাকরি জীবনের প্রথম সূচনা এখানেই। শুরু হয় ভাড়াটিয়া জীবন। চাকরি পাওয়ার আগে এই জঙ্গিপুরে বেশ কয়েকবার এসেছিলাম। একবার ‘রংধনু’ পত্রিকার সম্পাদক জয়নুল আবেদীন ডেকেছিলেন লালগোলায়। তখন এই পথ দিয়েই লালগোলা গিয়েছিলাম। আরেকবার এসেছিলাম নুরুল আমিন বিশ্বাসের বাড়ি। তিনি তখন জঙ্গিপুরেই থাকতেন।
প্রথমদিকে ভালো ভাড়াবাড়ি পাওয়া যায়নি। একটা অন্ধকার ঘর। দিনের বেলাতেও আলো জ্বেলে তবেই সবকিছু দেখতে পেতাম। জানালা দিয়ে অনবরত ড্রেনের গন্ধ আসত। প্রায় মাস ছয়েক থাকার পর আরেকটি ঘর পেয়েছিলাম। সেটি অবশ্য ঘরের ভিতরে ঘর। ঘরের মালিক ওপর তলায় থাকতেন। নিচের তলায় ভাড়াটিয়া। কিছুটা সুবিধা হলেও জল তোলা এবং বাথরুমের খুবই অসুবিধা হতো। বাড়িওয়ালার ৫-৬টা মেয়ে। দু’নম্বর যুবতী মেয়েটি এসে ভাড়া বাড়ির সামনের উঠানে থাকা টিউবয়েলে খোলামেলা স্নান করত। দরজা ভেজিয়ে রাখলে ভেজা কাপড়ে এসেই উঁকি মারত। সুকুমার রায়ের খুড়োর কলের মতন তখন মনে হতো।
“সামনে তাহার খাদ্য ঝোলে যার যেরকম রুচি—/মণ্ডা মিঠাই চপ্ কাটলেট্ খাজা কিংবা লুচি।/ মন বলে তায় ‘খাব খাব’, মুখ চলে তায় খেতে,/ মুখের সঙ্গে খাবার ছোটে পাল্লা দিয়ে মেতে।/ এমনি করে লোভের টানে খাবার পানে চেয়ে, উৎসাহেতে হুঁস্ রবে না চলবে কেবল ধেয়ে।/ হেসে খেলে দু-দশ যোজন চলবে বিনা ক্লেশে,/খাবার গন্ধে পাগল হয়ে জিভের জলে ভেসে।” নারীবিহীন জীবনের অনেকটা পথ তখন অতিক্রম করে চলে এসেছি। বিবাহ হচ্ছে না বলে নারী কিনতে গিয়েও ফিরে এসেছি। সেই মরুময় জীবনে যখন এমন মেঘের সমারোহ তখন যতই নিজেকে প্রবোধ দিই না কেন—মনকে কিছুতেই আটকাতে পারি না। মুখের সামনে যেন খাবার ঝুলছে। তাই বারবার সেদিকে চেয়ে থাকছি। শ্বেতশুভ্র সুগঠিত নিতম্ব-ঊরু থেকে উন্নত বক্ষ যুগল তীব্র থেকে তীব্রতর আসক্তির কারণ হয়ে উঠছে। কোমর পর্যন্ত মাথার লম্বা চুল। রঙিন পোশাক-আশাকেও নায়িকার মতো চালচলন। সবকিছুই যেন পরিকল্পিত একটি ব্যাপার। তারপর আবার এক নতুন আবদার শুরু হয়েছে। বাংলা নিয়ে পড়তে শুরু করেছে বলে, যখন তখন বুঝিয়ে নেওয়ার ছলে কাছাকাছি আসতেও শুরু করেছে। নিজ হাতে কখনো মাংস রান্না করে, তো কখনো ক্ষীর। সেসব বাটি ভরে খাওয়াতেও শুরু করেছে। এত দ্রুত আমার সঙ্গে ওরা মিশে যাবে তা স্বপ্নেও ভাবিনি। যেন কতকাল পরে আমি তাদেরই আপনজন তাদেরই গৃহে ফিরে এসেছি। তাই এত খাতির। এত আবদার। একদিন এসেই জিদ করে বলল, “আজ স্যারের সঙ্গে মেলা যাব; কেমন মেলা স্যার দেখবেন। চলুন সবাই মিলে ঘুরে আসি।”
আমি যেতে পারব না বলে যতই ওজর করতে লাগলাম, ততই ওরা পেয়ে বসল। মনের ভিতর যে ইচ্ছে জাগছিল না তা নয়। তাই ওদের তিন বোনের সঙ্গেই সেদিন মেলায় গিয়েছিলাম। মেলা গিয়ে সিটি গোল্ডের মালা ও চুড়িও কিনে দিতে হয়েছিল। সুন্দরী যুবতীর সঙ্গে মেলা থেকে ফিরতে ফিরতে নিজেকে স্বপ্নের নায়কের মতোই মনে হয়েছিল। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, একেই বিয়ে করব। একে নিয়েই ঘর বাঁধব। আর কোথাও মেয়ে দেখতে যাব না।