spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদপ্রবন্ধজীবনের গল্পকার শাহেদ আলী

লিখেছেন : ওমর বিশ্বাস

জীবনের গল্পকার শাহেদ আলী

ওমর বিশ্বাস

বাংলা ছোট গল্পের বয়স সোয়া শ’ বছরেরও বেশি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাত দিয়ে ছোটগল্প যে উচ্চমাত্রায় পৌঁছায় সেখান থেকে আর নামতে হয়নি তাকে। এতে যুক্ত হয়েছেন অনেক গল্পকার। অনেক সার্থক গল্প। যাদের দ্বারা এই ছোটগল্প সার্থকতা লাভ করেছে, সমৃদ্ধ হয়েছে তাদের সংখ্যা বা তালিকা অনেক দীর্ঘ। এই তালিকায় অনেক সার্থক গল্প ও গল্পকারের মধ্যে শাহেদ আলী একজন।

জীবনের সার্থক রূপকার হিসেবে তার গল্প সমাদৃত। তিনি গল্পে তুলে এনেছেন ভাটি বাংলার সাধারণ মানষের জীবনের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, আনন্দ বেদনার চিত্র। তিনি তুলে এনেছেন জীবনযাপনের নানা দিকগুলো যা কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিষয়গত দিক দিয়ে আপতত ক্ষুদ্র মনে হলেও গুরুত্ব ও ঘটনার বিশ্লেষণের দিক দিয়ে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। তার গল্পে পাওয়া যায় জীবন সংগ্রামের প্রতিকূলতার চিত্র, বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রামের ভুবন। এতে পাওয়া যায় জীবনের জন্য মূল্যবান উপাদান।

এই অসাধারণ শক্তিমান কথাশিল্পীর গল্পগ্রন্থের সংখ্যা মাত্র ৬টি। শাহেদ আলী স্বল্পপ্রজ ধাঁচের লেখক। কিন্তু কম লিখলে কী হবে, তাঁর প্রতিটি গ্রন্থ, প্রতিটি গল্প সাহিত্য মূল্য বিচারে অনেক উঁচু মানের। তার গল্পগ্রন্থগুলো হচ্ছে: জিবরাইলের ডানা (১৯৫৩); একই সমতলে (১৯৬৩); শা’নযর (১৯৮৫); অতীত রাতের কাহিনী (১৯৮৬); অমর কাহিনী (১৯৮৬) এবং নতুন জমিনদার (১৯৯২)।

এ ছাড়া শাহেদ আলীর ছয়টি গল্পগ্রন্থ থেকে নির্বাচিত গল্প সঙ্কলন ‘শাহেদ আলীর শ্রেষ্ঠ গল্প’ প্রকাশ পায় ১৯৯৬ সালে। তার একমাত্র উপন্যাস ‘হৃদয়ে নদী’ প্রকাশিত হয় ১৯৬৫ সালে। ছোটদের প্রতিও তিনি দৃষ্টি দিয়েছেন। তাদের জন্য প্রকাশ করেছেন তিনটি গ্রন্থ– ‘সোনার গাঁয়ের সোনার মানুষ’, ‘ছোটদের ইমাম আবু হানিফা’ এবং ‘রুহির প্রথম পাঠ’। এছাড়াও আছে অনুবাদ ও দর্শনতাত্ত্বিক মূল্যবান বেশ কয়েকটি গ্রন্থ। মুহাম্মদ আসাদ এর ‘রোড টু মক্কা’ বইয়ের অনুবাদ গ্রন্থ ‘মক্কার পথে’ এবং হিরোডোটাস-এর বর্ণিত ইতিহাস গ্রন্থ ‘ইতিবৃত্ত’ অসাধারণ অনুবাদ গ্রন্থ হিসেবে স্বীকৃত। অনুবাদ কর্মে তার রয়েছে সুখ্যাতি।

শাহেদ আলীর প্রথম গল্পগ্রন্থের নাম গল্প ‘জিবরাইলের ডানা’ প্রকাশের পর তা যেমন আলোচনায় উঠে আসে তেমনি তিনিও কথাসাহিত্যের ভুবনে নিজেকে মেলে ধরার সুযোগ পান। ‘জিবরাইলের ডানা’ বহুল জনপ্রিয় এবং পাঠকনন্দিত একটি গল্প। একই সঙ্গে তা নিয়ে বিতর্কও হয়েছে যথেষ্ট। তারপরও গল্পটি গল্প হিসেবে সার্থকতা পেয়েছে। তিনি ছোটগল্পের একজন সার্থক গল্পকার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিলেন। তার সর্বাধিক আলোড়িত ও সমাদৃত এই ‘জিবরাইলের ডানা’ গল্পটি প্রথম প্রকাশিত হয় তার ছাত্রজীবনে, ১৯৪৯ সালে এবং তারই সম্পাদিত ‘সাপ্তাহিক সৈনিক’ পত্রিকায়। একজন বালক ও ঘুড়ির সাথে জীবন জিজ্ঞাসাকে গল্পের মাধ্যমে অপরিহার্য চারিত্র সৃষ্টিতে তিনি সাবলিল সার্থকতা দেখাতে পেরেছিলেন। এরপর তাকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। জীবনের ছোট ছোট ও খুঁটিনাটি বিষয়কে অবলম্বন করে গল্পে তুলে এনেছেন অত্যন্ত নান্দনিক ভাবে। সুক্ষ্ম জীবনবোধ তাকে তাড়িত করেছিল যা উপেক্ষা না করে বরং তুলে ধরেছেন বিভিন্ন গল্পে। জীবন চলায় দেখা শেখা বাস্তবতা আর স্বপ্নকে, এই দুই জগতের মানুষের মধ্যে সুন্দরভাবে সমন্বয় করার ক্ষমতা ছিল তার মধ্যে। ফলে প্রতিদিনের টানাপোড়েন এবং গতিমান জীবনের সঙ্গে দ্বান্দ্বিক জীবনের মিল অমিল খুঁজতে গিয়ে তিনি যা উপলব্ধি করেছেন তার সফল রূপায়নের ফলে মানুষের অন্তর জীবনের যুগ জিজ্ঞাসা আর অন্তর্জগতের দ্বন্দ্বের সার্থক প্রতিফলন দেখতে পেয়েছে পাঠক।

শাহেদ আলীর গল্প বর্ণনার ঢঙ হচ্ছে তার চেনা জগতের বিষয়আশয়। তার বর্ণনা এমন যা একদিকে আমাদের সাধারণ জীবনের কথা হলেও নিখুঁত বর্ণনাভঙ্গিতে জীবন চিত্রের পরম্পরা অসাধারণ। পাঠপর্ব সমাপ্তিতে অন্তর খোরাক পায়। দৃষ্টিভঙ্গির প্রসারতা লক্ষ্য করা যায়। খুলে যায় দৃষ্টির বন্ধ দরজা জানালাগুলো। উঠে আসে আমাদের সমাজের চিত্র, সময়ের প্রশ্নগুলো। আর আগামীর জন্য করণীয় দিকগুলো। তিনি কোনো বক্তব্যকেই বেশি দেননি। এটা তার গল্পের একটি উল্লে­খযোগ্য দিক। অতিরঞ্জিত করেননি কোনো বিষয়কে। যেখানে যতটুকু বলার সেখানে ততটুকুই বলার চেষ্টা করেছেন, যা তার গল্প পাঠের সময় উপলব্ধি করা যায়। তিনি যা বোঝাতে চেয়েছেন সোজা তাই উল্লে­খ করেছেন। যা জানেন, যা দেখেছেন, যা বিশ্বাস করেন তাই বলেছেন, বলতে চেয়েছেন, বোঝাতে চেয়েছেন। বলেছেন সোজা ভাবে, কখনো তীর্যক তীক্ষ্ম উদাহরণে।

এজন্যই কম লেখা ও অন্তরালে থাকা শাহেদ আলীর নাম উঠে আসে চলি­শ দশকের আবু জাফর শামসুদ্দীন, শওকত ওসমান, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ, সরদার জয়েনউদ্দীন, শামসুদ্দিন আবুল কালাম রশীদ করিম, আবু ইসহাক, আলাউদ্দিন আল আজাদ, শহীদ আখন্দ সহ তার সময়ের খ্যাতিমান কথাশিল্পীদের সাথে।

২.

চলি­শের দশকের একজন সফল গল্পকার শাহেদ আলী। জীবনের বাঁকে বাঁকে তার দেখাকে তিনি তুলে এনেছেন গল্পের মাধ্যমে। তিনি জীবনকে বাস্তবতার আলোকে তুলে ধরতে পারতেন। তার দেখা জগৎ যেমন স্পষ্ট ছিল তেমনি তার গল্পগুলো পাঠের ক্ষেত্রে কোনো অস্পষ্টতা লক্ষ্য করা যায় না। সহজ, সরল ও স্বাভাবিক ভঙ্গিতে তিনি তার শব্দগুলোর মালা সাজাতে পারতেন। ফলে পড়লেই চিত্রের পর চিত্র ভেসে ওঠে তার গল্প চলার সাথে সাথে। জীবন অনিবার্যতা আর ভাগ্যর অনিবার্যতা তার গল্পের বুননে একই সুতোয় গাঁথা হয়ে যেত। গল্পগুলো তাই বাস্তবরূপে রূপায়িত হয়েছে। গল্পের বাস্তবতা, জীবন ঘনিষ্ঠতা একে অন্যের সাথে অবিচ্ছেদ্য হতে পেরেছে।

তার গল্প বলার একটি উল্লে­খযোগ্য দিক ছিল সমাজ চিত্র। গল্পের উদ্দেশ্য ফুটে ওঠে সমাজকে চিহ্নিত করার মধ্যে দিয়ে। ভাষা শৈলীর নিপুণতায় গল্পগুলো বাংলা সাহিত্যে অপরিহার্য হয়েছে। তার গল্পের উপাত্ত চিরচেনা সমাজ, নিত্য চেনা ও দেখা সমাজ। তিনি তার সময়ের ছবি এঁকেছেন। সমাজকে দেখে দেখে সেখান থেকে গল্পের উপাত্ত সংগ্রহ করেছেন। যার অনেকগুলো সাধারণত সাধারণ মানুষের উপেক্ষায় থেকে যায়। তিনি সেখান থেকেই নিয়েছেন।

তার একটি উলে­খযোগ্য গল্পগ্রন্থ “নতুন জমিনদার”। এই গ্রন্থের গল্প সংখ্যা নয়টি। গল্পগুলো হলো, একটি রিপোর্ট, নতুন কমিশন, আরও একটি রিপোর্ট, অস্তরাগ, নতুন জমিনদার, শহীদে কারবালা, ঘাতক, নিরুত্তর ও সোনার খনি। সংখ্যার দিক দিয়ে খুব বেশি গল্প নয়। ছোট একটি গল্পগ্রন্থ। কিন্তু গুরুত্বের দিক দিয়ে অনেক ওজনদার। গল্পের বিষয়বস্তু পরিষ্কার। বার্তাও স্পষ্ট। সুন্দর ও সাবলিল ভাষায় বলা গল্পগুলো সহজেই পাঠক হৃদয়কে আকৃষ্ট করে।

শাহেদ আলীর গল্পের অন্তর্নিহিত সৌন্দর্য হলো চরিত্রকেন্দ্রিক উপস্থাপনা। কৌশলগত দিক দিয়ে যা বাস্তব ও জীবন্ত হয়ে ধরা দেয় গল্পে। তার গল্পের নায়েকেরা এই সমাজের, তাদের বিচরণ এই সমাজেই। যেমন শাহেদ আলী এই সমাজে বিচরণশীল একজন মানুষ। তার সৃষ্ট চরিত্রগুলো তার চারপাশের দেখা পরিবেশের মধ্যেই স্থিত, সমাজ সঙ্গতি অসঙ্গতি যাদের ভিতর দিয়ে চিত্রিত হয়। আর সে সব চরিত্র, সমাজ, জগৎ– এসবই এখানে চিত্রিত হয়েছে নিপুণভাবে। স্বাভাবিক জীবনযাপনের তাড়নাকে তিনি তুলে ধরেছেন গল্পের আঙ্গিকে। যেমন উদাহরণ দিলে বলা যায় বেঁচে থাকার ক্ষেত্রে একটি অতি বাস্তবতা হলো ক্ষুুধা। উপরোক্ত গল্পগ্রন্থের ‘আরও একটি রিপোর্ট’ গল্পে প্রাণিকুলের সংগ্রামের কথা ইঁদুরের মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন। কিন্তু সামন্য ইঁদুরের যে সংগ্রাম, তার যে ক্ষুধার জ্বালা মানুষেরও তো ক্ষুুধা বিদ্যমান। মানুষ সহ যে কোনো প্রাণীর ক্ষেত্রে সেই একই ক্ষুধার জ্বালা যন্ত্রণা কি অন্য কিছু? তিনি এই ক্ষুধার বাস্তবতাকে কি চমৎকার করে তুলে ধরেছেন যা যে কোনো প্রাণীরই ক্ষুধার বাস্তব রূপায়ন। এই গল্পে তিনি ক্ষুধার বর্ণনা দিয়েছেন নানাভাবে:

“ক্ষুধা এদের বেপরোয়া করে তুলেছে।”

“ঐ ঘরেই তো রয়েছে এদের জীবনের সম্বল …. যেখানে রয়েছে এ বাড়ীর খদ্যের ভাণ্ডার।”

“পরপর দুরাত কোনো আওয়াজ পাওয়া গেলো না। হয়তো ওরা বিপদের আলামত পেয়ে গেছে। কিন্তু ক্ষুুধার জ্বালা বড় জ্বালা। ও যন্ত্রণা যখন শুরু হয় তখন ক্ষুধার্তরা মৃত্যুর কথাও ভুলে যায়।”

‘নতুন জমিনদার’ গল্পের ছবি আরো করুণ। বেঁচে থাকার সংগ্রামে মানুষ কি না করে। অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলতে চায়। কঠিন পথ পাড়ি দিতে কুণ্ঠাবোধ করে না। একখণ্ড অনাবদী জমিকে আবাদি করার স্বপ্ন বুকে নিয়ে নেমে পড়ে মানুষ কঠিন সংগ্রামে। এর অনেক ছবি মানুষ দেখেনি। অনেক কিছুই মানুষ জানে না। অনেক কিছুই মানুষ উপেক্ষা করে। দৃষ্টি এড়ায় না লেখকদের। যেমন এড়াতে পারেনি শাহেদ আলীর। গল্পের নায়কের হাল ছেড়ে না দেয়ার কাহিনী রচিত হয়েছে বীরত্বের সাথে। তিনি নায়কের অদম্য ইচ্ছাশক্তিকে সম্মান দেখিয়েছেন সমাজের প্রতি তীর্যক বাক্যবাণে। এই গল্পের মধ্যে দিয়ে নন্দিত হয়েছে “নতুন জমিনদার” গল্পগ্রন্থটি। নিষ্ঠুর বাস্তবতা হলেও এখানে ট্রাজেডির সাথে এসেছে বীরত্ব। এই বীরত্ব গাঁথায় তিনি শেষ দৃশ্যে নায়ককে তুলে ধরেছেন এভাবে:

“বান্দা মনে মনে ভাবে–তাহলে তো তার পরাজয়ই হলো। যারা ওকে নিয়ে অতোদিন হাসি ঠাট্টা করেছে, ওকে আহম্মক বলেছে, তাদের কথাই তাহলে সত্য হবে। এ পরাজয় সে কেমন করে মেনে নেবে?

কিন্তু বান্দা কারো হাসি-ঠাট্টা বা কৃপার পাত্র হতে রাজী নয়। সে তার জমিন ছেড়ে পালাতে পারে না। জমিন তাকে তৈরি করতেই হবে–ফসল তাকে বুনতেই হবে।

এরপর একদিন মাঠে এক বিচিত্র দৃশ্যপট উন্মোচিত হলো। নারী পুরুষ, ছেলে–বুড়োরা এসে ভীড় করেছে মাঠে।

কিন্তু বাংলাদেশের মানচিত্রে, এই মৌজাটি কোথায় আছে, কেউ জানে না। কোনো ক্যামেরাম্যান এলো না ছবি তুলতে। তাই দেশের কোনো জাতীয় দৈনিকে এ দৃশ্য ছাপা হলো না।

আবুনী আর মেন্দীর গলার নিচে বুকের উপর জোয়াল বাঁধা। দু’হাত দিয়ে ওরা জোয়াল ঠেলে ধরেছে উপরে, আর সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ে লাঙল টানছে। বন্দার হাতে লাঙলের মুঠি।

জমিন চাষ করছে নতুন জমিনদার।”

এই গল্পের মধ্যে রয়েছে অনেক জীবন উপোযোগী উপাদান। কাল পরিক্রমায় মানুষের বেঁচে থাকার প্রাণপণ প্রচেষ্টা। যা কোনোভাবে উপেক্ষিত হতে পারে না। এরকম উপেক্ষিত হাজারো আবুনী আর মেন্দী রয়েছে এই সমাজে। একটি ছবি সবার কথা বলে দেয়। এ দৃশ্য বড় করুণ হলেও এড়িয়ে যাবার নয়। এদের নিয়েই তো আমাদের সমাজ।

তার কয়েকটি গল্পের কিছু কিছু উদ্বৃত্ত করা যাক:

“নিঃসংগ চড়ুইটা যখন বিদ্যুতের তারের উপর বসে, তখন তার দৃষ্টি থাকে গেটের দিকে–তখন চুপচাপ কী যেন ধ্যান করে ও।” (একটি রিপোর্ট)

“একটু চুপ করে থেকে, তাহমীনা তার ঠোটে হাসি ফুটিয়ে তোলে–মাঝে মাঝে কী মনে হয় জানো? মানুষ চিন্তা করেনা। সামনে যে স্রোত দেখে তাতেই ঝাঁপ দিয়ে ভেসে চলে। যাকে বলে গড্ডালিকা প্রবাহ।” (অস্তরাগ)

“কিছুই তো গোপন নয়–কেবল মনখানি ছাড়া।” (নিরুত্তর)

“তার হাসিও নাই–দুঃখও নাই। জীবনের স্রোত কখন যে জমে বরফ হয়ে গেছে।” (নিরুত্তর)

“খেতে পায় না; নেঙটা, আধো নেঙটা থাকে। কী আশ্চর্য, তবু ওরা গোলগাল হয়ে ওঠে দেখতে দেখতে। কৈশোরে পৌঁছুতে না পৌঁছুতেই আষাঢ় মাসের লেবুর মতো স্নিগ্ধ আর রসালো হয়ে ওঠে। কোত্থেকে যে জীবনের রসদ যোগাড় করে ওরা!” (নিরুত্তর)

“আব্বা-আম্মা অবশ্যি বেড়াতে আসতেন মাঝে মাঝে, তার কর্মস্থলে। তাও জীনাত খুব সহজে নিতে পারতো না। ওরা দু-একদিন বেশি থাকলেই জীনাতের অস্বস্তির ছাপ তার মুখে পষ্ট বিজ্ঞাপন হয়ে উঠতো।” (সোনার খনি)

এরকম জীবনঘনিষ্ঠতার ছবি আরো রয়েছে। “নতুন জমিনদার” গল্পগ্রন্থের প্রায় প্রতিটি গল্পেই এরকম চিত্র পাওয়া যায়। শাহেদ আলীর গল্পের পটভূমি চেনা জগতকেন্দ্রিক। যেন চোখ দিয়ে দেখা যায়। পা বাড়ালেই গল্পের স্থানে পৌঁছা যায় সহজে এবং দ্রুত। তাই তো তিনি জীবনের গল্পকার। তার গল্প বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে। গল্পগুলো হয়েছে বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ।

শাহেদ আলীর গল্পসৃষ্টির এই সার্থকতার ফলেই গল্পগুলো পড়লে আমাদের চারপাশের ছবিই দেখা যায়। সেখানে অঙ্কিত চারপাশের যে ছবি ফুটে ওঠে তাতে কোনো অতিরঞ্জন নেই। রয়েছে বলার ক্ষেত্রে প্রাণের স্বতঃস্ফূর্ততা। এই স্বতঃস্ফূর্ত চিত্রিত পাঠককে মুগ্ধ করে। পাঠকের হৃদয়ে নাড়া দেয়। সব কিছু ছবির মতো দেখা যায় গল্পের মধ্যে দিয়ে জীবন মানসপটে।

শাহেদ আলী শুধু গল্পের জন্যই গল্প বলেননি। গল্পের মাধ্যমে মনে অব্যক্ত কথাগুলোকে ব্যক্ত করেছেন। তার গল্প বার্তা দিয়েছে পাঠকের কাছে। সমাজের কাছে। সেই বার্তা সমাজের মানুষের জন্য সাধারণ থেকে সমাজপতিদের জন্য।

৩.

এই গুণী সার্থক কথা সাহিত্যিকের জন্ম তৎকালীন সিলেট জেলার সুনামগঞ্জের মাহমুদপুর গ্রামে ১৯২৫ সালের ২৬ মে। তিনি ইন্তেকাল করেন ২০০১ সালের ৬ নভেম্বর। তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬৪), একুশে পদকসহ (১৯৮৯) বহু পদক ও সম্মাননায় ভূষিত হন।

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ

সৈয়দ সাইফুল্লাহ শিহাব on কবিতার স্ফুলিঙ্গ, স্ফুলিঙ্গের কবিতা