চিত্রায়ণ
……….
আজ বাইরের ঘরে নয় বরং ভেতরের ঘরে
ক্যামেরা সাজিয়ে বসে আছ তুমি
আজ এই ঘরেই হবে একটি অন্তরঙ্গ দৃশ্যের শুটিং
নায়ক ও নায়িকা ছাড়া ঘরে উপস্থিত থাকবেন পরিচালক
আর তুমি ক্যামেরাম্যান
যারা প্রেমিক তাদের নিশ্চয়ই ভালো লাগবে এইসব দৃশ্য
প্রেমিকাদের উত্তেজনায় ছড়াবে অতিরিক্ত উষ্ণতা
আমরা যারা বাইরের ঘরেই থাকি ভেতরের ঘরে প্রবেশ নিষেধ
ছাদে দাঁড়িয়ে উঁকি মারি প্রতিবেশীর জানালায় আধো অন্ধকারে
পাতা ঝরে যায় প্রথম প্রহর দ্বিতীয় প্রহর মধ্য প্রহরে
রাতের নীল নীল নক্ষত্রেরা তখনও আকাশে কেউ বা ঘরমুখো
আমরা জানি আর কোনো দৃশ্যের শুটিং নয় আজ অন্তরঙ্গ দৃশ্য শুধু
আমরা আরও জানি ছবিটির শুভমুক্তির পর হাউসফুল থাকবে প্রেক্ষাগৃহ
শহরের মাথার ওপর দিয়ে বয়ে যাবে মেয়েদের খুনসুটি আর ছেলেদের আদর
ভালো থেকো সুস্থ থেকো
…………
সবাই ভালো থেকো সুস্থ থেকো আর আনন্দে থাকা তো আরও বেশি কাম্য
আমরা যারা ভালো থাকার কথা বলি নিজেরাও ভালো থাকার চেষ্টা করি
যদি কারও দরজায় খিল না দেওয়া হয় কারও জানালার কপাট বন্ধ না হয়
আমরা তো জানি খোলা দরজায় অনুপ্রবেশ করতেই পারে অন্য কারও ছায়া
খোলা জানলায় জমিয়ে তোলা বৃষ্টি আর পেয়ারা গাছের দুর্বিনীত ডালপালা
শীতের কথা ভেবে কেউ কেউ পাঁচিলের উচ্চতা বাড়ায় প্রায় প্রতি বছর
আর জলভরা মেঘেরা গুঁড়ি মেরে সাপটে ধরে আমাদের সদ্য কাচা চাদর
আমি আর ভাবি না সেদিন ভোরবেলায় আমি কোথায় ঘুমিয়েছিলাম
ঘুম থেকে উঠে গেছিলাম কার বাড়ি কার বারান্দায় কার বৈঠকখানায়
সবাই এখন আলোচনায় মত্ত এবছর এত সাংঘাতিক দাবদাহের পর
কেউ কি বৃষ্টিমাথায় এসে বলবে সব ফসল ভেসে গেল এবার বানের জলে
ফসল ভেসে যাওয়া খুবই বেদনাদায়ক এবছর নির্ঘাত চালের দাম উঠবে তুঙ্গে
আর কে না জানে পেটে অন্ন না জুটলে কেউ ভালো থাকতে পারে না কখনই
তবু আমরা সবাইকে ভালো থাকার কথা বলি সুস্থ থাকার কথা বলি যে কেন
মৃত্যুসংবাদ
…………
কাছে বা দূরে কোনো প্রিয়জনের মৃত্যু হলে
আমি খব অসহায় বোধ করি
বুঝতে পারি না কীভাবে মৃতর প্রিয়জনদের কাছে
প্রকাশ করব আমার শোক
কী শব্দ গেঁথে গেঁথে জানাব সান্ত্বনা
প্রিয়জনের মৃতুসংবাদ বয়ে আনে না
শুধু তারই জীবনাবসানের সংবাদ
একইসঙ্গে বয়ে আনে আমারও মৃত্যুর পূর্বাভাষ
আমি খুব অস্থির হয়ে পড়ি
ভাবি কত কী যে কাজ অসম্পূর্ণ থেকে গেল
এতগুলো বছর সংসার করেও ঠিক যেন বাঁধা হলো না সংসার
আলস্যে ভরা জীবনে এলো না কোনো তেজী অশ্ব অথবা বাইসন
যার পিঠে চড়ে অন্তত আমার জন্মভূমি পরিক্রমায় যেতে পারতাম
ভাবি সত্যিই যদি আজ বা কাল মৃত্যুর পরোয়ানা আসে
তাহলে কি আমার শেষযাত্রায় সম্মিলিত হবার অনুরোধ
সবাইকে জানিয়ে রাখব আগাম
মেয়ে আমার দূরে থাকে আসতে সময় লাগে
তাকে কি সতর্ক থাকতে বলা জরুরি
কত বই পড়া হলো না কত কত যে কবিতা গল্প উপন্যাস
শোনা হলো না অনেক গান খেলা হলো না আরও অনেক মাঠে ফুটবল
রবীন্দ্রনাথের গোরা আমি পড়েছি কয়েকবার অন্তত বার চারেক
ভাবি চলে যাবার বার্তা যেদিনই আসুক না কেন জীবনে
গোরা আর সুচরিতার সঙ্গে দেখা করে যাব শেষবারের মতো
নিজস্ব দরজা জানালা
…………..
আমার একটা নিজস্ব জানালা আছে
একটা দরজাও আছে
যখনই অবসরে থাকি সকাল দুপুর সন্ধ্যা
আমি এসে দাঁড়াই সেই জানালায়
প্রতিবারই দেখতে পাই আগে যা দেখিনি কখনও
কিন্তু খুব কষ্ট পেয়েছিলাম যেদিন তুমি বলেছিলে
তোমার কোনো নিজস্ব জানালা নেই
আমি বলেছিলাম তোমার নাই বা থাকল নিজস্ব জানালা
আমার তো আছে তুমি আমার জানালায় এসে দাঁড়াও
তুমি আরও বিষণ্ণ হয়ে জানিয়েছিলে
তোমার নিজস্ব কোনো দরজাও নেই
তুমি কীভাবেই বা আসবে আমার জানালায়
তোমাকে আমার কোনোদিনই দেওয়া হয়নি কিছুই
একটা আমতলা একটা পুকুর একটা দুরন্ত রেলগাড়ি
বেহালার বাগানবাড়ি থেকে বৈদ্যবাটির
অতিথিনিবাসে যাওয়ার পথে
দিতে পারিনি তোমাকে পর্যাপ্ত পোশাক আসন্ন পৌষমাস
আমার বৃষ্টির দিনে দিতে পারিনি গোটা একটা বর্ষাকাল
আমার খুব কষ্ট হয় তোমার কথা ভেবে
তুমি জানিয়েছিলে তোমার নিজস্ব কোনো জানালা নেই
এমনকি নিজস্ব কোনো দরজাও নেই