আহমাদ মাযহার
আবদুল মান্নান সৈয়দের নাম ( ৩ আগস্ট ১৯৪৩-৫ সেপ্টেম্বর ২০১০) প্রথমে জেনেছিলাম সত্তরের দশকে ‘সাপ্তাহিক বিচিত্রা’র কবি ও কবিতাবিষয়ক প্রচ্ছদকাহিনি সূত্রে। সে সংখ্যায় বাংলাদেশের সমসাময়িক কালের কয়েকজন বিশিষ্ট কবির সম্পর্কে আলাদা ভাবে লেখা হয়েছিল। কিন্তু যে বয়সে সেই সংখ্যা পড়েছিলাম তাতে কিছু তেমন বুঝিনি। নাম মনে আছে তাঁর নামের সৈয়দ অংশ পরে থাকাটা অভিনব লেগেছিল বলে। আরেকটু ভালোভাবে জানতে পারি তাঁর সম্পাদিত ‘চারিত্র’ (১৯৭৯-৮৪) পত্রিকার প্রথম সংখ্যা দেখে। শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের লাইব্রেরিতে পেয়ে প্রথমে পড়ি তাঁর গল্প-সংকলন ‘চলো যাই পরোক্ষে’। এই নামটিই ছিল চমক জাগানিয়া। আরেকটু চমক লেগেছিল এই নামের কোনো গল্প ঐ বইয়ে নেই দেখে। ‘গল্পগুচ্ছ’ বা ‘শ্রেষ্ঠ গল্প’, ‘প্রেমের গল্প’–এ ধরনের নামের বাইরে সাধারণত অন্তর্ভুক্ত কোনো গল্পের নামে বইয়ের নামকরণ করার রীতি প্রচলিত। ‘চলো যাই পরোক্ষে’ ছিল এই রীতির বাইরের বিষয়! বইয়ে এই নামে কোনো গল্প ছিল না–এটা ছিল আমার কাছে একটা চমক।
‘চারিত্র’ পত্রিকাটির সামগ্রিকতা ছিল আরেক অভিনবত্ব আমার কাছে। ‘চারিত্র’-র গুরুত্ব আমি ভালোভাবে অনুভব করেছি আরো অনেক পরে। পরে জেনেছি ‘শিল্পকলা’ নামে একটি লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদনার একটা পর্ব তিনি পেরিয়ে এসেছেন। পরে তো আমদের প্রজন্মের সাহিত্যিক সক্রিয়তার কালে তাঁকে সম্পাদনা করতে দেখেছি ‘জীবননান্দ’ (১৯৮৪-৮৫), ‘এখন’ (জানুয়ারি-ডিসেম্বর ১৯৮৬), মাসিক পত্রিকা ‘শিল্পতরু’, তিনি ছিলেন উপদেষ্টা সম্পাদক, ১৯৮৮-৯৩), ‘শিল্পকলা’ (১৯৭০-৭৩), ‘কাফেলা’, কলকাতা (তিনি অতিথি-সম্পাদক, বাংলাদেশ-সংখ্যা, ১৯৮৩), ‘কিছুধ্বনি’ (তিনি ছিলেন অতিথি সম্পাদক, জীবনানন্দ দাশ-বিশেষ সংখ্যা ১৯৯৬), ‘নজরুল একাডেমি পত্রিকা’ (নবপর্যায়, ১৩৯৩-১৩৯৬), নজরুল ইন্সটিটিউট পত্রিকা (২০০২-২০০৫)-র মতো বিচিত্রস্বভাবী পত্রিকা। এর কোনো কোনোটির সঙ্গে লেখক হিসেবে আমার নিজেরও স্বল্প সহযোগ ছিল। কিশোর বয়সে হাতে লেখা ল্যাম্পপোস্ট পত্রিকা ‘প্রভাতী’ থেকে শুরু করে শেষ পর্যায়ে ‘মান্নান সৈয়দ শিল্পকেন্দ্র’–কতো বিচিত্রই না তাঁর সম্পাদনা-চারিত্র্য। ‘সম্পাদকের কলমে’ বইয়ে তাঁর পত্রিকাসত্তার কিছু পরিচয় পাওয়া যাবে।
গত শতাব্দীর আশির দশক পর্যন্ত গল্প-কবিতা-প্রবন্ধ রচনায় তিনি এত অনর্গল সৃষ্টিমুখর ছিলেন যে তাঁকে কোন মাধ্যমের লেখক বলা হবে তা নিয়েও অনেকে অপ্রস্তুত বোধ করতেন। কিন্তু কবি ও গল্পকার হিসাবে তাঁর মৌলিকতা ও তীক্ষ্ণতা ততদিনে এতটাই প্রতিষ্ঠিত হয়ে গিয়েছিল যে প্রচুর গবেষণাধর্মী রচনা লিখলেও তাঁর সৃষ্টিশীল লেখক পরিচয় ছাপিয়ে যেতে পারেনি।
নিয়মিত বিরতিতে তাঁর কবিতা ও গল্প-সংকলন প্রকাশিত হয়েছে। কবিতা-সংকলনগুলোর মধ্যে আমরা পাচ্ছি: ‘জন্মান্ধ কবিতাগুচ্ছ’ (১৯৬৭), ‘জ্যোৎস্না রৌদ্রে চিকিৎসা’ (১৯৬৯), ‘ও সংবেদন ও জলতরঙ্গ’ (১৯৭৪), ‘নির্বাচিত কবিতা’ (১৯৭৫), ‘কবিতা কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড’ (১৯৮২), ‘পরাবাস্তব কবিতা’ (১৯৮২),‘পার্ক স্ট্রিটের একরাত্রি’ (১৯৮৩), ‘মাছ সিরিজ’ (১৯৮৪), শ্রেষ্ঠ কবিতা’ (১৯৮৭), ‘আমার সনেট’ (১৯৯০), ‘সকল প্রশংসা তাঁর’ (১৯৯৩), ‘নীরবতা গভীরতা দুই বোন বলে কথা’ (১৯৯৭), ‘কাবিতাসমগ্র’ (২০০২), কবিতার বই (২০০৬), ‘হে বন্ধুর বন্ধু হে প্রিয়তম’ (২০০৬), ‘প্রেমের কনিতা’ ‘আঘ্রাণের নীল দীন’ (২০০৮) ‘জনসাধারণ অসাধারণ’ (২০০৮), ‘মাতাল কবিতা পাগল পদ্য’ (২০০৮), ‘ঘুমের ভেতরে নিদ্রাহীন’ (২০১২)।
‘আমার সনেট’ আর ‘সকল প্রশংসা তাঁর’ বাংলা সনেটের ধারায় নতুন সংযোজন। তাঁর পরাবাস্তবতাচিহ্নিত স্বতন্ত্র কবিসত্তা তো ছিলই, ছিল তাঁর জীবনবোধের সংগত প্রতিসরণও! এক পর্যায়ে তাঁর জীবনবোধে পরাবাস্তবতা ও অধ্যাত্ম হাত ধরাধরি করে চলেছে এগিয়ে। বহমান থেকেছে একধরনের সূক্ষ্ম ব্যঙ্গও!
সব মিলিয়ে আবদুল মান্নান সৈয়দের লেখা ছোটগল্পও সংখ্যায় কম নয়। তালিকা করতে গেলে পাওয়া যাচ্ছে, ‘সত্যের মতো বদমাশ’ (১৯৬৮), ‘চলো যাই পরোক্ষে’ (১৯৭৩), ‘মৃত্যুর অধিক লাল ক্ষুধা’ (১৯৭৭), ‘নির্বাচিত গল্প’ (১৯৮৭), ‘উৎসব’ (১৯৮৮), ‘নেকড়ে হায়েনা আর তিন পরী’ (১৯৯৭), , ‘মাছ মাংস মাৎসর্যের রূপকথা’ (২০০১), নির্বাচিত গল্প (২০০২), ‘গল্প’ (২০০৪), ‘শ্রেষ্ঠ গল্প’ (২০০৭)। আবদুল মান্নান সৈয়দের ছোটগল্প কল্পনাশক্তিতে কবিত্বমণ্ডিত ও সমাজ ও মনোজগতের খননে স্বতন্ত্র। তাঁর ছোটগল্পের সৌন্দর্য এখনো যথার্থভাবে আবিস্কৃত হয়নি।
সংখ্যায় প্রবন্ধ-সমালোচনা গবেষণার বই তাঁর অনেক বেশি। যদি দ্রুত একবার চোখ বুলিয়ে নেয়া যায় তাঁর বইগুলোর নামের দিকে তাহলে দেখব, ‘শুদ্ধতম কবি’ (১৯৭২), ‘নির্বাচিত প্রবন্ধ’ প্রথম খণ্ড (১৯৭৬), ‘নির্বাচিত প্রবন্ধ’ দ্বিতীয় খণ্ড’ (১৯৮৭), নজরুল ইসলাম: কবি ও কবিতা’ (১৯৭৭), ‘করতলে মহাদেশ’ (১৯৭৯), ‘দশ দিগন্তের দ্রষ্টা’ (১৯৮০), ‘বেগম রোকেয়া’ (১৯৮৩), সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ (১৯৮৬),’ নজরুল ইসলাম: কালজ ও কালোত্তর’ (১৯৮৭), ‘চেতনায় জল পড়ে শিল্পের পাতা নড়ে’ (১৯৮৯), তোরা সব জয়ধ্বনি কর (১৯৮৯), ‘পুনর্বিবেচনা’ (১৯৯০), ‘দরোজার পর দরোজা’ (১৯৯১), ‘ফররুখ আহমদ: জীবন ও সাহিত্য’ (১৯৯৩), ‘বিবেচনা পুনর্বিবেচনা’ (জুন ১৯৯৪), বাংলাসাহিত্যে মুসলমান’ (১৯৯৮), ‘রবীন্দ্রনাথ’ (২০০১), ‘আধুনিক-সাম্প্রতিক’ (২০০১), ‘সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্: অগ্রন্থিত রচনাগুচ্ছ অপ্রকাশিত আলোকচিত্র(২০০১), ‘সম্পাদকের কলমে’ (২০০৫), ঈশ্বর গুপ্ত থেকে শহীদ কাদরী’ (২০০৭), ‘নির্বাচিত কলাম’ (২০০৭), নজরুল ইসলামের কবিতা (২০০৩), ‘বিংশ শতাব্দীর শিল্প আন্দোলন’ (২০০৮), ‘দুই কবি’ (২০০৯), ‘প্রবন্ধসংগ্রহ-১’ (২০১০), সুধীন্দ্রনাথ দত্ত: কালো সূর্যের নিচে বহ্নুৎসব’ (২০১১), ‘মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়: অন্তর্বাস্তবতা বহির্বাস্তবতা (২০১৩) –এই নামগুলো। শেষোক্ত বইদুটি মৃত্যূত্তর প্রকাশ হলেও এতে অন্তর্ভূত রচনাগুলো মোটামুটি তাঁর জীবদ্দশাতেই বিন্যাসিত!
ছন্দ নিয়ে বাংলা একাডেমির আহ্বানে ‘ছন্দ’ (১৯৮৫) নামে একটি ছোট্ট বই লিখেছিলেন। ছোট্ট বইটিই পরে আরো স্ফীত হয়। কিন্তু এই বইটি তাঁর বাংলা ছন্দচিন্তার গভীরতার মুদ্রাচিহ্নকে ধারণ করে আছে। ছন্দের ধ্বনিগত বিজ্ঞান ও শিল্পগত প্রকরণ অনুসন্ধানও বিবেচ্য হয়েছে তাঁর কাছে। এখানেও রয়েছে তাঁর নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয়!
শুরুতে জীবনানন্দ বিষয়ে তাঁর লিপ্ততা বাংলাসাহিত্যের অপরাপর দিকে লিপ্ততার গভীরতাকে খানিকটা আড়ালে রাখলেও সামগ্রিক বাংলাসাহিত্যে তাঁর অধিকার এমন ভাবে উদ্ভাসিত হতে থাকে যে তাঁর সৃষ্টিশীল লেখকসত্তার চেয়ে গবেষণাধর্মী মননশীল রচনাকেই বেশি গুরুত্বের বলে বিবেচনা করা হতে থাকে।
অজস্র সাহিত্যিক অভিযাত্রার মধ্যেও তিনি বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন লেখকের সাহিত্যিক জীবনী রচনা করেছেন। শাহাদাৎ হোসেন (১৯৮৭), : জীবনানন্দ দাশ (১৯৮৮), ফররুখ আহমদ (১৯৮৮), : আবদুল গনি হাজারী (১৯৮৯), সৈয়দ মুর্তাজা আলী (১৯৯০), মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলী (১৯৯৪), প্রবোধচন্দ্র সেন (১৯৯৪)–বাংলা একাডেমির আহ্বানে এইসব লেখকদের জীবনী রচনা কেবল অর্ডারি মাল সাপ্লাইয়ের কাজ নয়, এইসব লেখকদের জীবনী রচনা এক দিকে যেমন তাঁর নিজস্ব সাহিত্য অভিযাত্রার উপজাত অন্য দিকে সামাজিক দায়বোধ জাত কর্ম।
স্মৃতি ও আত্মবোধন উন্মোচনও তাঁর লেখকসত্তার আরেক দিক। ‘আমার বিশ্বাস’ (১৯৮৪), ‘স্মৃতির নোটবুক’ (২০০১), ‘ডায়েরি ১৯৭৮-২০০৮’ (২০০৯), ভেসেছিলাম ভাঙা ভেলায় (২০০৯) ‘আমার বিশ্বাস’ (১৯৮৮), ‘মিটিল না সাধ ভালোবাসিয়া তোমায়’ (২০১২) এই ধরার রচনা। পরে সরাসরি দিনলিপির বেশ কিছু লেখাও সংকলন করা হয়েছে! লেখক সত্তা যে একটা আত্মতা, অঙ্গীকার, দায়বোধ, সৌন্দর্য পিপাসা ও নিঃস্বার্থ নিবেদনের বিষয় তাঁর এই বইগুলো পড়লে তা একটু বেশি গভীর ভাবে অনুভব করা যায়!
জীবনানন্দ দাশ নিয়ে নিয়ে তল্লাশি ও অনুপুঙ্খ বিশ্লেষণে তাঁর পথিকৃৎ ভূমিকা কেবল দুই বাংলায় গুরুত্ববহ নয় বাংলাদেশের সমালোচনা সাহিত্যেরও নবীনতার সূচক। কলকাতা কেন্দ্রিক সাহিত্য ভুবনের বাইরে এই ধরনের কাজের দৃষ্টান্ত তখন যে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিল তা আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকেও উজ্জীবিত করেছে।
এরই সমান্তরালে কাজী নজরুল ইসলাম নিয়ে তাঁর রচিত ও সম্পাদিত বইগুলো যেমন সম্পন্নতর নজরুল বিবেচনার পরিচায়ক তেমনি নজরুল বিবেচনার প্রচল-অতিক্রমীও! নজরুল সংক্রান্ত বই বার বার পুনর্বিন্যস্ত হয়েছে বলে বইয়ের শিরোনাম দেখেই তাঁর অনপুঙ্খ গবেষণার ভূগোল অনেক সময় চটজলদি বোঝা যায় না! রফিকুল ইসলামের সাক্ষ্য থেকে জানা যায়, আবদুল কাদির সম্পাদিত নজরুল রচনাবলির নতুন সংস্করণ প্রস্তুতিতে তাঁর ভূমিকার গভীরতাও ছিল স্মরণীয়! জীবনানন্দ-নজরুল নিয়ে তাঁর গবেষণা এত বহুল মনোযোগ প্রাপ্ত যে ‘রবীন্দ্রনাথ’কে নিয়েও যে তাঁর গভীর, নিজস্ব ও দীর্ঘ ধারাবাহিক বিশ্লেষণ রয়েছে অনেক সময় আমাদের মনে থাকে না। তাঁর ‘রবীন্দ্রনাথ’ বইটি আরো মনোযোগী পাঠের দাবি রাখে!
‘ঈশ্বরগুপ্ত থেকে শহীদ কাদরী’, ‘দুই কবি’, এই তিনটি বই সমনোযোগ পাঠ করলে অনুভব করা যাবে আধুনিক বাংলা কবিতার ইতিহাসকে তিনি উন্মোচন করেছেন তুলনামূলক ঐতিহাসিক সমালোচনার ধারায়; বিশেষ করে বাংলা সমালোচনা সাহিত্যের প্রকরণ ও সন্ধানিতায় তা নতুন। ‘করতলে মহাদেশ’ও ‘বিশশতকের শিল্প আন্দোলন’ বইয়ের মাধ্যমে এক দিকে তিনি ইয়োরোপীয় শিল্প-আন্দোলনগুলোর চারিত্র্য উন্মোচন করেছেন অন্য দিকে এর সংশ্লেষে বাঙালির আধুনিক শিল্পীচৈতন্যকে বাংলাভাষী পাঠকদের কাছে অনুভবযোগ্য করে তুলেছেন।
নিজেকে আবদুল মান্নান সৈয়দ যথার্থ ঔপন্যাসিক হিসেবে বিবেচনা করতেন না। তবে মনে করতেন নভেলা তাঁর অন্যতম মাধ্যম। সংস্করণে সংস্করণে একই বইয়ের ভিন্ন নামে উপস্থাপন পাঠকদের খানিকটা বিভ্রান্তিতে ফেললেও তাঁর নভেলার স্বতন্ত্র স্বাদ অনুভবযোগ্য। তাঁর প্রথম নভেলা ‘পরিপ্রেক্ষিতের দাসদাসী’ (১৯৭৪); একটু পরে লেখা ‘অ-তে অজগর’ (১৯৮২), ইছামতির এপার ওপার’ (২০১০)। লেখা হয়েছে দেশভাগ প্রসঙ্গ নিয়ে। ‘পোড়ামাটির কাজ’ (১৯৯৯) ও ‘উৎসব’ (২০০৫) লেখা হয়েছে ইতিহাসাশ্রয়ী ধারায়। ‘শ্যামলী তোমার মুখ’ (১৯৯৭) ও ‘শ্রাবস্তীর দিবারাত্রি’ (১৯৯৮) ‘ঢাকার আলী বাবা’ (২০০৫), ভাঙা নৌকা (২০০৬) তাঁর সুখপাঠ্য নভেলা। ‘একাত্তর’ (২০০৯) ও ‘ক্ষুধা প্রেম আগুন’ (১৯৯৪) নভেলার উপজীব্য মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে ব্যক্তিমানুষের অন্তর্জগতের বিলোড়ন।
বাংলাদেশের নাটক প্রসঙ্গে মঞ্চরূপের ইতিহাস প্রসঙ্গ আলোচিত হলেও সাহিত্য হিসেবে নাটকের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা না হওয়ায় আবদুল মান্নান সৈয়দ অনালোচিত। এমনকি তাঁর নাম উল্লেখও করা হয় না! তাঁর দুটি নাট্য সংকলন প্রকাশিত হয়েছে। ‘নাট্যগুচ্ছ’ (১৯৯১) ও ‘নাট্যসমগ্র’ (২০০৯)।
অন্তরাত্মার দায়বোধ থেকে তিনি ছোটদের জন্যও লিখেছেন দুটি বই। ‘বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)’ (২০০২) ও ‘ভূতুড়ে কাণ্ড (২০০২)।
আয়ুর দৈর্ঘ্যে সত্তরের ঘরে পৌঁছতে না পারলেও তাঁর কাজের বিপুলতা কেবল তাঁকে একজন পরিশ্রমী ব্যক্তিমানুষ হিসেবেই চিনিয়ে দেয় না চিনিয়ে দেয় সাহিত্যে সর্বসত্তা নিমগ্ন একজন ব্যক্তিমানুষকেও। সাহিত্য ছিল একযোগে তাঁর জীবন বোধের ধারক ও স্ফূরক! আমাদের সাহিত্যের অঙ্গনে এমন নিবেদিত প্রাণ আবার কবে দেখা যাবে কে জানে!