১.জীবন কি? আপনার বর্তমান জীবন, অবস্থান– যা হতে চেয়েছিলেন বা যা হয়েছেন–এসব নিয়ে কোন আক্ষেপ, অনুশোচনা বা গর্ব হয়?
সায়ীদ আবুবকর: জীবন তো নানা জনের কাছে নানা রকম। হ্যামলেটের কাছে ‘It is a tale told by an idiot signifying nothing’ কারণ একই সাথে সে তার পিতা, মাতা, সিংহাসন ও প্রিয়তমাকে হারিয়ে হতাশ হয়ে পড়েছিল; তাঁর চাচা ক্লডিয়াস তাঁর ঘুমন্ত পিতার কানে সাপের বিষ ঢেলে হত্যা করে সাপে কেটেছে বলে প্রচার করেছিল, অতঃপর সিংহাসন দখল করে তাঁর মাতা গার্ট্রুডকে বিবাহ করে তার রানী বানিয়েছিল;:এরকম অবস্থায় জীবন যে-কারো কাছে অর্থহীনই মনে হতে পারে। আবার জীবন কারো কারো কাছে শস্যক্ষেত্র; দুনিয়াতে সে শস্য ফলিয়ে আখেরাতের জন্যে সঞ্চয় করে। ইহুদী পণ্ডিতরা এসে রসুলুল্লাহ (সা)কে জিজ্ঞাসা করেছিল, জীবন কী? এর প্রেক্ষিতে কুরআনের আয়াত নাজিল হয়েছিল: জীবন হলো আল্লাহর হুকুম।
এটা মুসার লাঠির মতো, আল্লাহ হুকুম করলেই এটা সাপ হয়ে যায়, আবার হুকুম করলেই ফের লাঠি হয়ে যায়। কারো কারো কাছে, যুদ্ধই জীবন। “যুদ্ধই তো জীবন বস্তুত, বাকি সবই মরে থাকা;/সে-নদীই সেরা নদী, গতি যার আাঁকাবাঁকা।“
বর্তমানে আমি সরকারি কলেজের অধ্যাপক; দুই কন্যা ও এক পুত্রের পিতা; বড় মেয়ে ইঞ্জিনিয়ার, রুয়েট থেকে ট্রিপল ই-তে সদ্য পাশ; ছোট মেয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সাইন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ছাত্রী, একমাত্র ছেলে কুরআনে হাফেজ ও রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষার্থী; স্ত্রী গৃহিণী; এদেরকে নিয়ে রাজশাহী শহরে নিজের বাড়িতে থাকি।
হতে চেয়েছিলাম ক্যাডেট। ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজে পরীক্ষাও দিয়েছিলাম; রিটেনে টিকেছিলাম, কিন্তু কী কারণে জানি না আমাকে ভাইভাতে পাশ করানো হয়নি। ক্যাডেট কলেজে পরে অবশ্য আমি ফিরেছিলাম, তবে ক্যাডেট হিসেবে নয়, শিক্ষক হিসেবে। পাক্ষিক পালাবদলে ছিলাম এক বছর। আল মাহমুদ ভাইকে বললাম, মাহমুদভাই, ঢাকায় আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। আল মাহমুদ বললেন, এ বদ্ধ শহরে কি কোনো খাঁটি কবি বাস করতে পারে? তুমি পালাও। তো আমি পালালাম। যোগদান করলাম ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজে, চট্টগ্রামে। আমার অবস্থা হলো সেই মেষের মতো, যে শিয়ালের কাছ থেকে পালিয়ে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল নেকড়ের কাছে। ক্যাডেট কলেজের কঠোর রুটিন বাঁধা জীবন সইলো না আমার। আমি বিসিএস দিয়ে চলে এলাম সরকারি কলেজে। তবে সত্য, এসব আমি কখনোই হতে চাইনি। আশৈশব আমি একটা জিনিসই শুধু চেয়েছি, তা হলো, কবি হতে। কোনো কিছুতেই আক্ষেপ, অনুশোচনা বা গর্ব নেই। কেবল অতৃপ্তি আছে একটি ক্ষেত্রে, তা হলো, উৎকৃষ্ট কবিতা লেখার ক্ষেত্রে। কেবলি মনে হয়, খাঁটি কবিতাটি বোধহয় এখনো লেখা হয়ে উঠলো না।
২. আপনার শৈশব-কৈশোর কোথায় কেটেছে? কীভাবে কেটেছে? কোন অব্যক্ত কথা বা স্মৃতি কি মনে পড়ে? তাড়িত করে?
সায়ীদ আবুবকর: আমার শৈশব-কৈশোর কেটেছে গ্রামে। যশোরে। যশোরের কেশবপুর থানার রামভদ্রপুর গ্রামে আমার জন্ম। একটি অপূর্ব সুন্দর গ্রাম। প্রকৃতি যেন তার সব রূপ-রস ঢেলে দিয়েছে এই গ্রামে। এখানেই কেটেছে আমার দুরন্ত কৈশোর। মাঠেঘাটে দৌড়োদৌড়ি করে, পুকুরে-দীঘিতে সাঁতার কেটে, গাছের খোঁড়লে খোঁড়লে পাখির ডিম তালাশ করে, আম-জাম কুড়িয়ে, নারকেল-ডাব খাওয়ার প্রতিযোগিতা করে, শীতের সকালে কাঁসার বাটিতে টকটকে লাল খেজুরের রসে মুখ ডুবিয়ে, গোল্লাছুট-হাডুডু খেলে কোন ফাঁকে যে কেটে গেছে তুরীয় আনন্দে ভরা আমার উত্তাল কৈশোর, টের পাইনি আমি। ডিলান থমাসের মতো আমারও কেবলি ফিরে যেতে ইচ্ছে করে আমার সুন্দর গ্রামের সেই দুরন্ত কৈশোরে। অনেক স্মৃতিই তো আছে। সেসব কথা আমি লিখে যাচ্ছি আমার ইংরেজি স্মৃতিকথা The Life of a Bengali Poet -এ। পাওয়া যাবে Poemhunter.com- এ।
৩. সাহিত্যে এলেন কেন? কীভাবে এলেন? অর্থাৎ শুরুটা কীভাবে? কোথায়?
সায়ীদ আবুবকর: যারা প্রকৃত কবি, তাঁরা কবি হন কৈশোরে। এটা বোধহয় জন্মগত ব্যাপার। তবে এ ব্যাপারে আমার নিজেরও সংশয় আছে কারণ পৃথিবীর অনেক বড় কবি আছেন, যাঁরা কবি হয়েছেন পরিণত বয়সে। রবীন্দ্রনাথের ‘আমস্বত্ব দুধে ফেলি’ কবিতাটি পড়ার আগে আমি কবিতা লিখেছিলাম কিনা, মনে নেই। পঞ্চম শ্রেণিতে ওঠার পর বৃত্তি পরীক্ষার জন্য ‘আমার প্রিয় কবি’ রচনা পড়ার সময় আমি জানতে পারি যে, রবীন্দ্রনাথ প্রথম কবিতা লিখেছিলেন আট বছর বয়সে। কবিতাটি এই—
আমস্বত্ব দুধে ফেলি তাহাতে কদলি দলি
সন্দেশ মাখিয়া নিয়া তাতে
হাপুস হাপুস শব্দ চারিদিক নিস্তব্ধ
পিঁপড়া কাঁদিয়া যায় পাতে।
সত্যি কথা বলতে কী, এটা পড়ার পর আমার মাথায় যেন বাজ পড়ে। আমার বয়স তখন এগারো; অথচ কবিতা লেখা শুরুই হয়নি আমার। ফলে আর দেরি না করে বিশাল একটা খাতা তৈরি করে কবিতা লিখতে বসে গেলাম। তিন বছরের গ্যাপ দূর করার জন্য প্রতিদিন ষাট-সত্তরটা করে কবিতা লিখতে লাগলাম সংখ্যা দিয়ে রবীন্দ্রনাথকে হারিয়ে দেওয়ার জন্য।
৪. বাংলা ভাষার তথা বাংলাদেশের প্রধান কবিবৃন্দ যেমন : ফররুখ আহমদ, আহসান হাবীব, সৈয়দ আলী আহসান, আবুল হোসেন, শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ, ফজল শাহাবুদ্দীন, শহীদ কাদরী, আবদুল মান্নান সৈয়দ, আবিদ আজাদ প্রমুখ– তাদের সাহিত্যকে আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করেন? আর কার-কার সঙ্গে আপনার সখ্যতা বা বন্ধুত্ব বা ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ গড়ে উঠেছিলো বা আছে? তাদের সম্পর্কে আপনার অভিজ্ঞতা বা তাদের সাহিত্য নিয়ে আপনার মতামত জানতে চাই।
সায়ীদ আবুবকর: ফররুখ আহমদ, আহসান হাবীব, সৈয়দ আলী আহসান, আবুল হোসেন, শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ, ফজল শাহাবুদ্দীন, শহীদ কাদরী, আবদুল মান্নান সৈয়দ, আবিদ আজাদ—এঁরা প্রত্যেকেই অত্যন্ত বড় মাপের কবি। এঁদের প্রতি আমার গভীর শ্রদ্ধা ও ভালবাসা। বলা যায়, উল্লিখিত কবিবৃন্দের প্রায় সবাইকে নিয়ে আমি আলাদা আলাদা প্রবন্ধ লিখেছি, পাওয়া যাবে আমার ‘কবিতার আধুনিকতা’, ‘সাহিত্যের সাত-সতের’ ও ‘সাহিত্যের সীমানা’ গ্রন্থগুলোতে। ফররুখ আহমদ ও আহসান হাবীবকে আমি দেখিনি। শামসুর রাহমানের সাথে অনেক পত্রিকায় আমার কবিতা ছাপা হয়েছে—প্রথম কবিতা ছাপা হয় বাংলা একাডেমির উত্তরাধিকার-এ, ১৯৯২ সালে। সচিত্র বাংলাদেশের ঈদসংখ্যায় শামসুর রাহমানসহ বাংলাদেশের প্রসিদ্ধ সব কবির সাথে ছাপা হয় ‘প্রণয়ের প্রথম পাপ’ কবিতাটি, যেটি নিয়ে কবিদের মধ্যে প্রচুর আলোচনা হয়। সচিত্র বাংলাদেশের তখন সম্পাদক ছিলেন কবি কে জি মোস্তফা। আমি তখন আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি। ঢাকাতে গেলে কে জি মোস্তফা ভাই আমাকে জানান ‘প্রণয়ের প্রথম পাপ’ নিয়ে বিভিন্ন কবির অনুভূতির কথা। কিন্তু শামসুর রাহমানের সাথে কখনো মুখোমুখি দেখা হয়নি আমার। আমার সত্যিকারের ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে সৈয়দ আলী আহসান ও আল মাহমুদের সাথে। আবদুল মান্নান সৈয়দের সাথেও আমার নিবিড় সম্পর্ক ছিলো। পাক্ষিক পালাবদলে থাকার কারণে অনেক লেখকের সাথেই সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সৈয়দ আলী আহসান একজন ভিন্নমাত্রার কবি। আধুনিক বাংলা কবিতা নির্মাতাদের তিনি একজন। সৈয়দ আলী আহসানের কবিতার উপর আমার কয়েকটি প্রবন্ধ আছে। ‘পালাবদলে’র একজন নিয়মিত লেখক ছিলেন সৈয়দ আলী আহসাসন। বলা যায়, সৈয়দ আলী আহসানের লেখা ছাড়া পালাবদলের কোনো সংখ্যা বের হতো না তখন। নজরুলের অসমাপ্ত মরু-ভাস্করের আদলে পালাবদলে যখন আমার ‘মরু-ভাস্কর’ বের হতে লাগলো, স্যার সম্পাদক আবদুস সালামের মাধ্যমে আমাকে তাঁর বাসায় ডেকে পাঠালেন। কমোডর আতাউর রহমান, আবদুস সালাম ও আমি একদিন চলে গেলাম স্যারের বাসায়। স্যার আমার লেখার প্রশংসা করে অনেক কথাই বললেন। কিন্তু এক পর্যায়ে বললেন, মহম্মদ (সা)কে নিয়ে লেখার জন্য যে-ধরনের পঠন-পাঠন দরকার, তা বোধহয় তোমার নেই, এটা আমার মনে হয়েছে। হজরত মহম্মদ বিশাল একটা চরিত্র। তাঁর সম্পর্কে আরো জেনেশুনে, আরে অধ্যয়ন করে লিখলে ভালো হবে। স্যারের কথা আমি ভাবি এবং বিশ্বের বিখ্যাত সব নবি-জীবনী ও হাদিস-কুরআান অধ্যয়নে মনোযোগ দেই। তারপর তো আরো কয়েক সংখ্যায় মরু-ভাস্কর লিখে আমি লেখাই বন্ধ করে দেই। এর বিশ বছর পর আমি লিখতে শুরু করি আমার মহাকাব্য ‘নবিনামা’, যা সরলরেখা প্রকাশনা সংস্থা থেকে বের হয় ২০২১ সালে।
আল মাহমুদের সাথেও আমার অজস্র স্মৃতি। আল মাহমুদের উপর যতগুলো প্রবন্ধ লিখেছি, একটা বই হয়। আল মাহমুদের অনুরোধে আমি সোনালি কাবিনের ইংরেজি-অনুবাদে হাত দেই ২০০৭ সালে, যা The Golden Kabin নামে ২০১০ সালে বের হয় যুক্তরাষ্ট্র থেকে। বইটি হাতে পেয়ে কবি আবেগাপ্লুত হয়েছিলেন। কবি তাঁর বাসার সোফায় বসে আমাকে অনুরোধ করেন The Shame of Return কবিতাটি পাঠ করার জন্য। ফজলুল হক তুহিনসহ কয়েকজন তরুণ কবি ছিলেন আমার সাথে। আমি যখন পাঠ করতে লাগলাম, কবির দুচোখ বেয়ে টপটপ করে অশ্রু ঝরতে লাগলো। আমরা অবাক হয়ে গেলাম একেবারে। এরকম কত স্মৃতি। এখানে এত কথা বলা সম্ভব নয়।
৫. আপনি একাধারে একজন কবি ও সাহিত্য বিশ্লেষক–অর্থাৎ বহুমাত্রিক। আপনার অভিজ্ঞতা ও বিচরণ ক্ষেত্র ব্যাপক ও বর্ণিল। বিচিত্র। এই সামগ্রিক সত্তাকে কিভাবে দেখেন? কিভাবে উপভোগ করেন?
সায়ীদ আবুবকর: কবিতাই আমার প্রধান ক্ষেত্র। তবে আমি পাশ ফিরতে পছন্দ করি। বিশ্বসাহিত্য নিয়ে আমার যে অধ্যয়ন, সেটাকে আমি নানা প্রবন্ধে উল্লেখ করার চেষ্টা করেছি। বাংলা সাহিত্য নিয়েও আমার নিজস্ব ভাবনা আছে। সেগুলো আমি প্রবন্ধাকারে লেখার চেষ্টা করেছি। এ পর্যন্ত আমার চারটি প্রবন্ধের বই বের হয়েছে—কবিতা কমল (২০০৬), কবিতার আধুনিকতা (২০১১), সাহিত্যের সাত-সতের (২০১৮) ও সাহিত্যের সীমানা (২০২৩)। চারটি গ্রন্থই পাঠকদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। অনেক তরুণের হাতে বইগুলো দেখতে পাই। দুটি গ্রন্থের কোনো কপি বাজারে এখন নেই। সেকেন্ড এডিশন বের হবে। এসব দেখলে ভালো লাগে। মনে রাখতে হবে, পৃথিবীর অধিকাংশ বড় কবিই ছিলেন সাহিত্যের বড় বিশ্লেষকও। অনুবাদের কাজ করি আমি অবসর সময়ে। বাংলা-ইংরেজি মিলে আমার অনুবাদের বই-ই হয়ে গেছে সাত-আটটি। বাংলা ভাষায় মধুসূদনের ইংরেজি কবিতার আমি প্রথম অনুবাদক। প্রায় দুশো বছরেও এ কাজ আগে করেনি কেউ। অনুবাদগুলো খুব জনপ্রিয় হয়েছে। কোলকাতা থেকেও ‘মধুসূদনের ইংরেজি সনেট’ নামে আমার একটা বই বের হয়েছে গত বছরের কোলকাতা বইমেলায়।
৬. আদি বাংলা তথা চর্যাপদ থেকে আজ অবধি বাংলা সাহিত্য কোথায় এসে দাঁড়িয়েছে–আপনার বর্ণনা ও বিশ্লেষণে?
সায়ীদ আবুবকর: যে কোনো ভাষার সাহিত্য মূলত একটা ধারাবাহিকতার ফসল। একক অর্জন শেষপর্যন্ত সমষ্টির মধ্যে মিলে যায়। বাংলা সাহিত্য বর্তমানে বৈশ্বিক হয়ে উঠেছে, এটা একটা বড় অর্জন। এটা বাংলা সাহিত্যকে নতুন মাত্রা দান করেছে। বাঙালি কবি-সাহিত্যিকরা এখন শুধু দেশকে নিয়ে চিন্তিত নয়, গোটা বিশ্বকে নিয়েও তাঁরা ভাবে। বিশ্বায়নের ফলে গোটা পৃথিবীই গ্লোবাল ভিলেজে পরিণত হওয়ায় মানুষ এখন মানুষের খুব কাছে চলে এসেছে। আধুনিক বাংলা সাহিত্য এখন খুব মানবিক ও শাশ্বত।
৭. সাম্প্রতিক বাংলাদেশে, শিল্প-সাহিত্যচর্চায় কোন-কোন চ্যালেঞ্জ বা সুবিধা-অসুবিধা আছে বলে আপনার মনে হয়? কীভাবে এগুলি মোকাবিলা করেন?
সায়ীদ আবুবকর: অনেক চ্যালেঞ্জই আমাদেরকে মোকাবেলা করতে হয়েছে। প্রধান সমস্যা ছিলো, সম্প্রতি উৎখাত হয়ে যাওয়া স্বৈরাচারি সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশের প্রায় সব সাহিত্যপত্রিকা ও সাংস্কৃতিক সংস্থাসমূহ ছিলো ভিনদেশী সংস্কৃতি লালন করা অলেখকদের দখলে। খাঁটি দেশীয় সাহিত্য প্রকাশ করার সমস্ত পথ এরা বন্ধ করে দিয়েছিল। আমরা সংগ্রাম করে গিয়েছি। অনেক সাহিত্য প্রকাশ করার সাহস হয়নি আমাদের। এখন অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। মানুষ মত প্রকাশের স্বাধীনতা পেয়েছে।সাহিত্য এখন তার নিজস্ব গতিতে চলবে।
৮. আপনার প্রথম প্রকাশিত বই কোন টি? কবে প্রকাশিত হয়েছিলো? প্রথম বই প্রকাশের অভিজ্ঞতা ও অনুভূতি কেমন ছিলো?
সায়ীদ আবুবকর: আমার প্রথম প্রকাশিত বই ‘প্রণয়ের প্রথম পাপ’। প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৯৬ সালে। আমি তখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স থার্ড ইয়ারে পড়ি। কয়েক মাস আগে শিল্পী মোমিন উদ্দীন খালেদকে দিয়ে একটা প্রচ্ছদ করিয়ে রেখেছিলাম। নিয়েছিলেন এক হাজার টাকা। হঠাৎ করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বৃত্তি পেলাম সাড়ে চার হাজার টাকা। সেই টাকা, প্রচ্ছদ আর পাণ্ডুলিপি নিয়ে ঢাকায় ছুটলাম কবিতার বই করার মানসে। প্রকাশকদের তো তেমন চিনি না। মগবাজারে এক কবি ও প্রকাশকের সাথে দেখা হলো। তিনি আমার একটা বই করা খুব জরুরি বলে জানালেন। তিনি আমার কবিতার বই প্রকাশ করার আগ্রহও দেখালেন। আমার একজন সুহৃদ ছিলেন কাওসার হুসাইন। পালাবদলে ছিলেন। পরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে যোগদান করেন। আমি মগবাজার থেকে জাহাঙ্গীরনগরের জন্য রওনা হয়ে গেলাম। কাওসার ভাইয়ের বাসায় গিয়ে দেখা করলাম। তাঁকে আমার বই প্রকাশের ইচ্ছার কথা বললাম। তিনি আমাকে মগবাজারের প্রকাশকের ব্যাপারে সতর্ক করে বললেন, ‘সায়ীদ আবুবকর, ওখান থেকে বই বের করবেন না। আপনি একজন বড় কবি হবেন; সর্বমহলে আপনার গ্রহণযোগ্যতা থাকতে হবে। তাড়াহুড়ো করে বই করার দরকার নেই। প্রকাশক একজন পেয়েই যাবেন, আমার বিশ্বাস। ‘ আমি ওখান থেকে ঢাকায় চলে আসলাম। তখন রমজান মাস। উঠেছি সিদ্দিক বাজারের হোটেল আফরিনে। পরের দিন সকালে পালাবদল অফিসে গেলাম। সম্পাদক আবদুস সালাম আমাকে অত্যন্ত স্নেহ করেন। তিনি মূলত শিল্পপতি। শখ করে পত্রিকা প্রকাশ করেন। তিনি আমাকে দেখে কোলাকুলি করলেন। তারপর জিজ্ঞেস করলেন, ‘কবিসা’ব, ঢাকায় কী উদ্দেশ্যে?’ আমি তাঁকে সবকথা খুলে বললাম। মগবাজারের ঘটনা, কাওসার হুসাইনের কথাও শোনালাম। তিনি বললেন, “মগবাজারের উনি তো টাকা ছাড়া কোনো বই করবে না।“ আমি বললাম, ‘অল্প কিছু টাকা আমার কাছে আছে, ভালো প্রকাশক পেলে একটা বই করতাম, আমার প্রচ্ছদও করা আছে।‘ সালাম ভাই হাসতে লাগলেন। বললেন, ‘কত টাকা আছে?’ ‘স্কলারশিপের সাড়ে চার হাজার টাকা।‘ তিনি বললেন, ‘দেন আপনার টাকা।‘ আমি কিছু বুঝতে পারলাম না। খামের ভেতর রাখা টাকাগুলো তুলে দিলাম তাঁর হাতে। বললেন, ‘পাণ্ডুলিপি ও প্রচ্ছদ আমাকে দেন।‘ আমি তাও দিয়ে দিলাম। তিনি পিওন মাসুমকে ডেকে বললেন, ‘এই পাণ্ডুলিপিটি কম্পোজ করতে দাও। কালকে সকালে দিতে বলবে।‘ আমাকে বললেন, ‘পালাবদল প্রকাশনী আপনার বই করবে। আপনি কালকে সকালে এসে প্রুফ কপি নিয়ে যাবেন। ঢাকাতে দু-একদিন থেকে ফাইনাল প্রুফ দেখে দিয়ে যান। বই আপনার ঠিকানায় চলে যাবে।‘ আমি ভাষা হারিয়ে ফেলেছিলাম। সবকিছু আমার কাছে অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছিল। আমি বললাম, ঠিক আছে। এরপর তিনি আমাকে কাছে ডাকলেন। আমার হাতে আমার সেই টাকার খাম ফেরত দিয়ে বললেন, ‘সায়ীদ আবুবকরের বই করতে টাকা লাগবে নাকি? পালাবদল এমনিই আপনার বই করবে।
তো এভাবেই বের হয়ে গেল আমার প্রথম বই। পালাবদলের প্রতিটি সংখ্যায় বিজ্ঞাপন যেতে লাগলো। সারা দেশে ছড়িয়ে পড়লো ‘প্রণয়ের প্রথম পাপ’। এর জনপ্রিয়তার কথা নানা জনের কাছ থেকে শুনতে পাই। ক্যানাডা প্রবাসী কবি নিয়াজ শাহিদী সেই সময়ই আমাকে জানিয়েছিলেন, তাঁর ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক একাই ২০কপি ‘প্রণয়ের প্রথম পাপ’ কিনেছিলেন কারণ যেই একবার বইটা দ্যাখে, সেই নিয়ে চলে যায় আর ফেরত দেয় না। এর কয়েক মাস পর আমি যখন ঢাকায় আসি, সালামভাই বললেন, ‘আপনি তো বড় ধরনের কবি-স্বীকৃতি পেয়ে গেছেন।‘ আমি বললাম, ‘কী রকম?’ তিনি জানালেন যে, তিনি নিজের হাতে আবদুল মান্নান সৈয়দকে আমার বই দিয়েছিলেন। মান্নান সৈয়দ সেখানে বসেই কয়েকটা কবিতা পড়লেন। তারপর বললেন, ‘এর কবিতা তো আমি আগেই পড়েছি পত্রিকায় ও তো আপদমস্তক কবি।‘
৯. সাহিত্যে আপনি কার উত্তরাধিকার বহন করেন?
সায়ীদ আবুবকর: আমি আগেই বলেছি, সাহিত্য হলো একটি ধারাবাহিকতার ফসল। প্রত্যেক কবিই তাঁর পূর্বসূরী কবিদের উত্তরাধিকার বহন করে থাকে। চর্যাপদ থেকে শুরু আধুনিক কাল পর্যন্ত যত মৌলিক শক্তিশালী কবি আছেন বাংলা ভাষাতে, আমি প্রত্যেকের কাছে কোনো না কোনোভাবে ঋণী। আমার উপর ইংরেজ কিছু কবির প্রভাবও থাকতে পরে। তবে মাওলানা জালালউদ্দীন রুমি আমাকে আপ্লুত করেছে সবচেয়ে বেশি। আমি এঁদেরই উত্তরাধিকার বহন করি।
৮. এ যাবৎ সর্ব মোট আপনার কতটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে? এর মধ্যে কোনটি বা কোন-কোন কাজকে বা কোন বইকে আপনি আপনার উল্লেখযোগ্য সৃষ্টি বলে মনে করেন?
সায়ীদ আবুবকর: এ যাবৎ আমার প্রকাশিত মোট গ্রন্থ ৩০টির মতো। কাব্যগ্রন্থই ১৫টি। প্রণয়ের প্রথম পাপ (১৯৯৬), জুলেখার শেষ জাল (২০০৪) ও নবিনামা (২০২১) আমার সবচেয়ে জনপ্রিয় গ্রন্থ। নবিনামা মহাকাব্যটি আমার অনেক সাধনার ফসল। ৫৭৫ পৃষ্ঠার বই। এটি ইতোমধ্যে পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। গত বইমেলাতে এর সবগুলো কপি শেষ হয়ে গেছে। এ বছর এর সেকেণ্ড এডিশান বের হবে। এটা চারটেখানি কথা নয়, বিশেষ করে একটি কাব্যগ্রন্থের জন্যে। তবে আমার ‘সাদা অন্ধকারে, কালো জ্যোৎস্নায়’ (২০০৬), বঙ্গেতে বসতি (২০০৮) ও বাংলাদেশ (২০২২) খুবই গুরুত্বপূর্ণ তিনটি গ্রন্থ। আমার চারটে প্রবন্ধের বই-ই ভারী পাঠকদের ভালো লাগবে। সাহিত্যের নানা বিষয় নিয়ে এগুলোতে নতুন বিশ্লেষণ ও নতুন ভাবনা ব্যক্ত হয়েছে। অনুবাদের মধ্যে ‘মধুসূদনের ইংরেজি কবিতা’ (২০০৯) একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ বলে আমি মনে করি। এর কিছু কিছু কবিতার কথা বাঙালী কখনো ভুলতে পারবে না। ছড়াগ্রন্থসমূহের মধ্যে ‘স্বর্গের ঢেঁকি’র জন্য আমাকে স্মরণ করতে হবে। এই তো।
৯. সম্প্রতি প্রকাশিত আপনার নতুন বই সম্পর্কে বলুন।
সায়ীদ আবুবকর: গত বইমেলায় আমার দুটো বই প্রকাশিত হয়েছে। একটি প্রবন্ধের বই ‘সাহিত্যের সীমানা’; প্রকাশ করেছে চট্টগ্রাম সংস্কৃতি কেন্দ্র। অন্যটি অনুবাদগ্রন্থ ‘ মধুসূদনের ইংরেজি সনেট’; প্রকাশ করেছে কোলকাতার কবিতীর্থ প্রকাশনী। এ গ্রন্থে মধুসূদনের সমস্ত ইংরেজি সনেটের বাংলা-তরজমা রয়েছে সনেট আকারেই।
১০. আপনি নিজেকে কোন দশকের কবি-লেখক বলেন? কেন?
সায়ীদ আবুবকর: আমি বলি না, পাঠকেরা বলে। আমাকে নব্বইয়ের দশকের কবি বলে গণ্য করা হয় কারণ এ দশকেই আমার প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়। বাংলা ভাষায় দশক বিভাজনটা একটা গ্রহণযোগ্য রূপ পেয়ে গেছে। তবে এটা কবি ও কবিতার চারিত্র্য নির্ণয়ের উপযুক্ত পন্থা নয় বলে আমি মনে করে। এরচেয়ে যুগ বা কাল হিসেবে কবি ও কবিতাকে চিহ্নিত করলে ভালো হতো। কিন্তু তা করার মতো মেধাবী ও নিরপেক্ষ সাহিত্যসমালোচকের এখনো আবির্ভাবই হয়নি বলে মনে হচ্ছে।
১১. আপনার সমকাল নিয়ে বলুন।
সায়ীদ আবুবকর: সমকালীন সাহিত্য একটা শোরগোলের মধ্যে থাকে বলে সেরাটা চিনতে কষ্ট হয়। আমরা যখন প্রথম লিখতে শুরু করি, তখন কেবল পত্রিকার পাতাতেই সব পাওয়া যেতো। লেখা নির্বাচিত হয়েই সেখানে ছাপা হতো। গ্রন্থ প্রকাশ করাও সহজ ব্যাপার ছিলো না। এখন ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম প্রভৃতি সোশাল মিডিয়া প্লাটফর্ম তৈরি হওয়ায় প্রচারমাধ্যম সহজ হয়েছে। টাকার বিনিময়ে বই প্রকাশের সহজ ব্যবস্থা থাকায় এখন সবাই লেখক। সাহিত্যপুরস্কারগুলো দলীয় তদবির ও অর্থের বিনিময়ে অর্জিত হওয়ায় মূল লেখকরাই আড়ালে চলে যাচ্ছেন, অলেখকরা বুক ফুলিয়ে হাঁটছেন। এসব আমার সমকালে ঘটছে। ভালো লেখকের বড়ই অভাব। নিবেদিতপ্রাণ সাহিত্যসাধক তেমন দেখতে পাই না।
১২. আপনি কবিতায় মিথ, ধর্ম ও ধর্মীয় অনুষঙ্গ ব্যবহার করা বিষয়ে কি ভাবেন? বিশেষত ইসলামিক বিষয়, ইতিহাস, ঐতিহ্য ইত্যাদি ব্যবহার করা বিষয়ে।
সায়ীদ আবুবকর: আমার জনপ্রিয় প্রায় সব কবিতাই ইসলামী মিথে ঠাসা। আমি আমার পরিচিত জায়গা থেকেই কবিতা শুরু করি। ইসলামিক বিষয়, ইতিহাস, ঐতিহ্য আমার কবিতায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে এসেছে। অথচ এসব কবিতা আধুনিক কবিতা হিসেবেই গ্রাহ্য হয়েছে। মিথ, ধর্ম ও ধর্মীয় অনুষঙ্গ টি এস এলিয়টের মতো জগদ্বিখ্যাত কবিদের কবিতায় উজ্জ্বলভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। যারা কবিতা বোঝে না, এরকম প্রতিক্রিয়াশীলরাই কেবল এসব বিষয়ে আপত্তি করতে পারে।
১৩. আধুনিকতা ও উত্তর আধুনিকতা বলতে আপনি কি বোঝেন? বাংলাদেশের কবিতার পরিপ্রেক্ষিতে এই বিষয়ে আপনার মতামত জানতে চাই।
সায়ীদ আবুবকর: এটা একটা অতীব জটিল প্রসঙ্গ। উত্তরাধুনিকতা নিয়ে অনেক বই প্রকাশিত হয়েছে দেশে ও বিদেশে।কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়েছে বলে মনে হয় না। কবিতা যেখানে ছিলো, সেখানেই আছে। কোনো মতবাদ দিয়ে কবিতার আসলে কোনো উপকার হয় না। মতবাদ দাঁড় করিয়ে কবিতা রচনা করা যায় না। কবিতা রচনার পরই মূলত মতবাদ দাঁড় হয়। অনেকে মনে করেন, এলিজাবেথান এজ, রোমান্টিক এজ, ভিক্টোরিয়ান এজ, মডার্ণ এজ এগুলো নির্ধারণ করেই এসব যুগের কবিরা কবিতা লিখেছিলেন। তা মোটেও নয় কিন্তু। এসব সাহিত্যসমালোচকদের সৃষ্টি। আমাদের দেশের আধুনিক কবিরা, কতিপয় কবি বাদে, আধুনিকতা বলতে মনে করেছিলেন বোদলেয়ারীয় ক্লেদজ জীবনের জয়গান, যেখানে কেবলি নৈরাশ্য, অন্ধকার ও ধর্মহীনতা; তাঁরা কিন্তু সুকৌশলে এলিয়টীয় আধুনিকতাবাদকে এড়িয়ে গেছেন। এলিয়ট তাঁর কবিতায় আধুনিক সভ্যতার সংকট নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেছেন এবং সেখানে তিনি এ সংকটের জন্য ধর্মহীনতাকেই দায়ী করেছেন, যেটা অবশ্য এলিয়টের অনেক আগেই উচ্চকণ্ঠে ব্যক্ত করে গেছেন ম্যাথিউ আর্নল্ড। উত্তরাধুনিকতা বলতে যদি বুঝানো হয়ে থাকে বিশ্বাসে প্রত্যাবর্তন তাহলে ঠিক আছে, প্রত্যাবর্তন তো আমরা করেছিই। এসব মতবাদে আমার কোনো আপত্তি নেই। তবে আমি শুধু খাঁটি কবিতা রচনাতেই বিশ্বাস করি।
১৪. আপনার লেখালেখিতে দেশি-বিদেশি কবি/ সাহিত্যিকদের কারো কোন প্রভাব কি আছে?
সায়ীদ আবুবকর: এটা আমি মনে করি না। তবে মনের অজান্তে যদি কারো প্রভাব এসে গিয়ে থাকে, সেটা ভিন্ন কথা। বিজ্ঞ সমালোচকরাই ভালো বলতে পারবেন। বিশ্বের বিখ্যাত বহু কবি-সাহিত্যিকের আমি ফ্যান। তাঁদের প্রভাব আসা অস্বাভাবিক নয়। তবে কবিতা লেখার সময় আমি চোখ কান খোলা রাখি, বাইরের বাতাস ভিতরে ঢুকতে দিতে চাই না একটুও।
১৫. কোথায় আছেন? কি করছেন? পারিবারিক পরিচিতি জানতে চাই।
সায়ীদ আবুবকর: আগেই উত্তর দিয়েছি। তবু আবার বলি, থাকি রাজশাহীতে। অধ্যাপনা; সরকারি কলেজে; বর্তমান পোস্টিং সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, রাজশাহীতে। তিন সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে ভালোই আছি।
১৬. আপনি কখনো কি কোন পত্রিকা বা লিটল ম্যাগাজিন অথবা সংকলন সম্পাদনা করেছেন? বিস্তারিত বলুন।
সায়ীদ আবুবকর: জাতীয় পাক্ষিক পত্রিকা পালাবদলে কর্মরত ছিলাম এক বছর। ১৯৯৮-১৯৯৯ সালে। এটি ছিলো তখনকার একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় সাহিত্যপত্রিকা। সৈয়দ আলী আহসান, আল মাহমুদ, আবদুল মান্নান সৈয়দ প্রমুখ বিখ্যাত লেখকেরা নিয়মিত লিখতেন এ পত্রিকায়। ‘Bangla Literature’ নামে একটা ইংরেজি লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদনা করে থাকি। ২০১১ সাল থেকে এটা আমি সম্পাদনা করে আসছি। এ পত্রিকায় ক্লাসিক বাংলা সাহিত্যকে ইংরেজিতে উপস্থাপন করা হয়। আমার সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছে‘আধুনিক বাংলা কবিতা’ ২০০৯ সালে ইত্যাদি গ্রন্থপ্রকাশ থেকে; সেকেন্ড এডিশান বের হয় ২০১৯ সালে; বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা ও আসামের কবিতা এতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
১৭. লিটল ম্যাগাজিন এর সংজ্ঞা কি? এ নিয়ে আপনার ভাবনা বলুন।
সায়ীদ আবুবকর: অনিয়মিত, ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রকাশিত সাহিত্য পত্রিকা। সাহিত্য বিকাশে লিটল ম্যাগগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে তবে এটা নির্ভর করছে সম্পাদকের সাহিত্যবোধ ও নিরপেক্ষতার উপর।
১৮. অনলাইন ম্যাগাজিন বা ওয়েব ম্যাগাজিন চর্চাকে আপনি কোন দৃষ্টিতে দেখেন?
সায়ীদ আবুবকর: খুবই পজিটিভ দৃষ্টিতে দেখে থাকি। আধুনিক বিশ্বে ওয়েব ম্যাগাজিনের ভূমিকা অপরিসীম। অতি দ্রুত গোটা পৃথিবীকে টেনে আনা যায় এখানে এবং মুহূর্তের মধ্যে সাহিত্যকে ছড়িয়ে দেওয়া যায় সারা বিশ্বে।
১৯. “বাংলা রিভিউ” পড়েন? কেমন লাগে বা কেমন দেখতে চান–আগামীতে?
সায়ীদ আবুবকর: সময় পেলেই পড়ে থাকি। ‘বাংলা রিভিউ’ অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন, রুচিশীল ও সমৃদ্ধ একটি অনলাইন সাহিত্যপত্রিকা। বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের কবি-সাহিত্যিকদের উজ্জ্বল উপস্থিতি খুবই প্রশংসনীয়। এ ধারা অব্যাহত থাকবে, এই আশা রাখি
২০. ভবিষ্যতে কেমন পৃথিবী কল্পনা করেন?
সায়ীদ আবুবকর: একটি সুন্দর, শান্তিময়, মানবিক পৃথিবী, যেখানে অবৈধ ইসরাইল রাষ্ট্রের ও তার সহযোগীদের নির্মম বর্বরতা থাকবে না।
…………..
সাক্ষাৎকার গ্রহণে : সাজ্জাদ বিপ্লব
আগস্ট ১৯, ২০২৪
খুব ভালো লাগলো।