মজিদ মাহমুদ
বাংলা একাডেমি গত ২৩ অক্টোবর কবি শামসুর রাহমানের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল আলোচক হিসাবে। কিন্তু আমি খুব দ্বিধায় ছিলাম, সংশয়িত ছিলাম, ভয়ে ছিলাম– যাওয়া উচিত হবে কিনা, কিংবা শেষ পর্যন্ত আদৌ যেতে পারবো কিনা! কারণ বাংলা একাডেমি আমার কাছে রীতিমতো ভয়ের ও ত্রাসের নাম। আমি একাডেমি ট্রমা থেকে এখনো পুরোপুরি বেরুতে পারিনি– ২০১৯ সালে ১৯ শে মার্চের ঘটনা, কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী মহাপরিচালক থাকাকালে– একবার বাংলা একাডেমি আমাকে ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসে বক্তৃতার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিল; কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেখানে আমি যেতে পারিনি, বা আমাকে যেতে দেয়া হয়নি। দৃশ্য-অদৃশ্য স্বৈর-সমর্থিত তথাকথিত কিছু কবি-সাহিত্যিক আমার বিরুদ্ধে বানোয়াট মিথ্যা অভিযোগ তোলে। বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ এই ভুয়া অভিযোগের তদন্ত ছাড়াই আমাকে অনুরোধ করে– অনুষ্ঠানে না যেতে এবং ব্যানার থেকে আমার নাম প্রত্যাহার করে। অথচ বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষের কাছে এই সত্য অজানা ছিল না যে অভিযোগ ছিল সর্বৈব মিথ্যা। আমার সাহিত্যচর্চা সত্য ও সুন্দরের পক্ষে পরিচালিত। চার দশকের নিবিড় সাহিত্য-চর্চায় যা লিখেছি তা নিজের বোধ ও উপলব্ধি জাত, অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছি– যতটুকু সম্ভব লেখনি দিয়ে, সকল গণতান্ত্রিক ন্যায়-সঙ্গত অধিকার আদায়ে কখনো সরব কখনো নীরব সমর্থন জানিয়েছি; এবং আমার সকল লেখার দায় সব সময় আমার নিজের বলেই মনে করেছি।
আমি মনে করি লেখকের প্রধানত কাজ লেখা এবং তার শৈল্পিক পরিধির মধ্যে নিজের সময়কে নির্মাণ করা। বিশ্ববিদ্যালয় পর্বে এরশাদ স্বৈরাচারি শাসনের বিরুদ্ধে আমাদের তখন সক্রিয় ভূমিকা ছিল, এটিও ছিল জাতীর জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, যার পরিপ্রেক্ষিতে প্রথম বারের মতো নিরপেক্ষ নির্দলীয় একটি নির্বাচনী ব্যবস্থার সূচনা হয়েছিল, এবং যথাসম্ভব জনগণের ভোট নিয়ে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ– দেশের দুটি বৃহত্তম রাজনৈতিক দল দুই দুই বার করে ক্ষমতায় এসেছিল– এই বিশ বছর ছিল বাংলাদেশের সময়কালে বলা চলে গণতন্ত্রের স্বর্ণযুগ। তারপর বিগত পনের বছরের ইতিহাস কারো অজানা নয়।
বিগত চল্লিশ বছরে বাংলা একাডেমির যে-সব মহাপরিচালক ছিলেন তাঁরা কমবেশি প্রায় সবাই আমার পরিচিত, অথবা সরাসরি শিক্ষক, এবং প্রত্যেকেই আমার কবিতা–সাহিত্য নিয়ে কমবেশি লিখেছেন; এমনকি যাঁদের সঙ্গে তাঁদের আমৃত্যু পরিচয়ও ঘটেনি– তাঁরাও আমার কবিতা নিয়ে লিখেছেন– যেমন ড. মনজুরে মওলা আমার ‘ইলিশ’ নামের একটি কবিতা নিয়ে দুই দশকেরও বেশি সময় আগে একটি নাতিদীর্ঘ প্রবন্ধ লেখেন– যেটি আমার হাতে এসেছিল– প্রকাশিত হওয়ার পনের বছর পরে, কবিতাটি ছাপা হয়েছিল আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ সম্পাদিত ‘আবহমান’ পত্রিকায়। আমি এটা জানার পরেও ব্যক্তিগত শরমিন্দায় তাঁকে ধন্যবাদ পর্যন্ত দিতে পারিনি, এমনকি তিনি পরবর্তীকালে দুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কবিতা সংকলন করেছিলেন ‘পঞ্চাশ বছরের বাংলা কবিতা’ এবং ‘পঁচিশ বছরের প্রেমের কবিতা’ সেখানেও আমার কবিতা অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন পরিচয় না থাকা সত্ত্বেও।
অধ্যাপক ড. আবু হেনা মোস্তফা কামালকে আমি শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক হিসাবে না পেলেও আমরা তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, এবং নিজ জেলার মানুষ হিসাবে দু’একবার ফোনে কথাবার্তা হয়েছে– অত্যন্ত হৃদ্যতার সঙ্গে।
ভাষা-বিজ্ঞানী ড. মনসুর মুসা আমার শিক্ষক ছিলেন, পরিচয় ছিল, সেই সময়ে বাংলা একাডেমির সাহিত্য পত্রিকায় আমার কিছু গবেষণাধর্মী রচনা ছাপা হয়েছে; এবং ১৯৯৫ সালে আমি দৈনিক বাংলার চাকরি থেকে বিনা-বেতনে ছুটি নিয়ে তাঁর আমলে বাংলা একাডেমির তরুণ লেখক প্রকল্পে প্রথম ব্যাচে যোগ দিই এবং একাডেমি থেকে আমার ‘গোষ্ঠের দিকে’ নামে একটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়।
অধ্যাপক ড. আবুল কালাম মনজুর মোরশেদ আমার সরাসরি শিক্ষক ছিলেন, তাঁর অধীনে আমি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জরী কমিশন (ইউ.জি.সি)-র তিন বছরের গবেষণা বৃত্তির অধীনে ‘রবীন্দ্রনাথের ভ্রমণ সাহিত্য’ নিয়ে অভিসন্দর্ভ রচনা করেছি। এমনকি নজরুল ইনসটিটিউটের অধীনে ‘নজরুল তৃতীয় বিশ্বের মুখপাত্র’ রচনার সময়েও তিনি অন্যতম তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন, একই সঙ্গে কবি মোহাম্মদ মনিরুজ্জান এবং ড. আনিসুজ্জামান স্যার যুক্ত ছিলেন। তিনি নিজেও ‘মাহফুজামঙ্গল কাব্যে মঙ্গলগীতির স্বরূপ’ নামে একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন।
শামসুজ্জামান খানের সঙ্গে আমার পূর্বে কোনো পরিচয় ছিল না, ২০১২ সালে তিনি একদিন আমায় ফোন দিয়ে জানতে চাইলেন, ‘সাহিত্যচিন্তা ও বিকল্পভাবনা’ প্রবন্ধের বইটির লেখক আমি কিনা?’ তারপর বইটির কিছুটা প্রশংসা করে বললেন, ‘এবার একুশে বইমেলায় আপনাকে আমন্ত্রণ জানাতে চাই।’ আমি সম্মতি জানালে তিনি ‘প্রযুক্তির উন্নয়ন ও ছাপা বইয়ের ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক একটি সেমিনারে বক্তৃতা দেয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। কিন্তু এরপরে আর কখনো তিনি তাঁর দীর্ঘ এক দশকের মহাপরিচালক আমলে আমাকে আর ডাকেননি।
এরপরে খুব স্বল্প সময়ের জন্য মহাপরিচালক হিসাবে আসলেন ‘কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী’ তিনি দীর্ঘদিন জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি ছিলেন, কিন্তু কবিতা পরিষদ আমার সময়ে তৈরি হলেও এর কার্যক্রমের কোনো উদ্দেশ্য আমার কাছে স্পষ্ট নয় বলে বিগত চল্লিশ বছরে তাদের কোনো অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া হয়নি। তাছাড়া সাহিত্যের রাজনৈতিক প্লাটফর্ম আমার খুব পছন্দ নয়– জাতির কোনো একটি মূহুর্তে তার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে– সেটি পূরণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার বিলুপ্তি হওয়া উচিত বলে মনে করি– তার কারণ এই পরিষদ এরশাদের স্বৈরাচার বিরোধিতায় তৈরি হলেও এই সংগঠনটিই পরবর্তীকালে একই ধরনের ভূমিকা পালন করে– এখান থাকা কবি-সাহিত্যিকগণ সরাসরি সরকারি রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে, প্রেশার গ্রুপ হিসাবে কাজ করে– পুরস্কার পদবী বাগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু হাবীবুল্লাহ সিরাজী যেহেতু কবি ছিলেন, সেহেতু আমাকে বিশেষ স্নেহ করতেন বলে মনে হয়। আমার কবিতার খুব প্রশংসা করে প্রবন্ধ লিখেছিলেন। প্রায়ই প্রকাশ্যে বলতেন, আমার একটি কাব্যগ্রন্থের জন্য বিশ বছর আগে পুরস্কার পাওয়া উচিত ছিল।
কিন্তু বাংলা একাডেমি এসব মিথ্যা জানা সত্ত্বেও বিশৃঙ্খলার ভয়ে– আমাকে অনুরোধ করে অনুষ্ঠানে উপস্থিত না থাকার জন্য। সেদিন এ ঘটনায় আমার অনেক কবিবন্ধু আমার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, মানসিকভাবে সাহস দিয়েছিলেন, প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন– সত্যিই এটি ছিল আমার লেখক জীবনে এক চরমতম ভয়াবহ ঘটনা– আমি খুব মুষড়ে পড়েছিলাম; অথচ এই বিপদে বাংলা একাডেমির একজনও এর প্রতিবাদ করেননি, একটু সান্ত্বনার বাণী পর্যন্ত শোনাননি; অথচ তারা অনেকে আমার বন্ধু, সহপাঠী কিংবা দীর্ঘ সময় ধরে জানাশোনার মানুষ বলেই জানতাম।
তারপর মহাপরিচালক হিসাবে এলেন– কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। তাঁর তিন বছরের সময়টিতে তিনি একটি বারের জন্য বাংলা একাডেমির বইমেলা কিংবা কোনো একটি সভা-সেমিনারে আমাকে ডাকেননি। সময়গুলো কেমন যেন অপরিচিত ছিল, চেনা মানুষজনের আচরণ ছিল রহস্যময়, অর্থাৎ আপনি একাডেমিতে যাচ্ছেন, তারা আপনাকে জানে, আপনি সাহিত্য-গবেষণার সঙ্গে যুক্ত, অথচ আপনাকে উপেক্ষা করা হচ্ছে এক অদৃশ্য চাপে! এমনকি আগে উত্তরাধিকার বা একাডেমির অন্যান্য পত্রিকা জন্য মাঝে মাঝে লেখা চাইতো, কিন্তু সেটিও বন্ধ হয়ে যায়। এখানে ব্যক্তি বিশেষের দোষের কথা বলছি না, বলছি কিভাবে বিগত সময়ে ক্রমান্বয়ে বাংলা একাডেমি একটি অসহিষ্ণু একদেশদর্শী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়।
বাংলা একাডেমির পুরস্কারের আগে পত্রপত্রিকায় সম্ভাব্য তালিকায় প্রায়ই আমার নাম দেখা যেতো; প্রকৃতপক্ষে পুরস্কারের বিষয়ে আমার তেমন কোনো আগ্রহ আগেও ছিল না, আমার পুরস্কার তো আমার পাঠকগণ, তাদের বদান্য দ্বারা তাঁরা তার প্রকাশ ঘটিয়েছেন। আমি খুব একটা পুরস্কারের পক্ষের লোক নই, আমি তো স্বাধীন রাষ্ট্রে সরাসরি এই অনুগত শ্রেণি তৈরিরই বিরুদ্ধে– এমনকি বাংলা একাডেমি এ পুরস্কার বন্ধ করে দিলেই বরং উচিত কর্ম হয় বলে মনে করি। যেখানে একজন প্রবীণ কবি-সাহিত্যিক গবেষককে সভা-সেমিনারে আমন্ত্রণ জানানোর পরে বিরোধী মতের লোক বলে ফ্যাসিবাদি কায়দায় প্রতিহত করা হয়– সেখানে পুরস্কার তো দূরাস্ত!
আমি সব সময় শত্রু-মিত্রকে বিবেচনা করে চলি, একটি মানবিক সম্পর্ক রেখে চলার চেষ্টা করি, কেউ কষ্টে পড়লে আমার কষ্ট বাড়ে, এমনকি অনেক ব্যক্তিগত কষ্টের দ্বারা আমি জর্জরিত হলেও আমার প্রতিপক্ষ কষ্ট পাবে– এই বোধ থেকে আমি অনেক কিছু প্রকাশ করি না। যদি মনে হয় কেউ আমার উপস্থিতি পছন্দ করছেন না, তখন তাকে এড়িয়ে না চলারও উপায় থাকে না। কেউ তার নিজস্ব অস্তিত্বের সংকট থেকে তার করণীয় পরিবর্তন করতেই পারে, তাতে আমারই বা কি মনে করার আছে।
আর বর্তমান মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আজম, তিনিও আমার অপরিচিত নন। তিনি আমার দেখা একজন প্রতিভাবান মানুষ, ভালো বলেন, ভালো লেখেন, অনুসন্ধিৎসু গবেষক, সর্বোপরি একজন যোগ্য ব্যক্তি, যোগ্যতার মূল্য দেন, তাঁর কাছে প্রত্যাশা একটু বেশিই হওয়ার কথা। কারণ বাংলা একাডেমি এতদিন ধরে তার নিজস্ব কাজের বাইরে যে জঞ্জাল গড়ে তুলেছে, সেই জঞ্জাল পাশ কাটিয়ে তিনি নিশ্চয় বাংলা একাডেমির নিজস্ব কর্মকাণ্ডে মনোনিবেশ করবেন। এবং বিগত দিনগুলোতে যে-সব অন্যায় হয়েছে, সে ধরনের অন্যায় যাতে এখন আর না ঘটে সেদিকে খেয়াল রাখবেন, এবং আগে ঘটে যাওয়া অন্যায়গুলো যথাসম্ভব কারণ উদ্ভাবন ও প্রতিকার করার চেষ্টা করবেন। বাংলা একাডেমি একুশে বইমেলা, সদস্যপদ, এবং পুরস্কারের মতো বিষয়ে তাদের নীতিমাল সংশোধন করতে পারে– কারণ এসব পথ ধরে যেমন দুর্নীতির সুযোগ তৈরি হয়, তেমনি বাংলা একাডেমির আসল কাজ ব্যাহত হয়। আর এসব যদি রাখতে হয়, তাহলেও এটি আরো কার্যকরি এবং যুগোপযোগী করে গড়ে তোলা দরকার। তাছাড়া বাংলা একাডেমি কর্মরত অবস্থায় কারো পুরস্কার প্রাপ্তি, তাদের প্রচারার্থে জাতীয় প্রতিষ্ঠান ব্যক্তিগত ব্যবহার করা– কর্তব্য ও সততার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। বাংলা একাডেমি যে ধরনের প্রতিষ্ঠান সেখানে স্থায়ী চাকরি গ্রহণকারীদের পক্ষে চাকরি শেষে সেই একই প্রতিষ্ঠানে মহাপরিচালক পদে নিয়োগও সাংঘর্ষিক।
আমার লেখক জীবনে বাংলা একাডেমির দ্বারা যথেষ্ট অপমানিত ও বৈরিতার শিকার হয়েছি– অবশ্য এসব বিষয় খুবই আপেক্ষিক; তবু বাংলা একাডেমি আমার লেখক জীবনে এক অন্যতম কষ্টের কারণ হয়ে আছে। আমি এ যাবৎ গদ্য পদ্য গবেষণার ৬০ এর অধিক গ্রন্থ রচনা করেছি, তার অনেকগুলো পাঠক প্রিয়তাও পেয়েছে, পাশাপাশি নজরুল গবেষক হিসাবে তিন দশকে আমার কিছু গ্রন্থ সমাদৃত হয়েছে, ‘নজরুল তৃতীয় বিশ্বের মুখপাত্র’ এবং নজরুল জীবনী-ভিত্তিক উপন্যাস ‘তুমি শুনিতে চেয়ো না’ প্রভৃতি– এ সব বইয়ের পাঠক মাত্রই অবগত আছেন। তাছাড়া দেশের সীমানা ছেড়ে বেশ কিছু গ্রন্থ আন্তর্জাতিক প্রকাশনা সংস্থার দ্বারা মুদ্রিত হচ্ছে বা হয়েছে। সে সবই আমার পুরস্কার, সে-সবই আমার এক জীবনের যাবতীয় সময় বিনিয়োগের ফল; বস্তুগত প্রাপ্তি যেখানে খুবই তুচ্ছ। আর যে-সব ঘটনা আমাকে কষ্ট দিয়েছে তা আমাকে আরো সৃষ্টিশীল করেছে, তৎপর করেছে– বলা চলে সে-সবও আমার জন্য আশীর্বাদ– ফলে কারো প্রতি আমার ব্যক্তিগত কোনো রাগ-বিরাগ নেই। এই লেখাটা লেখা উচিত কিনা, যেখানে কেবল নিজের কথা এবং অপ্রাপ্তির ব্যথা দ্বারা একজন আহত আত্মরম্ভী ব্যক্তি হিসাবে নিজেকে উপস্থাপন করা– নিজের কাছে আরো ক্ষুদ্র হওয়ার শামিল; কিন্তু এটিও আমার সময় ও ভাবনার অংশ– যা লিপিবদ্ধ করার এক্ষনে সুযোগ পাওয়া গেলো, একটি কেস-স্টাডি হিসাবে কাজে লাগতে পারে।
গত ২৩ অক্টোবর কবি শামসুর রাহমানের জন্মদিনে বাংলা একাডেমিতে নির্বিঘ্নে বক্তৃতা সারলাম, প্রকাশ্যে কোনো বাধার সম্মুখীন হতে হয়নি। তবু কিছু নির্বোধ বিরোধিতার সম্মুখীন হতে হয়নি তা নয়। কিন্তু সেমিনার অত্যন্ত জ্ঞানগর্ভ তথ্যমূলক ও আন্তরিকতাপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন হয়েছিল। পিআইবি’র নবনিযুক্ত মহাপরিচালক কবি সাংবাদিক ফারুক ওয়াসিফ বললেন, ‘মজিদ ভাই আপনার কবিতা আমাদের কবিতার মূলধারার শক্তিশালী উপাদান হয়ে দাঁড়িয়েছে– ডিজি সাহেবকে বলবো– আপনার কবিতা নিয়ে একটি সেমিনার করতে পারেন কিনা’; কখনো আমার কবিতা নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা হয়নি, ভালো লাগায় মনটা ভরে গেল। তাছাড়া শামসুর রাহমান বাংলাদেশর কবিতার এতো বড় স্রষ্টা– আলোচকগণ প্রত্যেকে প্রাণ খুলে তাঁর কবিতার গুরুত্ব নিয়ে কথা বললেন।
আমন্ত্রণ জানানোর জন্য বর্তমান বাংলা একাডেমির কর্তৃপক্ষকে অভিনন্দন, এর দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে– আগের স্থিতি-অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন হচ্ছে। তবে আশা থাকবে– এই কষ্ট শুধু আমার একার নয়, এ দেশের অগণিত কবি-সাহিত্যিকের মধ্যে এই বঞ্চনা বোধ রয়েছে, তাদের সবাইকে যোগ্যতার ভিত্তিতে বাংলা একাডেমির নিজস্ব শিল্প-সাহিত্য- গবেষণার প্রয়োজনে সসম্মানে কাজে লাগাবে– আর এটিই হবে আগামীর বাংলা একাডেমি– যেখানে কেউ বাইরে থাকবে না।
লেখাটা ভালো লেগেছে। বাংলা একাডেমির সকল জঞ্জাল ও বৈষম্য দূর হোক, মেধাবীরা মর্যাদা পাক, এই শুভকামনা করি।