[মুকাদ্দিমা: আত্মার হাহাকার থেকে মাঝে মাঝে আমি ক’টি কবিতা লিখেছি , যা আমার চারটি কাব্যে গ্রন্থিত হয়েছে। যার কেন্দ্রীয় সুর ‘ফানা-ফিল্লাহ্’। প্রথম পর্যায়ে তা আলাদা করে দিলেও পরবর্তীতে তা আমার অন্যতম কাব্যস্বর হয়ে ওঠে। এসব পংক্তির পেছনের কিছু কথকতা আমার মনে গুনগানাতো, তা মাঝে মাঝে লিখেছি বা নোট রেখেছি। তা নিয়ে কয়েক সিরিজের গদ্য ‘ ফানা : কথা ও কবিতা’ । জানি না শেষ করতে পারবো কি-না, তবু শুরু করে দেয়া।– মাঈন উদ্দিন জাহেদ ।]
ফানা : কথা ও কবিতা -১ ॥ মাঈন উদ্দিন জাহেদ
বাংলা সাহিত্যে প্রাচীন কাল থেকে একটি আস্তিক্যবাদী ধারা আছে, যা মধ্যযুগে এসে পত্র-পুষ্পপল্লবে বিকশিত হয়ে রহস্য ও সৌন্দর্য্যবাদী চেতনার সমম্বয় সাধন করেছিল। আধুনিক কালে এসে ঊনিশ ও বিশ শতকের প্রথম দু’দশকে কবিদের এমন ঐতিহ্য প্রীতি কাব্যের বিষয় ও উপমা-উৎপ্রেক্ষায় লক্ষ্য করা যায়। তিরিশের দশকে এসে বাংলা কবিতা যখন ইউরোপের ক্লেদকুসুমের ছোঁয়ায় নন্দনের চর্যায় মগ্ন হলো– তখন থেকে সাহিত্যে নৈরাশ্যবাদ, নৈঋত এবং বিজ্ঞান চেতনার আবরনে বিশ্বাসহীনতায় সৌন্দর্য্য কুসুম ফোটানোর প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা যায়। এরই ধারাবাহিকতায় ধর্মনিরপেক্ষ সাহিত্য চেতনা এবং ধর্মীয় ঐতিহ্যকে ত্যাগ করে ইউরোপ ও গ্রীক পুরানে নিজেদের ধুয়ে নিতে প্রমত্ত চেষ্টা দেখা যায় এ শতকের সামগ্রিক কবিতার মধ্যে, যা অতি চেষ্টায় এখন যেন শুয়োরের গোস্তময় হয়ে আর কোনো নতুনতর কাব্যভাষা তৈরী বা ধারণ করতে পারছেন না। নৈরাশ্যের প্রবল ধারাবাহিকতায়ও কিছু কিছু ঐতিহ্যবাদী কবি আস্তিকতা-ধর্মী বিশ্বাস-চেতনা ও ঐতিহ্যকে কবিতা-গল্প-প্রবন্ধ-উপন্যাস সাহিত্যে ধারন করে চর্চা করে গেছেন।
মধ্যযুগের সাহিত্যে যেমন শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য, মঙ্গলকাব্য, অনুবাদ সাহিত্য, বৈষ্ণব পদাবলী, জীবনী সাহিত্য, দোভাষী পুঁথি, নাথ সাহিত্য, মর্সিয়া সাহিত্য, জঙ্গনামা, রোমান্টিক প্রণয়োপাখ্যান, লোকসাহিত্যে ধর্মীয় বিশ্বাস প্রবলভাবে উপস্থিত– মহৎ সাহিত্য প্রয়াসের অনুসঙ্গ ছিলো।
উপমহাদেশে দীর্ঘ সুলতানি আমল ও মুঘল আমল জুড়ে রাষ্ট্রভাষা ছিল ফারসি। ফলে মুসলিম শাসনের গোড়া থেকেই ভারতে ফেরদৌসীর শাহনামা– সোহরাব-রুস্তমের গল্প, নিজামীর লাইলী-মজনু, খসরু- শিরিন, ওমর খৈয়ামের রুবাইয়াত, শেখ সাদীর গুলিস্তাঁ-বুস্তাঁ, নাসির খসরুর কবিতা, ফরিদউদ্দিন আত্তারের ‘মন্তেকুৎ তায়ের’, মোল্লা জামীর ‘ইউসুফ- জুলায়খা’, হাফিজের ‘দিওয়ান’– যা অসংখ্য অনুবাদকের কীর্তিতে খুবই প্রচলিত ছিল। আর সবার চেয়ে বেশি প্রচলিত ছিল যার কাব্য তিনি হচ্ছেন, মওলানা রুমী, তাঁর ‘মসনবী’, তাঁর ‘দিওয়ান-ই- শামস-ই তাবরিজ’। এছাড়া আবু সিনা, গাজ্জালি, এঁদের দর্শনও সমান চালু ছিল ভারতবর্ষের বিদ্যাপীঠগুলোতে। মওলানা রুমীর কাব্য তাঁর জীবনকালের শ’ খানেক বছরের মধ্যেই ভারতবর্ষের শিক্ষিত সমাজের সর্বস্তরে চালু হয়ে গিয়েছিলো। তাঁর কাব্য আর প্রেমের দর্শন আচ্ছন্ন করে ফেলে ভারতবর্ষের সাধু-সন্তদের। এর প্রভাবে ভারতে মধ্যযুগে গড়ে ওঠে ভক্তি আন্দোলন। যার বড় প্রবক্তা হচ্ছেন রামানন্দ ও কবীর, গুরু নানক ও সাধিকা মীরাবাই। দাদুদয়াল ও পল্টু–আরো অনেকের কথাই বলা যায়। কবীরের জীবন কাহিনিও খুবই চিত্তাকর্ষক। তাঁর জন্মসাল, ধর্মপরিচয় তেমন কিছুই জানা যায় না। তাঁর জন্মসাল নিয়ে মতভেদ আছে। কেউ বলেন, তাঁর জন্ম ১৩৯৮ খ্রিস্টাব্দে, কেউ বলেন ১৪৪০তে। সম্ভবত জ্যৈষ্ঠ মাসের কোন এক সোমবারের শুক্লপক্ষের পূর্ণিমা তিথিতে এ মহৎ মনীষার জন্ম। প্রচলিত কাহিনি মতে এক ব্রাহ্মণ বিধবা নারীর গর্ভে তাঁর জন্ম। জন্মের পরপরই কলঙ্কের আশঙ্কায় তার মা তাঁকে পরিত্যাগ করে আত্মগোপন করেন। আর পরিত্যক্ত শিশুটি নিরু শেখ নামে এক মুসলিম তাঁতির ঘরে বড় হয়ে ওঠে। তবে নিরু শেখের প্রতিবেশী সকলেই হিন্দু ছিলেন। হিন্দু পরিবারের বালকদের সাথে খেলাধুলা করেই বড় হন কবীর। বালক বয়সেই তিনি স্রষ্টা চিন্তায় নিমজ্জিত হোন। যদিও তার প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনার সুযোগ হয়নি কিন্তু কিশোর বয়সেই তিনি মুখে মুখে কবিতা বা দোঁহা রচনা করতে পারতেন। তরুণ বয়সে মসজিদ-মন্দিরসহ বিভিন্ন তীর্থক্ষেত্রে পরিদর্শন শুরু করেন। যখন তিনি যৌবনে পদার্পণ করেন, তখন এই উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠসুফি খাজা মঈনুদ্দিন চিশতি, শায়েখ কুতুবউদ্দিন বখতিয়ার কাকি, ফরিদউদ্দিন গঞ্জশকর, নিজামউদ্দিন আউলিয়া, শিহাবউদ্দিন সোহরাওয়ার্দি– এঁদের দর্শনে আপ্লুত হোন। বিশেষ করে কবীরের প্রেমবাদী দর্শনের সাথে মাওলানা রুমীর প্রেমের পন্থার মিল খুঁজে পাওয়া যায়। রামানন্দ বা দাদু দয়াল, মীরাবাইদের কবিতা ক্ষেত্রেও এ প্রভাব সাহিত্য বিশ্লেষকরা উপেক্ষা করতে পারবেন না। সে যাক ছোট বেলায় মাদ্রাসায় পড়ালেখার কারণে মাওলানা রুমির কবিতাগুলো আমার হৃদয় ছুয়ে যায়। বিশেষ করে এ ক’টি পংক্তি :
ফারসি:
পীরি-মন বা মুরিদি-মনু দরদি-মনু ব দওয়াই-মনঃ
ফাশ বগুষ্কৃতম্ ঈন সুকুন শমইস্-মন বা খুদাই-মন।
মাৎ শাবম-জ-আনকিহ্ শহি-দু আল্ মী;
তা.তু মরা নজ..ব কুনী শমসি-মন্ ব খুদাঈ-মন।
মহর শবম্ ব-পীশি-তু তা কিছু অথর নমানদম;
শরতি-অদব চুনীন্ ববদ শমসি-মন বা খুদাঈ-মন্।
শহপরি-জিব্র’ঈল রা তক্ বৎ আন্ কুজা ববদ;
কজ, তু নিশান্ দিহদ মরা শামসি-মন ব খুদাঈ-মন।
হাতিমি-তাই কুজা কি তা বৃসহ্ দিহদ রিকাব রা;
ওয়াক্তি-সখা ব-বশি অস্ত্ শমসি-মন্ ব্ খুদাঈ-মন্।
বাঙলায়ন:
হে গুরু, আমার শিষ্য- তুমি আমার যন্ত্রণা আবার ঔষধও।
বলতে ভুল হলো-সে আমার সূর্য, আমার খোদা।
তোমার ভালোবাসায় মরব,
তুমিই তো দুই জগতের নেতা;
আমায় করুণা করো– ও আমার আলো,
আমার খোদা।
তোমার মধ্যে হারিয়েছি আমার নিজস্ব সত্তা,
তাই আমার অহমের কোনো চিহ্নই নেই;
এতো আমাদের সাযুজ্যেরই দশা,
হে আমার সূর্য, আমার অধীশ।
কোথায় হাতেম তাই- তিনি আমার ডালি চুম্বন করবেন;
এখনই তো সেই তোষণ ও উপহারের সময়,
হে আমার সূর্যালোক, আমার খোদা।
‘৪৭ পরবর্তী নানা চড়াই উৎড়ায়ে সাহিত্যের এ আধাত্মধারা ক্ষীণ স্রোতে বয়ে যায়। সমস্যা শুরু হয় মূলত: ‘৭১ পরবর্তী সময়ে । বাংলাদেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় চেতনা ইসলামকে একটি গোষ্ঠী ভিক্টিমাইজ করতে থাকে স্বাধীনতার পরিপন্থি চেতনা হিসেবে। যা পুরোটাই বাঙালি মুসলমানের বিরুদ্ধে একটি সাংস্কৃতিক ষড়যন্ত্র। ক্ষমতার রাজনীতিতে গদি অর্জনে সবচেয়ে বড় শত্রু হয়ে ওঠে বাঙালি মুসলিম সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্রচেতনা । তাকে নানা ভাবে রঙ লাগিয়ে সং সাজিয়ে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে । কবি মনীষী সৈয়দ আলী আহসান, কবি ফররুখ আহমদ, কবি তালিম হোসেন, কবি আফজাল চৌধুরী, কথাশিল্পী শাহেদ আলী, সাহিত্য সমালোচক শাহাবুদ্দীন আহমদ, অধ্যাপক মাহফুজ উল্লাহ, অধ্যাপক আবু তালিব, অধ্যাপক আবদুল গফুর, অধ্যাপক সৈয়দ আলী আশরাফ, কবি ও নৃতাত্ত্বিক গবেষক আবদুস সাত্তার, অধ্যাপক আসকার ইবনে শাইখ, অধ্যাপক এবনে গোলাম সামাদ আরও কিছু বরেণ্য লেখক-শিল্পী-সমালোচকদের সচেতন লেখালেখির মাধ্যমে এ ঐতিহ্যবাদী ধারার পাটাতন তৈরী হয়। সচেতন কবি ও সাংবাদিক হিসেবে আল মাহমুদের পাশফেরা ও আদর্শিক প্রতিরোধ তাই বাঙালি মুসলিম স্বাতন্ত্র চেতনার সাহিত্য ধারায় প্রবল সংযোজন ও বিরোধী শিবিরে প্রচন্ড আদর্শিক আঘাত হিসেবে চিহ্নিত হয়। যা তার রাজনৈতিক সুবিধাভোগিদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। আজও আল মাহমুদের বিরুদ্ধে সমস্ত সমালোচনা সে রাজনৈতিক প্রপাগান্ডাই অংশ, কোনো সুস্থ সাহিত্যিক আলোচনা পাওয়া যায় না। ব্যক্তিগত আক্রমণ, কূটাচার কিংবা মিথ্যাচার বাকচাতুরতা ছাড়া।
আশির দশকের শুরুতে বাঙালি মুসলিম স্বাতন্ত্র সাংস্কৃতিক চেতনাকে ধারণ করে একটি ঐতিহ্যবাদী ধারার বিকাশের ধারাবাহিকতায় সব্যসাচী লেখক আবদুল মান্নান সৈয়দ লিখেন ‘সমস্ত প্রশংসা তাঁর’ কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুচ্ছ। যা বাংলা সাহিত্যে তুমুল আলোড়ন তুলেছিলো। এ নিয়ে তখন পঞ্চাশের অন্যতম কবি শামসুর রাহমান বিস্মিত হয়ে বলেছিলেন– জন্মান্ধকবিতাগুচ্ছের কবি আবদুল মান্নান সৈয়দের পক্ষে একাজ কিভাবে সম্ভব হলো? অবশ্য এর আগেই ড. আলি শরিয়তির লেখায় প্রাণিত হয়ে পঞ্চাশের অন্যতম কবি আল মাহমুদের সমাজতান্ত্রিক চিন্তাচেতনায় চির ধরে, ইসলামের অর্থনৈতিক সাম্যে বিশ্বাসের স্থিতি খুঁজে পান। ‘অদৃষ্টবাদীদের রান্নাবান্না’য় ফুটে ওঠে তার পাশফেরার কাব্য দুলুনি। এরপর আলোড়ন তুলেছিলো তার ‘বখতিয়ারের ঘোড়া’ কাব্যগ্রন্থ। তবে এ নিয়ে তার রাজনৈতিক বিশ্বাসের বন্ধুরা প্রশ্ন তুলেছিলেন –এর পেছনে বৈশ্বিক রাজনীতি ও পেট্টোডলারের প্রভাব আছে । তার জবাবে কবি আল মাহমুদকে কলম ধরতে হয়েছিল প্রবল ভাবে। লিখেছিলেন তিনি ‘দিন যাপনের গ্লানি’, ‘সাহসের সমাচার’–কলামগুলো। তিনি তখন প্রবল ভাবে ডঃ আলী শরিয়তির লেখার প্রভাবিত হয়ে তার সৌন্দর্য্য চেতনার পরিবর্তন ও পরিতোষণকে সামনে নিয়ে এসেছিলেন সাংস্কৃতিক বিদ্যাচর্চায়। এসময় তার পক্ষে প্রচণ্ডভাবে অবস্থান নিয়েছিলেন রেডিকেল হিউম্যানিস্ট ভাবুক ও চিন্তক জিজ্ঞাসা সম্পাদক মনীষী শিবনারায়ণ রায়।
এম্নি করে বাংলাদেশে আমরা চর্চা হতে দেখি– রাসুল (সাঃ) এর সাহাবীদের কবিতার অনুবাদ, সাহাবীদের কাব্যজীবন, কবিতা ও শিল্প বিষয়ে মহানবী সা. এর বাণীগুলোর উন্মোচন, যা এতোদিন পর্যন্ত কুপমন্ডুক তথাকথিত আলেমদের প্রভাব বাংলা অঞ্চলে অনালোচিত ছিলো। রাসুল (সঃ) কে নিবেদন করে লেখা কাসিদায়ে বুরদা সহ সূফিবাদী কবিতাগুলো বাংলা সাহিত্যে পুনরায় আলোচনার পাদদপ্রদীপে চলে আসে। এ সময় সৈয়দ আলী আহসান ও সৈয়দ আলী আশরাফ ভ্রাতৃদ্বয়ের তত্ত্বাবধানে কবি আবদুল মান্নান সৈয়দ এর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়– রাসল (সা.) কে নিবেদিত কবিতা। একটি মনোমুগ্ধকর ও সমৃদ্ধ কবিতা সংকলন। যা প্রাচীন যুগ থেকে সাম্প্রতিক সময় পর্যন্ত লেখা হযরত মুহাম্মদ সা. কে নিবেদনের একটি বর্ণাঢ্য প্রকাশনা ছিলো। কবি আবদুল মান্নান সৈয়দ এর একটি চমৎকার ভূমিকা এ সংকলনে গ্রন্থিত হয়েছিলো। আমার একটি কবিতা ‘একদিন সূর্য ও সবুজ দেখে’ শিরোনামে। যা সেসমর আমি ‘রাসুল (সাঃ) শব্দটি উল্লেখ না করেই শিল্পীত প্রতীকে নিবেদন করেছিলাম আমার প্রশস্তি কবিতায়। প্রত্যেক বাঙালি মুসলিমের মত আমার হৃদয়েও দোল খেতো কখন যাবো নবীর রওজায়, যেখনে জান্নাতের ফুল রৌশনি ছড়ায়। এমন মাতাল করা আবেগ নিয়ে বছরের পর বছর পার করেছি মহানবীর ভালোবাসায়।
আজকের পাঠকের জন্য নিবেদন আমার সেই নব্বইয়ের দশকে লেখা এ কবিতাটি–
একদিন সূর্য ও সবুজ দেখে ॥ মাঈন উদ্দিন জাহেদ
উন্মুখ সূর্যের সম্মুখ হয়েই
অন্তর ভেতর থেকে বেরোয় রূহের কালাম,
অনুভবে গহীনে উঠে দীপ্র মুখ–
গভীর গভীরতর হোলাম।
গহনের সমস্ত দুয়ারে প্রচন্ড প্রতাপ দ্যাখি
সবুজে সবুজ;
অলক্ষ্যে বেরিয়ে আসে হৃদয় সালাম
ক্ষয়িষ্ণু পৃথিবী শোকে, পূণ্য চাই,
সালাম, সালাম।
হৃদয়ে স্পর্শ চাই অবোধ বালক,
শুধু চাই শুধুই সূর্য– পুচ্ছ পালক,
হৃদয়ে স্পর্শ, স্পর্শ দাও;
দাও নিংড়ানো আলো;
মেঘের ভেতর থেকে ঝরাও বিষ্টি আরো।
ছাড়ায় পেখম ছেড়ে যেম্নি আলোকিত চন্দ্রাবেশ,
পুষ্পিত চুম দরদের রেশ;
হৃদয়ে সবুজ তুলে সাজবো এ পৃথ্বি-ঘর
শব্দে শব্দে বুনে হৃদয় অক্ষর।
স্পর্শ দাও,
স্পর্শের চেয়ে দামী আর কিছু নাই;
পৃথিবীব্যাপী শোক, শোকের বন্যায়।
মাওলানা রুমির সূর্য্যের উপমা আর আমার কবিতার উৎপ্রেক্ষার পার্থক্য থাকলেও প্রেরণায় ছিলো মসনবির পংক্তিমালা। যা আমার তারুণ্যে নবচৈতন্যের জোয়ার এনেছিলো। এ কবিতাটি আমার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘সেপ্টেম্বরের ইলশে রোদ ঘিয়ে বিষ্টি’তে গ্রন্থিত। পোয়েটিক্স থেকে এটি ২০০৫ সালে প্রকাশিত হয়। প্রচ্ছদ ও অলংকরণ করেছিলেন আমার অগ্রজ, খ্যাতিমান চিত্রশিল্পী মোমিন উদ্দীন খালেদ।