তাজ ইসলাম
শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালে দলের সভাপতি মনোনীত হন।তারপর থেকে এককভাবে একই পদে ছিলেন তিনি। ৪৩/৪৪ বছরে তার যোগ্যতম নেতা গড়ে তুলতে পারেননি। তিনি নিজে পরিবারতন্ত্রের ধারাবাহিকতায় আওয়ামীলীগের নেতৃত্ব পেয়েছেন। তার দুর্ভাগ্য তিনি নিজে তার পরিবার থেকে কাউকে রাজনীতির যোগ্য করে তুলেননি। ক্ষুদ্র দায়িত্বে নেতা তৈরী করেছেন বহু।সকল আত্মীয়কেই রাষ্ট ও দলের নানা জায়গায় পদায়ন করেছেন, কিন্ত নিজের স্থলাভিষিক্ত করতে চাননি কাউকে।
উপমহাদেশীয় রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্র বিষয়টি ঐতিহ্যিক ধারা সৃষ্টি করেছে। ভারতে ইন্দিরা গান্ধীর পরিবার,পাকিস্তানে ভুট্রো পরিবার, বাংলাদেশে শেখ ও জিয়া পরিবার তাদের দলের কান্ডারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন।শেখ হাসিনা নিজেও তার বাবার প্রতিনিধিত্ব করে যাচ্ছেন।
তিক্ত হলেও সত্য শেখ হাসিনা তার পরিবার বা শেখ পরিবার থেকে শেখ হাসিনার অবর্তমানে দলের দায়িত্ব নেওয়ার মতো যোগ্যতম কাউকে রাজনীতির মাঠে প্রস্তত রাখেননি।
শেখ রেহানা ও তার সন্তানেরা এদেশের রাজনীতিতে অখ্যাত নাম।শেখ হাসিনার দুই সন্তান।জয় ও পুতুল।জয় যথারীতি রাজনৈতিক কথাবার্তায় চরম ভাবে ফ্লপ।
শেখ হাসিনার বর্তমান বয়স ৭৭ বছর। আমরা ধরে নিই আগামী দু বছর ক্ষমতায় থাকবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।তারপর ৫ বছর নির্বাচিত সরকার। কোটি ভাগ দৈব ঘটনা না ঘটলে জোর দিয়ে বলা যায় বাংলাদেশের নির্বাচনে আওয়ামীলীগ আগত নির্বাচনে হালে পানিই পাবে না। যে দলেই ক্ষমতায় আসুক আওয়ামীলীগ আসছে না। সুতরাং নির্বাচিত সরকারের মেয়াদ শেষ হতে হতে শেখ হাসিনার বয়স হবে যদি বেঁচে থাকে তাহলে হবে ৮৪ বছর। ক্ষমতাহীন ৮৪ বছর ক্ষমতাসীন ১০৪ বছরের সমান। ততদিনে শেখ হাসিনা প্রকৃতির কাছেই পরাজিত হবেন। এমন কি মৃত্যু বরণ ও করতে পারেন।
আওয়ামীলীগ তখন শেখ পরিবারের যোগ্য কাউকে পাবে না। শেখ রেহানা,শেখ হাসিনা পরিবার ছাড়া অন্য কেউ দলের নেতৃত্বে এলে সাধারণ নেতাকর্মীদের মাঝে শুরু হবে কোন্দল। দলের সাধারণ নেতাকর্মীদের কেউ সভাপতি হলেও দলে গ্রুপিং হবে।এমনকি শেখ হাসিনা,রেহানা পরিবারেও পদ নিয়ে দ্বন্দ্ব তৈরী হতে পারেই। তারা দ্বন্দ্বে না জড়ালেও কোন্দলকারীরা তাদের দ্বন্দ্বে জড়াবে।
দীর্ঘ দিন ক্ষমতাচ্যুত থাকলে আওয়ামীলীগ দল ভাঙার রাজনীতির খেলার স্বীকার হবে। ৭৫ পরবর্তী আওয়ামীলীগ কয়েক দফা ভাঙনের স্বীকার হয়েছিল।
২৪র গণঅভ্যুত্থানের প্রভাব মুক্ত হতে আওয়ামীলীগকে বহু সময় অপেক্ষা করতে হবে।আওয়ামীলীগ স্বীকার করুক বা না করুক ২৪ গণঅভ্যুত্থান আওয়ামীলীগকে যে গর্তে ফেলেছে, ওখান থেকে উঠতে তার সময় লাগবে তিন প্রজন্ম। মুক্তিযুদ্ধের যে চেতনা তারা বিলি করতো চব্বিশের নির্মমতা তাদের সে চেতনাকে ম্লান করে দিয়েছে।
আগামী দশ বছর যদি আওয়ামীলীগ ক্ষমতার বলয়ের বাইরে থাকে চব্বিশের কিছু বিশেষণ তাদের কলঙ্ক তিলক হবে।
শেখ হাসিনার পলায়ন দলটির জন্য বড় কলঙ্ক। পলায়ন না করে যদি দুই দিন আগেও পদত্যাগ করতো,যদি জেলজীবনে মৃত্যুও হতো তবু দল ও নেতাকর্মীদের জন্য তা হত প্রেরণাদায়ক।
পনের বছরের সকল অপকর্মের দায় তারা পাড়ি দিতে পারতো। জুলাইয়ের ছাত্র হত্যার দায়,তারপর গণবিস্ফোরণ থামাতে একটা দেশের নিরীহ জনতার উপর সে দেশের সরকারের যুদ্ধংদেহী মনোভাব প্রদর্শন, হত্যা,গুম,যুদ্ধাস্ত্র প্রয়োগ দল হিসেবে আওয়ামীলীগকে করেছে অপরাধী।জুলাই আগস্টে আওয়ামীলীগের পক্ষে অন্ধ আওয়ামীলীগ ছাড়া আর কেউ ছিল না। সমগ্র দেশ ছিল আওয়ামীলীগের বিপক্ষে।
ছাত্র ও তার অভিভাবক এই দুই প্রজন্মের কাছে আওয়ামীলীগ যথারীতি অপরাধী দল।কম করে হলেও আরও একটি প্রজন্মের কাছে আওয়ামীলীগ অপরাধী হিসেবেই চিহ্নিত হবেই। যে ছেলে শহীদ হয়েছে তার ভাই
,তার ভ্রাতুষ্পুত্র আওয়ামীলীগকে মেনে নিবে? যে আহত হয়েছে,যে পঙ্গু হয়েছে,যে মাঠে স্লোগান তুলেছে,যে মিছিলে গিয়েছে,যে গরম পানিতে ভিজেছে,যে বুলেটের সামনে দাঁড়িয়ে বলেছে মুক্তি চাই,তারা যতদিন বেঁচে থাকবে তারা তার সন্তানের কাছে বলবে।বলতে বলতে চলে যাবে আরও এক প্রজন্ম। সারাদেশে যে পরিমান ছাত্র,যুবক,সর্বস্তরের জনতা সম্পৃক্ত হয়েছিল তারা মনে রাখবে না? পনের বছরের দুঃশাসন তো আছেই। রাজনৈতিক দল তো রয়েছেই।যখন যে দল ক্ষমতায় আসবে আওয়ামীলীগকে মনে রাখবে। আওয়ামীলীগ একটি ঐতিহ্যবাহী দল,একটি বড় দল।এটি তাদের পাঠ্য তালিকায় থাকবে। আওয়ামীলীগ ঘুরে দাঁড়ালে তাদের জন্যই বিপদজনক।কাজেই তারা চেষ্টা করবে আওয়ামীলীগকে দাঁড়াবার সুযোগ না দিতে। একটা সময় আওয়ামীলীগের সামনে এসে হাজির হবে প্রকৃতির প্রতিশোধ, প্রাকৃতিক নিয়ম,রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের খেলা,দলীয় কোন্দল,নেতৃত্ব শূন্যতা। সবমিলিয়ে আওয়ামীলীগের ভবিষ্যত বাংলাদেশে মুসলীমলীগ কিংবা জাতীয় পার্টির ভাগ্য বরণ করতে হতে পারে।কিংবা আরও শোচনীয় কিছু। কোটিগুণ ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে আওয়ামীলীগের সামনে ইতিবাচক কিছু থাকতে পারে।প্রচলিত নিয়ম বলে আওয়ামীলীগের ভবিষ্যৎ গভীর তমসায় ঢাকা। এসব কথা কোন ভবিষ্যৎ দ্রষ্টার ভবিষ্যৎবাণী না।এগুলো কেবলই বাস্তব উপলব্ধি।
তাই বলে আওয়ামীলীগকে অবজ্ঞার চোখে দেখা যাবে না। আগামী পাঁচ বছর আওয়ামীলীগকে একটি শক্তিশালী দল হিসেবেই গন্য করতে হবে। আগামী সাত বছর তাদের ষড়যন্ত্রের কথা স্মরণ রাখতে হবে। অবস্থা বিবেচনায় পরের দশ বছর এদের এরশাদ আমলের চরিত্র আর জাতীয় পার্টির চরিত্র দিয়ে হিসাবে রাখতে হবে। এরশাদের আমলে তারা জাতীয় বেইমান হতে দ্বিধা করেনি।জাতীয় পার্টিও ক্ষমতার আশপাশে থাকতে সব রকমের অনৈতিকতায় মজে ছিল।আওয়ামীলীগ এসব করবে। রাজনীতিতে এসব কথা মনে রেখেই আওয়ামী রাজনীতিকে মোকাবেলা করতে হবে আরও দশ বছর। পঁচাত্তর পরবর্তী আওয়ামীলীগ যেভাবে ফিরে এসেছিল চব্বিশ পরবর্তী আওয়ামীলীগের সামনে সেই সম্ভাবনা কম।তবু সামনের দশ বছর রাজনৈতিক দলগুলোকে মোকাবেলা করে যেতে হবে আওয়ামীলীগের সাথে রক্ষণাত্মক ও আক্রমণাত্মক উভয় পজিশনে। রাজনীতিতে পা ফেলতে হয় সাবধানে।পঁচা শামুক থেকে সাবধান।