……………
তামার বিষ
…………….
যে টুকু অর্থ পেয়ে মানুষ অমানুষ হয়ে যায়
সে টুকু অর্থবিত্ত দিও না আমায়।
বাংলা ভাষায় একটা প্রবাদ আছে– “তামার বিষ”
সেই তামার বিষে যেন না ধরে আমায়।
এতো টাকা দিয়ে আমি করবো কী, যে টাকা পেলে
নিজের উত্তরাধিকার নাম লিখাতে যায়
অলস ভবঘুরে আর বখাটেদের খাতায়
এতো ধনের মালিক তুমি করো না আমায়।
টাকার অহংকারে বউ ছুটবে হাটে, গয়নাঅলার সাথে
বলবে কথা হেসে
শাড়ি চুড়ি জুতোর দোকান, বিক্রেতারা দাঁড়িয়ে গা ঘেসে
ভাবি ডেকে জুতো বিক্রির ছলে হাত বুলাতে চাইবে পায়–
অর্থের কুপ্রভাব যদি পেয়ে বসে আমায়।
ভাত ছিটালে কাক আসে, টাকা উড়ালে মেয়ে মানুষের
হয় না অভাব
ঈষৎ হেসে তুলে দেবে সবুজ গেলাসে রঙিন সরাব
নগরনটীর দল। কিছু তোষামোদকারী চাটুকার
সামনে দেবেই স্যালুট– পেছনে লাত্থি দেখাবে অবলীলায়।
এতো দৌলত দিয়ে আমি করবো কী, তামার বিষে
যেন না ধরে আমায়।
……………
সুখ অসুখ
……………
আকাশচুম্বী এক প্রশ্নবোধক এঁকে দিয়ে তুমি
শুধালে আমায়– ‘ভালো আছো?’
আপাতালাকাশ আশ্চর্যবোধক নিয়েই
বললাম– ‘মুখ দেখে তুমি কী বুঝেছ!’
দুঃখকে তুলে দিয়ে সুখের হাতে হাসলে তুমি–
‘মুখ কি মনের আয়না?’
ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিলাম কপালের চুল আমি–
‘চোখে চোখ রেখে বলো কিছু কি বুঝলে না?’
এবার তোমার হাসি থেমে হলো ম্রিয়মাণ–
‘কেন এত কষ্ট পুষে রাখো কপালের ভাঁজে আর বুকে?’
মাথা নিচু হয়ে এলো আমার অজ্ঞাত বেদনায়–
‘তোমার হাতের পোড়া দাগ দিচ্ছে বলে তুমি নেই সুখে।’
…………………
মাধবীলতার প্রেতাত্মা
………………….
শারদ প্রভাতবেলায় শিউলি গাছের তলে ফুল কুড়ানোর ছলে
প্রতিদিন দেখা হতো মাধবীর সাথে। আমি তাকে
মাধবীলতা বলে ডাকতাম, শিউলি তলায় তার অভিসারে থাকতাম।
বলতো সে– ‘মাধবী ডাকো ভালো কথা
তার সাথে আবার লতা মিলাতে যাও কেন…? আমি কি তবে
লতার মতোই দেখতে!’
আসলে সে ছিলো ঠিক লতারই মতোন–
চিক্কন চাক্কন গায়ের গড়ন, রঙটা ছিলো স্বর্ণলতার মতো
উজ্জ্বল সোনালি, স্বভাবেও পরনির্ভরশীলতা।
দুজন মিলে কুড়াতাম ফুল প্রতিযোগিতা করে, কার চেয়ে কে পারে
বেশি কুড়িয়ে নিতে। একের ফুলঝুড়িতে অন্যের লুণ্ঠণকারী হাত
লেগে যেতো অকপট চুরি চামারিতে।
এই নিয়ে বিস্তর ঝগড়া শুরু হতো দুজনাতে, সে বিবাদ
বেশিক্ষণ হতো না তো স্থায়ী, আমিই উপযাজক মিলে যেতাম তার সাথে।
‘কাল থেকে তুমি আর এসো না ফুল কুড়াতে, তোমার নিপুণতার কাছে
আমি বড়ই অদক্ষ’ – বলতো সে কোন দিন
আবার কোন দিন আমাকে নিজেই দিতো উপহার শিউলি ফুলের মালা।
সোনালি সে দিনগুলো ক্ষিপ্র দমকা বাতাসে
ভেসে গেছে কোন দূরে। আজকাল মাধবীলতার কথা মনে আসতেই
বড়ো বেশি পাশ কেটে দিতে চাই, পরনির্ভরশীল সেই মেয়ে চলে গেছে
পরপারের অজানায়। যে গেছে চলে তার কথা ভেবে ভেবে
লাভ কি আছে কোন…! এ যে চিরতরে যাওয়া।
এখনো শরৎ আসে, আসে কমলা বোটার সাদা শিউলি কলি
ঝরে থাকতে পুকুরের ধারে যেমন থাকতো ঝরে
যখন মাধবী ছিল।
আমি যাই শিউলী তলায় ধীরপায়ে। শরতের কুয়াশায়
ঝরা ফুল পরে থাকে থোকা থোকা– ইচ্ছে করে না কুড়াতে ফুল
চাদরের ভাঁজ থেকে হাত বের করে, এমনি কুড়েমি ধরেছে আমায়।
মনে হয় কে এক প্রেতাত্মা
ঘুরে মরে শিউলিতলার ঘাসে। আমার সাক্ষাৎ মাত্র বলে–
‘কাল থেকে তুমি আর এসো না
ফুল কুড়াতে, তোমার নিপুণতার কাছে আমি বড়ই অদক্ষ।’
চোখে জল এসে যায়, কুয়াশার মাঝে চোখ মুছতে মুছতে
ফিরে যাই ঘরে। এখন আমায় আর
উপহার দেয় না কেউ শিউলি ফুলের মালা।