Site icon বাংলা রিভিউ

লিটিল ম্যাগাজিনের শারদসম্ভার

তৈমুর খান 

—————————————————————-

১ 

শতানীক

🍁

নবম বর্ষ দ্বিতীয় সংখ্যা ‘শতানীক’(২০২৪) শারদীয় সংখ্যা হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে। প্রচ্ছদে তিনটি পালতোলা নৌকা প্রথমেই আকৃষ্ট করল। একটা প্রতিষ্ঠিত পত্রিকা এবং উন্নত সম্পাদনা বলতে যা বোঝায় এই পত্রিকায় কোথাও তার খামতি নেই। অসাধারণ কয়েকটি গল্প যা মনে দাগ কেটে যায় লিখেছেন গৌর বৈরাগী, কানুন দেব ভট্টাচার্য, প্রশান্ত ঘোষ, দেবাশিস গঙ্গোপাধ্যায়, প্রসূন স্বর্ণকার, বিমল গঙ্গোপাধ্যায়, অদিতি ঘোষ দস্তিদার, সুবীর মজুমদার, শ্রীকান্ত অধিকারী, তনুজা চক্রবর্তী, কাকলি দেবনাথ, অমিতকুমার গোস্বামী,অর্চনা ভট্টাচার্য, অরুণ চক্রবর্তী প্রমুখ গল্পকার। এত ভালো ছোটগল্প একটা পত্রিকায় সর্বদা পাওয়া যায় না। প্রবন্ধ বিভাগে জীবনানন্দ দাশকে নিয়ে বিশেষ আলোকপাত আছে। ভিন্নধারার চিন্তাধারায় উল্লিখিত কবির পর্যালোচনাও মনে রাখার মতো। বিশেষ করে ‘জীবনানন্দে বুদ্ধ চেতনা’ আমার কাছে চমকপ্রদ। প্রাবন্ধিক হিসেবে উল্লেখ্য শ্যামল ভট্টাচার্য, বিশ্বজিৎ পাণ্ডা, উদয়শঙ্কর চট্টোপাধ্যায়, চিরপ্রশান্ত বাগচী,দেবাশিসশুভ্র ঘোষ প্রমুখ। নলিনী বেরার দীর্ঘ সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মানস সরকার। অনেক ব্রাত্য মানুষের কথা এবং জীবনচর্চার কাহিনি উঠে এসেছে। আর জি কর কাণ্ডের প্রসঙ্গ নিয়েই এবারের সম্পাদকীয় খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। শতাধিক কবিতা এবং গল্পগুলির স্কেচ একটা বাড়তি আকর্ষণ। যোগাযোগ:সম্পাদক নিত্যরঞ্জন দেবনাথ, ১নং ফার্মসাইড রোড, চুঁচুড়া আর.এস., হুগলি-৭১২১০২, মূল্য ৩০০ টাকা।

আর্ষ

 🍁

৪৬ বর্ষের ১৪৯ তম সংখ্যা ‘আর্ষ’(১৪৩১) সাহিত্যের বিশাল সম্ভারের পূর্ণতা নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে। এরকম কলেবরের এরকম আয়োজনের পত্রিকা সাধারণত চোখে পড়ে না। সূচিপত্রের পরিপাটি সন্নিবেশ এবং নারী শক্তির হাতে ত্রিশূল এর প্রচ্ছদ ও সমূহ লেখার অলংকরণ অনেক ক্ষেত্রেই বাণিজ্যিক পত্রিকাকেও ছাড়িয়ে গেছে। বৈচিত্র্যময় লেখার একটি সংগ্রহশালা বলেই আমার মনে হয়েছে। কবিতা,প্রবাসের কবিতা,ইংরেজি কবিতা, গল্প,প্রবাসের গল্প, প্রবন্ধ, গ্রন্থ পর্যালোচনা ইত্যাদি এত বিষয় যা ভাবাই যায় না। নীরেন্দ্রনাথ, রবীন্দ্রনাথ, ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহল, প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়, দেশভাগ, সুভাষ-এমিলি প্রসঙ্গ, পিকাসোর সঙ্গিনীরা, লোকজ ঐতিহ্য ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণামূলক প্রবন্ধ রয়েছে। তেমনি লোকসাহিত্য ক্ষেত্রসমীক্ষা, ইতিহাসও উপেক্ষিত হয়নি। নিশীথ ষড়ংগীর কাব্যালোচনাগুলিতে সত্তার গহনে তীব্র আলো পেয়েছে। কবিদের নতুন করে চিনতে পারবেন পাঠক। অজস্র ভালোলাগা কবিতায় মন ঘরবাড়ি বানাতে চায়। থাকতে চায় অনেকদিন। যোগাযোগ: সম্পাদক মধুসূদন দরিপা, ২৮৬/৩/২, স্কুলডাঙা, বাঁকুড়া-৭২২১০১, মূল্য ২৫০ টাকা।

প্রতিকথা

   🍁

৩০ বছর ধরে প্রকাশিত হয়ে আসা ‘প্রতিকথা’(আশ্বিন ১৪৩১)-র এই সংখ্যাটি একটি উল্লেখযোগ্য সংকলন। কবি বীতশোক ভট্টাচার্য ও অশোক মহান্তীর আবাস ভূমির পবিত্রতা থেকেই এই পত্রিকার অক্সিজেন পাওয়া দীর্ঘ উজ্জীবন আমরা অনুভব করতে পারি। সম্পাদক নিষ্ঠা ও শ্রমের দ্বারাই পত্রিকাকে যেভাবে প্রকাশ করে চলেছেন তার তারিফ করার ভাষা নেই। অনেক কবি যেমন এই সংখ্যায় লিখেছেন, তেমনি অনেক কবিকে বিস্মৃতির অতল থেকে তুলে আনা হয়েছে। দারুণ ভাবে আকৃষ্ট হলাম গৌরশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কবিতার অনন্ত ঐশ্বর্য’ পাঠ করে। স্মরণ করা হয়েছে সংগীত সাধক রাজেশ্বর ভট্টাচার্য, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, কমল চক্রবর্তী,মানসকুমার চিনি, কবি মৃণালকান্তি দত্তকে। আছে অজস্র কবিতা, অনুবাদ কবিতা, ভারত পথিক রামমোহন রায় এবং বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে গদ্য। সংখ্যাটি অবশ্যই সংগ্রহ করার মতো। যোগাযোগ: সম্পাদক বিরূপাক্ষ পণ্ডা, সরাই বাজার, দাঁতন, পশ্চিম মেদিনীপুর-৭২১৪২৬, মূল্য ৩০০ টাকা।

বৈদেহী

 🍁

শারদীয় সংখ্যা ‘বৈদেহী’(১৪৩১) প্রথম বর্ষ প্রথম সংখ্যা হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে। এই দিক দিয়ে পত্রিকাটির শৈশবকাল মনে হলেও বিষয়ের দিক দিয়ে পত্রিকাটি বহু সাধনার সিদ্ধিতে এসে পৌঁছেছে। ‘বৈদেহী’ বৈদিক মন্ত্রের ‘আত্মনো মোক্ষার্থং জগদ্ধিতায় চ’ এই মহামন্ত্র ধারণ করেই আলোকবর্তিকার পক্ষতাড়নায় নিজেকে উন্মিলিত করেছে। তরুণ মুখোপাধ্যায়, সুকুমার রুজ, অরুণ বসু, তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়, নির্মল বিশ্বাস, অলিপা বসু, পৃথা বন্দ্যোপাধ্যায়,অর্ণব মিত্র, ডরোথী দাশ বিশ্বাস বহু প্রাবন্ধিক-ই মননশীল গদ্য উপহার দিয়েছেন। ছোটগল্প লিখেছেন রবীন বসু, পার্থ রায়, সুবিনয় হালদার, সুমিতা চৌধুরী, অর্পিতা ঘোষ পালিত, সঙ্ঘমিত্রা রায়। কবিতায় আছেন শ্যামলকান্তি দাশ, সৌমিত বসু, অমিত কাশ্যপ,কালিদাস ভদ্র, সুনীল মাজি, হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, শুভ্রাশ্রী মাইতি, শুভঙ্কর দাস প্রমুখ।প্রায় অর্ধশতাধিক কবিতা রয়েছে। ঝরঝরে সুন্দর ছাপানো পত্রিকাটি বেশ আকর্ষণীয়। যোগাযোগ: সম্পাদক অলিপা বসু, তাঁতকল রোড, নোয়াপাড়া, মহেশতলা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা-৭০০১৪১, মূল্য ২৫০ টাকা।

সিন্ধু সাহিত্য পত্রিকা

   🍁

উৎসব সংখ্যা ‘সিন্ধু সাহিত্য পত্রিকা’(১৪৩১) ভারী কলেবর নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক যুদ্ধ ও মানবিক সঙ্কটের প্রসঙ্গ টেনেই আমাদের রাজ্যেরও অপরাধ জগতের উল্লেখ আছে সম্পাদকীয়তে। কবিতা বিভাগে কবিতা আছে ১২১ জন কবির। প্রবন্ধ আছে ৮ জনের।গল্প আছে ১৮ জনের। এছাড়া উপন্যাস লিখেছেন চন্দ্রানী মজুমদার, নাটক লিখেছেন জ্যোতিব্রত চক্রবর্তী ও যাদবচন্দ্র রায়। ভ্রমণ আছে অশোক কর্মকার, সুমন বসাক ও বিপ্লব বন্দ্যোপাধ্যায়ের। গীতিমালা লিখেছেন অসিত মহন্ত, সুরঞ্জিত গাইন,বিপ্লব সাহা। রান্না বিষয়ে অরুণাভ দত্ত। কৃষ্ণা বসু, কমল দে শিকদার,আরণ্যক বসু, অমিয়কুমার চৌধুরী, শিবেশ মুখোপাধ্যায়, প্রাণজি বসাক, মিঠুন মণ্ডল, পলাশ গঙ্গোপাধ্যায়, শান্তনু ঘোষ, বাপ্পাদিত্য দে, গোবিন্দ মোদক, তীর্থঙ্কর সুমিত, পিঙ্কি ঘোষ, অর্পিতা ঘোষ পালিত, সৌমেন দত্ত, রাহুল চন্দ, সৌমেন্দ্র দত্ত ভৌমিক,মধুমিতা বসাক, মোনামী চৌধুরী, গোবিন্দ তালুকদার, বিথীকা মণ্ডল, শীলা চক্রবর্তী, নিমাই জানা, অসীমকুমার যোদ্দার,অমিত কাশ্যপ,অরুন্ধতী মাহাত,কবীর হোসেন, বিলকিশ বেগম, অনিতা কর,সৌরভ ভট্টাচার্য প্রমুখ বহু কবির কবিতা ভালো লাগল।গল্পগুলিও আমাদের জীবনের চারিপাশ থেকে উঠে আসা প্রাণের আকুতি। সুন্দর ছাপানো ঝকঝকে একটা পত্রিকা। যোগাযোগ:সম্পাদক গজেন মণ্ডল,আনন্দ প্রকাশন, সি-৮,কলেজ স্ট্রিট মার্কেট(দ্বিতল), কলকাতা-৭০০০০৭, মূল্য ৩০০ টাকা।

অন্যমন

  🍁

২৬ বছর ধরে প্রকাশিত হয়ে আসা ২৮ তম সংখ্যা ‘অন্যমন’(১৪৩১) শারদীয় সংখ্যা হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে। প্রচ্ছদে আছেন সাতজন উল্লেখযোগ্য সাহিত্যিক ও কবি। এই সাতজনকে নিয়েই আছে উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধ। জীবনানন্দের কবিতায় সমকালীন জীবনচেতনা নিয়ে লিখেছেন রতনকুমার নাথ। ঔপন্যাসিক জীবনানন্দকে নিয়ে লিখেছেন মাসউদ আহমেদ। সমুদ্র ভাবনায় নজরুলের কবিতা বিষয়ে তথ্যপূর্ণ প্রবন্ধ লিখেছেন গৌতম মুখোপাধ্যায়। কবি ও যোগী দুই সত্তার নজরুলকে চিনিয়েছেন নিতাই নাগ। শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইতিহাসাশ্রিত ছোটগল্প নিয়ে বিশ্লেষণ করেছেন অরিজিৎ পাল। শতবর্ষে সমরেশ বসু কতটা আমাদের কাছে উজ্জ্বল তার অনুসন্ধান করেছেন সাগরময় অধিকারী। চলচ্চিত্র নির্মাণের কারিগর তপন সিংহের জন্মশতবর্ষ নিয়ে লিখেছেন ড.দেবযানী ভৌমিক চক্রবর্তী। রবীন্দ্রসুরসাধিকা কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে আলোকপাত করেছেন ডা. সতীনাথ ভট্টাচার্য। কারাগারে কেমন ছিলেন নজরুল তারই অনুসন্ধান করেছেন কলি মোল্লা। নজরুলের নদীয়া জেলা প্রসঙ্গ স্মরণ করেছেন রাহুল দাস। সমরেশ বসুর নির্বাচিত ছোটগল্প নিয়ে লিখেছেন অভি দাস। রাজ কাপুর, নারায়ণ সান্যাল, বনানী চৌধুরী প্রমুখ বহু ব্যক্তিত্বেরই সৃষ্টিকর্ম নিয়ে আলো ফেলেছেন অন্যান্য লেখকেরা। গল্প, অণুগল্প, গোয়েন্দা গল্প, ভ্রমণ এবং বেশ কিছু ভালো লাগা কবিতা নিয়ে সংখ্যাটির পরিপূর্ণতা। লিটিল ম্যাগাজিন হলেও এটি একটি ভীষণ প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ পত্রিকা তা বলাই বাহুল্য। যোগাযোগ: সম্পাদক অন্যমন, ড.নিবেদিতা চক্রবর্তী দত্ত, ফুলিয়া নতুন বুঁইচা, বুঁইচা, নদীয়া-৭৪১৪০২, মূল্য ৩০ টাকা। 

সম্বিৎ 

সপ্তম বর্ষের ১৭তম সংখ্যা ‘সম্বিৎ’(১৪৩১) শারদ সংখ্যা রূপে প্রকাশিত হয়েছে। প্রথমেই মনকাড়ে পত্রিকাটির প্রচ্ছদ।সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের একটি কুটির যা দুর্গা মণ্ডপেরই সংস্করণ এবং তার উঠোনে ছোট ছেলেমেয়েদের খেলাধুলা ও কাশফুলের শিষ। গ্রামবাংলার প্রতীকী রূপ। যথেষ্ট মার্জিন রেখে প্রতি পৃষ্ঠায় একটি করে কবিতা ছাপা হয়েছে মোট ৫২ টি কবিতা। সব কবিতাগুলোই সুনির্বাচিত। একটি বাঁধাই করা সংকলন বলেই মনে হবে।এই সময়ের উল্লেখযোগ্য বাংলা কবিতার ট্রেন্ড কোন দিকে তা বোঝা যায়। নবীন-প্রবীণ প্রায় অনেকেই রয়েছেন। পত্রিকার শেষ কবিতায় সুপ্রভাত সামন্ত লিখেছেন “ঘড়ির কাঁটায় সময় পেরোয়,/সময়ের হিসেব আপেক্ষিক।” সময়ের এই আপেক্ষিক হিসেব থেকেই আমরা মহাসময়কে স্পর্শ করতে পারি। পত্রিকাটি সকলেরই ভালো লাগবে। যোগাযোগ: সম্পাদক রঙ্গলাল গুড়িয়া, সুতাহাটা, পূর্ব মেদিনীপুর-৭২১৬৩৫, মূল্য ৭০ টাকা।

সৃজনকথা

 🍁

২৯ বছর ধরে প্রকাশিত হয়ে আসা বর্তমান ‘সৃজনকথা’(১৪৩১) শারদ সংখ্যা প্রকাশ করেছে। এটিও একটি রুচিপূর্ণ উন্নত পত্রিকা। সম্পাদকীয় হিসেবে একটি কবিতা এই পত্রিকার প্রথমেই রয়েছে। এর দুটি লাইন এমনি “ফিসফাস এ শহরে/আমি শুধু চুপ করে থাকি।” তখন বোঝা যায় সম্পাদক ও সাহিত্যসাধকের পরিসর ও পরিমাপ কতখানি। অর্ধশতাধিক কবিতা নিয়ে সংখ্যাটি প্রকাশিত হয়েছে। বীরভূমের স্বনামধন্য রসিকপ্রবর অতনু বর্মনও লিখেছেন কবিতা। তাঁর “একদিন ঠিক চিঠি পাবো” এই আকাঙ্ক্ষিত নিবেদন আমাদের কাছেও সম্মোহনের বিষয়। কবিতায় আছেন অনিমেষ মণ্ডল, অবিন রায়চৌধুরী, অমিত চক্রবর্তী, অমর দে, তপন গোস্বামী, গৌরী সেনগুপ্ত, কুন্তল রুদ্র, কুন্তল দাস, এস মনিরউদ্দিন, আশিস চক্রবর্তী, আদিত্য মুখোপাধ্যায়, অংশুমান মিশ্র, অসীম শীল, অশোক অধিকারী,সুপ্রভাত মুখোপাধ্যায়, সুরঞ্জন রায়,সুব্রত রায় চৌধুরী, সুবোধ ঘোষ,সুবীর ঘোষ,রাজীব পাল, মলয়শঙ্কর মণ্ডল প্রমুখ আরও বহু কবি। গদ্য লিখেছেন স্বপন নন্দী,সমরেশ মণ্ডল। পুস্তক পাঠ ও আলোচনায় অর্পিতা মুখার্জি,অনামিকা পাল ও রামানুজ মুখোপাধ্যায় রয়েছেন।নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ও ভাস্কর চক্রবর্তীকে নিয়ে গদ্যগুলি খুবই প্রাসঙ্গিক ও উল্লেখযোগ্য। যোগাযোগ: সম্পাদক তপন গোস্বামী, রবীন্দ্রপল্লি, সিউড়ি, বীরভূম-৭৩১১০১,মূল্য ৮০ টাকা।

সাগ্নিক

🍁

৩৯ বছর ধরে প্রকাশিত হয়ে আসা এ বছরের চতুর্থ সংখ্যা ‘সাগ্নিক’(২০২৪) শারদীয়া সংখ্যা হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে। এই সংখ্যার দুটি গদ্য ভীষণভাবে আকর্ষণ করল। প্রথমটি সদ্য প্রয়াত ভিন্নধারার কবি ও সাহিত্যিক কমল চক্রবর্তীকে নিয়ে সমরেশ মণ্ডলের গদ্য। কমল চক্রবর্তী যে ঘরানার সাহিত্যিক অনেকের কাছেই অজানা। এই গদ্যে তাঁর অজানা বহু তথ্য রয়েছে। কৃত্তিবাস, কৌরব থেকে কবিরুল, সুনীল, বারীন ঘোষাল এবং লেখক ও সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে নানা মুহূর্তের বহু স্মৃতিচারণা ধরা পড়েছে। গায়ক কমলকে এবং কবি ও লেখক কমলকে খুব ঘনিষ্ঠভাবে চিনিয়ে দিয়েছেন। দ্বিতীয় প্রবন্ধটি নীলোৎপল ভট্টাচার্যের লেখা সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে। ৭০ দশকের এই কবিও তেমনভাবে প্রচারের আলোয় আসতে পারেননি, কিন্তু তাঁর কবিতার আবেদন পাঠক কোনোদিন ভুলতে পারবে না। তাঁরই পরিচয় তুলে ধরেছেন প্রাবন্ধিক। তিনটি অণুগল্প লিখেছেন ফজলুল হক, কুমুদকান্তি রায়, দয়াময় দে। তিনটিতেই মন ছুঁয়ে যায়। কবিতায় সাগ্নিক দেব লিখেছেন “আরও কত বৃষ্টি হলে জং ধরা শব্দের পূর্ণ স্নান হবে” এক নতুন উচ্চারণ। বেশ কিছু কবিতাই পাঠককে ভালো লাগবে। আছেন গোলাম রসুল, সৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়,গৌতম হাজরা, সুদীপ্ত মাজি, দীপশিখা পোদ্দার, ঋজুরেখ চক্রবর্তী, অংশুমান কর, চিরপ্রশান্ত বাগচী প্রমুখ কবিগণ। যোগাযোগ: সম্পাদক সাগ্নিক দেব, খান্দরা, উখড়া, পশ্চিম বর্ধমান-৭১৩৩৬৩, মূল্য ৯০ টাকা।

১০

উত্তরযুগ

🍁

১৯৮৯ সাল থেকে অনিয়মিতভাবেই প্রকাশিত হয়ে আসছে ‘উত্তরযুগ’ পত্রিকাটি। বর্তমান সংখ্যাটিই শারদীয় সংখ্যা।বড় সাইজের পত্রিকা, কবিতাগুলিতে অলংকরণ করা হয়েছে। প্রথম দর্শনেই পাঠক মুগ্ধ হবেন। তপন গোস্বামী এক আত্মগত স্মৃতিলেখায় অতীতচারণা করেছেন যেখানে বিশেষ করে মায়ের উপস্থিতিটাই বড় হয়ে উঠেছে। অবশ্য লেখক বাবাকেও উপেক্ষা করেননি। সেইসঙ্গে এসেছেন ঠাকুমা-পিসিমা। পুস্তক আলোচনা করেছেন ফাল্গুনী ভট্টাচার্য।অসীম চট্টরাজ, সুব্রত নাগ ও শ্রীকান্ত অধিকারী লিখেছেন ছোটগল্প । খলিল জিব্রান এর কবিতা অনুবাদ করেছেন অমিত চক্রবর্তী। কবিতায় রেইনি চৌধুরী লিখেছেন “হে আকাশ অন্ধ করে যাও/এই উত্তাপে/মেঘে মেঘে জাগাও সংগীত/বৃষ্টি নামুক এই ফাগুনে।” আমরা সেই বৃষ্টি নামারই অপেক্ষা করে চলেছি। চন্দন চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন “পথ শেষ মানে কিন্তু অবসর নয়” তখন বুঝতে পারি জীবন কখনো থেমে থাকে না। প্রভাত সাহা লিখেছেন “মহাকাল পদতলে রেখে/শবকে শিব করেছে যে/ সে-ই কালী:/ অনন্ত গর্ভময় চির মাতৃত্ব।” তখন ব্রহ্মজীবনেরই প্রজ্ঞা উঠে আসে। এরকমই আশ্চর্য সব কবিতা। যোগাযোগ: সম্পাদক দেবাশিস দাশ, নিউ ডাঙালপাড়া, সিউড়ি, বীরভূম-৭৩১১০১, মূল্য ১৫০ টাকা।

Exit mobile version