ফয়জুল লতিফ চৌধুরী
……..
এটা আত্মপ্রতারণার শামিল হবে যদি অস্বীকার করি এ মুহূর্তে দেশ একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। এরকম সময়ে অনিশ্চয়তাই নিত্যসঙ্গী হয়ে দাঁড়ায়। পরিবর্তন ঘটে চলেছে কিন্তু কারও জানা নেই কাল কী ঘটতে পারে।
১৯৭১ সালের ১৬ মার্চ যখন অখণ্ড পাকিস্তানের সম্ভাব্য রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান ক্ষমতা হস্তান্তরের আশায় ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে আড়াই ঘণ্টা আলোচনা করছিলেন, তখন কি তাঁর জানা ছিল মাত্র ১০ দিনের মাথায় ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পূর্ব পাকিস্তানে বাঙ্গালী নিধনযজ্ঞ শুরু করবে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী? রাও ফরমান আলীর ফোন কলের আশায় ২৫শে মার্চ সারাদিন কাটিয়ে ড. কামাল হোসেন যখন সন্ধ্যার পর ৩২ নম্বরে গেলেন, তখন কি জানতেন পাকিস্তানী সেনারা অভিযানের প্রস্তুতি সম্পন্ন করে চূড়ান্ত বাঁশীর জন্য অপেক্ষা করছে? ৮ম বেঙ্গল রেজিমেন্টের কর্নেল জানজুয়ার স্ত্রী যখন মেজর জিয়াকে বললেন যে তাকে নৌবাহিনীর সেনাদের সঙ্গে তখনই যেতে হবে, কে জানতো কিছুক্ষণ পর দেওয়ানহাট ব্রিজ থেকে তিনি ফিরে এসে ঘোষণা করবেন we revolt এবং অবিলম্বে নিজের কম্যাণ্ডিং অফিসারকে বন্দী করবেন এবং সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের সূত্রপাত ঘটাবেন?
কে জানতো ১৯৭২ এর ১০ জানুয়ারী পাকিস্তানের কারাগার থেকে ফিরে শেখ মুজিবের প্রথম কাজ হবে তাজউদ্দীন আহমেদকে সরিয়ে প্রধানমন্ত্রীর পদ দখল করা? কে জানতো যিনি একটি স্বাধীন সরকার প্রতিষ্ঠা করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম পরিচালনা করেছিলেন সেই তাজউদ্দীন আহমদকে মন্ত্রীসভা থেকে বরখাস্ত করা হতে ১৯৭৪ এর ২৬ শে অক্টোবর?
কে জানতো ১৯৭৫ সালের ২৫শে জানুয়ারী সংবিধান সংশোধন করে বহুদলীয় দলীয় তথা বিরোধী দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হবে এবং একে বলা হবে ‘দ্বিতীয় বিপ্লব’? কে জানতো ১৬ই জুন গুটিকয়েক সরকারী পত্রিকা বাদে সকল পত্র-পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিল করা হবে?
কে জানতো ১৯৭৫ সালের ৩রা নভেম্বর ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ সামরিক অভ্যূত্থনের নেতৃত্ব দেবেন এবং সেনাবাহিনী প্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে বন্দী করবেন? কে জানতো মাত্র চার দিন পর ৭ই নভেম্বর সিপাহী-জনতার বিপ্লব সংঘটিত হবে?
ইতিহাস গতকাল শুরু হয়নি এবং আজই শেষ হয়ে যাচ্ছে না।
৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার বিপ্লবে প্রধানমন্ত্রীকে দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছে। ৮ই আগস্ট তারিখে অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। হাজার হাজার শহীদ ও আহতদের রক্তের দাগ শুকায়নি কিন্তু ইতোমধ্যে স্বৈরাচারী সরকারের পুনর্বাসনের জন্য অপতৎপরতা শুরু হয়েছে।
সাধারণ মানুষ বিপন্ন বোধ করছে। মানুষ দীর্ঘ ১৫ বছর পর মুক্তির স্বাদ আস্বাদন করেছে। এখন মানুষ স্বস্তি চায়। কিন্তু ষড়যন্ত্রের নান্দীরোল ধ্বনিত হচ্ছে উচ্চকিত-অনুচ্চকিত স্বরে।
আর কত অস্থিতিশীলতা? আর কত হুতাশন ও জীবননাশ? আর কত ক্রন্দন ও আর্তনাদ?
অক্টোবর ২৩, ২০২৪
সংক্ষিপ্ত কিন্তু সময়োপযোগী বিশ্লেষণ। সবাইকে অনুধাবন করতে হবে এই ক্রান্তিকাল।