ম্যাডামের দেশে ১
~
কোনও চিহ্ন রাখবেন না ম্যাডাম
এটা দাস ক্যাপিটালের যুগ
ঘরে ঘরে মার্কস ঢুকে যাবে।
বেনো জলে মার্কস আসার আগে
এসএমএস করে রাখবেন—
‘পরের ক্ষেতের ধান,
রাখিব অম্লান
কারোর ঘরে আগুন দিবো না রাগে।’
আরও বলবেন, রুপোর মূল্যে স্বর্ণ বিক্রি হবে
যার যা চাহিদা, আইফোন, বিরিয়ানি, সবই পূরণ হবে।
২০১৫
ম্যাডামের দেশে ২
~
মনে রেখ শাসক
লড়াই সংক্রামক!
বৃথা লাঠি-বন্দুক
ক্ষত-বিক্ষত বুক
তার মাঝে লালরঙা
প্রতিরোধ উৎসব!
শ্রাবণের ফ্যাসিবাদী রাতে
শুধুই সাপলুডু, ছেড়ে গেছে প্রেম
ও ম্যাডাম, ও প্রিয়
তোমার চুমুতে মরে গেলে
মিথ্যা কান্না ছুঁড়ে দিও!
তুমিই দেশপ্রেমিক, আমরা শুধুই শ্রমিক!
তুমি সর্বজ্ঞানী, আমরা বুঝি না কিছু
পেটে খিদা নিয়ে শান্তশিষ্ট আছি—
জিডিপি বেড়েছে মাথাপিছু!
২০১৮
ম্যাডামের দেশে ৩
~
ছেলেরা দখল নেবে সান্ধ্যকালীন মেঘ
মধ্যবিত্ত হাসি-খুশি মনে, হৃদয়ে আমার
ভালোবাসা-প্রেম নুয়ে পড়ে আন্দোলনে
ঘুরে যাবে সব, উলোট-পালোট
যেহেতু পৃথিবী গোল
ফ্যাসিস্ট হাহাকার, ঘুরেফিরে বারবার
খুব বেশি আবোল তাবোল!
হবে না সুযোগ, হয় না ম্যাডাম
মেহনতি মহাকাশ
(যদিও আবেগের দাস)
বৃথাই আবেগ প্রবণ!
২০১৯
স্বাধীনতা লাগবে
~
যে শিশুর ঘুম ভাঙে বুলেটের শব্দে, বারুদের গন্ধে
তার জন্য এ লেখা, তার পাশে দাঁড়াবে এ কবিতা৷
যে নাগরিক ঘুমাতে পারে না অজানা আতঙ্কে
তার স্বাধীনতা লাগবে৷
যে মেয়েটা বাড়ি ফেরে সন্ধ্যার পর
তার স্বাধীনতা লাগবে৷
যে লোকটা খুপড়ি-ঘরে বৌ-বাচ্চা নিয়ে অভুক্ত
তার স্বাধীনতা লাগবে৷
যে শিক্ষক পরীক্ষা-হলে নকল ঠেকাতে মার খায়
তার স্বাধীনতা লাগবে৷
যে ছাত্র টাকার অভাবে ফরম-ফিলাপ করতে পারে না
তার স্বাধীনতা লাগবে৷
যে কৃষক ফসলের ন্যায্যমূল্য না পেয়ে অভুক্ত এই মুহূর্তে
তার স্বাধীনতা লাগবে৷
যে শ্রমদাস জন্মলগ্ন থেকে শ্রমের শিকলে বন্দী
তার স্বাধীনতা লাগবে৷
যে মা সারাদিন গৃহকর্ম করেও শান্তিতে ঘুমাতে পারে না
তার স্বাধীনতা লাগবে৷
যে পিতা ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে আত্মহত্যা করে
তার স্বাধীনতা লাগবে৷
যে যুবক ঘুষ দিতে না পারায় চাকরী পাচ্ছে না
তার স্বাধীনতা লাগবে৷
যে সাংবাদিক সংবাদ প্রকাশের আগেই খুন হয়ে যায়
তার সন্তানের স্বাধীনতা লাগবে৷
যে ব্যবসায়ী চাদার টাকা দিতে না পারায় আহত পড়ে থাকে রাস্তায়
তার স্বাধীনতা লাগবে৷
যে জননী বিরোধী দলকে ভোট দেয়ায় গণধর্ষিত হয়
তার স্বাধীনতা লাগবে৷
যে মেয়েটা টিউশনী থেকে আর বাড়ি ফিরে এলো না
যার লাশ সেনানিবাসের জঙ্গলে পড়ে থাকে
তার স্বাধীনতা লাগবে৷
যে দেশে পাহাড় স্বাধীন নয়—নিঃসঙ্গ শেরপা
তার স্বাধীনতা লাগবে৷
যে কবি ফেসবুকে কবিতা লেখার জন্য আইসিটি অ্যাক্টে কারাগারে
তার স্বাধীনতা লাগবে৷
যে কৃষক এখন শহুরে রিকশাচালক
তার স্বাধীনতা লাগবে৷
পুলিশ যে যুবককে মিথ্যা মামলায় জেল খাটাচ্ছে
তার স্বাধীনতা লাগবে৷
দেড়শ’ বছর বাস করার পরেও যে গাছের নাগরিক অধিকার নাই
তার স্বাধীনতা লাগবে৷
‘সংখ্যালঘু’ নাম দিয়ে যাকে প্রকাশ্যে-গোপনে চড় মারা হয় প্রতিদিন
তার স্বাধীনতা লাগবে৷
যে কার্টুনিস্ট রাষ্ট্রীয় রোষানলে নির্মম অত্যাচারিত
তার স্বাধীনতা লাগবে৷
যে লেখককে জেলখানায় পেটাতে পেটাতে হত্যা করা হয়েছে
তার স্বাধীনতা লাগবে৷
যে মেয়েটিকে মন্দিরে দিনের পর দিন ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে
তার স্বাধীনতা লাগবে৷
‘নাস্তিক’ উপাধি দিয়ে অতিসহজে যাকে হত্যা করা যায়
তার স্বাধীনতা লাগবে৷
যে দর্জ্জি নিজেও জানে না কেন তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হল
তার স্বাধীনতা লাগবে৷
যে শিশু মোবাইলে বলল, ‘আব্বু, তুমি কানতেছ যে…?’
তার স্বাধীনতা লাগবে৷
যে প্রাণীদের বন থেকে ধরে চিড়িয়াখানায় বন্দী করা হয়েছে
ওদের স্বাধীনতা লাগবে৷
লাগবেই লাগবে৷
যা কিছুই হোক
যতোটা কষ্ট হোক
যতোটা জীবন চলে যাক পথে—
অহেতুক জীবনহীনতায়
ভালো হয় রাজপথে মরে গেলে,
তার থেকে ভালো হয়
ডিয়ার স্বাধীনতা—তোমাকে পেলে!
নভেম্বর ২০২০
অন্ধ দৈত্যের দ্বেষ
~
স্বরযন্ত্র চিনে ফেলেছি আজ
শ্বাসনালী কেঁপে ওঠে শব্দের তোড়ে
নির্লজ্জ আর উদ্ধত ভঙ্গির হাসিতে
বিপন্ন নগরব্যাপী তৃণ, যেন
দীর্ঘদিনে পেকে ওঠা সূর্যের কল্পনা!
হাওয়ার পায়ে রূপোর বালা
থাকো দ্বন্দ্বহীন— দ্বন্দ্বমুখর
এদিক-ওদিক ঘুরে
দ্যাখো বিদ্বেষ— কলহপ্রবণ সংকল্প৷
আকর্ষণ, ঝলমলে মায়া হারাচ্ছে
নীল সংঘ, উপনিবেশ৷
পথ ভুল করা হাতিদের দীর্ঘশ্বাসের মতো
কৃত্রিম নিসর্গনামক অর্জন, সাময়িক
আবহমান নৈঃশব্দ্য তাকে উপহাস করে—
তড়িৎ-প্রবাহ দেখে মনে হয়, যা কিছু
নিরুপায় সবুজ— ওরা রৌপ্যনির্মিত
সহানুভূতিহীন; শুধুই লুটপাট, অন্ধদৈত্যকূল!
জানুয়ারি ২০২৪
বিদ্যুৎ-চমকের মতো
~
মুখোমুখি দাঁড়ালে এসে
ঝড়ো বাতাশের কৌতুক৷ অথচ শান্ত
ভীষণ, বাইরে দাবানল
মুখরস্বভাবে৷
আশ্চর্য ঢিবির নীচে, নিঃস্ব ভ্রমর
আঁকড়ে ধরবে কাকে?
দ্বিধাগ্রস্ত হাওয়ায়
দুলে ওঠে সামাজিক প্রেম!
বিদ্যুৎ-চমকের মতো
পাঁচিল ডিঙিয়ে এলো
মূর্তিমান অন্ধকার— ঠেকানো
যাবে না আজ কাউকেই৷
ওইসব মৃত্যুর মতো হাসিঠাট্টা
ভাসে ব্যক্তিগত ঝর্ণার জলে৷
এই নিয়ে প্রতিরাতে
ঘুমের ভেতরও নিশ্চিত গোলযোগ৷
ক্ষীণ আলোয় দেখি স্বপ্ন নেই কোনো
স্পষ্ট বেটোফেন বুক-ভাঙা শ্বাসে৷
মার্চ ২০২৪
ভালো লাগলো।