(১)
ঝাঁঝালো বারুদ
খুব বেশিদিন কুয়াশার চাদরে লুকিয়ে রাখা শকুনের ঠোঁট লুকিয়ে রাখা যাবে না।
সর্ব রোগের পথ্য হিসেবে একটি নগণ্য কাঠিতে বারুদের ঘ্রাণ এখনো পুরোপুরি বেঁচে আছে…
শ্বাস-প্রশ্বাস, রক্তরসে অস্তিত্ব শিরদাঁড়া সোজা করে জেগে আছে…
জ্বলতে জ্বলতে আকাশ, বাতাস, মাটিতে দাবানলের বজ্রনিনাদে জুলুমবাজের ওপর রেগে আছে…
জিহ্বা ও কণ্ঠে আরো কিছু কঠিন, আরো কিছু ধারালো অস্ত্র শাশ্বত সানে তীক্ষ্ণফলার মতো তীক্ষ্ণ হয়ে আছে…
নারীপ্রকৃতির চারপাশে প্রয়োজনে, হাতে হাত রেখে কিছু জন পুরুষ ও পিতা আছে…
শিশিরের সোহাগে আরো কিছু নরম ফুল সবুজ ও নরম মায়ের কোলে আদরে বসে আছে…
খুব বেশিদিন কুয়াশার চাদরে শকুনের ঠোঁট লুকিয়ে রাখা গেলে এবার প্রলয় হবে; মাতৃ আদর ছেড়ে সমস্ত শিশু ঝাঁঝালো বারুদ হবে…
রামপুরহাট, বীরভূম, ভারত
১৮/৮/২০২৪
(২)
রক্ততিলক
আয়, আয় রে ছুটে, দেশ না লুটে, জঞ্জালে, পরিষ্কারে হাত লাগা, হাত লাগা _ হাত লাগা, হাত লাগা…
ভয় কি মিছে, থাকিস না পিছে, সমান সমান কাঁধ লাগা, কাঁধ লাগা _ কাঁধ লাগা, কাঁধ লাগা…
আয়, আয় রে ছুটে, দেশ না লুটে, সমান সমান কাঁধ লাগা, কাঁধ লাগা _ কাঁধ লাগা, কাঁধ লাগা…
‘অনাচারীর ‘করমর্দন করে লাভ কি মিছে,
জিভ বাড়িয়ে না পা চেটে, রক্ততিলক থাক আঁকা,থাক আঁকা _ থাক আঁকা, থাক আঁকা…
রামপুরহাট, বীরভূম, ভারত
১৮/৮/২০২৪
(৩)
তুমিও পার
আহঃ! কি অসাধারণ
পাকাপোক্ত একটা রং,
একটা ডাক, বাবা।
দাদা, তুমি বাবা হয়ে ওঠো,
তোমারও তো মেয়ে আছে।
তাহলে…!
আসলে তোমার মেয়ে
‘মেয়ে’ আর অন্যের মেয়েরা…!
তুমি বলতে পারলে…!
সত্যি, তুমি বলতে পারলে…!
এসব বিচ্ছিন্ন ঘটনা…
ছিঃ! দাদা, তুমিও তাহলে
পারো বলতে এসব কথা …
রামপুরহাট, বীরভূম, ভারত
১৭/৮/২০২৪
(৪)
নীল অভিমান
ভবিষ্যতের পূর্বাভাস দিয়ে বললাম,
শান্তিময় তারা দের পাশে তোমার হাতে হাত রেখে থাকবো শেষ জীবনটা।
প্রতিটি নিদ্রালু সকালে তোমার শরীরে শরীর ভিজিয়ে,
প্রভাতীয়া স্নান সেরে সুগন্ধ বিলাবো প্রেমলোকে।
ঠিক তখনই তোমার চোখ থেকে পড়লো অতৃপ্তি, অগ্নিপিণ্ড ,অনুভবে রাধা ও মীরার হাহাকার।
পুড়ে গেল সবুজ হৃদয়,
ইচ্ছে হলো জড়িয়ে ধরি, খুব নিবিড় করে জড়িয়ে ধরি,
বাঁচার কিছু প্রেম দিয়ে গড়িয়ে ধরি।
তুমি খুব তাড়াতাড়ি তোমার দেহকে মুক্তি দিতে প্রস্তুত,
প্রতিদিন একটু একটু করে হেমলোক চুম্বনে খেলছো জীবনের জুয়া।
আমি তখন আরো ভেঙে পড়লাম, আমি তখন আরো দুর্বল থেকে দুর্বল।
কে তোমার নরম হৃদয়টা ভেঙে দিয়েছে এভাবে,
ভেবে ভেবে অস্থির হয়ে পড়লাম।
এখনো সময় আছে, নিজেকে গুছিয়ে নাও,
নিজেকে বাঁচিয়ে নাও,
তোমার জন্য না হলেও, আমার জন্য নিজেকে গুছিয়ে নাও এই মুহূর্তের মর্ত্যলোকে ছোট্ট এই প্রতিশ্রুতি বন্ধু আমাকে দিয়ে যাও।
তুমি কথা দিলে, একদিন আসবে আমার ঘরে,
দেবদাস যেমন এসেছিল পারুর সঙ্গে দেখা করতে বিদায়কালে।
রামপুরহাট, বীরভূম, ভারত
১৬/৮/২০২৪
Blue Resentment
With a prediction for the future, I said,
I will hold your hand and stay beside the peaceful stars for the rest of my life.
Every sleepy morning, drenching my body in yours,
I will offer the fragrance of love after a morning bath.
Just then, from your eyes fell unsatisfied fireballs,
In the feeling, the cries of Radha and Meera.
The green heart burned away,
I wished to embrace you, to hold you close,
To hold you with the love that sustains life.
You were quickly prepared to free your body,
Every day, little by little, playing life’s gamble with the kiss of Hemlock.
I then broke down further, I grew weaker and weaker.
Who shattered your soft heart this way,
Thinking about it, I became restless.
There is still time, gather yourself,
Save yourself,
Even if not for you, then for me, in this mortal world, give me this little promise, my friend.
You promised, one day you would come to my home,
Just as Devdas came to see Paro at the time of farewell.
Jasmina Khatun
Rampurhat, Birbhum, India
16/08/2024
(৫)
আবেগী মেলামেশা
পূর্ণিমার আলোর মতো স্বচ্ছ, স্নিগ্ধ; পাখির কূজনের মতো নিখুঁত, মাধুর্যপূর্ণ; প্রভাতীয় সূর্যের মতো উত্তেজনাপূর্ণ, জয় করার জাদুকাঠি শব্দ তোমার আয়ত্তে।
তোমার সুরের ছোঁয়া লাগুক আমার কাব্যগ্রন্থের গদ্য কবিতায়; নিটোল, ছিমছাম, পরিষ্কার হয়ে উঠুক আমার কাগজপত্র।
দ্বিতীয় মোনালিসা চোখ মেলুক জাগ্রত অসীম, অপরিবর্তিত চলমান অক্ষর সীমায়।
আমার সোনালী স্বপ্নের আরশিনগর তোমার লাজুক ও মুখরাচর ভীষণ আবেগী মেলামেশা।
রামপুরহাট, বীরভূম, ভারত
১৬/৮/২০২৪
(৬)
স্বাধীনতা
কতটা স্বাধীন হয়েছি আমরা সম্মান আর প্রতিবাদে।
বোবা কালার মতো বসে আছি স্বাধীনতার অপব্যবহারে।
উন্নয়নের লক্ষ্যে দেখো হাহাকার বুকে আর পেটে।
হীন বুদ্ধির সম্মুখে স্বাধীনতা কেঁদে কেঁদে আবার স্বাধীন হতে বলে।
কতটা স্বাধীন হয়েছি আমরা সম্মান আর প্রতিবাদে।
লক্ষ কোটি চেতনার ফুল দলিত হয় এখনো এই দেশে।
লিঙ্গ বৈষম্য এখনো দশ দিকে।
শিক্ষিত বেকার আজ যোগ্য অধিকার না পেয়ে অনাহারে মরে, শেষমেশ ভিক্ষার অন্ন খেয়ে।
কতটা স্বাধীন হয়েছি আমরা সম্মান আর প্রতিবাদে।
তবুও যখন খোলা আকাশে আমাদের জাতীয় পতাকা মাথা তুলে উড়ে বাতাসে,
আমরা মাথা নত করে সম্মান জানাই, যাদের জন্য স্বাধীনতা পেয়েছিল এই দেশে।
রামপুরহাট, বীরভূম, ভারত
১৫/৮/২০২৪
কবি পরিচিতি
কবির প্রথম একক কাব্যগ্রন্থ “সিক্ত জুঁই” ১৪ নভেম্বর ২০২৩ সালে কলকাতার “ভারতী পাবলিকেশন” থেকে প্রকাশিত হয়।
তার যৌথ কাব্যগ্রন্থ “রাঙ্গামাটির রাজবাড়ি” বাংলাদেশের একুশে বইমেলায় প্রতিবিম্ব প্রকাশনীর হাত ধরে ২০২৪ সালে প্রকাশিত হয়।
তার দ্বিতীয় যৌথ কাব্যগ্রন্থ “জান্নাতি জুঁই” কলকাতার আনন্দ প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হয়েছে। ১৪ই এপ্রিল ২০২৪।
তার কবিতা বিভিন্ন দেশে অনূদিত হয়ে দেশীয় লোকাল পত্রিকা, অনলাইন পত্রিকা এবং ম্যাগাজিনে স্থান পেয়েছে। সেই সূত্রে তিনি কিছু কিছু সম্মাননা অর্জন করেছেন।
তার পিতা মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন শেখ একজন অবসরপ্রাপ্ত প্যাথলজিস্ট। মাতা ওরা উল ওরা অত্যন্ত সাহিত্যমনস্ক, নম্র-ভদ্র, সামাজিক ও মানবিক গুণাবলীসম্পন্ন একজন শিক্ষিত সুদর্শন গৃহিণী।
চার ভাইবোনের মধ্যে কবি প্রথম সন্তান। গ্রামের স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা অর্জনের পর তিনি বাংলা সাহিত্যে অনার্স ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি ডিএড, আর্ট এন্ড ক্র্যাফট এবং কম্পিউটারে ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জন করেন।