—————————————————————–
তৈমুর খান
বাংলা ভাষার মতো এত লিটিল ম্যাগাজিন পৃথিবীর অন্য কোনো ভাষায় হয়তো প্রকাশিত হয় না। বাঙালি সারাবিশ্বে এই ভাষার জন্যই গৌরবান্বিত একথা বলার অপেক্ষা রাখে না। শারদ উৎসবকে উপলক্ষ করে তাই লিটিল ম্যাগাজিন প্রকাশের অন্ত থাকে না। বৈচিত্র্যময় এইসব লিটিল ম্যাগাজিনগুলিতে বাঙালির আবেগ ও মেধার পরিচয় পাওয়া যায়।
১
সাহিত্য লহমা
🍁
১৪ বছর ধরে প্রকাশিত হয়ে আসা চতুর্মাসিক শারদ ‘সাহিত্য লহমা’(২০২৪) সাহিত্যসম্ভার নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে। সম্পাদকীয়তে নারী নির্যাতনের অর্থাৎ ধর্ষণ ও হত্যার প্রসঙ্গটি এনে জোরালো প্রতিবাদ করা হয়েছে। মহাভারতের কাল থেকেই একশ্রেণির পুরুষ এই কাজ করে চলেছে। আর এক শ্রেণির জ্ঞানী গুণী পুরুষেরাও চুপচাপ দেখে গেছে। তাহলে কেন মাতৃশক্তির আরাধনা? ভেবে দেখার মতো প্রশ্ন।প্রকাশ ঘোষাল তাঁর প্রবন্ধে কবিতার আত্মমগ্নতায় আনন্দের আত্মার খোঁজ করেছেন। আত্মা কোথায় থাকে, আত্মার স্বরূপ কী তা মানুষের বায়োলজিক্যাল ধারণা থেকেই অপার্থিব কবিতার আত্মার স্বরূপ উপলব্ধির বিষয়টি আলোচনা করেছেন। যে কবিতায় পাঠক ঋদ্ধ হয় সেটাই প্রকৃত কবিতা। বৃন্দাবন মণ্ডল লিখেছেন ‘অণু বুদ্ধ’ অর্থাৎ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নীতি গল্পের মধ্য দিয়ে শিষ্যদের শিক্ষা দেওয়ার প্রসঙ্গ তা এ যুগেও খুবই প্রাসঙ্গিক। রবীন্দ্রনাথের চিঠিপত্রের সাহিত্যমূল্য এবং দার্শনিক ভাবনা নিয়ে লিখেছেন সুকুমার রুজ। বাংলা কবিতায় সুররিয়ালিজম এর প্রভাব নিয়ে লিখেছেন কল্যাণ ভট্টাচার্য। ভুলে যাওয়া কবি নিশিকান্ত রায়চৌধুরীর মূল্যায়ন করেছেন পার্থপ্রতিম আচার্য। সমরেশ দাশগুপ্তের ‘দ্রাক্ষাদাহ’ উপন্যাসের নবনির্মাণ নিয়ে লিখেছেন প্রসূন রায়। রবীন্দ্রনাথের ‘চিত্রাঙ্গদা’ কাব্যনাট্যের প্রেম ও প্রতিবাদ নিয়ে লিখেছেন গোপীনাথ হাজরা। আরো কয়েকজন উল্লেখযোগ্য এই সংখ্যার লেখক হলেন: দিগেন বর্মণ, নির্মলকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, বিমান চট্টোপাধ্যায়, বীরেন শাসমল, সিদ্ধার্থ সিংহ, চন্দন চক্রবর্তী, অপরেশ মাজি, অরিন্দম চট্টোপাধ্যায়, দিব্যেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়, কাঞ্চন সিনহা, অরুণকুমার চক্রবর্তী প্রমুখ আরো অনেকেই। কবিদের তালিকাও বেশ দীর্ঘ। যোগাযোগ:সম্পাদক কল্যাণ ভট্টাচার্য, ফোকরাডি, ডাক: বি জেমারী, হিন্দুস্থান কেবলস্, পশ্চিম বর্ধমান-৭১৩৩৩৫, মূল্য ২৫০ টাকা।
২
প্রিয়পত্র
🍁
৪০ বর্ষের ৮০ তম সংখ্যা শারদ ‘প্রিয়পত্র’(১৪৩১) দশ ভূজার অসুর সংহারিনী প্রচ্ছদ নিয়ে খুব সুচারুরূপে প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতের বহু লেখক কলম ধরেছেন। প্রবন্ধ গল্প কবিতা খুবই সুনির্বাচিত। দীপ্তিপ্রকাশ গুপ্ত গদ্যে পদ্যে কবিতায় যতি ব্যবহারের তাৎপর্য বিভিন্ন দিক থেকে আলোচনা করেছেন। প্রাচীন বাংলা সাহিত্য থেকে সাম্প্রতিক কালের বহু লেখকের বহু তথ্য তিনি উল্লেখ করেছেন। নৃত্যকলার ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করেছেন অম্বরকান্তি কুমার। আধুনিক বাংলা কবিতায় শব্দ ব্যবহারের নানা তাৎপর্য অনুসন্ধান করেছেন আমিয় কুমার জানা। বাংলা ভাষার প্রাচীনত্ব বিচার করেছেন রামতনু দত্ত। কবিতায় গৌরশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়, গৌতম সাহা, মনোরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়, তূণীর আচার্য, গোবিন্দ মোদক, চিরপ্রশান্ত বাগচী, তপন মুখোপাধ্যায়, মুহা আকমাল হোসেন, কুশল মৈত্র, ফটিক চৌধুরী, অমিত কাশ্যপ, অরুণকুমার সরকার, বিশ্বজিৎ রায় প্রমুখ রয়েছেন। গল্পে আছেন: সুশান্তকুমার রায়, সুকমল ঘোষ, অমিয় আদক আরো অনেকেই। মহেশ্বর ভ্রমণের কথা লিখেছেন রঞ্জনকুমার মণ্ডল। যোগাযোগ: বিকাশ ভট্টাচার্য, ২৬/ এইচ, গোপাল মিশ্র রোড, কলকাতা ৭০০০৩৪, মূল্য ১৫০ টাকা।
৩
আদৃশা সাহিত্য পত্রিকা
🍁
প্রথম বর্ষের প্রথম সংখ্যা ‘আদৃশা সাহিত্য পত্রিকা’(২০২৪) প্রকাশিত হয়েছে। পত্রিকার সিংহভাগ অংশজুড়েই আছে কবিতা। কবি কোথাকার তাও তাঁর নামের পাশে উল্লেখিত হয়েছে। সম্পাদকীয়তে বর্তমান সমাজের অবক্ষয় আর নতুন প্রজন্মের বিপথগামিতা সম্পর্কে সাবধান করা হয়েছে। সাহিত্যচর্চার আঁতুড় ঘর লিটল ম্যাগাজিনের গুরুত্ব সম্পর্কেও বোঝানো হয়েছে। প্রায় ১০৯ জন কলমচি এই সংখ্যায় কলম ধরেছেন। কবিতার সঙ্গে আছে নানা ধরনের স্কেচ। এই সংখ্যায় অর্পিতা রায় হালদার কবিতায় লিখেছেন: ”চাঁদের কলঙ্ক নিয়ে তুমি যখন/ছবি আঁকো,/আমি তখন জ্যোৎস্নার স্নিগ্ধতা নিয়ে/ কবিতা লিখি।/নিভে যাওয়া রাতের কাহিনি লিখি।/সুর তাল ছন্দে/সারারাত কাটে বিনিদ্রায়।” তখন কবিতার জন্য রোমান্টিক উপলব্ধিও সাধনায় ব্রতী একথা স্পষ্ট হয়। তানজিলাল সিদ্দিকি লেখেন: “এ উৎসব রাখি উৎসব/পূর্ণতা পায় শুভ পূর্ণিমায়/চাঁদ আজ ফুল হয়ে ধরা দেয়।” তখন একটা আনন্দময় সম্পর্কের মুহূর্ত আমাদের কাছে ফিরে আসে। এভাবেই মিষ্টি কবিতায় ভরপুর একটি সংখ্যা। পড়তে পড়তে মন ছুঁয়ে যাবে। যোগাযোগ: সম্পাদক অর্পিতা রায় হালদার, রামপুরহাট, বীরভূম-৭৩১২২৪, চলভাষ: ৮০১৬০১৪৪২৮, মূল্য ১০০ টাকা।