ঢাকা থেকে মাহবুব হাসান
আলোচনার কেন্দ্রে নজরুলের বিদ্রোহীকে উত্তর ঔপনিবেশিক কবিতার আলোকে বিচার, বিশ্লেষণ করেছেন নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীর, ঢকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ড.মুহাম্মদ আজম, কবি ও কথাশিল্পী মজিদ মাহমুদ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড. মাহবুব হাসান। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন কবি জাহাঙ্গীর ফিরোজ। উপস্থাপনায় ছিলেন কবি জাকির আবু জাফর।
মূল প্রবন্ধে ড. মাহবুব হাসান বলেন, নজরুল উত্তর-আধুনিক কবি। তাঁর বিদ্রোহীতার প্রধান আকর কবিতা। উত্তর আধুনিকতার মৌল ধারণা ইউরোপীয়ান হলেও, বাংলাভাষা তার চারিত্রগতভাবেই তা ধারণ করেছে দেশের লোকসংস্কৃতির মাধ্যমে। হাজার হাজার বছরের লোকজীবনাচারের ভেতর দিয়ে যে কল্পনার ফল্গু উৎসারিত হয়েছে, তা অনেক শতাব্দী পেরিয়ে আজকের জীবনের পরিপ্রেক্ষিতে অবতরণ করেছে।
ড. মুহাম্মদ আজম ও কবি মজিদ মাহমুদ– এ দুজনই পশ্চিমি ধ্যান-ধারনার আলোকে উত্তর আধুনিকতার আলোতে নজরুলকে বিচার করে প্রমাণ করেছেন যে বিনির্মাণ ও ডিকলোনাইজেশনের আকর হিসেবে নজরুল নিজেকে প্রস্তুত করেছেন আকৈশোর থেকে সারাজীবন পর্যন্ত। ১০২ বছর আগে ‘বিদ্রোহী’ যখন লিখিত হয়, তখনও ইউরোপে এ-নিয়ে কোনো ধারনারই জন্ম হয়নি। আমাদের সাংস্কৃতিক চেতনার আলোক যে কতো গভীরে প্রোথিত, নজরুলের এই উপনিবেশ বিরোধী কবিতাই তার বড় প্রমাণ।
নিউ এজ সম্পাদক, যিনি ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র, তিনি বিপুলভাবে ইউরোপিয়ান চেতনার স্কুলিং নিয়ে বলেন, তারা আরো গভীরভাবে এ নিয়ে চিন্তা করেছেন। কিন্তু আমাদের চেতনার আলোক ভিন্ন। আমাদের লোকমিথ ও মিথিক্যাল পরিপ্রেক্ষিত, জীবনাকাঙ্খাকে বর্ণময় করেছে ঔনিবেশিক সংস্কৃতির আভিজাত্যকে ছিঁড়ে-খুঁড়ে নতুন করে নিজেদের স্বাধীন ও সার্বভৌম চিন্তার দুয়ার উন্মুক্ত করে।
কবি জাহাঙ্গীর ফিরোজ সভাপতির বক্তৃতায় সেমিনারের বক্তাদের বক্তব্য সামআপ না করে তিনি বিষয়ের ভেতরে ঢুকে পড়েন। ফলে তার বক্তৃতায় নতুন ভাষ্য উঠে আসে।
উপস্থাপক কবি জাকির আবু জাফর উপস্থাপনার সময় নজরুলের আবেগঘন কবিতাংশ পাঠের ভেতর দিয়ে শ্রোতাদের অভিনিবেশকে উসকে দেন, যাতে নজরুলের চেতনার স্পর্শ তারা পান। সব মিলিয়ে গত শুক্রবার ১১ অক্টোবর আমাদের কেটেছে একটি সুন্দর বিকেল, যা মনের খোরাক যুগিয়েছে।