…………
চৈত্রে রচিত হিংসার কবিতা
………….
মারা যায়নি বেড়ালটা।শুধু তার থাবা বেয়ে চুইয়ে আসা রক্তস্রোত।চোখের মনির ভেতর সে ধ’রে রেখেছে আততায়ীর ছবি।এই ছবি তার সম্পদ।এই ছবি সে দিয়ে যাবে তার প্রজন্মকে।চারিদিকে লাল নীল তারা।সেই তারার ভেতর সে খুঁজে বেড়ায় তার বাপ ঠাকুরদাকে।খুঁজে বেড়ায় তাদের চোখের ভেতর আঁকা আততায়ীকে।
মা বেড়ালের চোখ নেই,মনি নেই,কেঁদে কেঁদে অন্ধ।কে যেন বলেছে আততায়ীর গরম কুমকুম চোখে লাগালে চোখ ফিরে পাবে।ছোটবেলার মতো আবার বিকালবেলায় দেখতে পাবে সূর্যের জলে ডুবে যাওয়া।
থাবা চাটছে বেড়াল।মুখে এসে লাগছে নোনতা।মানুষ বেড়ালরা সারাজীবন ধ’রে চাকুতে শান দেয়।চকচকে করে।
………
শুশ্রূষা
………
একটি অন্ধকার যে দ্রুততায় নেমে আসছে মাটির ওপর
আমি তার চেয়ে অনেক কম দ্রুততায়
ঝাঁপ দিয়েছিলাম তোমার আলোয়।
শুধু যে যে অংশ পুড়ে গিয়েছিলো
আমি সেগুলো ব্যাগে পুরে
তোমাদের পুকুরে ফেলে নিশ্চিন্তে
হাত ধুয়ে এসেছি।
পাশের ধানক্ষেতের গোড়ায়
জমে থাকা জলে
চাঁদের আলোয় স্পষ্ট দেখি
পড়ে আছে তার অস্পষ্ট ধ্বংসাবশেষ
এই অবেলায় সেটুকু বুকপকেটে পুরে বাড়ি ফিরছি একলা,নিঃশব্দে।
তুমি একবার হেঁটে এসে দেখো
কানের দুপাশে কোনো দাগ আছে কিনা, বুকের বাঁদিকে কোনো ক্ষতচিহ্ন আঁকা আছে কি না।কোনো ক্ষয়।
একটি জীবন যে দ্রুততায়
নেমে আসছে মাটির ওপর
তুমি একবার হাত পেতে সামনে দাঁড়াও।
…………..
যতবার আলো
…………..
ভরজোৎস্না।মাথার ওপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে মেঘ।কাটা পা নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে নেমে আসছে চাঁদ।পায়ে বিঁধে রয়েছে কাঁচের টুকরো।সন্ধ্যাগুলো মেঘের ওপর থেকে সারবেঁধে ছিপ ফেলে রয়েছে।টপাটপ বড়শিতে আটকে যাচ্ছে মাঝি,নৌকো আর মেয়ের বিয়ের সানাই।আটকে যাচ্ছে কলম,তুলি আর হারমোনিয়াম।পূবদিক লাল।ধীরে ধীরে জমাট বেঁধে আসছে রক্ত।ঢেউ দিয়ে উঠে আসছে মন।মনের ছেলেপুলে নেই।একা একা বাঁচে।অহেতুক।
…………….
ঘোর জন্মান্তর
…………….
মেঘলা আকাশ,
ঝাড়গুলো কেন নিবে এলো জানো?
দূরের ঘোড়ারা যে যার মতন পাল তুলে দিলো কঠিন আকাশে
মেয়ের পেটের যতো বাতিঘর ভেসে চলে যায়
নর্দমা দিয়ে
ঝিলের পাশের এই দুটো গাছে
থাকবো দুজনে মৃত্যুর পরে
একটা দুপুর রোদের ভেতর
গাছপছন্দ করেছি দুজনে
প্রয়োজনমতো উড়েও বেড়াবো এগাছে ওগাছে
সঙ্গমকালে আসবো দুজনে ঘাসের ওপর।
হুটোপুটি করে নখ ও আঁচড়ে
ঢেলে দেওয়া বিষ তোমার কোটরে,
“জ্বলে যাই আহা মরে যাই,ঢালো ঢালো এইবার”
তখনো থাকবে এসব কথারা।
জিভ দিয়ে চেটে সারাটা শরীর , থাকবে তখনো এসব সোহাগ।
এখন যতই করোনা আসুক,শ্বাসটান হোক,
টেনে নিয়ে যাক মৃত্যুর ঠোঁট,এখন যাবোনা ,
কিছুতে যাবোনা,
তোকে ছেড়ে আমি মৃত্যুর পরও শান্তি পাবো না।
যেতে হলে শোন ,যাবো একসাথে
এই সাফকথা লিখে নিস তুই যেটুকু বলেছি,
বাকি রয়ে গেলো যেইটুকু বলা।
……………
হারানো পথের ভয়
…………….
আকাশ ফুঁড়ে হয়ে গেছে অপরূপ বৃষ্টি
ধানখেতের ভেতর দিয়ে যে নক্ষত্রটি
পথ চিনিয়ে নিয়ে এলো
সেই কি আমার গতজন্মের ভাই ?
অথবা ডোরাকাটা মেয়েটির বালি ।
দাঁত দিয়ে আস্তে আস্তে চিনতে শিখলাম
ব্লাউজের ফিতে , হুকের গোলকধাঁধা ;
মৃত্যু তখনো দেখি দূরে , অপেক্ষায় ।
অবজ্ঞার দেশ , আর যেন এখানে না জন্মাই ।
…………
অসমাপ্ত চুম্বনটুকু
………….
তোমাকে ততটুকু দেখা হয়নি আমার
যতটুকু দেখলে কাউকে নিয়ে একটা গোটা কবিতা লেখা যায়।
অনেকটা অসমাপ্ত চুম্বনের মত
তোমাকে ঘিরে আকাঙ্খা আমার
ক্রমাগত বড়ো হতে থাকে
একদিন পদ্মাসেতুর মতো সে
জুড়ে দিয়ে যাবে আমাদের।
তোমার স্বপ্ন কি
কখনো আচ্ছন্ন করে হলদিয়ায় ধোঁয়া ?
আচম্বিতে রাস্তা পার হতে গিয়ে
কখনো কি আবিষ্কার করো তিনজন অচেনা যুবক?
মনে পড়ে একটি আশ্চর্য রাত
কেমন তর্কে ভেসে ছিলো
হলদি নদীতে ভাসা কাঠামোর মতো।
একটি অসমাপ্ত চুম্বন
হঠাৎ কেমন যেন কেঁদে উঠেছিলো
কবেকার চৈত্রের ষ্টেশনে।
বন্ধুত্ব জড়িয়ে তুমি বেঁচে থাকো বন্ধু আমার
তোমার আঙুল থেকে বের হোক
সোনার ফসল,
আমি কাঁটাতার পার হয়ে একদিন
একা তাকে রোদ্দুরে শোকাবো।
……………..
আমার লিখতে ইচ্ছে করছে
…………….
যোনীগন্ধে চেয়ে আছে লিপস্টিক।একঢাল গোলাপি গমন।যেন কেঁপে উঠলো নাদ ব্রম্ভ।কে যেন এঁকে রেখেছে পালতোলা সোনার জাহাজ।জিভ ছোয়াতেই আগুন হয়ে উঠলো আশপাশ।সেই উত্তাপের ভেতর দিয়ে তার অস্পষ্ট চলাচল ভিজিয়ে দিচ্ছে শরীর।সপসপ বৃষ্টির ফোঁটায় আজ পুড়ে যাচ্ছে তার সমস্ত অতীত।সে টের পাচ্ছে তার স্ফীতকায় স্তনের বর্তুল।ঘোলাটে হয়ে উঠছে রাত্রি ,ফেটে পড়ছে পূর্ণিমার সোহাগের মতো।ও গোলাপি আভা মেঘ একবার শুধু একবার শান্ত হয়ে বসো তার লিপস্টিকের ওপর।একবার তার গমনপথের দিকে তাকিয়ে দেখুক খয়েরি রোমের সুখ।
…………….
ঘুম নেই অপেক্ষার চোখে
…………….
পূর্ণতা চেয়েছি আমি। পূর্ণতা অপার।
কোন ফুল থেকে আজ কোন ফুলে যাবো।
অস্পষ্ট রাত্রির কাচ
ঘসে ঘসে আলো করে তোলা।
কেউ কি ঘুমিয়ে আছে একরোখা মন্দির চাতালে
ছাদের ওপর দিয়ে উড়ে যেতে যেতে নিশিডাক মায়াবী আলোয় এই ঘোর অবেলায় তোমার পাশেই দেখো ঘুমিয়ে রয়েছে কেউ
তুমি তাকে আবিষ্কার বলো?
মা বলে যে আছে সে যাবে কেন?
জল ঢালো, জল ঢালো শিকড়ে, ফাটলে
যেন কোনোদিন ব্যথা এসে জ্বালাতে না পারে কোনো অযাচিত সন্ধ্যার আলো ,
যেন অপরূপ এসে হাত ধরে পার করে মায়ার দুপুর।
অনেক দিনের পর মেয়েরা উড়ছে দ্যাখো সন্ধ্যার আকাশে ,
অনেক দিনের পর
ছাদের ওপর , আজও কারা জেগে বসে আছে।
………………
জীবন এক আশ্চর্য দূরবীন ১
………………
তোমাকে ভালোবাসতে বাসতে একটা দোয়াত কালি আমি শেষ করে ফেলেছি।
শেষ কবে আঙুলে ধরেছি ঝর্ণাকলম, শেষ কবে দিয়েছি নখের আঁচড় সাদা পাতার মতন তোমার ওই কাঁচা রং পিঠে
আজ আর কিছুই মনে নেই।
সবটুকু মুছে গেছে মনের আকাশে।
তোমাকে ভালবাসতে বাসতে একটা জীবন আমার ভোঁতা হয়ে গেল ।
একটা দোয়াত কালি চোখের সামনে দিয়ে উড়ে গেল মেঘের ওপারে।
তবু আমি বসে থাকি তোমার আশায়। সাজিয়ে আশ্বিন।
……………..
জীবন এক আশ্চর্য দূরবীন ২
……………..
সব ডাকা একদিন জড়ো হবে উঠোনে তোমার
সমস্ত চিঠি জেনো একদিন উড়ে যাবে গ্রামের ওপারে
রাত্রিদের ভাইবোন নেই
সাদা চুল বিধবারা তার দুইহাত ধরে চলে যায় আগুনের দিকে
দরজার পাশে থাকা বন্দুকের নল তাকে ডাকে
নদীর ওপার থেকে ছুড়ে দেওয়া ভোরের আলোয় তারা চিনে নেয় অজানা ছুরির বাঁট।
এখনো কথার ফাঁকে ধুলো ওড়ে,জঙ্গলের ধার ঘেঁষে যেসব জীবন, দুহাত বাড়িয়ে ডাকি চইচই।
……………….
জীবন এক আশ্চর্য দূরবীন ৩
………………..
অস্ত্র ভেবে আচম্বিতে কার কাছে যাবো?
যেটুকু ঐশ্বর্য্য নিয়ে দোল খাও ভোরের বাতাসে
সেটুকু কল্পনা করে আমি ঋণী থাকি।
এই সেই পাতা যার ওপর আঁকা আছে সিঁদুর প্রলাপ।
পুত্র নয় বংশের ঝাড়লন্ঠন দু-হাতে দুলিয়ে আমি স্থির বসি ,পাশে এসে বসে বাল্যকাল।
তেমন তেমন হলে কশেরুকা বরাবর এঁকে দেবো কঙ্কালের বাঁশি
তেমন তেমন হলে সকলের অগোচরে খুঁজে নেবে তোমার কর্নিকা।
……………….
জীবন এক আশ্চর্য দূরবীন ৪
……………….
প্রতিটি আঁকার পেছনে
কিছুটা রক্তক্ষরণ থাকে।
কলমের ডগায় তারা জমা হয়
তারপর নিব বেয়ে অনায়াসে নেমে আসে।ক্রমে
চোখের জলে ভিজে ওঠে খাতার পাতা।
তারপর পাতা বেয়ে সেই কান্না জড়ো হয় ড্রইং রুমের জানালার।
যার ভেতর দিয়ে আমরা শুনতে পাই
পড়শীর সংসার ভাঙার শব্দ,
নিজের সন্তানের খুব চুপ হয়ে যাবার আওয়াজ।
প্রতিটি আঁকার পেছনে ইরেজারের ভূমিকা থাকবে এমন কথা নয়।কথা হলো
সন্তান আমার বটগাছ হয়ে কবে ছায়া দেবে আমাদের।