spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদকবিতামায়াবন ও অন্যান্য কবিতা : কামরুজ্জামান

মায়াবন ও অন্যান্য কবিতা : কামরুজ্জামান


………..
অধিকার ভালোবাসা
………..

শাহবাগ চৌরাস্তায় একটা হৃদয় চিহ্ন এঁকে
দাঁড়িয়ে যাই, ফুলের ব্যবসায়ীরা বিপণন
বন্ধ করে আমার সমর্থনে সাজিয়ে তোলে
শত সহস্র বহুবর্ণ ফুলের সুরভী অর্ঘ–

হাতে হাতে সাথে সাথে ক্লিক ক্লিক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র
ভিউ ফাইন্ডার ফেসবুক ইনবক্স ভাইভার
ইস্টগ্রাম টিকটক ভাইরালে দেশ গ্রাম
শহর নগরে বার্তা নিয়ে ব্যস্ত সংবাদ সংগ্রাহক

রক্ত ঝরাবে বলে যে হন্তারক মিশে আছে
দিনের আলো, রাত্রির ঘণ অন্ধকারে –
তীক্ষ্ণ ইস্পাত কার্তুজ হাতে লোকচক্ষু অন্তরালে
গোপন করে আত্ম পরিচয় সন্তর্পণে
সে ও ভীত বিহবল অন্তরদাহ আত্ম ক্ষরণে…

ফোঁটা ফোঁটা টুপটাপ ঝিরিঝিরি রুমঝুম
প্রবল বর্ষণের মতো তীব্র জনস্রোতে
এখন জনসমুদ্র উপচে পড়া শুধু মানুষ
জলকামান রাবার বুলেট কাঁদনে গ্যাস-
ব্যবহার করে রিজার্ভ ফোর্স দাঙ্গা পুলিশ ক্লান্ত
একচুল নড়িয়ে দিতে পারেনি কেউ…

বিশাল জনসমুদ্রে আবালবৃদ্ধ বনিতা
উচিয়ে বাতাসে দুলিয়ে দুলিয়ে হৃদয় চিহ্ন পতাকা
নির্মাণ করে তুলেছে প্রকান্ড রক্ত গোলাপ
প্রাইভেট কার, রিক্সা, গণপরিবহন —
সব কিছু রয়েছে বন্ধ স্থানুবৎ স্থবির।

সন্ধ্যায় লক্ষ্য প্রদীপ প্রজ্বলনে আলোকিত
প্রতি অবয়বে উচ্চকিত হয়ে ওঠা
আলোক উদ্ভাসিত একটি রক্তাভ ভাষা
তোমার আমার আমাদের অধিকার ভালোবাসা…

১৪ ই আগস্ট ২০২৩
শাহবাগ

…………
মায়াবন
………….

( প্রিয় কবি কথাশিল্পী আলমগীর রেজা চৌধুরী শ্রদ্ধাভাজনেষু )

তীব্র তাপদাহ শেষে সন্ধ্যায় বৃষ্টিতে হালকা হালকা
ভিজে ভিজে তুমি আমি শাহবাগে খুঁজে পেতে
রিক্সা, শাড়ির আঁচল গুছিয়ে গুটিয়ে নিয়ে –
ছোপ ছোপ অন্ধকারে একা ছেড়ে দিতে
কিছুতেই চাইছেনা মন, করি বারণ – একা!
সুন্দরী ললনা তুমি! বল্লে রাখো রঙ ঢঙ…
ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হুড তুলে বলি — যাই সঙ্গে?
আঁখি কোণে মৃদু হাসি কাম রেখা টেনে

  • ইস্ পারবোত যেতে এই টুকু পথ একা একা
  • আনত করে নয়ন মৌন থেকে কিচ্ছুক্ষণ
  • বলি যাও এ নগর নিরাপদ হোক সর্বক্ষণ।

ফিরে যাচ্ছি ভিজে ভিজে একা মানুষের তাড়া
দেখি রাস্তার মোড়ে বাসের হাতলে যাত্রী সাধারণ
দুটি পথে দুটি মন দুটি প্রাণ সরে সরে যাই
ফোঁটা ফোঁটা ঝিরিঝিরি বৃষ্টি শুধু ঝিরিঝিরি বৃষ্টি
ছোট্ট এই মধু ক্ষণ জুড়ে থাকে কত শত মায়াবন সৃষ্টি।

১লা আগস্ট ২০২৩
শাহবাগ, মঙ্গলবার

…………
বিদায় চিত্রকল্প
…………

এইতো সড়কের ওপারে গিয়ে যখন তুমি
হাত নেড়ে বল বন্ধু বিদায় সন্ধ্যার
আর এপারে আমি হাত উচু করি–
তখনো তোমার স্পর্শের উষ্ণতা লেগে থাকে হাতে
আমি আমার হাত এনে রাখি হৃৎপিণ্ডের উপর
আমার কপোলে ছোঁয়াই, অনুভব করি
তোমার এই পাশে থাকার শেষ রেশটুকু।
তোমার শরীরের ঘ্রাণ লেগে থাকে আমার শার্টে
শ্রাবণের বৃষ্টির মাতাল করা স্নিগ্ধ সুরভী হয়ে…
আমরা কী আমাদের পরিচয় জানি?
দিনের পর দিন কত কৌশলে বেঁচে থাকি —
জীবন ভালোবেসে, স্বপ্ন ভালোবেসে
কেউ কবি কেউ চিত্রকর কেউ অভিনতা
চিত্র পরিচালক নাট্যকর্মী নাট্যকার
কেউ বলি আমি তো জীবন শিল্পী
এইসব, এইসব কত বিচিত্র পরিচয় আমাদের
সবকিছু ভুলে গিয়ে কেনো জানি আজকাল
সেভাবে আর খুঁজে পাইনা প্রকৃত মানুষ।
আত্মপরিচয়ের গরিমা বড় বেশি অন্ধ করে তোলে…

  • যাই বলে, না -কি বিদায় নিতে নেই
  • বাদুড়ের কালো ডানা হয়ে রাত নেমে আসে।
  • ফিরে যাবার তাড়া দ্রুত এগিয়ে নিয়ে চলে
  • সত্য এই! আমরা নিশ্চিত করে কেউ জানিনা
  • আবার কখন ফিরবো জীবনের প্রবল ঘূর্ণির মধ্যে…

হাতির ঝিল, রামপুরা, ঢাকা

………….
চারটি কবিতা
………….

এখন কবিতার কথা বল নারী
যেনো যৌবনে ঢেলে দিতে পারি
ফোঁটা ফোঁটা করে রক্তের লাল কণা
কবিতায় বিপ্লব আসে হৃদয় জানেনা মানা।

হতাশায় ভেঙ্গোনা তোমার বুক
বৈভব সে তো স্বপ্নের মতো নয়
খ্যাতি কী তোমার প্রিয় প্রেমময়
ভালোবেসে যদি না আসে সুখ…

একটু যদি লাগলো আঘাত এই খানে
ছিঁড়তে গিয়ে হলুদ গোলাপ সাবধানে
বলো কী-বা এমন ক্ষতি
হৃদয় দিয়ে দুঃখ পেলে যদি।

হৃদয় যদি নাই-বা দিলে আনলে কেনো অশ্রুধারা
এখন আমার আকাশ জুড়ে সন্ধ্যা তারা
হৃদয় দিয়ে হৃদয় আমার হয়নি পাওয়া
ইচ্ছে করে তোমার গোলাপ হয়নি চাওয়া।

হাতির ঝিল, রামপুরা, ঢাকা

……………
ঋণ বেড়ে চলে
……………

বিরুদ্ধ সময় যেনো আর দাঁড়াতেই দেবেনা এখন
টুকরো টুকরো ভেঙে দেবে বারবার।
স্বজন যারা আত্মীয় তারাও দর্শক
কিভাবে ভেঙে পড়ে মানুষ, দ্যাখে শিল্প
গোপনে খুব গোপনে ঋণ বেড়ে চলে…

আত্মহত্যার স্বপক্ষে আমিও দাঁড়িয়েছি কতবার
মৃতুই পরম শান্তি নিশ্চিত নিপুণ সমাধান।
অথচ এখন তুচ্ছাতিতুচ্ছ ঘাস ফুলের
এক ফোঁটা রঙও প্রেমে বেঁধে ফেলে।
আবার নতুন করে ভালোবাসতে ইচ্ছে করে —
দুঃখের সন্তানেরা ফিরে এলে আমার
কোমল ওষ্ঠে কপোলে রাখে গভীর চুম্বন,
চুম্বনের তৃষ্ণায় বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করে।

একটু একটু করে অপসৃত হলে কালো মেঘ
সবাই দ্যাখে প্রাণে বেঁচে গিয়ে কূলে ওঠার কৌশল।
শীতের পাখিরাও কী এভাবে বাঁচে
বিচিত্র মাংসের স্বাদ লোভী জিহবার পেষণ থেকে?
নিজেকে আড়াল করে প্রকৃতির আশ্রয়ে।
কতদিন বিরুদ্ধ সময় ঢেকে রাখে ভোরের আলো
যেনো আর নতুন কোনো নিঃশ্বাস নিতেই দেবেনা।

গোপনে খুব গোপনে ঋণ বেড়ে চলে অনেক ঋণ
ঘাস ফুলের কাছে, বাতাসের কাছে,পাখির কাছে
চুম্বনের কাছে, জীবনের কাছে, অনেক ঋণ…

হাতির ঝিল, রামপুরা, ঢাকা

…………….
তোমার জন্য একটি কবিতা
……………..

তোমার জন্য একটি কবিতা এখন
পড়ে আছে রাত্রির টেবিলে,
কী অসম্ভব একা পড়ে আছে একটি কবিতা।
সংগোপনে বেড়ে উঠছে শব্দে শব্দে
কিছু অনুজ্জ্বল সরল পংক্তিমালা।

জানি একবিতা কোনো দিন বিখ্যাত হবেনা,
একটি কবিতা কখনোই ধারণ করতে পারবেনা তোমাকে।
তুমি সহস্র কবিতার প্রেরণা হতে পার
তোমাকে নিয়ে কবিতা লেখা হবে যুগ থেকে যুগান্তরে।

তোমার উপমা হবে পৃথিবীর তামাম সৌন্দর্য
তুমি হতে পার ব্যথা ভরা একটি নীল সমুদ্র —
একটি সবুজ পাহাড়, একটি নদীর বহতা বারিধারা
অবাধ্য ঝরনার কল-কল্লোলিত ক্ষরণ
তোমার অলকদাম মুছে দিতে পারে
সব অশিল্প,সকল অসুন্দর…

তোমার জন্য একটি কবিতা এখন
পড়ে আছে রাত্রির টেবিলে।
শব্দে শব্দে বেড়ে উঠছে সরল পংক্তিমালা
কেবলই এতটুকু ভালোবাসার জন্য।

হাতির ঝিল, রামপুরা, ঢাকা

……………
বৃষ্টি সারাদিন
…………….

তোমারই স্পর্শে ভরা আজ বৃষ্টি, বৃষ্টি সারাদিন
বৃষ্টি শুধু বৃষ্টি জলের নূপুর রিনি রিমঝিম
শরীরী তৃপ্তির ক্লান্তির মেখলা ঝিমঝিম
বৃষ্টি শুধু বৃষ্টি আজ প্রকৃতি সন্তুর বাজে রিনরিন।

প্রাচীন মুদ্রায় দেহ থেকে আলোর আত্মায়
রক্তের কণিকা জাগে শিহরণে মৃত্যু ফেরোমন
জ্যোতির স্ফুরণে যায়না ফেরানো স্বেচ্ছার মরণ
সৃষ্টির মহিমা দেখি আলোর গভীরে আপন স্বত্বায়।

বৃষ্টি শুধু বৃষ্টি আজ তোমার শরীরে অধরে প্রজ্ঞায়
স্বচ্ছ যত তীব্র তীক্ষ্ণ জলের কিরিচ বিদ্ধ করে রক্ত মাংস
দ্রাক্ষা রসে মাতাল আমিতো নই,জলের আগুন শিরায়
শরীরে শরীর পোড়ে, পোড়ে মনন দেহের সর্বাংশ–

তোমারই স্পর্শে ভরা আজ বৃষ্টি, বৃষ্টি সারাদিন
বৃষ্টি সারাদিন রিনি রিমঝিম, ঝিমঝিম, রিনরিন।

হাতির ঝিল, রামপুরা, ঢাকা

…………….
একটি পাতার কথামালা
……………..

বসন্তের এই মাতাল গভীর রাতে গাছের একটা
শুকনো পাতা হয়ে ঝরে পড়ে আছি নিচে
আমার অঙ্গে জমছে এসে রাত্রির কুয়াশা
শিশিরে শিশিরে সিক্ত হয়ে যাচ্ছে শরীর।

দিনের আলোয় শিশির মিলিয়ে যাচ্ছে রৌদ্রের ভেতরে
পুড়ে পুড়ে জ্বলে জ্বলে তৈরি হচ্ছি আবার
ভেঙে টুকরো টুকরো ছড়িয়ে যাবো বলে
মর্মর শব্দের জন্য আমার দিনান্ত প্রস্তুতি
কান্নার ধ্বনি হয়ে উঠবার করুণ অপেক্ষা।

কে আমাকে মাড়িয়ে যায় মানুষ না পশু?
টুকরো টুকরো ভেঙে পড়ে আছি পায়ের নিচে
ভেঙ্গে পড়া প্রতিটি টুকরোর বিলাপে বিলাপে
আকাশে কালো মেঘ হয়ে অঝোর বৃষ্টি নামে।

রৌদ্র মেঘ বৃষ্টি অজানা সমুদ্র পার হয়ে হয়ে
আমি আবার উন্মীলিত হই সবুজে সবুজে
শ্রাবণে বর্ষায় বৃক্ষে বৃক্ষে নতুন জীবনে
সৃষ্টির সৌন্দর্য হয়ে অলৌকিক অপার মহিমায়
হৃদয়ের কাছে ফিরি বারবার অনাদি অনন্তকাল…

হাতির ঝিল, রামপুরা, ঢাকা

……………
সময় বিক্রি
…………….

প্রতিদিন অনেকটা সময় এখন বিক্রি করে দেই
কোনো স্বপ্ন থাকেনা তখন চোখে সোনা রঙ
নিয়ন্ত্রিত বায়ু ঠান্ডা করে রাখে মাটির শরীর-
সামনে দেয়ালে ঝুলানো পাখির পালক
হরিণের হাড়, ডোরাকাটা চামড়া বাঘের…

কেনো এসব ঝুলিয়ে রাখে মানুষ?
কী হাস্যকর সৌন্দর্য বোধ নির্মম ক্রুরতা…

কোনো স্বপ্ন থাকেনা চোখে প্রজাতির পাখা
ভাসেনা হাওয়ায় রৌদ্র ভরা নির্বাক দুপুরে
অনেকটা সময় এখন বিক্রি করে দেই
পেপারওয়েটে চাপা পড়ে থাকে সরল টুকরো চিন্তাগুলো
স্ট্যাপলার গেঁথে ফেলে অপ্রয়োজনীয় শব্দসব,
এন্টিকাটার কেটে যাচ্ছে হৃৎপিন্ড যাবতীয় শিল্পবোধ।

লাল, নীল,সাদা,কালো, হলুদ, গোলাপি বোর্ডপিনে
রক্তাক্ত সেঁটে যাচ্ছি, কেবলই সেঁটে যাচ্ছি
শিরদাঁড়া শীতল করে চলে যাচ্ছে সুবর্ণ সময়।

হাতির ঝিল, রামপুরা, ঢাকা

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ