ইমরুল হাসান
মুহাম্মদ ইউনূস (২৫.০৮.২০২৪) যেই ভাষনটা দিছেন, এইটা টাইমলি একটা জিনিস হইছে, আমি আশা করি উনি এবং সরকারের অন্য লোকজনও রেগুলার ব্রিফিং করবেন; খালি বিটিভি’তে না, নিজেদের ফেইসবুক আইডি বা ইউটিউব চ্যানেলে; মানে, বাংলাদেশের (এবং ইনডিয়ার) মিডিয়া-আউটলেটগুলারেই উনাদের কমিউনিকেশনের প্রাইমারি সোর্স বানাইবেন না; নিজেরা সরাসরি পিপলের লগে কানেক্ট করবেন, যতটা বেশি পসিবল…
১. পয়লা বাজে-জিনিসটা নিয়াই বলি, উনি উনার ইনটেরিম গভর্মেন্টের জন্য একটা goal ঠিক করছেন বইলা জানাইছেন; যে, বাংলাদেশের সব অফিস থিকা ঘুষ বন্ধ করবেন! উদ্দেশ্য হিসাবে অবশ্যই মহৎ, কিনতু উনারা টেরিবলি ফেইল করবেন বইলা আমি মনে করি, কারন এইটা উনাদের কাজ না, একটা পলিটিকাল গভর্মেন্টের কাজ এইটা; পুরা পলিটিকাল সিসটেম’টার ওভারহোলিং না কইরা এইটা করাটা পসিবল না, উনারা বড়জোর একটা আই-ওয়াশ করতে পারবেন – যেইটা সাসটেইনেবল হবে না; হাউএভার উনারা ট্রাই তো করতেই পারেন, কিনতু উদ্দেশ্য হিসাবেও এইটা এক ধরনের মিডল-ক্লাস ড্রিমেরই ঘটনা বরং আমারে যদি বলেন, আমি বলবো মেইন ঘটনা হইতেছে কমন পিপলদের সরকারি অফিসে কোন একসেস নাই, এইটা ঠিক যে ঘুষের কারনেই নাই, কিনতু এর বাইরে ক্লাস-সুপিরিয়রিটি এবং পলিটিকাল কানেকশনের ঘটনাগুলাও আছে; ঘুষ শুধুমাত্র আলাদা একটা ঘটনা না, পিপলস একসেস না থাকারই একটা আউটকাম আর সবচে রিস্কি ঘটনা হইতেছে, ছাত্র-জনতার গন-অভ্যুত্থানে এখনো সবচে ভালনারবেল পয়েন্ট হইতেছে সরকারি অফিসগুলা, অইখানে এখনো কো-অপারেশনের পরিমান জিরো; ঢাকা শহরে মনে হইছে ট্রাফিক পুলিশ না পাইরা ডিউটি করতেছে, অন্য অফিসগুলাতে যারা গেছেন, তারা ভালো বলতে পারবেন… এইসব জায়গায় আওমি-লিগের লোকজন এখনো ওয়েট করতেছেন কখন বিএনপি’র লোকজন আইসা তাদেরকে ‘উৎখাত’ করবে, না করলে তারা নিজেরা আবার তাদের পুরান-অবস্থায় ফিরা যাওয়ার জন্য জোরে-শোরে ট্রাই করতে থাকবেন… মানে, বাংলাদেশের প্রশাসনের, ঘুষ ও দু্র্নীতির যেই সমস্যা সেইটা পলিটিকাল সমস্যা, এডমিনেস্ট্রেটিভ রিফর্মের ইস্যু না কোন; এই কারনে এই এজেন্ডা নিয়া সাবধানে আগানোই ভালো।
২. এখন ভালো জিনিসটা নিয়া বলি; মুহাম্মদ ইউনূস গন-অভ্যুত্থানের দলিল-দস্তাবেজ নিয়া একটা কমিশন বানাইতেছেন বলছেন – এইটা দরকারি একটা জিনিস, গন-অভ্যুত্থানের স্পিরিট’টারে এইটা রিপ্রেজেন্ট করে; তো, কার্টুন-পোস্টার-গান এইগুলা গন-অভ্যুত্থানের ঘটনা না, বরং রিপ্রেজেন্টেশন এবং নেরেটিভ, এইগুলা যা থাকার মানুশ-জনের মেমোরিতে থাকার মতো হইলে থাকবে, প্রায়োরিটিতে থার্ড পজিশনে থাকা উচিত; গন-অভ্যুত্থানের শহিদদের কমপ্লিট লিস্ট করাটা জরুরি, আহতদের চিকিৎসা, এইসবকিছু… সেকেন্ডলি গনহত্যাকারিদের গ্রেফতার ও বিচার… মানে, এইগুলা নিশ্চয় উনারা চিন্তা করে রাখছেন, তবে একটা ডেডলাইন নিয়া আগাইলে ভালো, আরো বেশি মানুশরে এনগেইজ কইরা ৩-৪ মাসের মধ্যে যদি মোটামুটি একটা শেইপে আনতে পারেন, তাইলে কমপ্লিট করাটা সহজ হবে, পরে ফাইনাল করতে তো সময় লাগবেই… তো, এইটা ভালো-কাজ।
৩. উনার কথার ইম্পর্টেন্ট যেই জায়গাটা, উনি দুইটা সাজেশন চাইছেন দেশের মানুশের কাছে – (মেইনলি মিডল-ক্লাসের লোকজনের কাছেই, কারন গরিব-ক্লাসের সাজেশন দেয়ার মতো কোন টুল বা ফোরাম নাই, তাদের কথা শুনতে হইলে সরাসরি কাছেই যাইতে হবে আসলে…)
যে, কোন মিনিমাম কাজগুলা করা দরকার এবং কোন কাজগুলা মোটামুটি করলেও হবে; তো আমার সাজেশনগুলা বলি।
মিনিমাম যেই কাজগুলা করা-ই লাগবে –
ক. মিলিটারি, পুলিশ, প্রশাসন, বিচার-বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক, সরকারি ভার্সিটিসহ সব সরকারি ও স্বায়ত্ত-শাসিত ইন্সটিটিউটগুলাতে যেইসব পলিটিকাল নিয়োগ আছে তা বাতিল করা ও তাদের ক্রাইমের বিচার শুরু করা লাগবে; আর এইটা দ্রুত-ই করা লাগবে; ডিসেম্বরের মধ্যে এটলিস্ট তাদেরকে সরানোর কাজটা শেষ করা লাগবে, বিচারও শুরু করতে হবে…
খ. গনহত্যার বিচার শুরু করতে হবে; জোড়াতালি দিয়া আসিফ নজরুল যেইভাবে করার কথা বলছেন, সেইটা ঠিক হবে না; যেইসব আজাইরা মামলা-টামলা হইতেছে – অইগুলাও রিস্কি, বরং তাদেরকে বাঁচায়া দেয়ার চেষ্টাও হইতে পারে এইগুলা; সেপ্টেম্বরের মধ্যে বিচার শুরু করতে হবে ঠিকঠাক মামলা দিয়া, এর জন্য আলাদা কমিশন তৈরি করা যাইতে পারে, যারা সিরিয়াসলি কাজ করবেন
গ. ফ্রি-ফেয়ার ইলেকশন দিতে হবে; তবে একবারে পার্লামেন্ট ইলেকশন না দিয়া টেস্ট বেসিসে ইউনিয়ন, পৌরসভা, সিটি করপোরেশনের ইলেকশন দিয়া শুরু যায়, দেখার জন্য যে, সবকিছু ঠিকমতো ফাংশন করতেছে কিনা, জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি থিকা শুরু করতে পারলে বেটার; এর জন্য পলিটিকাল পার্টিগুলার লগে একটা লিয়াজো কমিটি কইরা মাসে একবার কইরা বসা উচিত (আওমি-লিগ, সিপিবি, জাসদ, জাপা… বাকশালিদের বাদ দিয়া)
জুন, ২০২৫ এর ভিতরে কেমনে ঠিকঠাক ইলেকশন করা যায়, সেই প্রিপারেশন নেয়া দরকার; মানে, একটা ডেডলাইন থাকাটা জরুরি, পরে দরকার পড়লে সময় বাড়াইলেন, কিনতু ডেডলাইন ছাড়া হবে না, পাবলকলি যদি না-ও বলেন, কিনতু পলিটিকাল পার্টি, ফোর্সগুলা এবং ইনটেরিম গভর্মেন্টের লোকজন বইসা এইটা ঠিক করেন
মোটামুটি-ভাবে যেই কাজগুলা করা দরকার–
ক. দেশের ইকনোমির অবস্থা ভয়াবহ, ইমিডিয়েটলি কিছু কাজ করা লাগবে; ইনটেরিম গভর্মেন্টে কয়েকজন ভালো ইকনোমিস্ট আছেন, উনারা দেশের অবস্থা যে কারো চাইতে ভালো জানেন ও বুঝেন, উনারা ডিসিশান নিতে পারবেন বইলা আমার আশা আছে, ইমপ্লিমেন্টেশনের দিকেও খেয়াল রাইখেন আর কি
খ. ইয়াং লোকজনের এমপ্লয়মেন্টের বেবস্থা করেন, যত বেশি পারেন – সরকারি এবং সোশাল কাজ-কামে; মানুশের কাজ-কাম না থাকলে, ইনকাম না থাকলে আবেগ, আইডিওলজি, এমনকি ভালো-ভালো কথায়ও কাজ হবে না, আর ২-৩ মাস পরে; ইনিশিয়েটিভগুলা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রোল-আউট করা লাগবে, যাতে মিনিমাম একটা ইমপ্যাক্ট পাওয়া যায়; তবে ফাও মিডিয়া-হাইপ ক্রিয়েট কইরেন না প্লিজ, এইটার চান্সটাই বেশি আর যদি সেইটা হয় তাইলে ব্যাক-ফায়ারও করবে তখন
গ. ইন্টার-ন্যাশনাল, ইসপেশালি ইনডিয়ার লগে যেইসব গোলামি-চুক্তিগুলা করা হইছে, সেইগুলা বাতিলের বেবস্থা করেন, ২-৪টা হইলেও বাতিল করেন! বাংলাদেশের মানুশের দেশে ও বিদেশে মিনিমাম কোন ডিগনিটি নাই, রাষ্ট্র হিসাবেও কোন পজিশন নিতে দেয়া হয় নাই, গোলামির চুক্তিগুলা এর একটা বড় কারন…
তো, আরো অনেক কাজ তো আছেই, আরো ছোট-বড় অনেক কাজই করা লাগবে, সময়ে সময়ে অনেক কিছু সামনেও আইসা পড়বে, তবে এইগুলা কন্সিডারেশন রাখতে পারলে মনেহয় বেটার।
৪. এখন আমার একটা সাজেশনের কথা বলি; যেইটার বেপারে ইনটেলেকচুয়াল জায়গা থিকা কিছু নড়াচড়া থাকলেও অইভাবে পিপলস-ডিমান্ড হিসাবে হাজির হয় নাই; আমি কয়েকবারই বলছি কথাটা, সেইটা হইতেছে – বাংলাদেশের সংবিধানটারে বদলান, নতুন কইরা লেখেন, ফ্লাওয়ারি কথা-বার্তা না, সবাই যাতে বুঝে, জানে এবং মানতে করতে পারে, এইরকম কিছু রেডি করেন
সব পলিটিকাল দল, সব ক্লাসের লোকজনরে নিয়া এই নতুন জিনিসটা বানান; সেইটারে গনভোটে পাশ করান, তার বেসিসে ইলেকশন করেন; এইটা সহজ কাজ না, কিনতু যদি এইটা করতে পারেন, দীর্ঘমেয়াদি একটা কাজ হবে বইলা আমি মনে করি, যার বেনিফিট অনেক দিন পর্যন্ত পাওয়া যাবে।
আর সেইখানে আমার একটা ইনপুট হইতেছে, পার্লামেন্ট ইলেকশনের পাশাপাশি প্রেসিডেন্ট ইলেকশনও হবে, এবং দুইটা সমান শক্তিশালি পলিটিকাল প্রতিষ্ঠান যাতে হইতে পারে…
তো, মুহাম্মদ ইউনূসের ভাষন নিয়া আমার কথা আপাতত এইটুকই, এমনিতে কথা-বার্তা তো চলতেই থাকবে, আর সবারই বলা উচিত
অগাস্ট ২৬, ২০২৪