দৃষ্টিপটের দৃশ্যকাব্য
……………………….
সব কিছুরই শেষ আছে
দুদিনের সফর শেষে ফিরে যেতে হচ্ছে কোলাহলে
রুমঝুম অপেক্ষায় – মায়ের শুভ্র দৃষ্টির ভিতর দিয়ে
ঝরে পড়া গল্পের ঝুড়ি খোলা ভোরের বাতাসের টান
সাংসারিক নিত্য রুটিনে চাপা নাগরিক রোজনামচা
দৈনন্দিন ছুটোছুটি হিসেবনিকেশের বিধিলিপি নিয়ে
জড়ো হওয়া সমান্তরালে পিলপিল করা কাজকর্ম
কিছুটা বিশ্রামের পর সব আবার শুরু হবে –
এরও পরিনতি আছে,
এরও শেষ আছে।
আমি নীল আকাশের ভিতর বরফের তুলো মেঘ দেখতে দেখতে
কল্পনা দেখি – আকাশ কি মুক্ত হয়েই না দৃষ্টির সামনে ঝুলে আছে।
ওখানে নানা বিচিত্র বৈচিত্র্যপূর্ণ তুলির পাহাড়গুলো খেলা করতে করতে
আমার ফিরে চলা পথের একাকিত্বের শূন্যতাগুলো পূরণ করে যাচ্ছে
আমি মুগন্ধতার শেষ নিঃশ্বাসটুকু ছেড়ে দিয়ে অপেক্ষা করতে রাজি হয়েছি
এরকম অদ্ভুত আকাশ দেখব বলে
তা যতক্ষণ সাধ্যে কুলায় সে পর্যন্ত দেখার আশায়
তারও পরিনতি আছে।
যত যাই সামনের আকাশ নেমে আসে
বড় পর্দায় আকাশ ভরা মনের বাহারি ছবি ভাসে
পাহাড়ের পর পাহাড় পাহাড়ের উপর পাহাড় পাশে পাহাড় সাথে পাহাড়
আসে যায়। এন্টার্কটিকার বরফের মহাদেশ আকাশ চোখের সামনে তুলে ধরে
কত বিচিত্র দৃশ্য ভেসে ওঠে – কল্পনার প্রতিচ্ছবি দেখা যায়
এখন মধ্য আশ্বিন বলে নীলের বাড়িতে মেঘও বেড়াতে আসে
চলে যায় অন্ধকার কেটে নিয়ে
সাদা আকাশ, নীল আকাশ, নীল সাদা আকাশ
চিত্র আঁকে চিত্রকল্প তৈরির কল্পনার কারখানা
পৃথিবীর কি চাই – মনের দৃষ্টির প্রতিবিম্ব ফুটে ওঠে একে একে
নানা ছবি আসে আকাশে পর পর পাশাপাশি আকাশ জুড়ে
দেখলাম যুদ্ধের মাঠ সে যে কত তাতে বড় রাশি রাশি সৈন্য সামন্ত
এগিয়ে আসছে আধিপত্যের তীর হাতে কত কাপুরুষ
কি চান! তুলোর পুঞ্জগুলো তুলে ধরবে চোখের সামনে বড় পর্দায় আকাশটাতে।
পৃথিবীর সবজায়গায় তো আর যেতে পারিনি
এবেলা দুপাশের বৃক্ষের সারিকে নিয়ে আকাশ পৃথিবী টাকে তুলে ধরল আমার সামনে।
দেখে যাচ্ছি সৌন্দর্য দেখার ক্লান্তি নিয়ে
আমার শ্বাস প্রচণ্ড বিস্ময়ে বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম হয়
আমি তবু ওই আকাশের খেলা দেখব বলে
আমার চোখ দুটো আরো প্রসারিত করি গিলে খাক দৃষ্টির খাদ্যগুলো।
আমি তো সময় দিয়েছিলাম আকাশের খেলা দেখবো বলে
কতকিছু দেখলাম এরমধ্যে। আরো দেখার জন্য মনের তেজ বাড়ালাম
আমার চোখের সামনের কল্পনাগুলো কখনো কখনো গুড়িয়ে যায়
মানুষের অপেক্ষা যেভাবে তছনছ হয়ে যায় জীবন ঝড়ে
তবু মানুষ ইচ্ছাশক্তির দ্রবণে নিজেকে মিলিয়ে স্বপ্নের ভিতগুলো
গেঁথে যায় পাপ অপশক্তি দলিয়ে ধ্বংসের উপর আশার পাতাকা নিয়ে।
আমি আকাশ দেখতে দেখতে প্রতীজ্ঞা করেছিলাম
তা দাম্ভিক্য ভেঙে দেবো যদি কোনো অহং প্রকাশ পায় আমার
হৃদয়ে ধারণ করা বোধের বৃদ্ধাক্সগুলি দেখিয়ে
আকাশ অত্যন্ত বিনয়ের সাথে তুলে ধরেছিল তার আতিথ্য।
আকাশের সাথে গল্প হলো – দৃষ্টিপটের দৃশ্যকাব্য
আকাশ আমাকে যা দেখালো, দেখলাম পৃথিবীর নাটক।
আকাশ কত উঁচু জানা নেই
তবু আমাদের ভাব বিনিময় হয়
চোখের পলক ছুঁই ছুঁই করে নেমে আসে
আমাকে নিয়ে যায় ওই রূপের ভিতর
আমি শিহরিত হই তারা আমার এত কাছে
আমি আবেগে বোবা হই দৃষ্টিরও ভাষা ভেসে যায় হৃদয়ের ভিতর।
আমি দেখতে দেখতে সৌন্দর্যের ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে যাচ্ছি
ওই সৌন্দর্যের মুগ্ধতার নেশার মধ্যে দিয়েই
আমাকে ফিরে যেতে হবে লোকালয়ে
আমাকে ফিরে যেতে হবে কোলাহলে
তারও শেষ আছে
তারও পরিণতি আছে।
৩০.০৯.২০২৩
চট্টগ্রাম থেকে ফিরতে ফিরতে।
দুপুর ২:০৫