spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদগদ্যবৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম অংশীদার 'বাংলা রিভিউ' : শেষ পর্ব

লিখেছেন : মাহমুদ নোমান

বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম অংশীদার ‘বাংলা রিভিউ’ : শেষ পর্ব


| মাহমুদ নোমান |

মুক্তিকামী মানুষের মুখপত্র ‘বাংলা রিভিউ’ মধ্য জুলাইয়ে প্রাণ দেওয়া আবু সাঈদের মৃত্যুর পরে তুমুল স্লোগান মুখর হয়ে উঠে; নিরলস প্রচেষ্টার মর্মবাণী জনতার সংগ্রামে উজ্জীবিত শক্তির যোগান দিয়েছে প্রতিদিন ‘বাংলা রিভিউ’…পত্রিকাটির অন্তর্জালে একই শিরোনামে কয়েকজনের কবিতা কিংবা একক কবির একগুচ্ছ কবিতায় আন্দোলনে এনেছে দৃঢ় গতিপথ, মুক্তি একদিন আসবে এই দৃপ্ত পদচ্ছাপ রেখেছে ‘বাংলা রিভিউ’ টানা দেড় মাসের মেহনতে; এমনকি বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের প্রেক্ষিতে অর্জিত স্বাধীনতার পরবর্তী উপলব্ধি নিয়ে আগস্টের শেষদিকে এসেও এই মহৎকর্মের বৃহৎ আয়োজনে স্বাধীনচেতার ইতিহাসে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। হয়তো এখন অনেকে সংকলন করবে আন্দোলনকে কেন্দ্র করে এমনকি ইতোমধ্যে অনেক পত্রিকাও এই শুভ কাজ শুরু করেছে। কিন্তু অশুভ সময়ে যখন কথা বলা মুশকিল, চলমান ঘটনার সময়ে মহাকাব্য লিখেছেন ‘বাংলা রিভিউ’ এর সম্পাদক কবি সাজ্জাদ বিপ্লব, উনি এই পথে স্মরণীয় হয়ে থাকবে নিশ্চিত…

‘বাংলা রিভিউ’এর ধারাবাহিক আয়োজনের শেষ আগস্টে ‘চব্বিশের কবিতা ও অন্যান্য’ শিরোনামে তিনজন কবির কবিতা প্রকাশিত হয়। এই শিরোনামে লিখেছেন কবি মোশাররফ হোসেন খান, জিয়া হক ও মাসুদ কামাল… এটিও বরাবরের মতো সুনির্বাচিত কর্ম প্রকাশ, তবে আন্দোলন চলাকালীন যে মেজাজের কবিতার স্বর আমাদেরকে জানান দিয়েছে ‘বাংলা রিভিউ’ তেমন নয় – মিইয়ে যাওয়া আলোয় মুক্তির শিখা চিরন্তন সারবস্তুর ধারণা-জ্ঞান জাহির করে; আবু সাঈদকে নিয়ে কবি মোশাররফ হোসেন খানের কবিতাটি আল মাহমুদের সেই বিখ্যাত ছড়ার ঢঙ উপস্থিত করেছে যেন-

মর্মপীড়ায় যায় না দেখা
রক্তমাখা ধুলি
সূর্য যেন লক্ষ সাঈদ
বুলেট বিদ্ধ খুলি।
–চব্বিশের কবিতা; মোশাররফ হোসেন খান)
এরপরে জিয়া হকের কবিতাটি স্বাধীনতার পরবর্তী সুবিধাভোগী বাস্তবতার স্বাক্ষী দিচ্ছে-
ফ্যাসিবাদের দোসর ছিলেন, ছিলেন খুনে চুপ করে
হঠাৎ করে গর্ত থেকে উঠেন ডেকে খুব করে
সময় বুঝে, বিজয় দেখে ভেটকি মারেন সেলফিতে
ষোলো বছর দুধে-ভাতে বেঁচেছেন অঢেল ফি-তে।
–সুবিধাবাদ জিন্দাবাদ;জিয়া হক)

‘চব্বিশের কবিতা ও অন্যান্য’ শিরোনামের শেষ কবিতাটি লিখেছেন কবি মাসুদ কামাল। তিনি স্বাধীনতা পরবর্তী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের প্রতি এতোদিনের নিপীড়িত হওয়ায় সৃষ্ট বিদ্বেষ উগরে দিয়েছেন ইলিশের উপর দিয়ে-
দেড় দশকের পিরিতি আজ টা টা
চাইলে ইলিশ পাবে না তার কাটা
যাও ভুলে যাও সেই সুমধুর দিন
আমাদের কাছে তোমাদের আছে পাহাড়সম ঋণ।
– পিরিতি; মাসুদ কামাল)

০২.
বৈষম্য দূর করতে এই আন্দোলন, বুঝতে হবে বৈষম্য কী, কীসে বৈষম্য; আপনি যেটাতে আটকে যাচ্ছেন, কথা বলার অধিকার হারাচ্ছেন, রাষ্ট্র থেকে ঠিক ঠিক আপনার প্রাপ্য পাচ্ছেন না, সেটাই তো বৈষম্য; ইতোমধ্যে কিছু বয়স পেরিয়ে এসে অনেককিছু দেখার মধ্যে দেখেছি প্রত্যেকে নিজের অধিকার আদায়ে সোচ্চার কিন্তু অন্যের অধিকারের কথা বেশিরভাগই ভাবে না, এভাবে বৈষম্যের বীজ রোপিত হয়; একপেশে স্বাধীনতা হয়ে যায়! একটা সময় এক পক্ষ কথা বলতে পারে আরেক পক্ষের কথা কেড়ে নেওয়া হয় আবার সেই পক্ষ কথা বলতে পারে তো আগের পক্ষের কণ্ঠরোধ! এটাকে কোনমতে স্বাধীনতা বলা যায় না। এমনকি একজন কবি লেখক একপক্ষের কথা বলে না,কবি সবসময় অন্যায়ের বিপক্ষে…

যখন যেই পক্ষ ক্ষমতাসীন হয় সেই পক্ষের কথাই বলতে হয় নয়তো নিপীড়ন এটিকে স্বাধীনতা কীভাবে বলি,অনেক পথ ও মতের দেশে সবাই নিজের প্রাপ্য নিয়ে কথা বলুক,বলতে দিতে হবে এটাই বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের মূল মর্মবাণী নিশ্চয়; ২৮আগস্ট ‘বাংলা রিভিউ’ এই আন্দোলনের আয়োজনের শেষ শিরোনাম রাখেন ‘সাদা গোলাপে রক্তের দাগ ও অন্যান্য কবিতা’…
এই শিরোনামের প্রথম কবিতাটিতে কবি কামরুজ্জামান নতুন এক সকালের কথা বলেন যেখানে বৈষম্যের শিকার হবে না কেউ-

নতুন একটা সকাল আনবো বলে চলে আসি
মিছিলে মিছিলে তারুণ্যে উজ্জ্বল সৌর দ্বীপ্তিময়
শহীদ মিনারে, প্রতীকে আবু সাঈদের লাল রক্ত
কথা কয় লক্ষ কোটি কণ্ঠে কণ্ঠে ঝরায় আগুন…
– শ্রদ্ধা সম্মান;কামরুজ্জামান)

‘সাদা গোলাপে রক্তের দাগ ও অন্যান্য কবিতা’ শিরোনামের মূল কবিতাটি লিখেছেন কবি ইমরান মাহফুজ। ইমরান মাহফুজ এই সময়কার তরুণদের মধ্যে এগিয়ে থাকা কণ্ঠস্বর; ইমরান মাহফুজ স্বৈরাচার সরকারের সময়েও সদা প্রতিবাদী একজন কবি, সেটির উৎকৃষ্ট উদাহরণ হতে পারে উনার ‘কায়দা করে বেঁচে থাকো’ কবিতার বইটি; সহজ সরল বয়ানে সত্য উঁচিয়ে ধরে এমন সময়নিষ্ঠ ছবক দেওয়া কবি হাতে গোনা-

কোথাও কেউ ভালো নেই–
মাছের সভায় মাছির হামলা।

সাদা গোলাপে রক্তের দাগ
নদীর স্রোতে হাহাকার, টিগারে নারী অন্ধকার
বিভক্ত পাখিদের অনুভূতি– নির্মম জুলাইয়ে অনুভোতা।
–সাদা গোলাপে রক্তের দাগ;ইমরান মাহফুজ)

‘বাংলা রিভিউ’ এই বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের বদৌলতে বাংলা সাহিত্যের
উল্লেখযোগ্য সাহিত্য আয়োজন করেছেন। ‘সাদা গোলাপে রক্তের দাগ ও অন্যান্য কবিতা’ শিরোনামটি ছিল এই আয়োজনের শেষ স্মারক; কবি কামরুজ্জামান, ইমরান মাহফুজের সাথে আরেকটি কবিতা ছিল কবি শাদমান শাহিদের। উনার কবিতার তেজ উদ্দীপনা এনে দিতে পারে সহজাত বোধে–

এমন রক্তস্রোত দেখার পরও
মালিকা হামিরাই যার আশ্রয়
এ-ফোর সাইজের একটা কাগজকে মনে করে অস্তিত্ব
অপেক্ষা করে আর ভাবে–
“কোনোরকম কেটে যাক হুজুগ
তারপরেই চিচিং ফাঁক”
হাসে দাঁত কেলিয়ে
– জবাব দিতে হবে তাকেও;শাদমান শাহিদ)
‘বাংলা রিভিউ’ মধ্য জুলাই থেকে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের শেষেও মুক্তিকামী মানুষের মাঝে যে বারতা ছড়িয়ে দিতে উদ্যোগী ভূমিকা পালন করেছেন নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় কর্মযজ্ঞ। দীর্ঘ দেড় মাসের এই সাহিত্য আয়োজন ‘বাংলা রিভিউ’কে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়, সম্পাদক হিসেবে কবি সাজ্জাদ বিপ্লব সত্যি সত্যি বিপ্লব ঘটিয়েছেন…

আগামী হোক বৈষম্যহীন, পরমতসহিষ্ণুতায় সুন্দরের দিকে এগিয়ে যাক বাংলাদেশ এই অধমের এটাই প্রত্যাশা…

মঙ্গল হোক বাঙালির, নতুন সকাল দেখার ‘বাংলা রিভিউ’…

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ

কাজী জহিরুল ইসলাম on কবিতার জন্য নির্বাসন
নয়ন আহমেদ on কবিতাগুচ্ছ