spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদসাম্প্রতিকবাংলাদেশে ফ্যাসিবাদ

লিখেছেন : মুসতাইন জহির

বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদ

মুসতাইন জহির 

শেখ মুজিবের সাথে তার বানানো বাকশালের পতন হয়েছিল। কিন্তু শেষ হয়ে যায় নাই। শক্তিসঞ্চয় করে হাসিনার হাত ধরে দানবীয় ফ্যাসিস্ট রূপে দ্বিতীয়বার ফিরে এসেছে।

ক্ষমতাচ্যুত হলে, কিংবা ফ্যাসিকুলশিরোমনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলে আপসেআপ ফ্যাসিবাদের বিলোপ ঘটে না।

পতনের পরে জার্মানিতে ফ্যাসিবাদ রাষ্ট্রক্ষমতায় ফিরে আসে নাই, ইতালিতে ফিরে আসে নাই, জাপানেও ফিরে আসে নাই। কারণ তারা ফ্যাসিবাদী রাজনৈতিক শক্তি ও সংগঠন নিষিদ্ধ করে দিয়েছিল—যেসমস্ত রাজনৈতিক প্রতীক, বয়ান ও উপলক্ষ্য ফ্যাসিবাদী শক্তিকে উৎসাহিত করে, আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে জীবনী শক্তি সরবরাহ করে তার সবকিছুই পরিত্যাজ্য। জনপরিসরে পরিবেশনা এবং মাহাত্ম প্রচার আইন করে বন্ধ করে দেয়া হয়। 

বাংলাদেশে মুজিবর বাকশাল নিয়ে চিরনিদ্রায় শায়িত হওয়ার পর ইউরোপের অভিজ্ঞতায় গৃহীত পথ অনুসরণ করে আমরা বাকশালী ফ্যাসিবাদের পুনরুত্থানের সম্ভাবনা রহিত করতে সচেষ্ট হই নাই। অন্তত চারটি বিষয়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দরকার ছিল: 

১। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ধ্বংস করে একদলীয় বাকশাল কায়েমের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের শাস্তি এবং আইনত রাজনীতিতে অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করা।

২। গণতদন্ত কমিশন করে ৩০ হাজারের অধিক বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মী হত্যার জন্য দায়ীদের চিহ্নিত করে তালিকা প্রকাশ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার।

৩। লুটপাট, ৭৪-এ দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি ও দেশের অর্থনীতিকে দেউলিয়া করে দেবার জন্য দায়ী চোর, ডাকাত ও আওয়ামী দুর্বৃত্তদের সহযোগী ছোট-বড় গাজী গোলাম দস্তগীরদের বিচার।

৪। দেশের সার্বভৌমত্ব ক্ষুন্নকারী চুক্তি ও কর্মকান্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশেকে ইন্ডিয়ার পদানত করায় এই দলটিকে গণশত্রু ঘোষণা করা।

মুজিবের বাকশালী প্রেতাত্মায় ভর করে হাসিনা আবারো সেই একই ধ্বংসলীলার পুনরাবৃত্তি ঘটিয়েছে। অসুস্থ জিঘাংসার আগুনে পুড়িয়ে বাংলাদেশের মানুষকে শাস্তি দিয়েছে। হাসিনার এই বিকৃত আনন্দের কথা অনেকেরই জানা। বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে ধ্বংস করে, গুম-খুন-হত্যার বদ্ধভূমি বানিয়ে, অর্থনীতিকে দেউলিয়া করে দিয়ে দেশকে ইন্ডিয়ার করদরাজ্য বানিয়ে এই দানব দিল্লিতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে।

আওয়ামী জাহিলিয়াতের সাথে সংশ্লিষ্ট কোন রাজনৈতিক কর্মী, সাংস্কৃতিক কর্মী, বুদ্ধিজীবী, তাত্ত্বিক কাউকেই সমাজে কখনোই কৃতকর্মের জন্য জবাবদিহিতার আওতায় আনা হয় নাই। জনপরিসরে তাদের এই কলঙ্কের ইতিহাস, গণবিরোধী ন্যাক্কারজনক ভূমিকা তুলে ধরা হয় নাই। তারা বিনা প্রশ্নে, বিনা অনুশোচনায় সদর্পে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। আর সবসময় তাদের হাতিয়ার ছিল ৭১ এর জনযুদ্ধকে মুজিব বন্দনায় পর্যবসিত করা। 

মুজিববাদী প্রকল্পের ব্যাধি হলো বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদ। আমাদের ইতিহাসের দীর্ঘ লড়াই, মুক্তির সংগ্রামে রক্ত দিয়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে একজন ব্যক্তি ও দলের একচ্ছত্র মালিকানার মৌরসিপাট্টা বানিয়ে তাকে প্রশ্নহীন আনুগত্যের আসনে বসিয়ে পূঁজার প্রতীকে পরিণত করা। বিগত ১৫ বছর প্রশ্নহীন আনুগত্যের এই পৌত্তলিক আচারে রাষ্ট্রকে ডুবিয়ে রাখা হয়েছিল। 

এই পতিত ফ্যাসিবাদ, দূষিত আইকন ও তাদের কলুষিত বয়ানকে প্রতিহত করতে না পারলে জুলাই অভ্যুত্থানের অর্জিত দ্বিতীয় স্বাধীনতার যে আকাঙ্ক্ষা মূর্ত হয়ে উঠেছে তাকে আশ্রয় করে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের দিকে বাংলাদেশ এগুতে পারবে না। 

বাংলাদেশের জাতীয় ঐক্য, সংহতি ও স্বাধীনতা রক্ষার মূলমন্ত্র এই পাটাতনে নিহিত।

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ

কাজী জহিরুল ইসলাম on বাংলা একাডেমির মুখোস উন্মোচন
কাজী জহিরুল ইসলাম on বাংলা একাডেমি এবং আমার গ্লানি
কাজী জহিরুল ইসলাম on ‘প্রথম আলো’র বিকল্প