…………
অক্ষরগুলো
…………
অক্ষরগুলো রাত হয়ে নামছে
আর রাত
ফুটিয়ে তুলছে শাদা গোলাপ-আকাশ,
আকাশের কোন কোণায় রোদের ঝলক ছিলো!
চমকে দিচ্ছে পৃথিবী।
আমার সব কিছু গোলমাল হয়ে যাচ্ছে প্রভু হে,
তবু তুমি নির্বিকার মুখে
মাটির সুগন্ধ নিচ্ছো?
০৬/২১/২৩
………..
কুড়ির প্রশ্ন
…………
সমস্যার অন্তর ভেদ করে বেরুলো
একটি তরতাজা কুড়ি,
আশায় কাঁপছে তার নতুন জীবন।
বাতাসে দুলে উঠলো তার কচি মাথা—
সে নিজের বুকে ফুঁ দিয়ে সাহস বাড়ালো,
বললো-ভয় পেয়ো না।
ও তো তোমার শৈশব!
দেখো, দেখো
অগণন কিশোর যুবক কী প্রতাপে দাপাচ্ছে সকাল দুপুর বিকেল আর রাত!
তখনো রোদের শিস তার গোখরো ফণা তোলেনি,
নতুন কুড়ির চোখে জ্বলে ওঠেনি সূর্যের পরমাণু,
সে ঘেসো গন্ধ শুকতে শুকতে চারপাশ দেখলো একবার—
বুঝলো এখানে কোনো আলো নেই,
আমি আলো চাই, আলো
অবারিত নিখুঁত নির্জন আলোর পৃথিবী,
স্বাধীনতা !
সমস্যার অন্তর ভেদ করে জন্মেছি আমি
পৃথিবীকে চাখবো বলে হে
তুমি ওই আভরণহীন জগতের মোহন সর্দার
নিশ্চুপ কেন হে?
০৪/১৪/২২
…………
ঘুমন্ত জাতি
………….
আমি ঘুমের দরোজা ধরে হাঁটছিলাম রাজপথ
সে মেলে দিলো তার কংক্রিটের জাজিম,
আর হঠাৎই নীল আকাশ ফাটিয়ে
আলীমুল গায়েবের তরতাজা বৃষ্টির ফোটা
আমাকে ভিজিয়ে দিলো, আর
আমি প্রশান্তির মেঘে ঢেকে দিই নিজেকে এবার!
মহানগর ঢাকার কাটাছেঁড়া রাজপথের বাস
কিংবা ময়লার ট্রাকের চাকা
আমাকে হত্যা করে চলে গেলো গণভবনের দিকে।
আমার সর্বশক্তিমান আল্লাহর চোখ তখন নিদ্রাসক্ত!
তাই তিনি কিছু দেখতে পেলেন না
এমন কি তার সদাজাগ্রত চেলারাও
গণভবনের ঢালে ঝিমুচ্ছে আরামে!
মসজিদ থেকে ফজরের আজান আসছে!
নামাজিদের মনে কোনো অনুতাপ নেই—-
মানুষ হত্যা জায়েজ
এই ফরমানের অপেক্ষায় বিচারকগণ মাথা নুইয়ে
দাঁড়িয়েছে হাই কোর্টের সামনে।
রোদ উঠছে চড় চড় শব্দে সকাল ফাটিয়ে যেনবা চৈত্রমাস!
১১/০২/২২
…………
নোম চমস্কি
………….
নোম চমস্কি এমন চোখে তাকালেন যে আমার
সবুজ আত্মা এফোড়-ওফোড় হয়ে গেলো মুহূর্তে
তখন ফল শেষের নদীতে ঘোর আঁধার,
তর্কে কাটছে সন্ধ্যাতীত বাতাস ক্যামব্রীজের দুই পারেই,
হার্ভার্ড অবাক,
এমআইটি’র সামনে চার্লস থমকে গেলো,
বেটিং অচল, ব্রীজে গাড়ির জ্যাম,
টিপটিপ বৃষ্টির রেণু শিশিরের মতো কাঁপতে থাকলো
ঘাসের ডগায়,
দুটি শিশু-সাইকেল থমকালো—
আমি মুখ ঘুরিয়ে অন্তরে বললাম
তুমি ঢাকায় এসে বলো তোমার কথা!
তিনি কাঁপতে থাকলেন তালপাতার সেপাই যেনবা
আর কোনোদিন তার মুখ দেখা হয়নি আমার,
এমন কি স্বপ্নেও।
০৪/২৭।২০২১
ঢাকা
………..
জোহরের আমি
…………..
কেন আমার সিজদা আমাকেই শূন্য করে উড়ে যায়?
ঠিক দুপুরবেলা শরতের শাদা-কালো-নীলের খেলা
যেন পাকুরের পাকা শিম
পলকা বাতাসে ঘুঙুরের মতো বাজে সারাবেলা!
আমার স্মৃতির পর্দা ফাটিয়ে দিয়ে রোদেলা বাতাস
আমাকে চ্যাংদোলা করে নিয়ে আসে
অক্টোবরের সকালে,
স্মৃতির বাথান থেকে——
আমার পুবের গ্রাম ঝনঝনিয়াকে দেখতে পাই আমি,
বাবার মতন গাঢ় প্রেমে, লোকশ্রুত নেতা তিনি
ইউনিয়নের বাতিঘর,
বাংলা ঘরের মতো মুখর সমাজ ও মানুষ
যেন শারদীয় উৎসবে মেতে আছে।
আমি নেমে আসি বাল্যকাল থেকে যৌবনের
খোলা প্রান্তরের সবুজ সংসারে
ধানকাটা হয়ে গেছে
তার ঘ্রান পড়ে আছে নাড়ার ছায়ায়,
তরতাজা ক্ষেতে হাডুডু খেলা করে কিশোরেরা,
মরা রোদের বিকেল
চঙ আর ফেইসক্যারা সাপা ঘুড়ির মতন
উড়তে উড়তে বো বো শব্দের সরোদ বাজায়, আর
সেই পড়ন্ত বিকেলে
গাছপালার ভেতর দিয়ে উঁকি মেরে
ঠান্ডা সন্ধ্যা হাসতে হাসতে চোখ মুদে ডুব দেয় অন্ধকারে
বার বারে এই খেলা
আমাদের ছেলেবেলা
জুড়ে চলে!
শাদাকালো মেঘের ছায়া নিয়ে
আমি নেমে আসি
পৃথিবীর কাছে,
যেন ধরা পড়া নগর নায়ক!
০৯/২৬/২২
………
আংটি
……….
তোমাকে আমি পরবো আঙুলে আমার
আজ রাতে
তারার আলো নাচবে অকাতরে বার বার
আংটির মতো ঘুরে ঘুরে
ঢুকেছে শিশুকাল, শৈশব ঘোর,
গোত্তা খেতে খেতে আজ কি বিভোর
হলো দোদুল্যমান বিকেলের রোদ?
বুদ্বুদে ডুবে যায় মহাকাল?
তার রোদেলা ঘূর্ণির নাচ
তেইশ হাজার কোটি বছরে একবার,
কেবলমাত্র একবার আমাকে ঘিরে নেচে যাবে!
কী ভাবো এই আমাকে?
ভুলে-ভরা দুনিয়ার ছত্রপতি?
নিমিষে পেরিয়ে যেতে পারো ছায়াপথ?
কেবল একবার ভাবো তোমার
রূপ আর অপরূপা ছায়াপথ
শপথ করো, নিখিল পড়ে শেষ করো
যদি পারো ভাদ্দুরের তাল হয়ে পড়ো মুখর বারিপাতে,
তুমি তো নও একা কোনো গ্রহ, নক্ষত্র,
আমের সুগন্ধে ঠাসা বাংলাদেশ আমার, চিন্তার
মালা পরে এসো তর্ক করি সমুদ্র আর পাহাড় নিয়ে—
ঘুরে আসো সাত আসমান জুড়ে থাকা
কোটি কোটি সৌরজগতের বর্ণিল সংসার!
এ-জীবন কেবল জীবন নয়,
অক্ষয় জীবনের পরপারে বাস করে অজয়
সিংহাসন এক, ময়ূর পেখমের মতো বর্ণিল
কোহিনূর হীরের দ্যুতি তার কাছে কাচের মার্বেল !
নত হও সেই আলোর দিগন্তের সামনে আভূমি,
সিজদায় নত হও হে আমার মনোভূমি!
১১/৩০/২১
ঢাকা