spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদসাম্প্রতিকইহুদিদের লাল গরু কি এবং কেন?

লিখেছেন : মীর সালমান শামিল

ইহুদিদের লাল গরু কি এবং কেন?

মীর সালমান শামিল


আচ্ছা ইহুদিরা পুরো ফিলিস্তিন দখল করলেও মসজিদুল আকসা কেন দখল করছে না? মুসলমান বা মুসলমান রাজাদের ভয়ে?! নাহ। এজন্য নয়। মুসলমানদেরকে ইহুদিরা ভয় পায় না। চাইলে ওদের বেশি সময় লাগবে না আল আকসা দখল করতে। কিন্তু করছে না অন্য কারনে।

কারন হিব্রু আইন অনুসারে কেবলমাত্র পবিত্র ব্যক্তিরা আল আকসা মসজিদ এলাকায় প্রবেশ করতে পারবে, অন্য কেউ নয়!

ইহুদি ধর্মের পবিত্রতম স্থান হল মাউন্ট টেম্পল, বর্তমানে আল আকসা মসজিদ যেখানে অবস্থিত। মাউন্ট টেম্পলেরও পবিত্রতম স্থান হল মাঝখানের কয়েক মিটারের এক খন্ড জায়গা, বর্তমান মসজিদুল কুব্বাত আস সাখরা বা ডোম অব রকের গম্বুজ বরাবর নিচের জায়গাটা। ইহুদিরা এই জায়গাকে অভিহিত করে কোদেশ হাকতাশিম বলে, ইংরেজিতে the holiest of the holy.

◾ফার্স্ট টেম্পল:

ইহুদিদের হিসাবনুসারে ৯৯০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে সুলাইমান আ. মাউন্ট টেম্পলে প্রথম সিনাগগ নির্মাণ করেছিলেন। এই সিনাগগকে ফার্স্ট টেম্পল বা হাইকেল অব সুলেমান বলা হয়। পবিত্র কুরআন মাজিদেও এই হাইকেল নির্মাণের ঘটনা উল্লেখ আছে (তবে কুরআন বা ইসলামি লিটারেচারে সময়কাল উল্লেখ নেই)। এই হাইকেল নির্মাণে জ্বীনরা সুলাইমান আ. কে সাহায্য করেছিল।

হিব্রু বাইবেল অনুসারে হাইকেল নির্মাণের পরে সুলাইমান আ. কোদেশ হাকতাশিমে আর্ক অব কোভনেন্ট রাখেন এবং এখানে ছিল এভেনাশতিয়া।

১। আর্ক অব কোভনেন্ট: একটা সিন্দুক। বাইবেল অনুসারে ঈশ্বর এই সিন্দুকে করেই মূসা আ. এর কাছে ইহুদি এবং খ্রিষ্টান ধর্মের মৌলিক নীতিমালা টেন কমান্ডমেন্টস পাঠিয়েছিলেন।

২। এভেনাশতিয়া: পবিত্র পাথর বা ফাউন্ডেশন স্টোন। ঈশ্বর এই পাথরের উপর থেকেই সবকিছু সৃষ্টি করা শুরু করেন। বাইবেল মতে এই পাথর হল পৃথিবীতে ফেরেশতাদের স্টেশন। অর্থাৎ, ফেরেশতারা পৃথিবীতে প্রথমে এই পাথরের উপর নামেন এবং এরপর সব জায়গা ছড়িয়ে যান।

কোদেশ হাকতাশিমের হাকিকত হল এখানে সাকিনাহ নাজিল হত। ইসলাম ধর্মের সাকিনাহ এবং ইহুদি ধর্মের সাকিনাহ এক নয়। ইসলামের সাকিনাহ অর্থ শান্তি বা প্রশান্তি। আর ইহুদি ধর্মে সাকিনাহ হল ঈশ্বরের উপস্থিতি।

কেউ যদি কোদেশ হাকতাশিম থেকে দোয়া করে সেটা সরাসরি আল্লাহর কাছে চলে যায়। মাঝে কোন স্টেশনে বাঁধা পরে না। অবশ্যই আল্লাহ সবই জানেন কিন্তু দোয়া অনেক সময় বিভিন্ন স্টেশনে আটকা পরে, দোয়া বিবেচনার জন্য রাখা হয় না। আসমানে ঝুলতে থাকে, ফেরেশতারা আটকিয়ে দেয়। এটা হয় বিভিন্ন কারনে; যেমন জালেমের দোয়া, দোয়াতে অহংকার থাকলে, হারাম খেয়ে দোয়া করলে ইত্যাদি৷ কিন্তু কোদেশ হাকতাশিম থেকে যে কেউ দোয়া করলে সেটা সরকারি আল্লাহ কাছে চলে যাবে।

এই স্থানে প্রবেশ সাধারণ মানুষের জন্য বলতে গেলে নিষিদ্ধ ছিল। কোদেশ হাকতাশিম ছিল তিনস্তর বিশিষ্ট কক্ষের মধ্যে। প্রথম কক্ষে র‍্যাবাইয়েরা প্রবেশ করতে পারত। দ্বিতীয় কক্ষে প্রধান র‍্যাবাই থাকতো এবং তৃতীয় কক্ষে ছিলো কোদেশ হাকতাশিশ।

প্রধান র‍্যাবাই বছরের একদিনে কোদেশ হাকতাশিমে প্রবেশ করতো। ইহুদি থিওলজি অনুসারে বছরের পবিত্রতম দিনকে বলা হয় ইয়ন কিপুর, জুইশ ক্যালেন্ডার তিসহেরির ১০ তারিখ৷ এই দিনে সবার এক বছরের ভাগ্য লিখিত হয়৷

ইয়ন কাপুরের দিনে প্রধান র‍্যাবাই কুরবানি দেওয়া দুম্বার রক্ত এবং এক ধরনের সুগন্ধি নিয়ে কোদেশ হাকতাশিমে প্রবেশ করতো। বাইবেলের বুক এক্সোডাসে এই সুগন্ধি বানানোর নিয়ম বর্ণনা করা আছে। খুবই জটিল প্রক্রিয়া। তার কোমরে একটা দড়ি বেঁধে দেওয়া হত।

প্রধান র‍্যাবাই কোদেশ হাকতাশিমে ঢুকে ইহুদি জাতির সারা বছরের পাপের জন্য মাফ চাইতো। দোয়া কবুল হলে র‍্যাবাই জীবিত অবস্থায় ফেরত আসতেন আর দোয়া কবুল না হলে তিনি সেখানেই মারা যেতেন, দড়ির রঙ পরিবর্তন হয়ে যেত। এভাবে ইহুদিরা বুঝতে পারত তাদের তাদের পাপ ক্ষমা করা হয়েছে কিনা। প্রধান র‍্যাবাই মারা গেলে ইহুদি দড়ি টেনে তাকে বের করত এবং নতুন র‍্যাবাই নিয়োগ করা হত, কিন্তু কক্ষের ভেতরে ঢুকতো না।

◾ইহুদিদের মধ্যে বিভাজন:

ডিউটরনমির বর্ণনানুসারে সুলাইমান আ. এর মৃত্যুর আগে উনার ছেলে রেহেনুমকে উত্তরাধিকার হিসেবে নিয়োগ দেন। কিন্তু বনী ইসরাইলের একাংশ বলে তারা আর ধর্মীয় শাসন চায় না। তারা ধর্মের ভারী জোয়াল থেকে মুক্তি চায়। রেহেনুম এটা শুনে ক্ষিপ্ত হোন। তখন বনী ইসরাঈলের মধ্যে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। ইরাফরুম গোত্রের ইয়েরুমনের নেতৃত্বে দশ গোত্র বের হয়ে যায় এবং জেরুজালেমের বাইরে প্রতিষ্ঠা করে কিংডম অব ইজরাইল।

আর জেরুজালেম এবং হাইকেল অব সুলেমানকে কেন্দ্র করে জুদাহ গোত্র, লিভাই গোত্রের ক্ষুদ্রাংশ, এবং বিন ইয়ামিনের গোত্র মিলে প্রতিষ্ঠা করে কিংডম অব জুদাহ।

খ্রিস্টপূর্ব ৭২২ সালে আসারিয়ানরা কিংডম অব ইজরাইল আক্রমণ করে ধ্বংস করে এবং বনী ইসরাইলকে ধরে নিয়ে যায়। আসেরিয়ানেরা এদেরকে মধ্য এশিয়ার দিকে নির্বাসন দেয়। পরবর্তীতে তারা আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ভারত, (এমনকি বাংলাদেশরও) বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পরে বা পালিয়ে যায় এবং রুট থেকে হারিয়ে যায়।

এদেরকে বলা হয় The Ten lost tribe, বা হারিয়ে যাওয়া দশ গোত্র। এই হারিয়ে যাওয়া গোত্রগুলোর মধ্যে ইজরাইলের হিসাব মতে ডকুমেন্টেড গোত্র হল বাংলাদেশের পাশে মিজোরামের আশ্রয় নেয়া মনিশা গোত্র। এরা এখনো ইহুদি। তাদের অনেক সদস্য ইজরাইলে মাইগ্রেট করেছে এবং ইজরাইলের নাগরিকত্ব পেয়েছে।

বাকীদের বেশিরভাগই পরে মুসলমান হয়ে যায়৷। পাকিস্তানের বিখ্যাত খেলোয়াড় শহীদ আফ্রিদির বংশ আফ্রিদি উপজাতি এই দশ গোত্রের কোন একটা বলে ধারনা করা হয়।

◾হাইকেল অব সুলেমান ধ্বংস:

কিংডম অব ইজরাইলের পতনের পরেও কিংডন অব জুদাহ আরো প্রায় দুইশত বছর টিকে ছিল। ৫৮৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ব্যবিলিনের রাজা দ্বিতীয় নেবুকা নাজার জেরুজালেম দখল করে এবং সুলাইমানের হাইকেল ধ্বংস করে।

◾সেকেন্ড টেম্পল:

নেবুকা নাজার ইহুদিদের ব্যবলিনে ধরে নিয়ে যায়। সাইরাস দ্য গ্রেট এর প্রায় ২৭ বছর পরে ব্যবলিন দখল করে এবং ইহুদিদের জেরুজালেমে ফেরত যাবার অনুমতি দেয়। তারও প্রায় ৩০ বছর পরে খ্রিস্টপূর্ব ৫১৬ সালে জেরুজালেমের গভর্নর যেরুবাবেল সেকেন্ড টেম্পল নির্মাণ করেন। পরবর্তীতে প্রথম শতকে আরেক গভর্নর হেরেড দ্য গ্রেট সেকেন্ড টেম্পেলের বড় ধরনের সংস্কার করেন।

৬৬ সালে ইহুদিরা রোমানদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। ৭০ সালে রোমান সম্রাট তিতুস কঠোর হস্তে বিদ্রোহ দমন করে জেরুজালেম পুনরায় দখল করে এবং সেকেন্ড টেম্পল ধ্বংস করে।

◾থার্ড টেম্পল:

৩৬০ সালের দিকে রোমান সম্রাট জুলিয়ান ইহুদিদেরকে আবার থার্ড টেম্পল নির্মাণ করার অনুমতি দেন।

কিন্তু যখনই ইহুদীরা টেম্পল নির্মাণ করতে যায় তখন একটা বিস্ময়কর ঘটনা ঘটে। মাউন্ট টেম্পল থেকে আগুন বের হয়ে ইহুদিদেরকে ধাওয়া করে। এই ঘটনা রোমানদের ইতিহাস গ্রন্থেও লিখিত আছে।

ইহুদিরা বুঝতে পারে তারা পবিত্র নয় তাই এই টেম্পল নির্মাণ করতে পারছে না। কারন মিশনাহ অনুসারে পবিত্রতা অর্জন ব্যতীত হাইকেল নির্মান দূরে থাক, ইহুদিদের মাউন্ট টেম্পলে যাবারই অনুমতি নেই।

◾পবিত্রতা এবং অপবিত্রতা:

জুইশ বাইবেলের বুক অব নাম্বারসের ১৯ অনুচ্ছেদের ১১ থেকে ২২ পরিচ্ছদে মানুষ কি কি ভাবে অপবিত্র হতে তা বিস্তারিত বর্ণনা করা আছে। সংক্ষেপে, কেউ লাশ স্পর্শ করলে সে সাতদিন পর্যন্ত অপবিত্র থাকে। কোন বাড়ি বা তাবুতে কেউ মারা গেলে সেই বাড়ি/তাবুর সবাই অপবিত্র হয়ে যাবে।

অপবিত্র ব্যক্তির পবিত্র হতে লাশ স্পর্শ করার তৃতীয় ও সপ্তম দিনে পবিত্র পানি দিয়ে গোসল করতে হবে। তা না হলে সে অপবিত্রই থেকে যাবে।

অপবিত্র ব্যক্তি যদি কোন অন্য কোন ব্যক্তিকে স্পর্শ করে কিংবা বিশুদ্ধ তাবুতে প্রবেশ করে তাহলে তাবুর সবাই অপবিত্র হয়ে যাবে।

অর্থাৎ এখন সব ইহুদিই অপবিত্র। এখন পবিত্র হবার উপায় কি?

পবিত্র হতে সেই বহুল আলোচিত প্রসঙ্গ। পবিত্র হতে একটা লাল গরু কুরবানি দিতে হবে।

◾লাল গরু:

বাইবেলে লাল গরুর বৈশিষ্ট্য বিস্তারিত উল্লেখ আছে। এটা হতে হবে গাভী গরু। গরুর শরীরের প্রতিটি লোম হতে হবে লাল। অন্য রঙের পশম হতে পারবে সর্বোচ্চ দুইটা। বৃদ্ধ নয় এবং কুমারীও নয়, মাঝারি বয়সের, কখনো চাষ বা সেচ কাজে ব্যবহৃত হয়নি। গরুর চুল বা ঘাড়ের পশম হতে হবে খাড়া।

বাইবেলে এইরকম সুনির্দিষ্ট লাল গরুর কুরবানি বিষয় কিভাবে আসলো তা নিয়ে বিস্তারিত উল্লেখ নেই। তবে কুরআনে একটা গরুর প্রসঙ্গ উল্লেখ আছে এবং বাইবেলে বর্ণিত গরুর সাথে কুরআনের আয়াতের কিছু সাদৃশ্যতা পাওয়া যায়।

ইসলামি লিটারেচার মতে বনী ইসরাইলে একজন ব্যক্তি হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়। এই হত্যা নিয়ে তাদের মধ্যে গৃহযুদ্ধ বেঁধে যাবার উপক্রম হয়। তখন তারা মূসা আ. এর কাছে যায়। মুসা আ. সমস্যা সমাধানে একটা গরু কুরবানি দিতে বলে এবং নিম্নোক্ত কথোপকথন হয়:

❝ যখন মূসা তার সম্প্রদায়কে বললেন, আল্লাহ তোমাদের একটি গরু কুরবানি করতে আদেশ করেছেন। তারা বলল, তুমি কি আমাদের সাথে উপহাস করছ? মূসা বললেন, জাহেলদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া থেকে আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।*

তারা বলল, তুমি তোমার পালনকর্তাকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে বল সেটি কি হবে। মূসা বললেন, আল্লাহ বলছেন, সেটা হবে একটা গাভী, যা বৃদ্ধ নয় এবং কুমারীও নয়; বার্ধক্য ও যৌবনের মাঝামাঝি বয়সের। এখন আদিষ্ট কাজ করে ফেল।

তারা বলল, তুমি তোমার পালনকর্তাকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে বল সেটি যে তার রঙ কিরূপ হবে? মূসা বললেন, আল্লাহ বলেছেন যে, গাঢ় পীতবর্ণের গাভী-যা দর্শকদের চমৎকৃত করবে।

তারা বলল, তুমি তোমার পালনকর্তাকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে বল গরুটি কেমন? কারন সব গরু আমাদের কাছে সমান। আর আল্লাহ চাইলে নিশ্চয়ই আমরা পথের দিশা পাবো

মূসা বলল, ‘তিনি বলছেন, তা এমন এক গরু যা জমি চাষে ও ক্ষেতে পানি সেচের জন্য ব্যবহৃত হয়নি বরং সুস্থ ও নিখুঁত’। তারা বলল, ‘এখন তুমি সত্য প্রকাশ করেছ’। তারা তাকে যবহ করল যদিও তাদের জন্য সেটা প্রায় অসম্ভব ছিল। ❞

— সূরা বাকারা: ৬৭-৭১

[জাহেল শব্দের অর্থ দুইটা:
১। মূর্খ।
২। যার রাগ বা ক্রোধের উপর নিয়ন্ত্রণ নেই।
এই আয়াতে জাহেল অর্থ রাগের উপর নিয়ন্ত্রণহীনতা। মুসা আ. ছিলেন একজন সুঠাম দেহের শক্তিশালী মানুষ। তিনি যদি আপনাকে একটা থাপ্পড় দেন, তাহলে আপনি শেষ…

বনী ইসরাইলিদের বেয়াদবি মূলক কথা শুনে মুসা আ. এই রাগের উপর নিয়ন্ত্রণ আনার দোয়া করেছিলেন কারন তিনি যদি এইসব ইডিয়োটিক প্রশ্ন শুনে কাউকে থাপ্পড় দিয়ে ফেলেনে তাহলে সে…]

তাফসীরকারকগন বলেছেন মুসা আ. যখন একটা গরু কুরবানি দিতে বলেন তখন তারা যদি এত প্রশ্ন না করে একটা গরু কুরবানি দিত, তাহলেই সেটা কবুল হত। কিন্তু বার বার প্রশ্ন করে বনী ইসরাইলিরা বিধানটি নিজেদের জন্য কঠিন করে ফেলে।

এই গরুকে কুরবানি দিয়ে আগুনে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। অতপর এর ছাই ঝরনার পানির সাথে মিশিয়ে গোসল করলে তবেই পবিত্রতা অর্জন হবে। বাইবেলের বুক অব নাম্বারসের ১৯ অনুচ্ছেদের প্রথম দশ পরিচ্ছেদে পবিত্রতা অর্জনের উপায় বর্ণিত আছে:

  1. প্রভু, মোশি এবং হারোনকে বললেন,
  2. ইসরাইল লোকদের বলো তারা যেন তোমাদের কাছে একটি নিখুঁত লাল গোরু নিয়ে আসে। গোরুটির শরীরে যেন অবশ্যই কোনো রকম আঘাতের চিহ্ন না থাকে এবং সেটি যেন কোনোদিন জোযাল না বয়ে থাকে।
  3. সেই গোরুটিকে যাজক ইলিয়াসররের কাছে দিয়ে দাও। ইলিয়াস সেই গোরুটিকে শিবিরের বাইরে নিয়ে যাবে এবং সেখানে এটি হত্যা করবে।
  4. তখন যাজক ইলিয়াসর কিছুটা রক্ত তার আঙুলে নিয়ে তা পবিত্র তাঁবুর দিকে সাতবার ছিটিয়ে দেবে।
  5. এরপর গোটা গোরুটিকে তার সামনে পোড়ানো হবে। গোরুটির চামড়া, মাংস, রক্ত এবং অন্ত্র সম্পূর্ণরূপে পোড়াতে হবে।
  6. এরপর যাজক একটি এরস কাঠের কাঠি, একটি এসোব এবং কিছু লাল সুতো নেবে। যেখানে গোরুটি পুড়ছে সেই আগুনে ঐসব দ্রব্যসামগ্রী ছুঁড়ে দেবে।
  7. এরপর যাজক স্নান করবে এবং নিজের বস্ত্রাদি জলে ধুয়ে ফেলবে। এরপর সে শিবিরে ফিরে আসতে পারবে। যাজক সন্ধ্যা পর্য়ন্ত অপবিত্র থাকবে।
  8. যে ব্যক্তি গোরুটি পুড়িয়েছে সেও স্নান করবে এবং নিজের বস্ত্রাদি জলে ধুয়ে ফেলবে। সেও সন্ধ্যা পর্য়ন্ত অপবিত্র থাকবে।
  9. এরপর একজন পবিত্র ব্যক্তি সেই গোরুর ছাই সংগ্রহ করবে। সে শিবিরের বাইরে পরিষ্কার জায়গায় সেই ছাই রাখবে। যখন লোকরা পবিত্র হওয়ার জন্য এক বিশেষ অনুষ্ঠানের আযোজন করবে, সে সময় এই ছাই ব্যবহৃত হবে। কোনো ব্যক্তির পাপ দূরীকরণের জন্যও এই ছাই ব্যবহৃত হবে।
  10. যে ব্যক্তি গোরুর ছাই সংগ্রহ করেছিল সে অবশ্যই তার বস্ত্রাদি ধুয়ে ফেলবে। সেও সন্ধ্যা পর্য়ন্ত অপবিত্র থাকবে। এই নিয়ম চিরকাল চলবে। ইসরাইলিদের জন্য এই নিয়ম এবং তোমাদের সঙ্গে যে বিদেশীরা বাস করছে তাদের জন্যেও এই একই নিয়ম বলবৎ থাকবে।


সেকেন্ড টেম্পল ধ্বংসের সময় মিশনাহর কিছু কপি বাঁচানো গিয়েছিলাম। সেই নথি অনুসারে ইতিহাসে মুসা আ. থেকে শুরু করে ৬৭ সাল পর্যন্ত মোট ৯ টা লাল গরু এভাবে কুরবানি দেওয়া হয়েছে।

এরপর গত দুই হাজার বছর ধরে ইহুদিরা তাদের দশম লাল গরু খোঁজ করছে। কিন্তু নিখুঁত লাল গরু এখনো পায়নি। ১৯৯৭, ২০০২, এবং ২০১৪ সালে কাছাকাছি লাল গরু পেয়েছিলো কিন্তু পরে দেখে অন্য রঙয়ের পশম আছে কয়েকটা।

গত বছর তারা টেক্সাস থেকে ৫ লক্ষ ডলার দিয়ে ৫ টি লাল গরু কিনেছে বলে খবর প্রচার করে তুরস্ক ভিত্তিক টিভি চ্যানেল টিআরটি নিউজ।

নিঁখুত লাল গরু পাওয়া মাত্রই ধর্ম যাজকেরা পবিত্রতা অর্জন করে মাউন্ট টেম্পেল এলাকায় প্রবেশ করবে। প্রবেশ করে মসজিদুল আকসা ভেঙ্গে ফেলবে এবং থার্ড টেম্পল নির্মাণ করবে।

তবে যে কেউ নির্মাণ করতে পারবে না। শুধুমাত্র ইয়াকুব আ. এর বড় ছেলে লিভাইয়ের ব্লাড লাইনে জন্ম নেওয়া ধর্মযাজকদেরই এই পবিত্র হাইকেল নির্মাণের অনুমতি আছে।

ইজরাইলে একটা প্রতিষ্ঠান আছে নাম নাজের হাকোদেশ ইন্সটিটিউট অব কোহেনিক স্টাডিজ। এরা থার্ড টেম্পলের ডিজাইন ইতোমধ্যে প্রস্তুত করেছে এবং লিভাইয়ের ব্লাড লাইনের র‍্যাবাইদের টেম্পল নির্মাণের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে৷

পরে বাকী ছাই ইহুদিদের বাড়িতে সরবরাহ করা হবে। সব ইহুদি পবিত্র হয়ে থার্ড হাইকেলে প্রার্থনা করবে, এবং এর মাধ্যমে ইহুদিদের বহুল প্রতিক্ষিত মাশিয়াক বা ম্যাসায়ার আগমন হবে।

মাশিয়াকের জন্ম হবে ইয়াকুব আ. এবং লিয়ার চতুর্থ সন্তান জুদাহর ব্লাড লাইনে। কিং ডেভিড, কিং সোলেমানের জন্ম এই ব্লাড লাইনেই। ইহুদিরা বিশ্বাস করে সুলাইমান আ. যেভাবে বিশ্ব শাসন করেছেন ঠিক সেভাবে মাশিয়াকও সুলাইমানের হাইকেলে বসে বিশ্ব শাসন করবে। পৃথিবীতে ন্যায়বিচার এবং জুইশ ইউটোপিয়া প্রতিষ্ঠিত হবে।


মুসলমান এবং খৃষ্টানেরা ইহুদিদের এই লাল গোরু, টেম্পল এবং মাশিয়াক তত্ত্ব বিশ্বাস করে না। মুসলমান এবং খৃষ্টানেরা বিশ্বাস করে মাশিয়াক হলেন সাইয়েদেনা ঈসা আ.। ঈসা আ. এর জন্মও জুদাহর ব্লাড লাইনে। ঈসা আ. পুনরায় আগমনের পরে সুলাইমান আ. এর মতো সারা বিশ্ব শাসন করবেন এবং ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করবেন।

মাশিয়াক নিয়ে আমার একটা আলাদা ব্লগ আছে, লিংক কমেন্টে।


এখানে আরেকটা ইন্টারেস্টিং এনেকডট আছে। কিছু মুসলমান স্কলার ব্যাখ্যা করেন থার্ড টেম্পল ইতিমধ্যে হয়ে গেছে!

তারা ৩৬০ সালে থার্ড টেম্পল নির্মাণ করতে পারে নাই কারণ তারা অপবিত্র ছিল। ইহুদিরা পবিত্রতার ব্যাপারটা বুঝতে পারছে না। ওল্ড টেস্টামেন্টের পবিত্রতার বিধান এখন রহিত হয়ে গেছে। আল্লাহর নতুন বিধান অনুসারে অপবিত্র হল তারা যারা আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূলকে বিশ্বাস করে না। ইহুদিরা প্রথমে ঈসা আ. কে এবং পরবর্তীতে মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ সা. কে অস্বীকার করার মাধ্যমে কারনে অপবিত্র হয়ে গেছে। এজন্য তারা টেম্পল নির্মাণ করতে পারে নাই।

পরবর্তীতে পবিত্র ব্যক্তিরা এখানে থার্ড টেম্পল বা মসজিদুল আকসা নির্মান করেছে। অর্থাৎ মসজিদুল আকসাই বাইবেলে বলা সেই থার্ড টেম্পল।

বাইবেলের বুক অফ যাকারিয়ার ছয় নম্বর অনুচ্ছেদের বারো নম্বর পরিচ্ছেদে এটা নিয়ে একটা ভবিষ্যতবানীও আছে কে ঈশ্বরের মন্দির নির্মাণ করবেন।

❝ ১২. প্রভু সর্বশক্তিমান এই কথাগুলি বলেন:
‘শাখা নামে এক মানুষ আছেন,
তিনি শক্তিমান হয়ে উঠবেন,
তিনি প্রভুর মন্দির গাঁথবেন।
১৩. তিনি প্রভুর মন্দির গাঁথবেন ও সম্মান গ্রহণ করবেন।
তিনি সিংহাসনে বসে শাসন করবেন। ❞

বাইবেল অনুসারে ইব্রাহিম আলাইহিস সালামের মূল বংশধর হলো ইসহাক আ. এবং শাখা হল হযরত ইসমাঈল আ.। অর্থাৎ ইসমাঈল আ. এর বংশধরের মধ্যে একজন ক্ষমতাবান ব্যক্তি থার্ড টেম্পল নির্মাণ করবেন। বাইবেলের অন্য অংশ উল্লেখ আছে জেরুজালেমে দুইজন উইটনেস আসবে ছেঁড়া কাপড় পরে।

এখন এই উইটনেস কারা? আমরা মাথায় রাখতে হবে বাইবেলের ভবিষ্যতবানী সংক্রান্ত শব্দগুলোর অর্থ বেশিরভাগই মেটাফোরিক। উইটনেস অর্থ সাক্ষী। নতুন বিধান বা কুরআনে আল্লাহ শহীদদেরকে সাক্ষী বলে অভিহিত করেছেন। অর্থাৎ দুইজন শহীদ ছেঁড়া কাপর পরে জেরুজালেমে যাবেন। তাহলে সবগুলো শর্ত যদি একত্রিত করা হয়,

১। ইসমাইল আ. এর বংশধর।
২। অত্যন্ত ক্ষমতাবান।
৩। ছেঁড়া কাপড় পরে জেরুজালেমে যাবেন।
৪। সাথে মাত্র একজন সহকারী থাকবে।
৫। তিনি হবেন একজন শহীদ।

সব শর্ত এক করলে এই ব্যক্তি হলেন ফারুকে আজম হযরত উমর রা.। উমর রা. ছিলেন ইসমাঈল আ. এর বংশধর এবং সেই সময়ের দুনিয়ার সবচেয়ে ক্ষমতাবান ব্যক্তি। তিনি একজন সহকারী নিয়ে ছেঁড়া কাপর পরে জেরুজালেমে গিয়েছিলেন। উমর রা. এবং উনার সহকারী দুইজনই পরবর্তীতে শহীদ হয়ে যান।

উমর রা. আল আকসা মসজিদের ফাউন্ডেশন করেন। পরে মুসলমানেরা সেটা নির্মাণ সমাপ্ত করে।

তাই তারা একটা কেন ১০০ টা লাল গরু কুরবানি দিলেও পবিত্র হবে না।

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ

সৈয়দ সাইফুল্লাহ শিহাব on কবিতার স্ফুলিঙ্গ, স্ফুলিঙ্গের কবিতা