১.জীবন কি? আপনার বর্তমান জীবন, অবস্থান– যা হতে চেয়েছিলেন বা যা হয়েছেন–এসব নিয়ে কোন আক্ষেপ, অনুশোচনা বা গর্ব হয়?
নয়ন আহমেদ : শিল্পী-সাহিত্যিক-কবি-দার্শনিকদের কাছে জীবন এক আলাদাভাবে ধরা দেয়।
একজন বৈষয়িক মানুষের কাছে জীবন হয়তো লাভের হিসেবে পূর্ণ। সম্পদের হিসাব-নিকাশ করা, আরও ভালো থাকা। আরও আকাঙ্ক্ষা করা। প্রাচুর্যই তার কাছে বড়। আমাদের তা নয়। এ নিয়ে সাহিত্যিক টলস্টয়ের সুন্দর একটা গল্প আছে। “সাড়ে তিন হাত জমি”। লোভ করলে কী হয়। আসলে ঐ সাড়ে তিন হাত জমিই আমাদের অর্জন। বেশি নয়। স্বচ্ছতা, সহজতা, আনন্দ, পরিমিতিবোধ এসব নিয়েই আমার জীবন। জীবনকে পেয়েছি এক অশেষ নিয়ামত হিসেবে।
একে তাই উপভোগ করতে চাই। দেখতে চাই। সৌন্দর্য ও প্রীতিতে অবগাহন করতে চাই। একটা কবিতায় বলেছি, ” জীবন এক অদ্ভুত আপেল/ আজীবন নুনের সাধনা” ।
বর্তমানে একটি ফাজিল স্তরের মাদ্রাসায় চাকরি করছি। মাদ্রাসাটি বরিশালের হিজলা উপজেলায় অবস্থিত। বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। ছাত্র পড়িয়ে দিন ভালোই কাটছে। অবসর সময়ে লিখছি। প্রচুর আলসেমি করছি। আমার মনে হয়, এটাই আমার জন্য উপযুক্ত স্থান। হতে চাইনি কিছুই। তবে যা হয়েছি তাতেই খুশি। আলহামদুলিল্লাহ। দুঃখ নেই। আক্ষেপ নেই। অপরের দুঃখের কথা মনে করি, নিজের দুঃখ আর থাকে না। সংসার নিয়ে আছি। ছেলে মেয়েদের সময় দিই। সংসারি মানুষ। সব কিছু নিয়ে গর্বিত।
২. আপনার শৈশব-কৈশোর কোথায় কেটেছে? কীভাবে কেটেছে? কোন অব্যক্ত কথা বা স্মৃতি কি মনে পরে? তাড়িত করে?
নয়ন আহমেদ : শৈশব কেটেছে গ্রামে। গ্রামের নাম ভবানীপুর। ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার একটি গ্রাম। বিষখালি নদীর তীরে অবস্থিত এ গ্রামটি শ্যামল-সুন্দর। মায়াময়। ফসলের মাঠ দেখতে দেখতে কেটে গেছে কতো সময়। হেসেখেলে কাটিয়েছি শৈশব। স্কুল ছিলো বাড়ি থেকে কাছেই। স্কুল ছুটির পর পড়ন্ত বিকেলে তিন- চারজন বন্ধু মিলে গ্রামটা চক্কর দিতাম। এভাবে নদীর তীরের এই গ্রামে কেটেছে দিন- রাত। এসএসসি পাস করে আসি শহরে। বরিশাল। বাকি পড়াশোনা করেছি বরিশাল কলেজ ও বিএম কলেজে। কীর্তনখোলা তীরের এই শহরে কেটেছে কৈশোর- তারুণ্যের দিনগুলো।
দু- একটা স্মৃতি বলি।
দেশে তখন অভাব চলছে। লোকেরা বলাবলি করছে দুর্ভিক্ষ এলো। লবণ নেই । চাল নেই। আব্বা কয়েক সের লবণ কিনে রাখলেন। একদিন নানাবাড়ি গেলাম। দেখি, তারা গমের সাথে সামান্য চাল মিশিয়ে ভাত রান্না করে। আমি তখন খুব ছোটো। অ-আ পড়ি। একদিন দাদির কাছে শুনি, “শেখ মুজিবরে মাইরা ফালাইছে। এইবার চাইলের দাম কমবেআনে।”
জিয়াউর রহমান যেদিন শাহাদাত বরণ করেন তখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ি। এ খবর শুনি রেডিওতে। আমাদের শিক্ষকেরা তাঁকে নিয়ে আলোচনা-অনুষ্ঠান করেছিলেন।
৩. সাহিত্যে এলেন কেন? কীভাবে এলেন? অর্থাৎ শুরুটা কীভাবে? কোথায়?
নয়ন আহমেদ : সৃজনধর্মী কর্ম একটা স্থায়িত্ব পায়। সাহিত্য তো এই সৃজনশীলতারই পরিচয়। জীবনদর্শন ও মানবজীবনের অভিজ্ঞতার একটা স্থায়ী মূল্য আছে। মনে হয়েছে, আমিও কিছুটা লিখতে পারি। আমারও কিছু কথা আছে। সেজন্য, সাহিত্যে এলাম।
কৈশোরে , তারুণ্যে প্রচুর পড়েছি। গল্প, উপন্যাস, নাটক, কবিতা ইত্যাদি। পাঠ্যপুস্তকের বাইরেই মনোযোগ ছিলো সব সময়। এইচএসসি পাসের আগেই শেষ করেছি শরৎ, বঙ্কিমচন্দ্র, বিভূতিভূষণ ও মানিক রচনাবলি। অনার্স পড়ার সময় একদিন কবিতা পড়তে গিয়ে আবাক হই। কলেজের কাছেই সরকারি গ্রন্থাগার। সেখানে যাই মাঝে মাঝে। পড়ে ফেলি কয়েক জন কবির কবিতা। কবি ওমর আলী, আল মাহমুদ আর জীবনানন্দ দাশের কবিতায় যেন একটা জাদু আছে। সেই থেকে লেখার ইচ্ছে জাগে।
এরপর থেকে লেখা শুরু। সেটা অনার্স পড়ার সময়ই। ১৯৯২ সন। লিখি গল্প, কবিতা। কলেজ ম্যাগাজিনে গল্প দিয়ে প্রথম লেখা শুরু। তারপর স্থানীয় দৈনিকগুলোতে লিখে হাত পাকাই।
৪. বাংলা ভাষার তথা বাংলাদেশের প্রধান কবিবৃন্দ যেমন : আহসান হাবীব, সৈয়দ আলী আহসান, আবুল হোসেন, শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ, ফজল শাহাবুদ্দীন, শহীদ কাদরী, আবদুল মান্নান সৈয়দ প্রমুখ– তাদের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কেমন ছিলো? তাদের সাহিত্যকে আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করেন? আর কার-কার সঙ্গে আপনার সখ্যতা বা বন্ধুত্ব বা ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ গড়ে উঠেছিলো বা আছে? তাদের সম্পর্কে আপনার অভিজ্ঞতা বা তাদের সাহিত্য নিয়ে আপনার মতামত জানতে চাই।
নয়ন আহমেদ : কবি আহসান হাবীব মারা যান ১৯৮৫ সালে। তখন দশম শ্রেণিতে পড়ি। গ্রামের স্কুলে। তার সাথে সরাসরি সাক্ষাৎ হয়নি।
তাঁর কবিতা পড়েছি তৃতীয় শ্রেণিতে থাকতেই। নবম-দশম শ্রেণিতেও তাঁর কবিতা পাঠ্য ছিলো। সেটি আলো-আঁধারের দর্শন নিয়ে। অসাধারণ কবিতা। এরপর থেকে তাঁর কবিতা বারবার পড়েছি।
অসামান্য প্রতিভাধর ব্যক্তিত্ব , পণ্ডিত, কবি সৈয়দ আলী আহসানের সাথে যোগাযোগ বা সাক্ষাৎ হয়নি। কিন্তু অনার্স – মাস্টার্স-এ তাঁর পাণ্ডিত্যপূর্ণ লেখাগুলো অপরিহার্য ছিলো।
তাঁকে নিয়ে সব শিক্ষকই কমবেশি আলোচনা করতেন। কবি হিশেবে তিনি অশেষ শ্রদ্ধেয়। তাঁর “আমার পূর্ব বাংলা” আইএ পড়াকালে খুব ভালো লাগতো।
ফজল শাহাবুদ্দীন আরেক জনপ্রিয় কবি ছিলেন। ছাত্রাবস্থায় সাহিত্য -সংকলেনে পড়েছি। ব্যক্তিগত যোগাযোগ গড়ে উঠেনি।
কবি শামসুর রাহমান এর সাথে দেখা হয়েছে কয়েকবার। প্রথম দেখাটা বেশ মজার।
আমরা তখন কবিতা পরিষদ করি। ১৯৯১ সাল। বরিশালের সদর রোডের আসাদ ম্যানসন।
তখন বিকেল সাড়ে চারটা বা তারও কিছু্ বেশি হবে। কবি এলেন। সাথে কেউ একজন ছিলেন।
আজ আর মনে নেই। এখান থেকে ঢাকায় যাবেন। এর আগে ঝালকাঠিতে কবিতা পরিষদের অনুষ্ঠান ছিলো।
সেটা সমাপ্ত করে এসেছেন।
কবিতা পড়া হলো। কবি কবিতা নিয়ে একটা বক্তব্য দিলেন।
তো কবিকে একটু চা খাওয়াতে হয়। দোকান থেকে চা আনা হয়েছে। সাথে বিস্কুট।
তপংকর চক্রবর্তী, হেনরী স্বপন, রবীন সমাদ্দার প্রমুখ কবি ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।
জমজমাট আড্ডা। চা দেয়া হচ্ছে সবাইকে।
এর মধ্যে কবিকে চা দিতে গিয়ে কাপটার ধরনিটা খসে পড়ল। কবিকে আর একটা ভালো কাপে চা দিতে গেলে কবি তাতে আপত্তি করলেন।
এ ভাঙা কাপটাতেই খাবেন তিনি। খেলেন।
অনেক মজা হলো।
টুকরো টাকরা স্মৃতি কতো আনন্দদায়ক!
বিদায় নেবার সময় সবার সাথে হ্যান্ডশেক করলেন।
কবি, কথাসাহিত্যিক আল মাহমুদ -এর সাথে দেখা-সাক্ষাৎ আর আলাপের মধুর স্মৃতি আছে।
একবার ভোলায় জাতীয় মঙ্গলের কবি মোজাম্মেল হক স্মরণে মাহমুদ ভাই এলেন।
নাট্যকার মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, কথাসাহিত্যিক নাসরীন জাহান, কবি নাসির আহমেদ সহ অনেকে এলেন। মাহমুদ ভাই এলেন প্রায় সন্ধ্যায়, শুক্রবার।
সন তারিখ এখন মনে নেই।
অনুষ্ঠানে যাওয়ার আগে পথে দেখা হলো তাঁর সাথে। সাথে আল হাফিজ, পথিক মোস্তফা এবং আরো কয়েকজন।
সাজ্জাদ বিপ্লব-এর প্রসঙ্গ এলো।
তিনি ” স্বল্পদৈর্ঘ্য” সংখ্যাটিতে কবি আল মাহমুদ – এর একটি প্রবন্ধ ছেপেছেন।
” নব্বই দশকের কবিতা: গোধূলি সন্ধির নৃত্য” ।
প্রবন্ধে তিন জন কবির পূর্ণ ৩টি কবিতা দিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।
আমার কবিতার নাম—” আজ হাটবার।”
এটি আবার দৈনিক যুগান্তর ছেপেছে। কয়েকজনের নাম বাদ দিয়েছে ওরা।
আমার নাম নাই, কবিতা তো নেইই।
বিষয়টি কবি জানতেন।
পথেই মাহমুদ ভাই জড়িয়ে ধরলেন আমাকে।
বললেন,” নয়ন, তোমার কবিতা ওরা বাদ দিয়ে ছেপেছে।
আমি কি তোমাকে বাদ দিতে পারি? এটা ওদের চালাকি।
ধূর্তামি। যখন বই ছাপানো হবে তখন আমার প্রবন্ধে ওটা অবিকৃত ভাবে যাবে। তুমি কষ্ট পেয়ো না। “
এই রকম বহু স্মৃতি আছে কবির সাথে।
“তবক দেয়া পান” —এর কবি আসাদ চৌধুরীর কথা না বললেই নয়।
সদালাপী, হাস্যোজ্জ্বল, সদা বিনয়ী। এই কবির সাথে আমাদের আপ্রথম সম্পর্ক ছিলো।
কবি ১৯৯২ সালের এক আষাঢ় মাসে এলেন বিএম কলেজের বাংলা বিভাগে।
এই বিভাগে তাঁকে দাওয়াত করা হয়েছে।।
কলেজের অনুষ্ঠানের পর বিকেলে আরেকটা অনুষ্ঠান।
অধ্যাপক বদিউর রহমান- এর বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠান। সদর রোডের আসাদ ম্যানসনের দোতলায় আলোচনা চলছে। বইয়ের নাম ” সাহিত্য স্বরূপ”। সাহিত্যের সংজ্ঞা, স্বরূপ — এসব নিয়ে চমৎকার একটি গ্রন্থ। এমন মানের বই বাংলা একাডেমিও সে সময় করতে পারেনি। কবি সরস আলোচনায় সবাইকে মোহিত করে রাখলেন।
কিন্তু, এই বইয়ের একটা মারাত্মক ত্রুটির কথাও বললেন। এখানে বাংলা ভাষার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি আল মাহমুদের নাম নেই। কবি হিশেবেও নেই, সনেটকার হিশেবেও নেই। তিনি বললেন, ” শোনো ভাই, বদিউর রহমান, বাংলা সাহিত্যে ” সোনালি কাবিন” আর দ্বিতীয়টি হবে না। সনেটকার হিশেবেও তাকে কখনোই বাদ দেয়া সম্ভব হবে না।”
আশির দশকের কয়েকজন কবির সাথে নিবিড় পরিচয় ছিলো। তঁদের কথা পরে একদিন বলবো।
এখন সত্তরের দু-একজনের কথা বলি।
প্রথমেই আবিদ আজাদ। আমার প্রথম বইটি দুজনকে উৎসর্গ করেছিলাম। আল মাহমুদ ও আবিদ আজাদ — এই দুজনকে।
আবিদ আজাদ খুব স্নেহ করতেন। আমরা ঢাকা গেলে তাঁর সাথে দেখা করতাম। হাফিজ ভাইয়ের সাথে যেতাম। তাঁর সাথে আগেই হাফিজ ভাইয়ের পরিচয় ছিলো।
আবিদ ভাই প্রচুর পান খেতেন।
এটা তার “শিল্পতরু”—তে গিয়ে বুঝেছি।
পান খেতে খেতে তিনি মাহমুদ ভাইয়ের কথা বললেন।
তাঁর বই ছাপিয়ে আনন্দ পান।
আমাদের চা-সিঙাড়া আনিয়ে খাওয়ালেন।
তিনি আমাদের নিয়ে, শেকড় সাহিত্যের পত্রিকা নিয়ে রেডিওতে আলোচনা করেছেন — সে কথা জানালেন।
আবু হাসান শাহরিয়ার আরেক প্রতিভাধর কবি। বরিশাল তাঁর সাথে প্রথম দেখা।
তারপর ফেসবুকে পরিচয়। ” একলব্যের উত্থান” তাঁর একটি গুরুত্বপূর্ণ কাব্য।
ফোনে কথা হত একসময়।
আমার “খনিঘুম” পাঠিয়েছিলাম তাঁকে।
” নয়ন, তোমার শব্দ-ব্যবহার আমাকে মুগ্ধ করেছে। পথে পড়ে থাকা একটা ভাঙা চিরুনি, হারিয়ে যাওয়া ছায়া —
অনেক সুন্দর। মনে করো, বাজারের ভালো ভালো শব্দ অন্যরা নিয়ে গেছে।
তুমি কিছু পড়ে থাকা ছায়া নিয়ে এসেছো।
গোধূলি নিয়ে এসেছো।
এটাই তুমি নাও। স্বর্ণ হয়ে যাবে।”
৫. আপনি একাধারে একজন কবি-সম্পাদক-সাহিত্যবিশ্লেষক অর্থাৎ বহুমাত্রিক। আপনার অভিজ্ঞতা ও বিচরণ ক্ষেত্র ব্যাপক ও বর্ণিল। বিচিত্র। এই সামগ্রিক সত্তাকে কিভাবে দেখেন? কিভাবে উপভোগ করেন?
নয়ন আহমেদ : আলহামদুলিল্লাহ। যখন আমার সাহিত্যের কেউ প্রশংসা করে তখন আবেগাপ্লুত হই। আবার একটু পরই সেই আবেগ আর থাকে না।
আরও ভাবি। কী করে আরও একটি ভালো লেখা লেখা যায়। লেখকদের আত্মতুষ্টির কোনও সুযোগ নেই।
এতে ভালো লেখা সৃষ্টি হয় না।
অতৃপ্তি থেকে তৈরি হতে পারে মহত্তম সৃষ্টি।
এজন্য লেখক-শিল্পীদের প্রশংসায় ভাসা উচিত নয়।
৬. আদি বাংলা তথা চর্যাপদ থেকে আজ অবধি বাংলা সাহিত্য কোথায় এসে দাঁড়িয়েছে–আপনার বর্ণনা ও বিশ্লেষণে?
নয়ন আহমেদ : বাংলা -সাহিত্যের আদি নিদর্শন চর্যাপদ থেকে শুরু করে বাংলা কবিতা তার নিজস্ব পাটাতন থেকে সরে যায়নি। ওখানে বৌদ্ধ ধর্মের সাধন-পদ্ধতির মোড়কে সমাজের যে পরিচয়, তা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
ভাষার ইঙ্গিতধর্মিতা এ কালেও সমান তাৎপর্যবহ।
চর্যাপদের কবিরা সেনদের অত্যাচারে জর্জরিত ছিলেন। পালিয়ে বেড়ান পাহাড়ে, গুহায় গুহায়। আজকের কবিরাও শাসকদের রোষানলে পড়েন। এখানে আজকের কবিদের সাথে তাদের সাদৃশ্য লক্ষ্য করি।
তাঁরা সাধারণ মানুষ ছিলেন। আজকের কবিরাও সাধারণ জীবনযাপন করেন।
রুজি-রুটির খোঁজে দেশ-দেশান্তরে যেতে হয় এখনও।
কবিতা উন্নত ও ঋদ্ধ হয়েছে এখন। কবিতা ধনাঢ্য হয়েছে। আমাদের বাংলা সাহিত্য এখন বিশ্বমানের সাহিত্য হয়ে উঠেছে।
কিন্তু কবির আর্থিক উন্নতি হয়নি।
৭. সাম্প্রতিক বাংলাদেশে, শিল্প-সাহিত্যচর্চায় কোন-কোন চ্যালেঞ্জ বা সুবিধা-অসুবিধা আছে বলে আপনার মনে হয়? কীভাবে এগুলি মোকাবিলা করেন?
নয়ন আহমেদ : এ সময় সাহিত্য-চর্চায় নানান চ্যালেঞ্জ আছে। কিছু দিন আগেও মানুষ তার মনের কথাটি বলতে পারতো না। লেখকদের ক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা— স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে না পারা।
এ জন্য লেখককে কিছু কৌশল অবলম্বন করতে হয়। রূপক ও প্রতীকরীতি অবলম্বন করতে হয়।
রূপক সৃষ্টি হয়েছে এ ধরনের সমস্যা মেটাতে। অনেক কথা এই কৌশলে বলা যায়।
আর একটা অন্যরকম সমস্যার কথা বলি।
আমাদের সাহিত্য এখন গোষ্ঠীতে গোষ্ঠীতে, গোত্রে গোত্রে বিভক্ত।
এই গোত্রপ্রীতি দূর করা দরকার।
পত্রিকাগুলোও বেশিরভাগ সাহিত্য বোঝে না। বোঝার মানসিকতাও নেই।
আমাদের সৎ সম্পাদক কম। হীন স্বার্থ আছে। দলকানা লোক আছে।
এ অবস্থা থেকে মুক্তির উপায় ভাবতে হবে।
৮. আপনার প্রথম প্রকাশিত বই কোন টি? কবে প্রকাশিত হয়েছিলো? প্রথম বই প্রকাশের অভিজ্ঞতা ও অনুভূতি কেমন ছিলো?
নয়ন আহমেদ : আমার প্রথম প্রকাশিত বই ” অসম্ভব অহংকার”। এটির প্রকাশকাল ১৯৯৬ সাল।
বরিশালের ঐতিহ্যবাহী সাহিত্য – সংগঠন
‘শেকড় সাহিত্য সংসদ’। এখান থেকে বইটি প্রকাশিত হয়। এ ছাড়া কবি আল হাফিজ – এর কবিতার বই ও কামাল আহসান – এর গল্পের বইও বের হয় এই প্রতিষ্ঠানটি থেকে।
সুতরাং, তখন এক ধরনের তৃপ্তি ও আবেগ অনুভব করেছি।
আনন্দ লাভ করেছি।
একসাথে লেখা, বন্ধুত্ব লাভ করা — এ তো দুর্লভ বিষয়। এসব আত্মার আনন্দ মেটায়।
৯. সাহিত্যে আপনি কার উত্তরাধিকার বহন করেন?
নয়ন আহমেদ : মানুষ ঐতিহ্যের সন্তান। আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি নিয়ে কতো কবি লিখেছেন! কতো সাহিত্য রচিত হয়েছে!
কার উত্তরাধিকার বহন করছি— এই প্রশ্নের
উত্তর দেয়া সত্যিই কঠিন।
এটি সমালোচকরা দিতে পারবেন।
তবে আমি মনে করি, বাংলাভাষী জনগণের আবেগ, জীবনবোধ, আশা- আকাঙ্ক্ষা ও বিশ্বাসের উত্তরাধিকার বহন করছি আমি।
একই সাথে আমি একজন বিশ্ব নাগরিকও।
সমগ্র মানবজাতির ব্যথা , কষ্ট , দুঃখ আমিও অনুভব করি।
মানুষকে নিয়ে লিখি বলেই সব মানুষের কথা বলি। সে অর্থে আমি মানবতারও উত্তরাধিকার।
১০. এ যাবৎ সর্ব মোট আপনার কতটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে? এর মধ্যে কোনটি বা কোন-কোন কাজকে বা কোন বইকে আপনি আপনার উল্লেখযোগ্য সৃষ্টি বলে মনে করেন?
নয়ন আহমেদ : মোট ১০টি বই প্রকাশিত হয়েছে। অনেক লেখা অপ্রকাশিত আছে। প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে আছে:
১. অসম্ভব অহংকার, ২. আমার বিবাহিত শব্দরা, ৩. খনিঘুম, ৪. বাসা বদলের গল্প,
৫. কিছু মেরুদন্ডী উচ্ছ্বাস, ৬.এককাপ গণযোগাযোগ, ৭. মারেফত সিরিজ, ৮.নাতিদীর্ঘ দুপুরের ধ্বনি, ৯. তাঁর নাম আহমাদ সা. , ১০. ইহুদিসমগ্র।
একজন কবির কাছে তার সব লেখাই সমান গুরুত্বপূর্ণ। তবে আমার কবিমানস ধরা পড়বে — আমার বিবাহিত শব্দরা, খনিঘুম, নাতিদীর্ঘ দুপুরের ধ্বনি এবং মারেফত সিরিজ গ্রন্থসমূহে।
১১. সম্প্রতি প্রকাশিত আপনার নতুন বই সম্পর্কে বলুন।
নয়ন আহমেদ : সম্প্রতি প্রকাশিত আমার নতুন
কবিতার বইয়ের নাম ” ইহুদি সমগ্র” । বইটি
প্রকাশ করেছে বরিশালের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ” পথমিতা প্রকাশন”। প্রকাশক— মৌমিতা বিনতে মিজান। এটি আমার দশম গ্রন্থ।
ইহুদিদের নির্মমতা, নিষ্ঠুরতা ও অমানবিকতা এই গ্রন্থের আলোচ্য বিষয়।
ইহুদি বলতে এখানে শুধু তাদের রাষ্ট্রকাঠামোর ভেতরে থেকে যারা গণহত্যা চালিয়েছে ফিলিস্তিনে— তাদেরই বুঝতে হবে; তাদের সাধারণ জনগণকে বুঝানো হয়নি। রাষ্ট্রীয় আশ্রয়ে- প্রশ্রয়ে এখনও তারা নিষ্ঠুরতার পরিচয় দিচ্ছে।
সহিংসতা এখনও অব্যাহত আছে।
এ বইটিতে ফিলিস্তিন ও ইহুদি বিষয়ক কবিতাসমূহ স্থান পেয়েছে।
প্রতিবাদের ভাষা, ন্যায্যতা রক্ষা করা , কখনও কখনও সরাসরি ক্রোধের ভাষা, রাগের তীব্রতা কীভাবে কবি ব্যবহার করেন— এ বইতে তার স্বাক্ষর আছে।
১২. আপনি নিজেকে কোন দশকের কবি-লেখক বলেন? কেন?
নয়ন আহমেদ : নব্বই দশকের শেষ দিকে আবির্ভাব আমার। এই দিক থেকে নব্বই দশকের কবি।
কিন্তু, এটা কেবল পরিচয়ের চিহ্ন হিশেবে বিবেচ্য। কবি ও কবিতা দশকের গণ্ডিতে আবদ্ধ নয়, আবদ্ধ থাকতে পারে না।
টিকে থাকতে হবে কবিতাকে, কবিকে। কালোত্তীর্ণ হতে হয় কবি, কবিকে। সেই সাধনাই একজন কবির কাজ।
শিল্প না হলে, খুদকুড়ো দিয়ে টিকে থাকা যায় না।
১৩. আপনার সমকাল নিয়ে বলুন।
নয়ন আহমেদ : আমার সমকাল কবিতার জন্য সবচেয়ে উর্বর দশক। এই সময়ে, নববুই দশকে অসাধারণ কবিদের আবির্ভাব হয়েছে। অসাধারণ লিখছেন তাঁরা।
জীবনকে আত্মস্থ করেছেন তাঁরা, জীবনের সমান লিখছেন তাঁরা। তাঁরা হারিয়ে যাবার জন্য আসেননি। হারতে পারেন না।
এক একজন এক একটি নক্ষত্র। নক্ষত্রের আলো উজ্জ্বলই হয়।
প্রায় শতাধিক অধিক উজ্জ্বল নক্ষত্রের আলো বাংলা
সাহিত্যের আকাশ আলোকিত করছে। বাংলাভাষাকে সমৃদ্ধ করে চলেছেন।
এঁরা গল্প – উপন্যাসের দিকেও নজর দিবেন — এমন আশা করি। গদ্য সাহিত্যের আস্বাদ পাবো আমরা।
১৪. আপনি কবিতায় মিথ, ধর্ম ও ধর্মীয় অনুষঙ্গ ব্যবহার করা বিষয়ে কি ভাবেন? বিশেষত ইসলামিক বিষয়, ইতিহাস, ঐতিহ্য ইত্যাদি ব্যবহার করা বিষয়ে।
নয়ন আহমেদ : আমি কবিতায় অকৃপণভাবে মিথ ব্যবহারে করছি, করেছি। “আমার বিবাহিত শব্দরা” , ” খনিঘুম”, ” কিছু মেরুদন্ডী উচ্ছ্বাস” প্রভৃতি কাব্যে মনপ্রাণ উজাড় করে মিথ ও ঐতিহ্য ব্যবহার করেছি। এ যাবৎ প্রকাশিত ১০টি কবিতার বইয়ে কমবেশি মিথ ব্যবহারের পরিচয় পাবেন পাঠক সমাজ।
ইউরোপীয় মিথ , পাশ্চাত্য মিথ , ভারতীয় মিথ এবং ইসলামি ঐতিহ্য ও মিথ সমান তালে ব্যবহার করেছি আমি। তবে, ইসলাম যেহেতু আমার জীবনব্যবস্থা— সেজন্য, ইসলামি মিথ, ইতিহাস ও ঐতিহ্যই আমার প্রাণ।
অন্যান্য মিথ ব্যবহারের সময় লক্ষ্য রেখেছি যাতে শিরকের মতো মারাত্মক অপরাধ না ঘটে।
আমি মূলত প্রতীকবাদী। সবকিছু ব্যবহারে বক্তব্য, সৌন্দর্য যেন রূপক ও যথার্থ প্রতীকী হয়ে ওঠে — সেদিকে নজর দেই।
১৫. আধুনিকতা ও উত্তরাধুনিকতা বলতে আপনি কি বোঝেন? বাংলাদেশের কবিতার পরিপ্রেক্ষিতে এই বিষয়ে আপনার মতামত জানতে চাই।
নয়ন আহমেদ : ব্যক্তিত্ব, ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবোধ , দেশাত্মবোধ, প্রেম, ভূগোলচেতনা, নাস্তিক্যবাদিতা , সংশয়বাদ— এসব বিষয় নিয়ে আসে প্রথম আধুনিক কবিতা।
ঊনবিংশ শতকের কবিরা এই চেতনার ধ্বজাধারী ছিলেন। পঞ্চকবির কাব্য প্রায়ই এ প্রসঙ্গে আলোচিত হয়। ইউরোপীয় ও পাশ্চাত্য সাহিত্যের অনুকারক হিশেবেও তাঁদের পরিচিতি আছে। এ সত্ত্বেও জীবনানন্দ দাশ এবং অমিয় চক্রবর্তী টিকে থাকবেন বহুদিন। কেননা, দেশজবোধ আর আত্মজৈবনিক আধ্যাত্মিকতার বিস্তার ঘটিয়েছেন তাঁরা।
উত্তরাধুনিকতা মূলত দেশের দিকে মুখ ফেরানো, দেশের ভেতর- বাহিরের রূপ, স্বরূপ নির্ণয় করা। জীবন- যাপনের দৃষ্টিকে ভালোভাবে আয়ত্ত করা। নিজের ভেতরে, নিজেদের ভেতরে যে সুষমা আছে — তাকে আবিষ্কার করা। বাংলাদেশ চল্লিশের দশকের কবিদের মধ্যে কমবেশি এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য ধরা পড়ে।
আহসান হাবীব, আবুল হোসেন, জসীমউদ্দীন, ফররুখ আহমদ — এসব কবিরা প্রথম উত্তরাধুনিক কবি হিশেবে বিবেচনার যোগ্য।
পঞ্চাশের কবিরা , বিশেষ করে এককভাবে আল মাহমুদ উত্তরাধুনিক ধারাটিকে সম্প্রসারিত করেছেন। বলা চলে, পূর্ণাঙ্গ করেছেন।
১৬. আপনার লেখালেখিতে দেশি-বিদেশি কবি/ সাহিত্যিকদের কারো কোন প্রভাব কি আছে?
নয়ন আহমেদ : আমার লেখায় সচেতনভাবে তেমন কোনো দেশি- বিদেশি লেখক- কবির প্রভাব নেই। বিদেশি লেখা কম পড়েছি। যা পড়ি বা পড়েছি, তার বেশিরভাগই অনুবাদ। দেশি লেখকের মধ্যে প্রায় সবার লেখাই পড়ি, পড়ছি বা পড়েছি। মৌলিক সাহিত্য সৃষ্টিই আমার লক্ষ্য। এ ক্ষেত্রে প্রখ্যাত বোদ্ধা সমালোচকগণ বিচার করতে পারবেন।
১৭. কোথায় আছেন? কি করছেন? পারিবারিক পরিচিতি জানতে চাই।
নয়ন আহমেদ : আছি বরিশালের হিজলা উপজেলায়। একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কাজ করছি। নাম— বাহেরচর ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা। বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। এখান থেকে প্রতি সপ্তাহে বরিশাল যাই। পরিজনের সাথে দু – দিন থাকি। আবার কর্মস্থলে ফিরে আসি। চলছে এভাবেই। বরিশালে স্ত্রী, একপুত্র, দুই মেয়ে থাকে। স্ত্রী গৃহিণী। ছেলে অনার্স শেষ করেছে। নাম মেহেদী হাসান। মেজো। বড় মেয়ে তামান্না। বাংলায় এম এ করেছে। ও একটা কিন্ডারগার্টেনে পড়ায়। ওর স্বামী একটা মোটামুটি গোছের চাকরি করছে। ছোটো মেয়ের নাম তানজিলা। ও অনার্স পড়ছে ইতিহাসে। বিএম কলেজে।
কখনও কখনও গ্রামে যাই। মা-বাবাকে দেখে আসি। ছোটো ভাই আছে ওখানে। শিক্ষকতা করে। আমাদের ভাইবোনের মধ্যে সে সবার ছোটো। আমরা তিন ভাই, এক বোন। মেজ ভাই বরিশালে থাকে। ব্যবসা করে। একমাত্র বোন থাকে ঢাকায়। ওদের পরিবার ব্যবসার সাথে জড়িত।
১৮. আপনি কখনো কি কোন পত্রিকা বা লিটল ম্যাগাজিন অথবা সংকলন সম্পাদনা করেছেন? বিস্তারিত বলুন।
নয়ন আহমেদ : সম্পাদনা একটা অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ কাজে অবশ্যই বিশেষ যোগ্যতা দরকার। হ্যাঁ, পত্রিকা সম্পাদনা করেছি। আমরা “শেকড়” নামে একটি সংগঠন করতাম। একই নামে পত্রিকা করতাম। সম্পাদনাও করতাম। কখনও আমি, কখনও আল হাফিজ। আবার কখনও কামাল আহসান কিংবা পথিক মোস্তফা। যোগ্যতার চেয়ে দায়িত্বই হয়তো বেশি এখানে। ” বরিশালের ভালোবাসার কবিতা”-ও আল হাফিজ ও আমি সম্পাদনা করেছিলাম। অবশ্য, প্রয়োজনের তাগিদে আমরা নাম মুদ্রিত করিনি। অন্য একজন বন্ধুর নামে সম্পাদক দেখিয়ে প্রকাশ করা হয়। ” উদাহরণ ” নিজের সম্পাদনায় বের করি। এর ১৭টি সংখ্যা বের হয়।
প্রত্যেক কবিই মূলত সম্পাদক। ভাষা সম্পাদক। তার প্রতিটি কবিতা বারবার বিচার করা, কোনটি ছাপাবেন, ছাপাবেন না— ভাবা। তাছাড়া একটি বই করতে নানা অবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হয়— এটা সম্পাদনারই কাজ। বানান-সংশোধনসহ মুদ্রণের যাবতীয় কৌশল আয়ত্ত করা একজন প্রকৃত লেখকের জন্য অপরিহার্য।
১৯. লিটল ম্যাগাজিন এর সংজ্ঞা কি? এ নিয়ে আপনার ভাবনা বলুন।
নয়ন আহমেদ : লিটল -ম্যাগাজিন এর নানান সংজ্ঞা আছে। কিন্তু এসব সংজ্ঞা আর বাস্তবতা এক নয়। লিটল- ম্যাগাজিনকে একটি ম্যাগাজিনই হতে হয়, যার মাধ্যমে লেখক নতুনত্ব, সম্ভাবনা, আকাঙ্ক্ষার তীব্রতা, শিল্পের চরম উৎকর্ষ সাধন করতে পারবেন। কিংবা ভয়-ভীতির ঊর্ধ্বে উঠে লেখক স্বাধীনসত্তার জন্ম দিতে পারবেন।
মানসিকতা পরাধীন হলে , হীন হলে বা সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা অনুকূল না হলে প্রকৃত লিটলম্যাগ সৃষ্টি হয় না। আমাদের দেশে লেখকরা ভয়ে ভয়ে লিখেন। গা বাঁচিয়ে লিখেন। আবোল -তাবোল লিখে পৃষ্ঠা ভরিয়ে তোলেন। এটা লিটল- ম্যাগ চর্চার জন্য বন্ধ্যাত্ব সৃষ্টি করছে। সাহিত্যের জন্য এ রকম দৈন্য আগে আর দেখি দেয়নি। এমনকি ঔপনিবেশিক যুগকেও হার মানিয়েছে।
অনেক বাধা থাকলেও নিজের পথ নিজেরই তৈরি করতে হবে । তরুণের চিন্তার দৈন্য আছে। অগভীর ভাবনা আছে। সহজে প্রতিষ্ঠা লাভের ইচ্ছা আছে। রাষ্ট্র ও সভ্যতাকে নতুন করে সাজাতে হবে। ঝুঁকি নিয়ে তরুণদের নতুন পথে আগাতে হবে। লিটলম্যাগ এই পথ তৈরির সহায়ক হতে পারে।
২০. অনলাইন ম্যাগাজিন বা ওয়েব ম্যাগাজিন চর্চাকে আপনি কোন দৃষ্টিতে দেখেন?
নয়ন আহমেদ : অনলাইনচর্চা বা ওয়েব ম্যাগাজিন এখন বেশ জনপ্রিয়। প্রযুক্তি-নির্ভর এ সাহিত্যচর্চা সময়কে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে। আমরা তো সময়ের মধ্যে বসবাস করি। সময়ের বাইরে যাওয়া সম্ভব নয়। যখন যে প্রযুক্তি আসবে, তার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে আমাদের। কাগজের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে আনতে হবে। কিন্তু এখনও কাগজে মুদ্রিত সাহিত্যের আবেদন আছে। বেশ ভালোভাবেই আছে। এটি ঐতিহ্য হিশেবে টিকিয়ে রাখতে হবে। পাশাপাশি প্রযুক্তির দিকেও নজর দিতে হবে।
প্রযুক্তি সহজলভ্য। তাই বলে সাহিত্য গুণহীন বা মানহীন যেন না হয়, এ বিষয়ে সতর্ক হতে হবে লেখকের। সাহিত্য পরিশ্রম- লব্ধ। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দ, আল মাহমুদ বা রাহমানের যুগে প্রযুক্তি ছিলো না । ছিলো মেধা। ছিলো বোধ। ছিলো একনিষ্ঠ শ্রম। সূতরাং, এ সবের সমবায়ে যা সৃষ্টি হবে, তার মূল্য আছে।
সাহিত্য প্রকাশের যেকোনো উপায় থাকবে, কিন্তু তার মধ্যে লেখকের একাগ্রতা থাকবে, আন্তরিকতা থাকবে। তখন এ সাহিত্য স্থূলতা অতিক্রম করে আন্তর্জাতিকতার পথ সৃষ্টি করবে।
২১. আগামী দিনের সাহিত্য কেমন হবে? আপনার কল্পনায়।
নয়ন আহমেদ : সাহিত্য সব সময়ই গতিশীল। গতি ও প্রগতির পথেই তার পথচলা। মানবিকতা, প্রেম, বৈশ্বিক বোধ, স্থানিক ঐতিহ্য, বিশ্ববোধ, ঐতিহাসিকতা এসব নিয়ে সাহিত্য বহমানতা বজায় রেখেছে সব সময়ই। ভাষায় পরীক্ষা- নিরীক্ষাও আছে।
হয়তো নতুন ছন্দ আবিষ্কার হবে কবিতায়। গদ্য সাহিত্যের প্রসার হবে প্রধানত উপন্যাস ও গল্পকে কেন্দ্র করে।
আমার মনে হয়, ইসলাম একটি মানবিক আদর্শ হয়ে উঠবে এ দেশে। সব মিলিয়ে উন্নত, সমৃদ্ধ জীবনসংস্কৃতি সাহিত্যের মধ্যে খুঁজে পেতে চাইবো আগামী দিনের সাহিত্যে।
মানুষ মানুষের জন্যে।
সাহিত্যে বিশ্ব নাগরিকতার আস্বাদ পাবো।
এই বিশ্ব মানুষের, সবার
সেই ধরনের সাহিত্য আশা করছি।
২২. কেমন পৃথিবী দেখতে চান?
নয়ন আহমেদ : সাহিত্য তো গোলাপের মতো শান্তি চায়। কিন্তু শান্তি আসে না পৃথিবীতে ।
দানবীয় শক্তি পৃথিবীটাকে জাহান্নামের মতো করে দিতে চায়।
রাজনীতি ভালো হলে একটি সাম্য, ন্যায্যতা- পূর্ণ শান্তির পৃথিবী পাবো আমরা।
মানুষ বাস্তুহারা হবে না, অনাহারে থাকবে না, কেউ কারও ওপর জুলুম করবে না, বরং এগিয়ে আসবে মানবতা রক্ষায় — এমন একটা পৃথিবী চাই।
চমৎকার এ আয়োজনের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ও শুভকামনা।
আপনি নানাভাবে সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করে চলছেন। আপনার লেখার আলো পৌঁছে যাক সবখানে, সব হৃদয়ে।
আল্লাহ হাফেজ।
……..
সাক্ষাৎকার গ্রহণে : সাজ্জাদ বিপ্লব
সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৪