spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদগদ্যআরশি নিকেতন : ২৫

ধারাবাহিক আত্মজীবনী : তৈমুর খান

আরশি নিকেতন : ২৫

তৈমুর খান
২৫

আমার বাঁশিতে আর ফুঁ দিতে পারি না

২০০২ সালে গুজরাটের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় রাষ্ট্রীয় মদতে বহু মুসলিম পরিবারকে হত্যা করা হয়। সেরকমই একটি পরিবার ছিল বিলকিস বানুর পরিবার। বিলকিস বানু ছিলেন পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। তার চোখের সামনে একে একে পরিবারের পুরুষ সদস্যদের হত্যা করা হয়। তার কোলের সন্তানকেও পাথরে আছড়ে মারা হয়। তার মা-বোনদের ধর্ষণ করে মাথা কেটে হত্যা করা হয়। তাকেও ১৯ জন মিলে ধর্ষণ করে। এত পুরুষের ধর্ষণের ফলে সে অর্ধমৃত অবস্থায় পৌঁছে যায়। ধর্ষকরা মৃত ভেবে তাকে ফেলে পালায়। বহু রাতে জ্ঞান ফিরলে উলঙ্গ অবস্থায় অনেকটা পথ এসে একটা বাড়িতে প্রবেশ করে এবং তাদের কাছে সাহায্য চায়। সেখান থেকেই শুরু হয় তার লড়াই। নিজের জন্ম ভিটে ছেড়ে বাইরে থেকে কোর্টে মামলা চালায়। ধর্ষকদের মধ্যে একজন মারা গেলে এবং সাতজন সাক্ষীর অভাবে খালাস পেলে বাকি ১১ জন যাবজ্জীবন জেল খাটার সাজা পায়। কিন্তু পরবর্তীকালে গুজরাট সরকারের নির্দেশে তারা জেল থেকে মুক্তি পায়। এই মুক্তিকালীন সময়ে ফুলমালা চন্দন দিয়ে তাদের বরণ করা হয় এবং প্রত্যেককে মিষ্টিমুখ করিয়ে বীরের বেশে সম্মান প্রদর্শন করা হয়। তাদের মুক্তির একটাই কারণ—তারা উচ্চ বংশীয় ব্রাহ্মণ শ্রেণির। তারা যুক্তি দেখায়—তাদের দ্বারা ধর্ষিতা হওয়া নারীও সৌভাগ্যবতী। এই ঘটনা চরম মানবতার অপমান বলেই আমার মনে হয়েছিল।সেই ১১ জন ধর্ষক এবং তাদের মুক্তির উপলক্ষে আমার একটি কবিতাই ছিল প্রতিবাদ। এই প্রতিবাদী কবিতাটি সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখলে আমার বিরুদ্ধে রে রে করে ওঠে অনেক বাঙালি কবিও। সেই রাজনৈতিক দলটিও আমাকে নানাভাবে হুমকি দিতে থাকে। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার, এই কবিতাটিও বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হতে থাকে। কবিতাটি কতটা শিল্পগুণ সমন্বিত তা জানি না। কিন্তু এর প্রতিবাদী স্বর সাধারণ মানুষকেও উৎসাহিত করে। কয়েকজন এর আবৃত্তি ও অভিনয়ের ভিডিও প্রকাশ করে। কবিতাটি ছিল এরকম:

“গৌরবের ইতিহাস

তুই কর
তারপর আমি করব
তারপর তুই
তারপর তুই
তারপর….

ততক্ষণ মেয়েটি কাঠ হয়ে পড়ে আছে
একটাই গর্ত শুধু
স্পন্দনহীন থেঁতলে যাওয়া মাংসপিণ্ড
ততক্ষণ প্রায় মৃত, মৃতবৎ

একাদশ অশ্বারোহী একে একে আরোহন করলেন
অস্ত্র চালনা করলেন
অস্ত্রগুলি তেমনই ঝকঝকে উদ্ধত উদ্দাম

ভারতবর্ষ তাদের মুখ দেখে হেসে উঠছে আজও
ভারতবর্ষ ফুলমালা চন্দনে তাদের বরণ করছে আজও
ভারতবর্ষ দেবতা হিসেবে তাদের পুজো করছে আজও

নপুংসক ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের ইতিহাস পাঠ করে চলেছে আজও”
ধর্ষকদের গৌরব আমাদের ভারতের একটা রাজনৈতিক দলেরও গৌরব। সেই ধর্ষণের ট্র্যাডিশন মণিপুর থেকে উত্তরপ্রদেশের হাথরাস পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ছে। কাশ্মীরের উন্নাও পর্যন্ত এর ব্যাপ্তি। ভবিষ্যতে আরও কত যে ধর্ষণ ভারতবাসীকে দেখতে হবে এবং নতুন নতুন ইতিহাস রচিত হবে তা সময়ই বিচার করবে।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে কর্ণাটকের কলেজ পড়ুয়া হিজাব পরিহিতা মেয়ে মুসকান খানকে ঘিরে ধরে এক দল উগ্র রাজনৈতিক দলের সমর্থক জয় শ্রীরাম স্লোগান দিতে থাকলে ছাত্রীটিও উপযুক্ত জবাব দেয়। এতগুলো পুরুষের মাঝখানে অকুতোভয়ে সে আল্লাহু আকবার ধ্বনি দিতে থাকে। তার এই কাজটির জন্য সারাদেশে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়।সাহসী মুসকানকে নিয়ে আমিও সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি কবিতা লিখি। এই কবিতাটি সম্পর্কে উগ্র ধর্মান্ধ একশ্রেণির মানুষ ব্যাপক প্রতিক্রিয়া জানায়। কেউ কেউ খুনের হুমকিও দিতে থাকে। ফেসবুক আইডি বন্ধ হয়ে যায় বারবার রিপোর্ট করার জন্য। কিন্তু ইতিমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় এটি প্রায় তিন চারটি ভাষায় অনূদিত হয়ে প্রচার হতে থাকে। আমাকে যারা আক্রমণ করে তাদের মধ্যে অধিকাংশই কবি-সম্পাদক, মুখোশ পরা সাধু ব্যক্তি এবং রাজনৈতিক দলের কর্মী। সেই থেকে অনেক বন্ধুর সঙ্গেও আমার বিচ্ছেদ ঘটে। কয়েকটি লিটিল ম্যাগাজিন আমার কবিতা ছাপা পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়। কিছু প্রকাশক তো জীবনেও বই ছাপবেন না বলে অঙ্গীকারবদ্ধ হন। সেই কবিতাটি আরেকবার পড়া যাক—
“আমি মুসকান খান বলছি
🤷
তুমি উলঙ্গ হতে ভালোবাসো, তবে তাই হও
আমাকে হিজাব পরতে দাও
জয় শ্রীরামে ভক্তি তোমার, তবে তাই গাও
আমার শুধু আল্লাহু আকবার!

আমি তোমার পথ ঘিরে চাইনি দাঁড়াতে
তুমি আমার পথ ঘিরে কেন দাড়াও?
আমিও মানুষ, তুমিও মানুষ
আমার অধিকার কেন কেড়ে নিতে চাও?

যদি না ভালোবাসতে পারো, দূরে সরে যাও
আমাকে আমার মতো থাকতে দাও;
এ মাটি আমারও মাটি, এখানে স্বপ্ন এঁকে
হৃদয় বিছিয়ে রাখি,আমিও চুম্বন করি তাকে।

কোন ধর্মে কে শেখায় বিভেদের বাণী?
মানুষ সবার ঊর্ধ্বে,ভালবাসাকেই ধর্ম জানি;
যদি না বিশ্বাস করো, তবে তাই হোক
আমি কিন্তু কারো শত্রু নই একথা জানুক সব লোক।”

কবিতাটিতে মানবতাবাদ বিরোধী কিছুই বলা হয়নি। কাউকে আক্রমণও করা হয়নি। কারও বিরুদ্ধেও কিছু লেখা হয়নি। শুধু একটা নারী সে তার শরীয়তি বিধান মেনে বোরখা পরতে চায়, বা তার শালীনতা বজায় রাখতে হিজাব ধারণ করতে চায়। সেই কারণেই তাকে আক্রমণ করা চলে না। সে নিজের মতো থাকতে চায়। নিজের মতো বিশ্বাস করতে চায় তার স্রষ্টাকে—এতে দোষের কী আছে? আর তাকে সমর্থন করাতেই আমাকেও মৌলবাদী, সন্ত্রাসী আরও যা যা অভিধা দিলে আমাকে জব্দ করা যায়, আমার বিপক্ষে সকলকে লেলিয়ে দেওয়া যায় এই কাজটি করার ব্যাপক চেষ্টা করেছে। অখ্যাত কবি থেকে সুখ্যাত সাংবাদিকও আমার এই কবিতার বিরুদ্ধে তথা আমার বিরুদ্ধে আমার সীমাহীন অজ্ঞতা ও নির্বোধ মুসলমানিত্বকে আবিষ্কার করেছে। ঠিক এরকমই একটা কবিতা লিখেছিলাম, মানুষের উপর নির্মম অত্যাচার দেখে। ট্রেনে-বাসে, হাটে-বাজারে, রাস্তা-ঘাটে দাড়িওয়ালা মুসলমানদের পেলে জোর করে জয় শ্রীরাম বলানোর প্রচেষ্টা দেখা যাচ্ছিল। শারীরিকভাবে নিগ্রহ এমনকি হত্যা পর্যন্ত সংঘটিত হচ্ছিল।গোমাংস খাওয়া নিয়েও সন্দেহবশত মারা হচ্ছিল। বুলডোজার দিয়ে ঘর-বাড়ি ভাঙা হচ্ছিল। এনকাউনটারও বেড়ে গেছিল। তিনটি শব্দ নিয়েই রাজনীতির উত্থান—
“তিনটি শব্দ
#
এন কাউন্টার
বুলডোজার
জয় শ্রীরাম
মাত্র তিনটি শব্দ

তিনটি শব্দের নিচে
জেগে থাকে
পাকিস্তান
মুসলমান
কাশ্মীর

তিনটি শব্দের ওপরে
পাহারা দেয়
রামমন্দির
হিন্দুরাষ্ট্র
গরু”
আমার এই কবিতার প্যারোডি এক উগ্র রাজনৈতিক দলের সমর্থক কবি (যার নাম উচ্চারণ করতেও লজ্জা হয়) তিনি পাঠালেন আমাকে—

“তিনটি শব্দ
#
ফিদাইন
কালাসনিকভ
নারায়ে তকদির
মাত্র তিনটি শব্দ

তিনটি শব্দের নিচে
জেগে থাকে
ইণ্ডিয়া
ভারতীয়
স্বাধীনতা

তিনটি শব্দের ওপরে
পাহারা দেয়
সন্ত্রাসবাদ
মসজিদ
বোরখা”
শব্দগুলির ভুল ব্যবহার পাঠকমাত্রই বুঝতে পারবেন। সর্বোপরি কবিতাটিতে মুসলিমবিদ্বেষ তীব্রভাবে ফুটে উঠেছে। মুসলমানদের আচার-আচরণ,তাদের সংস্কৃতি পোশাক-আশাক, ধর্মপালন,খাদ্যাভাস সবকিছুই তাদের চক্ষুশূলের কারণ। বোরখা ও হিজাব নিয়ে আজও বিতর্ক শেষ হয়নি। মুসলমান মুক্ত হয়নি ভারত বলে ভারত স্বাধীনও হয়নি এটাই তাদের বিশ্বাস। ভারত শুধু হিন্দুর। তাই ভারতে মসজিদ থাকবে না। ভারতের মানুষ হিজাব পরবে না। মুসলমানরাই সন্ত্রাসবাদের জনক এটাই তারা প্রচার করতে চায়।
শিল্পী শুভাপ্রসন্ন ভট্টাচার্য বললেন, মুসলমানরা ‘পানি’ ও ‘দাওয়াত’ শব্দ ব্যবহার করে যা বাঙালি সংস্কৃতির পরিপন্থী। তারা পাকিস্তানের সংস্কৃতিকে বহন করে। শব্দ ব্যবহারের মধ্যেও তিনি জাত সম্প্রদায় ধর্ম খুঁজে পেলেন। এটাও একটা বিদ্বেষ বৈকি! ‘পানি’ শব্দটা সংস্কৃত পানীয় শব্দ থেকে এসেছে, যা পান করা হয় তাই পানি। √ পানি্ + অ = পানি।
বরং ‘জল’ শব্দটা সংস্কৃত হলেও তা ব্যবহৃত পানিকেই বুঝায়। অপরদিকে ‘দাওয়াত’ শব্দটা আরবি শব্দ। মুসলমান শাসনকালে আরবি ফার্সির ব্যাপক প্রচলন হয়। তাই শব্দ ব্যবহারের প্রভাব কিছুটা থাকবেই। এখন সেইসব শব্দ তুলে সমাজের মানুষকে বিচ্ছিন্ন করার কৌশলও এক প্রকার রাজনীতিরই নামান্তর। একটি কবিতা লিখে শিল্পী শুভাপ্রসন্নকে জবাব দিয়েছিলাম:
“দাওয়াত
🤦
রোজ আমি জলের কাছে যাই
রোজ আমি পানির কাছে যাই
দুঃখরা দাওয়াত দিতে আসে
রোজ আমি নতুন নতুন দাওয়াত পাই

কত যে আস্ফালন আমাকে ঘিরে থাকে
আমার বাঙালিত্বে কেন এত সংশয়?
আমিও মানুষ শুধু অন্য কিছু নয়
আমারও চোখের পানি ঝরে ঝরে পড়ে

সব লোনাজল ঘেঁটে ফিরে ফিরে আসি
এই বাংলা ভাষার দীপ্ত সূর্য আর ঐশ্বর্যে
কেঁপে কেঁপে ওঠে আমারই হৃদয়বাঁশি
এইখানে রোজ আমি সুর খুঁজে পাই

বীণাপাণি এসে রোজ বসে জ্যোৎস্নায়
তার সম্মোহনে ডেকে যায় নন্দিত আকাশ
আমিও কলম নিয়ে বসি, সব সাদাপাতা
কত যে দাওয়াত তাই উপলব্ধিরা চেঁচায়!”
যে বাংলা ভাষার জন্য বাঙালি যুদ্ধ করেছে, বাংলাদেশ নামক একটি রাষ্ট্রের জন্ম দিয়েছে এবং যে ভাষায় তার হাসি কান্না প্রকাশ পায়। যে ভাষাই তার গান, কবিতা, গল্প-উপন্যাস রচিত হয়—সেই বাঙালির শব্দ ব্যবহার নিয়ে এত সংশয় কেন? তার হৃদয়ের স্পন্দন কি শিল্পী শুনতে পান না? এরকম কবিতা লেখার ক্ষেত্রেও বিরোধিতার অন্ত ছিল না। মুসলমানরা যা ব্যবহার করে তা সম্পূর্ণরূপে বর্জন করে হিন্দুয়ানি বজায় রাখতে হবে। আমি যে মানবিকতার চর্চা করি, যে মনুষ্যত্বের কথা বলি তার মধ্যেও নাকি মুসলমানিত্ব লেগে থাকে। তাই হরহামেশাই কথায় কথায় শুনতে হয় ‘কাটাচোদা’, ‘মির্জাফর’, ‘জিহাদি’ ইত্যাদি।
‘জিহাদি’ কথাটার অপব্যবহার বারবার ঘটে।
সাম্প্রতিককালে একশ্রেণির মানুষ বিশেষ রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসী হয়ে মুসলিম সম্প্রদায়কে গালিগালাজ করার ক্ষেত্রে ‘জিহাদ’ বা ‘জিহাদি’ শব্দটির ভূরিভূরি ব্যবহার করছে। তারা ‘জিহাদ’ কথার অর্থ হিসেবে শুধু একটি বিষয়ই মনে রেখেছে তা হলো ‘সন্ত্রাস’। আর এদের অনুসারীদের ‘জিহাদি’ অর্থাৎ ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবেই তারা তা প্রয়োগ করছে।
এরা আশ্চর্য মূর্খ।
‘জিহাদ’ কথাটির প্রকৃত অর্থ জানার কখনোই চেষ্টা করে না। তাই মুসলমান মাত্রই নাম শুনেই বলে দেয় ‘জিহাদি’। ওদের চেনার দরকার হয় না। কারণ ওরা বিশ্বাস করে মুসলমানরা কখনো ভালো মানুষ হতে পারে না। তাই তাদের ‘জিহাদি’ বলে এক ভ্রান্তির জন্ম দিতে থাকে। যাতে মুসলিমদের শত্রু ও সন্ত্রাসী বলে সহজেই দেগে দেওয়া যায় এবং এক উগ্রতার ও অসহিষ্ণুতার জন্ম দেওয়া যায়।
‘জিহাদ’ শব্দটি এসেছে আরবি ‘জাহাদা’ শব্দ থেকে। যার অর্থ প্রচেষ্টা বা সংগ্রাম। কোনো বিষয়ে চূড়ান্ত সফলতা পেতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা। কখনো তা পরিশ্রম সাপেক্ষও হতে পারে। অনেক কিছু ত্যাগ করার সঙ্গে সঙ্গে কষ্টকে স্বীকার করাও এর মধ্যেই পড়ে।
দ্বিতীয় অর্থটি হল, বেঁচে থাকার জন্য সাধ্যমতো লড়াই করা। এখানে আত্মরক্ষার ব্যাপারটিই প্রবল। বাহিরের সংঘাত ও সংঘর্ষে নিজেকে যোগ্য করে তোলা এটাই বাঁচার উপায়। সেই সঙ্গে নিজের বিশ্বাস, নিজের উপলব্ধিকেও রক্ষা করা।
সুতরাং জিহাদের প্রকৃত অর্থের দুটি দিক লক্ষ করা যায়। প্রথমটি হল আত্মগত। যেখানে নিজের ইন্দ্রিয়াসক্তি বা কুপ্রবৃত্তিগত আকাঙ্ক্ষাগুলির দমন করার পর্যায়। যাকে আমরা আত্মশাসন বলতে পারি। সেইসঙ্গে সত্য ও ন্যায়কে গ্রহণ করার শিক্ষাও।
জিহাদের প্রকৃত অর্থের দ্বিতীয় দিকটি হলো বহির্জগতের সঙ্গে সংঘাতে নিজেকে রক্ষা করা। অর্থাৎ শত্রুর দ্বারা দমন-পীড়নের শিকার হলে তা থেকে নিজেকে বাঁচানো এবং এর জন্য লড়াই করা। এখানেও অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়ার ব্যাপার নেই। তাই সাবধান করে কোরআনে উল্লেখ করা হয়েছে বিনা কারণে কাউকে হত্যা নয়। সূরা মায়েদার ৩২ নং আয়াতে উল্লেখ আছে: ‘যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে একজন মানুষকেও হত্যা করবে,সে যেন পুরো মানবজাতিকেই হত্যা করল।’
অতএব জিহাদের মূল উদ্দেশ্য ন্যায়ের আদেশ ও অন্যায়ের নিষেধ। কখনোই ইসলামী রাষ্ট্র সৃষ্টির উদ্দেশ্য নয়। জঙ্গিগোষ্ঠীর কাজ-কর্মের প্রতি আনুগত্য বা সমর্থনও নয়। ব্যক্তিজীবনে নারী-পুরুষের প্রেম সম্পর্ককেও ‘জিহাদ’ বলা যায় না। মৃত্যুর হাত থেকে আত্মরক্ষার প্রচেষ্টা এবং লোভ-লালসা থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার শাসন জিহাদেরই অন্তর্ভুক্ত। এসব কথা কাকে বোঝাব? তাই মনঃকষ্ট বাড়তে থাকে। কবিতা লেখা ছাড়া আর কিভাবে জবাব দেওয়া যায়? তাই একের পর এক কবিতাই আমার অস্ত্র হয়ে ওঠে। আমার আত্মরক্ষার কৌশল হয়ে ওঠে। কবিতাতেই লিখি সে-কথা—
“এসব কবিতা নয়
🙆
আমি শুয়োরের বাচ্চা নই
তবুও ওরা শুয়োরের বাচ্চা বলে।
আমি রাষ্ট্রদ্রোহী নই
তবুও ওরা রাষ্ট্রদ্রোহী বলে।
কোনও জন্মে আমার কেউ পাকিস্তানে ছিল না
তবুও ওরা পাকিস্তানি বলে।
আমি আল্লাহকে ডাকলেই আর কিছু নয়
ওদের চোখে মৌলবাদী হই।

আমার বাঁশিতে আর ফুঁ দিতে পারি না
সব ফুঁ দীর্ঘশ্বাস হয়ে যায়।
আমার সমূহ উচ্ছ্বাস
অশ্রু হয়ে গলে গলে ঝরে।
আমি আকাশের দিকে চাইতে পারি না
এক নোনতা বিষাদ এসে কন্ঠরোধ করে।
সব রাস্তা পেরোতে পেরোতে
আমার মৃত্যুর কষ্ট লেগে থাকে ছেঁড়া চপ্পলে।

এসব কবিতা নয় তবু আমি অন্ধকারে লিখি
ওদের কথার আর অন্য কোনও জবাব নেই বলে।”

🙋

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ