spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

লিখেছেন : আমান আবদুহু

নারী শহীদ

আমান আবদুহু

জুলাই-আগস্টে যখন গণহত্যা চলছিলো তখন একটা ভিডিও দেখেছিলাম কোন এক হাসপাতালের মর্গে অথবা কোন রুমে একটা ট্রলির উপর একজন কমবয়সী মেয়ের শরীরের সামনে কান্নাকাটি করছে তার মা। স্কুল অথবা কলেজের ছাত্রী হবে মনে হয়। ভিডিওতে পরিস্কার বুঝা যায়নি ঘটনা কি। মেয়েটা কি মারা গেছে, না কি খুব বেশি আহত। কেউ একজন সম্ভবত বলছিলো মেয়েটার গায়ে গুলি লাগার কথা। মনে হচ্ছিলো মারাই গেছে। কিন্তু নিশ্চিত হওয়ার কোন উপায় ছিলো না। 

এরও আগে একদম শুরুর দিকে একটা ছবি ভাইরাল হয়েছিলো রাস্তায় মারামারির সময় আওয়ামী লীগের মাইর থেকে বাঁচার জন্য এক মেয়ের অসহায় চেষ্টা করার অবস্থা। নাম সম্ভবত তন্বী হতে পারে, তার আওয়ামী লীগ কর্মী বা নেতা আপন ভাইয়ের একটা পোস্টও ছড়িয়েছিলো। পরের দিকে বিভিন্ন পোস্টে দেখেছি সেই মেয়েটা না কি মারা গেছে কিন্তু ফেইসবুকের এসব আবেগী গল্প বেশিরভাগ সময়েই লাইকভিক্ষুক বাংলাদের মনের মাধুরী মেশানো উপন্যাস প্রমাণিত হয় তাই আস্থা রাখি নাই। তথাপি পুরোটা সময় জুড়ে সবসময় অবচেতনে খেয়াল রেখেছি, কোথাও কোন ছাত্রী মারা যাওয়ার খবর আসে কি না। পরেও প্রায় সময়ে মনে হয়েছে, কোথাও ছাত্রী মারা যাওয়ার বা আহত হওয়ার খবর প্রকাশ হয় কি না।

ছাত্র এবং সাধারণ মানুষ মারা গেছে অগণিত। বারান্দায় খেলতে থাকা শিশু, ছাদে কাপড় শুকাতে দিতে যাওয়া নারী, গর্ভবতী নারী কতরকম মানুষ মারা গেছে। মনের মধ্যে একটা প্রশ্ন ছিলো, রাস্তায় তো মেয়েরাও সমানতালে নেমেছে। তারাও তো মারা যাওয়ার কথা। পরে মনে হয়েছে, হয়তো পুলিশ ও আর্মি তাদেরকে টার্গেট করে নাই। যেহেতু অনেক হত্যা হয়েছে স্নাইপারের হেডশটে এবং অনেক হত্যা হয়েছে দুই আড়াইশ গজ দুরত্বের টার্গেটেড কিলিং, সম্ভবত তারা মেয়েদেরকে এড়িয়ে গেছে। ছেলেদেরকে টার্গেট করেছে। এই যুক্তি মানতে মন চায় না, তারপরও অন্য ব্যাখ্যা পাই নাই মনে মনে। 

আজ যখন নিহত শহীদদের কয়েকজনের এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে খবর প্রকাশ হলো, তখন চমকে উঠলাম। এতোদিনের প্রতীক্ষা যেন শেষ হলো। খবরে আসা ছয়জনের একজন হলো নাফিসা আক্তার, ছত্রিশে জুলাই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের রাস্তায় আন্দোলনের সামনে থাকা এই মেয়ে পুলিশের গুলিতে মারা গিয়েছিলো। 

আমাদের সামনে এসব খবর নিয়ে আসার দায়িত্ব ছিলো সাংবাদিকদের। কিন্তু বাংলাদেশের সাংবাদিকরা মোটাদাগে হাসিনার চাটা গোলাম। আজ তথাকথিত বিপ্লবী সরকারের মুখপাত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে যে সাংবাদিক, হাসিনার শাসনামলে সে যখন শেখ মুজিবের মূর্তির সামনে নমঃ নমঃ করে ভক্তপ্রাণ ছবি আপলোড করেছিলো, তখন গালি দিয়েছিলাম। সহ্য করতে পারে নাই। এই সাংবাদিকরাই এখনো গভীর নিষ্ঠার সাথে তাদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। সুতরাং এসব ঘটনা গুরুত্বপূর্ণ খবর হয়ে উঠতে পারে নাই। 

যে কোন সমাজে, এমনকি এখনকার হিপোক্রিট পশ্চিমা সমাজেও যদি এই বয়সী কোন মেয়ে আন্দোলনে নিহত হয়, তা বিশেষ গুরুত্ব পাবে। কারণ নারী ও শিশুরা সমাজের সংরক্ষিত অংশ হওয়ার কথা। বৃটিশদের উপর হামলা করতে গিয়েছিলো প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, তারপরও সে ইতিহাসে গুরুত্ব পায়। ইংরেজদের বিরুদ্ধে আন্দোলন থেকে শুরু করে আইয়ুব, ইয়াহিয়া, মুজিব, এরশাদ সমস্ত স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে আন্দোলনে রাস্তায় কোন মেয়ে মারা গিয়েছিলো কি? আমার জানা নাই। যদি এমন কোন ঘটনা বাংলাদেশ ও পুর্ব পাকিস্তানের ইতিহাসে না থাকে, তাহলে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানই সর্বপ্রথম আন্দোলন যেখানে মেয়েরা পর্যন্ত ফ্রন্টলাইনে শহীদ হয়েছে। কিন্তু সম্ভবত ফ্যাসিবাদের ষোল বছর চাপে বাংলা পুরুষদের পুরুষত্ব তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে তাই তারা এই অবদানগুলোকে তুলে আনতে পারতেছে না। গুরুত্ব বুঝা তো অনেক পরের কথা। 

নাফিসার মৃত্যুর খবরটা অন্য প্রসঙ্গে (এইচএসসির রেজাল্ট) প্রকাশ পাওয়ার পর আমার এখন দৃঢ় বিশ্বাস, এবারের অভ্যুত্থানে এরকম ছাত্রী আরো মারা গেছে। নিঃসন্দেহে অনেকে আহত ও হয়েছে। তবে সবাই যেহেতু এখন ক্রেডিট নেয়ার দড়ি টানাটানিতে মত্ত, সুতরাং জীবন ও ভোগান্তির স্বীকৃতির বঞ্চনার ক্ষেত্রে এইবার বাংলাদেশে সম্ভবত নারীরা পুরুষের সমান অধিকার পেয়ে গেছে আর কি।

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ

এ্যাডঃমনিরুল ইসলাম মনু on গুচ্ছ কবিতা : বেনজীন খান
পথিক মোস্তফা on সাক্ষাৎকার : নয়ন আহমেদ
সৈয়দ আহমদ শামীম on বাংলা বসন্ত : তাজ ইসলাম
Jhuma chatterjee ঝুমা চট্টোপাধ্যায়। নিউ দিল্লি on গোলাপ গোলাপ
তাজ ইসলাম on রক্তাক্ত স্বদেশ
আবু বকর সিদ্দিক on আত্মজীবনীর চেয়ে বেশি কিছু
ঝুমা চট্টোপাধ্যায়। নিউ দিল্লি। on জন্মদিনের কবিতা : সাজ্জাদ বিপ্লব
দিশারী মুখোপাধ্যায় on গুচ্ছ কবিতা : গোলাম রসুল
দিশারী মুখোপাধ্যায় on নির্বাচিত ১০ কবিতা : কামরুজ্জামান
তাজ ইসলাম on Menifesto of the Inevitable Revolution
কাজী জহিরুল ইসলাম on দীর্ঘ কবিতা : তাজ ইসলাম
দীপশিখা পোদ্দার on গুচ্ছ কবিতা : কাজল সেন
সৈয়দ সাইফুল্লাহ শিহাব on গুচ্ছ কবিতা : তাজ ইসলাম
নয়ন আহমেদ on রবীন্দ্রনাথ
নয়ন আহমেদ on কিবরিয়া স্যার
বায়েজিদ চাষা on গুচ্ছ কবিতা : অরুণ পাঠক
আবু আফজাল সালেহ on দীর্ঘ কবিতা : অভিবাসীর গান
কাজী জহিরুল ইসলাম on রবীন্দ্রনাথ
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on গুচ্ছ কবিতা : হাফিজ রশিদ খান
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on অক্ষয় কীর্তি
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on অক্ষয় কীর্তি
নয়ন আহমেদ on আমার সময়
মোঃবজলুর রহমান বিশ্বাস on গুচ্ছ কবিতা : দিলরুবা নীলা
তৈমুর খান on অক্ষয় কীর্তি
তৈমুর খান on অক্ষয় কীর্তি
তৈমুর খান on অক্ষয় কীর্তি
কাজী জহিরুল ইসলাম on অক্ষয় কীর্তি
Quazi Islam on শুরুর কথা
আবু হেনা আবদুল আউয়াল, কবি ও লেখক। on আমিনুল ইসলামের কবিতায় বৈশ্বিক ভাবনা
ড. মোহাম্মদ শামসুল আলম, নওগাঁ সরকারি কলেজ নওগাঁ। on আমিনুল ইসলামের কবিতায় বৈশ্বিক ভাবনা
নয়ন আহমেদ on ঈদের কবিতা
নয়ন আহমেদ on ফেলে আসা ঈদ স্মৃতি
নয়ন আহমেদ on ঈদের কবিতা
পথিক মোস্তফা on ঈদের কবিতা
পথিক মোস্তফা on স্মৃতির ঈদ
পথিক মোস্তফা on ঈদ স্মৃতি
Sarida khatun on ঈদ স্মৃতি
নয়ন আহমেদ on ঈদ স্মৃতি
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on দীর্ঘ কবিতা : আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ
পথিক মোস্তফা on শৈশবের ঈদ : একটি স্মৃতি
পথিক মোস্তফা on স্মৃতির ঈদ
নয়ন আহমেদ on স্মৃতির ঈদ
নয়ন আহমেদ on আমার ঈদ
নয়ন আহমেদ on ঈদের আনন্দ
শাদমান শাহিদ on শৈশবের ঈদ উৎসব
নয়ন আহমেদ on শৈশবের ঈদ উৎসব
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on সাম্প্রতিক কবিতা : নয়ন আহমেদ
মুস্তফা জুয়েল on আমি আর আমার গাযালি
কাজী জহিরুল ইসলাম on গুচ্ছ কবিতা : মুর্শিদ-উল-আলম
মোহাম্মদ মাহিনুর আলম (মাহিন আলম) on অপদার্থবিদ্যা
সৈয়দ সাইফুল্লাহ শিহাব on দেশপ্রেমের ১০ কবিতা : সাজ্জাদ বিপ্লব
কাজী জহিরুল ইসলাম on বিশ্ববিচরণশীল কবিমানুষ
কাজী জহিরুল ইসলাম on বিশ্ববিচরণশীল কবিমানুষ
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on নির্বাচিত ২৫ কবিতা : সাজ্জাদ বিপ্লব
মোহাম্মদ মাহিনুর আলম (মাহিন আলম) on প্রিয়াংকা
প্রত্যয় হামিদ on শাহীন খন্দকার এর কবিতা
মহিবুর রহিম on প্রেম ও প্যারিস
খসরু পারভেজ on কাব্যজীবনকথা
মোঃ শামসুল হক (এস,এইচ,নীর) on সুমন সৈকত এর কবিতা
এম. আবু বকর সিদ্দিক on রেদওয়ানুল হক এর কবিতা