………..
ডায়েরি
…………
আমি জানিনা; আমার গমের দানা গুলো কি হলো
যখন তোমরা আমার ফলের বাগানে আগুন দিয়েছিলে
গোলা ঘরে কেরোসিন, জলাশয়ে বিষ আর
গবাদি পশু গুলো জবাই করেছিলে
জানিনা; আমার গোলাপের পাপড়ি গুলো তখন কিভাবে কাঁপছিল
জানিনা; আজ একযুগ সূর্য পূর্ব দিকে ওঠেছে কি-না
কবর না ঘরে? কোথায় আছি, আমি জানিনা
জানিনা; আমার গোলাপের পাপড়ি গুলো ফুটে আছে নাকি ঝরে গেছে
তাদের গন্ধ শুকিয়ে গেছে না ছড়িয়ে আছে
আমার প্রিয়তমা কাফনরঙে কোথায় যে দাঁড়িয়ে আছে
জানিনা; জায়নামাজে দু’হাত তুলে আমার বৃদ্ধ পিতা কি চাইছেন
জানিনা; আমার জান্নাতি মা কোন ফরিয়াদ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন
যখন আমি পাশ ফিরে ঘুমানোর চেষ্টা করি
আমার কান লেপ্টে থাকে স্যাঁতসেঁতে মেঝের সাথে
আর আমি কেমন যেন একটা গুমোট আওয়াজ শুনি—
বিষাক্ত মানুষের গুঞ্জন আর গোলা-বারুদের গন্ধ
বুঝতে পারি, আয়োজন চলছে কবর খোঁড়ার
আশ্চর্য! একযুগের কবর, নদীসম লম্বা
তা নাকি ভরা হবে তাদেরই মড়া দিয়ে,
যারা আমার গোলাপের পাপড়ি ছিঁড়েছে
আহা! এখন নাকি সুবেহছাদিক,
একটু পরেই ফজরের আজান হবে।
০২/০৭/২০২১
…………….…
বিষাশ্রিত কৃতজ্ঞতা
……………..…
অবশ্যই আমরা মনে রাখবো
সমাজে তোমাদের অবদানসমূহ।
আমরা মনে রাখবো
পাখির পাঁজর ছিঁড়ে ফেলার কাহিনী
ফুলগুলো অনাথ হওয়ার বিবরণ
সিন্দুক থেকে কড়ি গুলো উড়ে যাওয়ার দৃশ্য আর শেয়ার বাজারে কাফনের দরপতন।
অবশ্যই আমরা শুনে রাখবো
তোমাদের মদের স্রোতে ভেসে যাওয়া আর্তচিৎকারধ্বনি এবং
টর্চার সেলের নিত্য-নোতুন আমদানি আর
অভিযোগ-অপবাদ প্রচারের অভিনব ধারা…
আমরা সবকিছুই লিখে রাখবো
তোমাদের সব কলাকৌশল।
সাদা কাপড়ে ঢেকে ফেলা
কালো চাদরে চেপে রাখা
জলাধার দিয়ে আসা
গেরুয়াদের বেতন টানা, সব কিছু।
মনে রাখবো, জায়নামাজ কেড়ে নেয়া
স্কুল মাষ্টারের পেনশন গলে যাওয়া
জলপাই বাগানে আগুন দেয়া
বুকের উপর রাস্তা বিছানো
চুক্তির পর চুক্তি দিয়ে যুক্তি বিতরণ—
সব কিছু।
আমরা নিভতে দেব না
বুকের ভেতর দাউদাউ জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরি
হাতুড়ির আঘাত, ফাঁসির দাগ আর রাস্তায় পড়ে থাকা চাপ-চাপ এবি নেগেটিভ।
আমরা মুছতে দেব না
সাদা শাড়ি মুড়ে কপাটে দাঁড়ানো বিধবার ছবি।
যদিও আমাদের ভয় হয়—
কবে জানি আকাশ কেঁদে ওঠে,
নোনা জলের বন্যা ফেঁপে ওঠে,
মেঘের আড়াল বেঁকে হাহাকার জেগে ওঠে।
কবে জানি মাটি ফুঁড়ে কঙ্কালেরা আবার
মিছিল বের করে কবরের দাবিতে।
খুবই ভয় হয়, খুবই
তবুও জেনে রেখো—
অবশ্যই আমরা মনে রাখবো
সমাজে তোমাদের অবদানসমূহ।
০২/০৩/২০২০
…………
যাযাবর
………….
দুর্ভাগা এক শিকড়
ছোট ছোট বড়শি দিয়ে যা বাঁধা আছে পানির সাথে।
সে কখনোই পেলো না মাটি
শুধুই ভেসে বেড়ায় পানির ইচ্ছায়।
তার বংশধররা সবুজ;
ফুল, ফল, রং, গন্ধ, স্বাদ সবই আছে তাদের।
অবিকল দুনিয়ার মতই দেখতে
কিন্তু দুর্ভাগ্য আজও সে প্রজাতিভুক্ত হতে পারেনি।
বংশধরদের কেউ কেউ চেয়েছিল—
আপন ইচ্ছায় স্থির হতে কোথাও
কিন্তু সকলেই তাদের প্রত্যাখান করলো,
কেননা, তারা-যে ভেসে বেড়ায় পানির ইচ্ছায় !
বার বার শুধুই লাইনে দাঁড়িয়েছে
কখনো আরব, ইউরোপ-রাশিয়া, কখনো ভারত,
কারোর-ই সে শরিক হতে পারেনি;
কেননা, বাতাস না-কি তা চাইনি!!!
বংশকুলের মধ্যে কেউ প্রশ্ন উঠালো
কে আমাদের প্রভু?
পানির ইচ্ছা, না কি বাতাসের খায়েশ?
সম-স্বরে সকলে মুণ্ড চাইল তার….
আসলে অস্থিরতা-ই এই বংশের সংস্কৃতি
কেননা, তার প্রভু যে একাধিক !
সে স্থির হবে না কখনো
কেননা, যে শিকড় এখনো মাটি খুঁজে পাইনি!
১২/০৫/১৬
………………..
গুণ-অভিশাপ
………………..
আমি পলি মাটির সাথে ভেসে আসা এক রুপালি হাঁস!
অঙ্গে আমার সবুজ চাদর, ডিম পাড়ি সোনার।
আমার কখনো ঘর হয়নি, সন্তান সন্ততি নিয়ে হয়নি পরিবার।
আমার সাথে সকলেই পরকীয়া করেছে! হয়েছি কেপ্ট, হয়নি সংসার।
আমি সব সময়ই থেকেছি দাসী !
সন্তানেরাও বারবার করেছে বিক্রি, দু’দণ্ড হয়নি অবসর।
এখন আমি শ্রী হনুমানের কেপ্ট!
চায় মিস্টার পেন্টাগনও, হাত বাড়িয়েছে আরদ্ধ ড্রাগন।
আমি এখন ক্লান্ত! রক্তাক্ত যোনিপথ নিয়ে ধূসর সবুজে মোড়া ক্ষতবিক্ষত রুপালি হাঁস;
তবুও আমি ডিম পাড়ি সোনার।
হায় রুপালি হাঁস! সু-সন্তান জন্মদানে অক্ষম আমায় কেয়ামত অবধি অপেক্ষায় থাকতে হবে,
যবে হবে সময় যাবার…
১৩/০৬/২০১৯
অনেক ধন্যবাদ “বাংলা রিভিউ”। শুভকামনা সবসময়।
অশেষ ধন্যবাদ সুপ্রিয় বাংলা রিভিউকর্তৃপক্ষ কেআপনাদের পত্রিকায় যশোর প্রাচ্যসংঘের কবি,লেখক,এক্টিভিষ্ট,গবেষক সুপ্রিয় বেনজীন খানের ৪টা কবিতাকে প্রচারিত করার এবং তাকে গভীর ভাবে মূল্যায়ন করার জন্যধন্যযোগ
অনেক ধন্যবাদ, কবি সাজ্জাদ বিপ্লব।
“বাংলা রিভিউ” পত্রিকার উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা।