spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদবই নিয়েপ্রেমের নহর ভরা বুক বোরহানের

প্রেমের নহর ভরা বুক বোরহানের


তাজ ইসলাম

কবি তো প্রকৃত অর্থে হৃদয়ের অনুবাদকই। হৃদয়ের গহীনে রোপিত ভাবনাকে স্থানান্তর করেন কাব্যকলায়। মুন্সি বোরহান মাহমুদ নিজের হৃদয়ের কথা পত্রস্থ করেছেন কবিতার বইয়ে।আর অন্যের অনুচ্চারিত ভাবনারাশি অনুবাদ করেছেন নিজের ছন্দজ্ঞানে। খুব সহজ সরল কিন্তু তাৎপর্যময় শব্দে তার বইয়ের নাম রেখেছেন
‘ হৃদয়ের অনুবাদ’। এ কাজে তাকে সহযোগীতা করেছে তার
‘ প্যারাডক্সিক্যাল চোখ’।
এটি তার বইয়ের শুরুর দীর্ঘ কবিতা। তারপরই ছুটে যান তার প্রিয়তমার কাছে। নিজের উদ্বিগ্নতা প্রকাশ করত বলেন, ‘ প্রিয়তমা,জানো কি?/ এই মাটি উর্বর হতে আর / কতোটা নির্ঘুম রজনী বাকি?( অপেক্ষা)।’
এভাবেই বিস্তার করেছেন তার কথার জাল।

বোরহান তার কবিতায় অনুপ্রাসের ঝংকার বা মধ্য অন্তমিলের প্রবাহ সৃষ্টি করতে পছন্দ করেন বলেই সৃষ্টি হয় ‘ ভিখারির মুখ শিকারির মুখ এক সুরে গান গায়,’।
‘তোমার নামের ক্যামোফ্লাজ গায়ে আগে কতো আজাজিল/তাড়াতে তাদের কংকর ঠোঁটে আসে নাতো আবাবিল/( তোমাকে কোথায় পাই)। মূলত গীতলতা তার কবিতার স্বতঃস্ফূর্তা। গীতল স্বরে গেয়ে যেতে সাচ্ছন্দ্য বোধ করেন কবি। গীতল কণ্ঠেই গেয়ে ওঠেন বিরহ গীত।’ দেখতে দেখতে তুমি আমি ঘামি শীতে/দুটি মন আজ দুজনার বিপরীতে( দেখতে দেখতে)’।
অনেকেই হিসাবের খাতায় ছন্দের বেলায় থাকেন মাত্রার অনুগত । কিন্ত গাঁথুনির অসতর্কতায় গীত প্রবাহকে বাঁধাগ্রস্থ করে তুলেন। এ বিষয়টি অনেকে পাত্তা দেন না। দেন না যারা ছন্দকে গুনাগুনতির পাবন্দিতে আবদ্ধ রাখেন।ছন্দকে যারা কানের কাছে সমর্পণ করেন তারা এখানে ভিন্ন মত পেশ করেন।
যেমন,
দেখতে দেখতে রূদ্ধদল মুক্তদলের গাঁথুনি। পাঠের সময় একটা ধাক্কা খায়, স্বর এখানে সময় পায়। তারপর দুটো পর্ব
( তুমি আমি/) (ঘামি শীতে/)
মুক্তদলের ছড়াছড়িতে দম দ্রুত দৌড়ে যায় তাল ঠিক রাখতে।পরে পঙক্তিতে
(দুটি মন আজ) প্রথম শব্দে রুদ্ধ মুক্ত তারপর দু শব্দে রুদ্ধ রুদ্ধ খেলা।আবার পরে

(দুজনার) (বিপরীতে) আটটি মাত্রাতেই মুক্তদলের মিছিল।এইভাবে কবিতার পঙক্তি সাজালে মাত্রার হিসাবে কম বেশি হয় না। শ্রুতিতে উঠানামা করে। হিসাবে ছড়াকার কিংবা কবির সাথে তর্কে পেরে উঠা যাবে না।কিন্তু রসবোধ সম্পন্নজন বলেন ঠিকাছে তবে আরও একটু গুছিয়ে নিলে ভালো হত। গীতল ছড়া কবিতা লেখলে আরও সতর্ক হলে কবির সুনাম বাড়ে বই কমে না। লেখতে লেখতে যখন কেউ বোরহান মাহমুদ হয়ে ওঠতে যায় তখন তাদের উচিৎ দুধে কাঁটা না খুঁজলেও সর কোথাও ঘন পাতলা আছে কিনা দেখা দোষের না। নিখুঁত পঙক্তিকে ব্যবচ্ছেদ করা একান্ত আমার অভিমত। এত কথার পরও এটি একটি ভালো লেখা।

( দেখতে দেখতে)’।

অন্তমিল ছড়ার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে এবং তা অপরিহার্যও বটে। অন্তমিল কবিতায় দেওয়া জরুরি না। দিলে মাত্রা তালের হিসাবও পাই টু পাই রাখতে হবে। কবি এ হিসেব রেখেই লেখেন কবিতা। কিন্ত সমস্যা হয় কবিতার মেজাজে।মেজাজে তখন চলে আসে ছড়ার গতি, ছড়ার প্রকৃতি। একজন আধুনিক মনস্ক কবির জন্য এটি পরিহার করাই উত্তম। ‘ ব্যালকনিতে ঠাণ্ডা আছে/ বেডরুমেতে গরম/ ব্যালকনিতে হালকা বাতাস/ বেডরুমে ঝড় চরম’। ভাবে,রসে,বক্তব্যে হাজির করেছেন কাব্যময়তা,অবয়বে,গতীতে ছড়ার স্বাদ। এ বিষয়টি বোরহান মাহমুদ ভাবলে তার নিজেরই কল্যাণ।

” গুলির মুখে বুকের জমিন/ দেয় খুলে দেয় আমার ভাই/ রক্তে ভেজা জমিন বলে/ জালিমশাহীর সময় নাই/(গুলির মুখে)। উদ্ধৃত কবিতাটি যেন কবির ভবিষ্যতবাণীর মতো কোন পঙক্তি। মনে হয় যেন সদ্য বিতারিত ও পলাতক ফ্যাসিবাদের পতনের পর লেখা। মূলত কবিরা দেখেন ভূতভবিষ্যৎ। ঠিক দেখেন বললে বিতর্কিত হয়।কবিরা ভাবতে পারেন।এজন্যই লিখা হয়ে যায় পরের ঘটনা আগের কবিতায়। ভাব, বক্তব্য,চিন্তা, প্রকাশে বোরহান মাহমুদ আশ্রয় নেন কবিতার। কবিতাকে মাধ্যম হিসেবে নিতে চাইলে তাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে কবিতার আঙ্গিকের বিষয়ে।আঙ্গিকটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

একজন শিল্পী নিজেই নিজের পরামর্শক। তিনি যেখানে,যেভাবে সাচ্ছন্দ্য বোধ করেন তাই করবেন। অনুকাব্যগুলো চমৎকার। শ্লোগানধর্মী এসব অনুকাব্য অল্পকথায় প্রকাশ করেছেন তাৎপর্যপূর্ণ বক্তব্য।

যারা আমায়/ নিত্য শেখায়/ হইতে আরো মানবিক/ তাদের কাছে/ মজুদ আছে/অযুত পারমানবিক।/( স্যাবোটাস)। ইংরেজি শব্দের বাংলা উচ্চারণে এসে জনে জনে হের ফের হয়ে যায়।স্যাবোটাস শব্দটি স্যাবোটাজ হিসেবেই বেশি প্রচলিত।

“যা দিয়েছো তাই তো অনেক/ কী আর আমি বলো চাইবো প্রভূ আর” একজন কবিকে খেয়াল রাখতে হয় অনেক কিছু। সুন্দরের সাধনায় শব্দের দিকেও রাখতে হয় নজর। পাঠক কবির কাছে কামনা করে আরও আরও উত্তম কিছু। উদ্ধৃত কবিতায় একই বাক্যে কী আর… প্রভূ আর এই যে আর ফিরে এসেছে দু বার তার ব্যতিক্রম চায় পাঠক।
‘হৃদয়ের অনুবাদ ‘ মুন্সি বোরহান মাহমুদ ‘ র তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ। প্রকাশ করেছে ইনভেলাপ পাবলিকেশন্স।প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী মনিরুজ্জামান পলাশ। প্রকাশকাল: ২০২৪ মূল্য ২৫০ টাকা। আমরা মুন্সি বোরহান মাহমুদের বইয়ের প্রচুর প্রচার প্রত্যাশা করি।এবং আশা রাখি বোরহান মাহমুদ সাহিত্যে গভীর মনোনিবেশে চালিয়ে যাবেন কাব্য সাধনা।
তিনি পারবেন,কারণ তার আছে প্রেমিক হৃদয়।এই প্রেম তার প্রেমিকার জন্য,পাখি ও প্রকৃতির জন্য,দেশ ও জাতীর জন্য। আমরা তার ছোট কবিতা দিয়েই টানছি সমাপ্তি রেখা।
” পাখিরাও হারিয়েছে/ বনলতা নীড়/ নদীরাও খুইয়েছে/ শ্যামলিমা তীর/ প্রিয়তম তাই তোকে/ হারানো ভয়ে/ কেঁপে কেঁপে ওঠে মন/ হিম সংশয়/ প্রেমের নহর বুকে / জমে হয় ক্ষীর।/( সংশয়)’।

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ

কাজী জহিরুল ইসলাম on কবিতার জন্য নির্বাসন
নয়ন আহমেদ on কবিতাগুচ্ছ