spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদগদ্যদীপ মুখোপাধ্যায় : ছড়ারাজের প্রথম প্রয়াণবার্ষিকী

লিখেছেন : সালেম সুলেরী

দীপ মুখোপাধ্যায় : ছড়ারাজের প্রথম প্রয়াণবার্ষিকী

সালেম সুলেরী

আমার আমন্ত্রণেই প্রথম কলকাতা থেকে ঢাকা আগমন। বাংলাদেশে একমাত্র আমার সঙ্গেই বেরিয়েছিলো যৌথ ছড়াগ্রন্থ… 

নিভেই গেলো দীপ-এর আলো, ছন্দ-ছড়ার অধ্যায়,

লক্ষ স্মৃতির সখ্য আমার — হে ‘দীপ মুখোপাধ্যায়’। 

কিংবদন্তী ছড়াকবি সুকুমার রায় প্রয়াত হন ১৯২৩-এর ১০ সেপ্টেম্বর। আর আমার গ্রন্থসখা দীপ মুখোপাধ্যায় গেলেন ২০২৩-এর ১০ সেপ্টেম্বর। পশ্চিমবঙ্গের ছড়া-যুবরাজ ক্রন্দন ছড়ালো বিশ্বময়। রেখে গেলো মা, পত্নী, নিকটজন, ভক্ত, অর্ধশতাধিক গ্রন্থ। শিশুসাহিত্যে সর্বশেষ পুরস্কার পশ্চিমবঙ্গ সরকার থেকে। ‘উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী পুরস্কারটি’ ‘চাট্টিখানি’ উপন্যাস চতুষ্টয়ের জন্যে। উপেন্দ্রপুত্র সুকুমার রায়ের প্রয়াণ-শতবার্ষিকী’ই টেনে নিলো ছড়ারাজ দীপ’কে। 

‘ছড়া-যুবরাজ’ উপাধিটি উচ্চারণ করেছিলেন কিংবদন্তী কবি আল মাহমুদ। ২০০৬ সালে ছিলো ‘শতভাগ ছড়া’ বই-এর প্রকাশনা অনুষ্ঠান। বইটি দীপ মুখোপাধ্যায় ও আমি (সালেম সুলেরী) মিলে লিখেছি। দু’জনের ৫০:৫০ ছড়া দিয়ে প্রকাশ করে ‘ছায়ালোক পাবলিকেশন্স।’ প্রকাশনা উৎসবটি ছিলো ঢাকার জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে। উদ্বোধক ছিলেন ‘একুশের প্রথম কবি মাহবুবুল আলম চৌধুরী। প্রধান বক্তা ‘একুশে পদক’প্রাপ্ত কবি আসাদ চৌধুরী। আলোচনায় আলী ইমাম, আসলাম সানী, আমীরুল ইসলাম। কলকাতা থেকে সদলবলে যোগ দেন দীপ মুখোপাধ্যায়। সভাপতিত্বে ছিলেন কবি-কিংবদন্তী আল মাহমুদ। বক্তব্যকালে দীপকে ‘পশ্চিমবঙ্গের ছড়া-যুবরাজ’ বলেছিলেন।

উল্লেখ্য, দীপ-এর জন্ম পয়লা জানুয়ারি, ১৯৫৬, ভারতবাংলায়। তবে বাবা বাংলাদেশের বরিশালের, মা আদি ঢাকার। স্ত্রী শুভ্রা মুখোপাধ্যায়ের পূর্বপুরুষরাও পূর্ববঙ্গের। নাড়ীর টানে এই দম্পতি ছিলেন অনেকটা বাংলাদেশ-বান্ধব।

দীপ মুখো. ছড়াপ্রধান লেখক হলেও গদ্যরচনাতেও সিদ্ধহস্ত। ছোট ছোট বাক্যে অসাধারণ তার বুনন। বিশ্বমানের বাক্যে এখন সর্বোচ্চ ‘সিঙ্গেল ডিজিট’এর শব্দগুচ্ছ। বাক্যে সমানুপাতিক শব্দ যা ‘সিঁড়ি বৈশিষ্ট’ স্বরূপ। ১৯৮৯-এ জনপ্রিয় হুমায়ূন আহমেদের সাথে আমার যৌথবই বেরোয়। তিনি বলতেন আগামী পৃথিবীর গদ্য– ছেট ছোট বাক্যের দখলে। আমি তেমনটাই চেষ্টা করি, যা সুলেরীও পারে। 

হুমায়ূন আহমেদের সুরে বলবো, দীপ মুখার্জীও পারতো। 

২০০৩-এর ১৯ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ‘তিনবাংলা সংগঠনে’র উন্মোচন। বাংলাদেশ, ভারত ও প্রবাসবাংলা মিলিয়ে ‘তিনবাংলা’। উদ্বোধনীতে পশ্চিমবঙ্গ থেকে এসেছিলেন পাঁচ কৃতবিদ্য। সর্বকবি শ্যামককান্তি দাশ, অমৃত মাইতি,  অপূর্ব দত্ত। এসেছিলেন রতনতনু ঘাটী, দীপ মুখোপাধ্যায়ও। সেবারই প্রথম বাংলাদেশে আগমন সাহিত্যশিল্পী দীপ-এর। অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি ছিলেন ‘একুশে পদক’প্রাপ্ত পাঁচ লেখক। প্রধান অতিথি কিংবদন্তী ভাষাসৈনিক আব্দুল মতিন। সেদিন দীপ-এর ছড়াপাঠে বিমুগ্ধ হয়েছিলেন। 

এরপর মতিন ভাই যতোদিন বেঁচেছেন, দীপকে খুঁজেছেন। ‘অ্যালকোলাহল’, ‘নেতা’সহ ছড়ার স্বকন্ঠপাঠ উপভোগ করতে চেয়েছেন। 

বইসখা, গ্রন্থসতীর্থ দীপ মুখো’র সঙ্গে হাজারো স্মৃতি। সপরিবারে আমার ঢাকার বাসায় উঠেছে একাধিকবার।  শাহজাদপুরে ‘রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করে ‘তিনবাংলা’। মুহম্মদ নূরুল হুদা, আশিস সান্যাল, শ্যামলকান্তি, দীপও সোচ্চার ছিলো। ২০১১-এ আমাদের সে আন্দোলন সফলতা পায় ২০১৫-তে। দীপ’দাকে সেই বিশ্ববিদয়ালয়টি আর দেখানো হলো না।  ‘রবীন্দ্র স্মৃতিসিক্ত’ নওগাঁর পতিসর, কুষ্টিয়ার কুঠিবাড়িও যেতে চেয়েছিলেন। ‘তিনবাংলা’ চেয়েছিলো উনি সুস্থ হলে ‘কালচারাল টুরিজম’টি সারবে। 

না, অসুখের তরীতে চড়ে মহাপারে পাড়ি দিলেন। 

২০০২-এর ফেব্রুয়ারি থেকে আমাদের সাথে মেলবন্ধন। সুবিশাল হলদিয়া উৎসব থেকে সম্পর্কের সপরিবার সেতুবন্ধ। ব্যা ব্যা..  ভিন্নধর্মী ছড়া দিয়ে মঞ্চ জমিয়েছিলেন। আমি ত্বড়িৎ সিদ্ধান্ত নেই ওনাকে বাংলাদেশে আনার। অত:পর ‘তিনবাংলা’র প্রতিষ্ঠালগ্নে প্রথম এলেন। এরপর ভিনি-ভিসি-ভিডি, এলেন, দেখলেন, জয় করলেন। দুঃখ, সুদুর অ্যামেরিকা, কানাডায় আর নেয়া হলো না। অনেকগুলো পরিকল্পনা অসম্পূর্ণই থেকে গেলো। 

দীপ’দা নেই, আমার কলকাতা যেন অন্ধকার হয়ে গেলো। ভ্রমণানন্দের সুখ নিতে পশ্চিমবঙ্গ যেন টানছে না। সপ্রাণ সুপ্রিয় মানুষটির বিদেহী আত্মা স্বর্গবাসী হোক। বউদি, কাকী’মাসহ নিকটজনদের জন্যে শোক, সমবেদনা। 

বাংলাদেশ-বান্ধব দীপ মুখোপাধ্যায়ের আত্মা ও কর্মের প্রতি শ্রদ্ধান্জলি। 

সেপ্টেম্বর ০৯, ২০২৪ 

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ

কাজী জহিরুল ইসলাম on কবিতার জন্য নির্বাসন
নয়ন আহমেদ on কবিতাগুচ্ছ