spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদকবিতাগুচ্ছ কবিতা : মুহাম্মদ ইসমাঈল

গুচ্ছ কবিতা : মুহাম্মদ ইসমাঈল

………
নন্দিত নিন্দিত
………

নন্দিত মানুষ যদি নিন্দিত হয়
তখন তার কোন অস্তিত্ব থাকে না
সে কিছু মুখ ফুটিয়ে বলতেও পারে না।
তার অবয়ব তখন কালের স্বাক্ষী হয়ে
দুনিয়াতে বাঁচার আকুতি নিয়ে
সে চিৎকার করে
আমি বাঁচতে চাই
আমি বাঁচতে চাই
এতে কেউ সাড়া দেয়
কেউ সাড়া দেয় না

………
আয়না
………
আয়নার সামনে দাড়ালেই
আমি সত্যটা পেয়ে যাই
আয়না কখনো বাড়িয়ে বলে না
আমি যেমন আছি
আয়না তেমনি বলবে
সুতরাং আয়নার সামনে দাড়াও
আসল সত্যটা বের হয়ে আসবে।

………
গ্লানিকর
………

অপরীক্ষিত জীবন নিয়ে
বেঁচে থাকা গ্লানিকর
কষ্ট
শুধু কষ্ট আর কষ্ট
পোশাক হলো বাইরের আবরণ
মানুষের আসল সৌন্দর্য
তার জ্ঞান
নিজেকে জানা
একটু হলে ও কষ্ট লাঘব হয়।

চুল ঝরে যায়, দাঁত পড়ে যায়
তোমার শুধু বয়স বাড়ে
আমারও বয়স বাড়ে
চুল ঝরে যায়, দাঁত পড়ে যায়
গোঁফ পেকে যায়
দৃষ্টিশক্তি কমে যায়
চশমা লাগে
কিছু আইড্রপও লাগে
নানা ঋতুর সমাগমে
আমি একটি ধূলির কনা
একলা ঘুরি
একলা উড়ি
একলা পুড়ি
ছাই হয়ে যাই ক্রমে ক্রমে।
পঁচিশও হয় ফুলও ফোটে
রঙে রসে উছলে ওঠে টের পেতাম,
এখন পাই না তা টের
গুঞ্জরিত হাট-বাজারের
সবই তো দিগন্তরেখা
কারো সঙ্গে হয় না দেখা
পরিভ্রমণ নিজের ভ্রমে
বুঝতে পারি চুপিসারে
আমার কিন্তুু বয়স বাড়ে।

…….
থাকবে চিরদিন
………

স্বর্ণলতা
আজও আছে তোমার চিঠি
সযত্নে তুলে রাখা।
আসছে মুঠোফোন
আসছে ফেসবুক
আসছে ইন্টারনেট
আসছে গুগল।
আসছে টুইটার
আসছে ইউটিউব

তারপরও তোমার চিঠি
সেই ভাঁজে আছে
সেই ভাঁজ
সেই সুরভী
সেই গোলাপের পাপড়ি
সেই মাধুরী
সেই মোহন ভালোলাগা
সেই ভালোবাসার চাদর জড়ানো স্মৃতিরা
সেই নিখুত নান্দনিক হাতের লেখা
সেই সুন্দর খাম।

বিশ বছর আগের সেই তুমি
তেমনি যত্ন আবেগ মাখা সুখসুধা তোমার
আজও অমলিন
থাকবে চিরদিন
যতদিন বাঁচবো।

………..
ভাঙে না শীতঘুম
………..

শীতঘুমে ও ভাতঘুমে নিঝুম শহর
কাঁচের দেয়ালে কুয়াশার ঝাঁক
হরিণের পালে ঢুকে পড়ে বাঘ
ঝড়ো বাতাস পাগলা ঘন্টা বাজায়
পথান্ধ চিলেরা ওড়ে অচিন নেশায়

ছুটে যায় ট্রেন, হর্ণ দেয়
ছুটে যায় বাস, হর্ণ দেয়
ছুটে যায় ট্রাক, হর্ণ দেয়
ছুটে যায় মাইক্রোবাস, হর্ণ দেয়
ছুটে যায় প্রাইভেট কার, হর্ণ দেয়
ছুটে যায় লেগুনা, হর্ণ দেয়
ছুটে যায় বাইক, হর্ণ দেয়
ছুটে যায় বাইসাইকেল, হর্ণ দেয়

ভাঙে না শীতঘুম
ভাঙে না ভাতঘুম

……..
রোমন্থন
……..

যতবারই আমি স্মৃতিকে
রোমন্থন করি
তত বারই স্মৃতিকে বুঝতে পারি না
স্মৃতি কেন এত পরিবর্তনশীল !
স্মৃতিকে সজ্জিত করার কাজটি
আমি ইচ্ছায় করি
অথবা অনিচ্ছায় করি
এটি আসলে অবিশ্বাস্যভাবে
একটি নমনীয় প্রক্রিয়া

…….
শিমুল
…….

পঞ্জিকার হিসাব এখন শীতকাল
মাঘমাস
কিন্তু মাঘের সেই শীত নেই
মাঘের শেষেই আসবে বসন্তকাল
বসন্তই কুঞ্জবন গুঞ্জরিত হয় মৌমাছির আনাগোনায়
প্রকৃতি এখন বদলে যাচ্ছে
পরিবেশ প্রতিনিয়ত পরিবর্তনের দোলায় আন্দোলিত
মাঘের কনকনে শীতেই শিমুল গাছে রক্তবর্ণের ফুল ফোটে
অথচ এরকম বৈরী পরিবেশ আগে ছিলো না
প্রকৃতির সাথে আমাদের শত্রুতা বেড়েছে
আমাদেরই কারণে
প্রকৃতি নির্মম নয়
আমরাই নির্মম।

……….
শীতের আয়োজন
……….

শীতের উপাদান শীতল হাওয়া
কুয়াশা, শিশির, খেজুর রস, অতিথি পাখি
মাঝে মাঝে প্রজাপতির দেখাও মেলে।
কবি লেখকদের পাল্লার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে
শীতকাল ও সাহিত্যের রসদ যোগায়
কাগজে শব্দের আঁচড়ে ফুটে ওঠে ঋতুর সুবিধা অসুবিধা।
রসনাবিলাসীরা বাঙালীর মূল সংস্কৃতি জায়গাজুড়ে
বিচরণ করে পিঠা পুলির ঐতিহ্য ধরা দেয়
তার আপন মহিমায়।
ভাপা পিঠা, পুলি পিঠা, ভিজা পিঠা
গোটা পিঠা, পাটিসাপটা পিঠা আরও কত কি ?
সবই আমাদের শীতের আয়োজন।

………
যে দিকে তাকাই
………

যে দিকে তাকাই
শুধু তুমি
তুমি তুমি তুমি
ও আমার মাতৃভূমি
ও আমার মাতৃভূমি
ও আমার মা
ও আমার গাঁয়ের নদী
আমার সমস্ত প্রেম
বিরহের অনন্ত আকাশ
একমাত্র তুমি ছাড়া
কেউ আর গ্রহণ করে না
অন্ধকার থেকে
সন্ত্রাস থেকে
খুন থেকে
বিপদ থেকে
আলোর উদ্যানে নিয়ে যান
একমাত্র তিনিই আমাদের আশ্রম
যে দিকে তাকাই
শুধু তুমি
তুমি তুমি তুমি

……….
নতুন বছর নতুনের আবাহনে
……….

নতুন বছর নতুনের আবাহনে
আমরা পথ চলি
নতুন অনুভূতি
নতুন পরিকল্পনায় এগিয়ে চলি
সব কিছুতেই যেন নতুন নতুন গন্ধ লেগে আছে
নতুন গন্ধের আনন্দে আমরা হয়ে উঠি রঙিন
জীবনকে করি আনন্দময়।

প্রার্থনা পাপী কবির জন্য
হে আল্লাহ !
তোমার কাছে কিছুই চাই না
কিইবা চাওয়ার আছে একটি শব্দ ছাড়া
দহনে- পীড়নে, বিচ্ছেদে, বিরহে
দুনিয়ার মায়া ছেড়ে
আখেরাতকে পাওয়ার জন্য
অসহায় এই কবি
তোমার করুণা ভিক্ষা মাগে।

গুনাহর ঘরবাড়ির দুয়ার খুলে
দাঁড়িয়ে আছি
মাফ এসেছিল, ছিল, আসবে
অথচ একটি বারও চিন্তা করিনি
অন্তরকে করেছি রক্তাক্ত ক্ষতবিক্ষত
চরিত্রকে করেছি রক্তাক্ত ক্ষতবিক্ষত
তওবা শব্দ অধরা, সে কি অধরাই রয়ে যাবে !

মিনতি আমার–
হে প্রার্থিত শব্দ আমার ফুলের শরীর ছুঁয়ে এসো
লতাগুলোর ভিড়ে শস্যের শ্যামলিমা হয়ে এসো।
নবীজীর দেহ মোবারক ছুঁয়ে এসো।
মহান আল্লাহ তায়ালার কুদরতী
শরীর মোবারক ছুঁয়ে এসো।
আমি তওবা করছি
তওবা !

আর কোনদিন পাপ কাজে যাবো না
তোমার প্রতীক্ষায় প্রহর গুনে কবি
প্রতিবাদ আর প্রতিরোধে, প্রেমে ও আবেগে
তুমি এসো
অরন্যের ছায়াবীথি তলে তুমি এসো,
সূর্যস্নানে তুমি এসো।
চন্দ্রালোকে এসো, রাধিকার মান
ভঞ্জনে তুমি এসো।
গুনাহ মাফের জন্য তুমি এসো।

তোমাকে পাওয়ার জন্য তুমি এসো
তোমার হাবিবকে পাওয়ার জন্য তুমি এসো
অনাগত মানুষের জন্য তুমি এসো
অনাগত শব্দের মিছিলে এসো
তুমি এসো শব্দ কাঙাল কবির কলমে
তুমি এসো পাপী কাঙাল কবির জীবনে।

……….
নীল কষ্ট
……….

আমার বুকের পাঁজরের কষ্টগুলো দীর্ঘদিনের
পাঁজরে বারটি করে চব্বিশটি হাড় আছে
হাড়গুলো গুড়িয়ে মাড়িয়ে একাকার।
কষ্টের ফেরিওয়ালা হয়ে
আর বইতে পারি না
তিনশত ষাটটি জোড়ায় এখন কষ্টের ক্ষত
ক্ষতগুলো এখন শুকায় না।
কিছু কিছু কষ্ট বিক্রি করতে গিয়েছিলাম
পারিনি
এখন কষ্টগুলো আকাশ ছুঁতে শুরু করেছে
আমার আকাশটা এক সময়ে রঙিন ছিল
রঙিন আকাশে একসময় স্বপ্ন ছিল
ধানশালিক প্রজাপতি ফড়িং হয়ে
স্বপগুলো পুরো আকাশ জুড়ে
রঙিন স্বপ্ন হয়ে উড়োউড়ি করতো
কিন্তু এখন
ধীরে ধীরে নীল কষ্ট দখল করে নিয়েছে
আমর স্বপ্নের পুরোটা রঙীন আকাশ
এখন আকাশে কোন স্বপ্ন নেই
আছে দু:খ
দু:খ, দু:খ, দু:খ
দু:খ ছাড়া কিছুই নেই

…………
হে বিশ্বজাহানের মহান প্রভু
…………

হে বিশ্বজাহানের মহান প্রভু
হে বিশ্বজাহানের মহান মুক্তিদাতা
হে বিশ্বজাহানের মহান রিজিকদাতা
মহাকালের নিমজ্জিত পাপী আমি
কেবল ডুবে থাকি হতাশার ভিতর
কাল থেকে কালান্তরে
শত সহস্রাব্দ থেকে
আঁধার ঘুচবে বলে
নিরাশার দিন গুনে
হে বিশ্বজাহানের মহান প্রতিপালক
হে বিশ্বজাহানের মহান তওবা কবুলকারী
হে বিশ্বজাহানের মহান ধৈর্য্যশীল
ভক্তিতে নিশ্বাসে তোমাকে স্বরণ করি নিরন্তর।
সূর্যের বিস্ময় আলোয় কিংবা ফুলের সুরভীতে
ভোরের আবেগী মন
অথবা বিকেলের ক্লান্ত দু‘নয়নে
আমি তৃষ্ণার্ত চাতক।
হে বিশ্বজাহানের মহান সৃষ্টিকর্তা
হে বিশ্বজাহানের মহান অধিপতি
হে বিশ্বজাহানের মহান অতিশয় দয়ালু
আমাকে মাফ করে দাও
তোমার রহমতের কুদরতী কোলে আমাকে
তুলে নিয়ে যাও।।

……..

জন্ম: ০৪/০১/১৯৭০ইং
প্রকাশিত গ্রন্থ: ২টি
প্রকাশিতব্য: ২০টি
গ্রাম: চাঁদপুর, পো: সূচীপাড়া,
থানা: শাহরাস্তি, জেলা: চাঁদপুর

আরও পড়তে পারেন

1 COMMENT

  1. অনেকগুলো কবিতা এক সাথে পাঠ করার চমৎকার আয়োজন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ