শান্তা মারিয়া
পর্ব ১
……..
আম্মিলীগের পরিচয়ে বাংলা একাডেমিতে চাকরি বাগিয়ে নেয়া, নিজেদের ফালতু বই সরকারিভাবে প্রকাশ করে, চুরি করা গবেষণার সুবাদে পুরস্কার বাগিয়ে নেয়া দলকানা চাটুকারগুলো এখনো বাংলা একাডেমিতে টিকে আছে কিভাবে?
এগুলোকে দ্রুত ঘাট পার করে দেয়ার দাবি জানাই। তপন বাগচী, মনি হায়দার, স্বকৃত নোমান, শাহাদাৎ হোসেন নিপু এরা কিভাবে এখনও হাসিয়া হাসিয়া নাচিয়া বেড়ায়?
আম্মিলীগ না করার অপরাধে(!) আমাদের মতো যাদের মেম্বারশিপ স্থগিত বা বাতিল করা হয়েছিল, অবিলম্বে তাদের সকলের সদস্যপদ ফিরিয়ে দেয়ারও দাবি জানাই।
গত পনেরো বছরে বাংলা একডেমি জাতির মননশীল দালালির প্রতীকে পরিণত হয়েছিল। আশাকরি আবার তা জাতির সত্যিকারের মননের প্রতীকে পরিণত হবে।
বাংলা একাডেমি থেকে কি পরিমাণ দালালি মার্কা ফালতু বই প্রকাশিত হয়েছে তার তালিকা দিবো। এগুলোর লেখকের নামসহ। অপেক্ষা করুন।
পর্ব ২
………
অনেকেই আমাকে প্রশ্ন করেছেন কেন আমি বাংলা একাডেমির বিরুদ্ধে এত ক্ষিপ্ত হয়েছি? এর কারণ হলো বাংলা একডেমি আমার অত্যন্ত প্রিয় একটি প্রতিষ্ঠান। আমার দাদা ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ছিলেন এই প্রতিষ্ঠানের স্বপ্নদ্রষ্টা। আমার বাবা কমরেড মুহম্মদ তকীয়ূল্লাহ বাংলা বর্ষপঞ্জি সংস্কারের কাজে বহু বছর এখানে বিনা পারিশ্রমিকে, বিনা সম্মানে শ্রম দিয়েছেন। সেসব কথায় পরে আসবো।
আজকে বলবো আমার প্রিয় কাব্যগুরু দ্রোণাচার্য কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা এবং বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত কিছু বই প্রসঙ্গে। কবি মুহম্মদ নুরুল হুদাকে আমি দ্রোণাচার্য বলি। কারণ তিনি দ্রোণাচার্যের মতোই নিজের কাব্য সাধনার ব্রাহ্মণসুলভ সংযম ও আশ্রমজীবনসুলভ সরলতা ত্যাগ করে রাজঅনুগ্রহ লাভের জন্য ক্ষত্রিয়ের ভূমিকায় কুরুক্ষেত্রে অবতীর্ণ হয়েছিলেন এবং দুর্যোধন, দুঃশাসনের পাশে থেকেছেন ও বালক অভিমন্যুদের বধ করায় মদদ যুগিয়েছেন। আমাদের মতো একলব্যদের কাব্যসাধনাকে তিনি পাত্তাই দেননি কারণ আমি, বাতেন, তামান্না আমরা কেউ হাসিনাৎসির সহযোগী বা আম্মিলীগের অনুগামী নই। যাক, সেসব ব্যক্তিগত প্রসঙ্গ না তুলি।
বাংলা একাডেমি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল বাংলা ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি বিষয়ক গবেষণা, এর উন্নয়ন ও সংশ্লিষ্ট পাঠের জন্য। কিন্তু বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত শত শত বইয়ের মধ্যে কয়েকটির নাম উল্লেখ করছি মাত্র। আপনি নিজেই বলুন এর দ্বারা বাংলা সাহিত্য সংস্কৃতির কী উন্নয়ন হয়েছে। ‘শেখ হাসিনার স্বপ্নকথা’ সম্পাদনা: মুহম্মদ নুরুল হুদা, প্রাণের প্রদীপ জ্বালিয়ে (শেখ হাসিনার জন্মদিনে শুভেচ্ছা): সম্পাদনা মুহম্মদ নুরুল হুদা, দীপ্ত জয়োল্লাস শেখ রাসেলকে নিবেদিত ছোটদের ছড়া ও কবিতা প্রধান সম্পাদক মুহম্মদ নুরুল হুদা, গণতন্ত্রের মনোকন্যা শেখ হাসিনা শত কিশোরের শত কবিতায় জন্মদিনের শুভ কামনা, আগস্ট ২০২১:শোক থেকে শক্তি, শক্তি থেকে জাগরণ। আরও রয়েছে অসমাপ্ত আত্মজীবনীর পাঠ বিশ্লেষণ, কারাগারের রোজনামচার পাঠ বিশ্লেষণ। এগুলোরও সম্পাদক মুহম্মদ নুরুল হুদা। এই পাঠ বিশ্লেষণগুলো কি কারণে? সেটা আমাকে বুঝান।
আরও আরও আরও অনেক বই রয়েছে। বিচিত্র সব অখ্যাত লেখকের। যাদের বই প্রকাশ করে বাংলা একাডেমি জাতিকে ধন্য করেছে।
প্রিয় একটি মননশীল প্রতিষ্ঠান কিভাবে গার্বেজে পরিণত হতে পারে সেটাই তুলে ধরছি। আমি চাই বাংলা একাডেমির আমূল সংস্কার। অন্য লেখকদের নামও আসবে।
পর্ব ৩
………
বাংলা একাডেমির একটি বড় তামাশার বিষয় অমর একুশে বইমেলা। আগে নাম ছিল অমর একুশে গ্রন্থমেলা। গত বছর থেকে বইমেলা করা হয়েছে। বইমেলা অবশ্যই বইপ্রেমী সকলেরই প্রিয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো এই বইমেলার সুবাদে বাংলা একাডেমির ভিতরে যে দুর্নীতি রাজ্যপাট বিস্তার করেছে সে বিষয়টি তুলে ধরা দরকার।
প্রথমত, কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিকে দিয়েই বইমেলা উদ্বোধন করানো উচিত নয়। সেটা যে দলীয় সরকারই ক্ষমতায় থাকুক না কেন। বইমেলা উদ্বোধন করবেন প্রবীণ লেখক, কবি, সাহিত্যিক। তাহলেই তো সেটা শোভন ও সুন্দর হয়।
দ্বিতীয় কথা হলো বইমেলা বাংলা একাডেমিকে অ্যারেঞ্জ করতে হবে কেন? এটা জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের কাজ। সৃজনশীল গবেষণা বাদ দিয়ে সারা বছর ধরে মেলা আযোজন নিয়ে মেতে থাকবে কেন একাডেমি?
সবচেয়ে বড় কথা হলো এই মেলাকে কেন্দ্র করে গজিয়ে ওঠা কিছু অখ্যাত কুখ্যাত প্রকাশকের সঙ্গে যোগসাজশ। বইমেলায় স্টল পাইয়ে দেয়ার বিনিময়ে একাডেমিতে কর্মরত কু-লেখকদের বই প্রকাশ করেন প্রকাশকরা।
মেলার ভিতরে রাজনৈতিক দলের অসংখ্য স্টল দেখলেও বিষয়টি পরিষ্কার হয়। আওয়ামী গন্ধ স্প্রে করে নিলেই হলো। ব্যস। আর কথা নেই। বখাটেলীগ, চামচালীগ, স্থানীয় গুন্ডালীগ, জাতীয় চামবাজলীগ এমন অসংখ্য ব্যানারে অসংখ্য স্টল। এগুলো দিয়েই মেলার একটা বড় অংশ ভরা।
আর মেলায় একুশে বক্তৃতামালার মাসব্যাপী আয়োজনে যত রাজ্যের দালালদের গলাবাজি শোনা যায়। কোন বুদ্ধিবৃত্তিক মননশীল লেকচার নয়।
একমাস ধরে প্রতিদিন কবিতাপাঠের আয়োজনে যেসব কবিদের দেখা যায় তারাও দলীয় বিবেচনায় সেখানে সুযোগ পায়। গত ১৫ বছরে আমি, শাহিন রিজভি, আবদুল বাতেন, ফাতিমা তামান্না, জাকির আবু জাফর, তৌফিক জহুরসহ কোন দলহীন ব্যক্তি ওই আসরে সুযোগ পাইনি। ভাববেন না আমাকে ডাকা হয়নি বলে বিষোদগার করছি। কথা হলো যারা যান তাদের অনেকেরই কোন কবিতা হয় না। তবে চামচামি হয়।
সবক্ষেত্রেই নিজের নিজের লাইনঘাটের ব্যক্তিদের সুযোগ দেয়া হয়।
দরকার হলো বাংলা একাডেমিকে রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত করা। এখানে যদি নিরপেক্ষ সাহিত্যচর্চা হয় তাহলেই একমাত্র বাংলা সাহিত্যের কল্যাণ হতে পারে। নাহলে সকলই গরল ভেল।
পর্ব-৪
………
বাংলা একাডেমির বিভিন্ন অরাজকতা ও তোষণমূলক কাজ নিয়ে কথা বলায় স্বৈরাচারের কয়েকজন সহযোগীর গাত্রদাহ হয়েছে। তারা আমার সঙ্গে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর একটি ছবি নিয়ে নিজেদের মূর্খতা প্রমাণ করেছেন।
যে ছবিটি নিয়ে এত কথা সেটি দেখলে সকলেই বুঝতে পারবেন যে সেটি একটি রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানের ছবি। ২০১৭ সালে আমার বাবার মৃত্যুর পর ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে একুশে পদক অনুষ্ঠানের এই ছবিতে দেখা যাচ্ছে আমার হাতে তখনও একুশে পদকের ফাইলটি রয়েছে। একুশে পদক একটি রাষ্ট্রীয় পদক। সেটি আমাকেও দেয়া হয়নি। আমার বাবার পদক আমি কেন প্রত্যাখ্যান করবো? হাসিনা তখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তখন তার হাত থেকে পদক নিবো না তো কার হাত থেকে নিবো?
আর আমার বাবার চিকিৎসার জন্য রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে যখন টাকা পাঠানো হয় সেটা গ্রহণ করা কি অপরাধ? নাকি সেটা ব্যক্তিগত সুবিধা গ্রহণ?
দ্বিতীয় কথা, হলো কেন আমি হাসিনাৎসি এবং আম্মিলীগ বললাম। ২০২৪ সালের জুলাই আগস্ট মাসে ছাত্র জনতার উপর নির্বিচারে যখন গুলি চালানোর আদেশ শেখ হাসিনা দেন, তারপর থেকেই তাকে হাসিনাৎসি বলা শুরু করেছি। ছাত্র জনতার উপর গুলি বর্ষণকারী শাসককে নাৎসি ছাড়া আর কি বলা যায় আমার জানা নেই। আওয়ামী লীগের গুন্ডাবাহিনী যখন বিশ্ববিদ্যালয় হলের ছাত্রীদের উপর পর্যন্ত হামলা চালালো তখন তাদের আম্মিলীগ বলবো না তো কি বলবো?
আমার একজন পরিচিত প্রিয়জন আমার জনকণ্ঠের চাকরির প্রসঙ্গও তুলেছেন। তাকেও জানাচ্ছি, আমার বাবা একুশে পদক পেয়েছেন ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণের জন্য। সেটা কোন রাজনৈতিক বিবেচনায় হয়নি। আমি জনকণ্ঠে চাকরি করেছি। কিন্তু আওয়ামী সমর্থক ছিলাম না। ১৯৯৬ সালের আওয়ামী লীগ আর ২০২৪ এর আওয়ামী লীগ এক নয়। প্রেসক্লাবে আমি বিএনপি প্যানেল থেকে নির্বাচিত ইসি মেম্বার ছিলাম। তবে আমি কিন্তু বিএনপির দলীয় রাজনীতি কখনও করিনি, এখনও করি না। আমি কোন রাজনৈতিক দলেরই সদস্য নই। তবে আমি সমাজতান্ত্রিক মতবাদে আজও বিশ্বাস করি। স্বৈরাচারের সহযোগীদের যতই গা জ্বলুক আমি ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের চামচাদের লুটপাটের বিরোধিতা অবশ্যই করবো। বিশেষ করে দুর্নীতি, গুমখুন এবং সবশেষে জনতার উপর খুনী বাহিনী লেলিয়ে দেয়া।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন যখন চলছে ছাত্র জনতার উপর গুলি চালানো হচ্ছে, শিশুরা মরছে, তরুণরা মরছে তখনও যদি হাসিনাকে সমর্থন করি তাহলে কি আমি মানুষ? বেশ কিছু মানুষরূপী অমানুষ তখনও সেই নাৎসি সরকারকে সমর্থন দিয়েছে তাদের ফেসবুক পোস্টে। সেটা আমার চোখেও পড়েছে। কিন্তু তাদের বিচারের ভার তো আমার নয়।
আমি ত্রিশ বছর ধরে সাংবাদিকতা করছি। ত্রিশ বছরের সকল সরকারের মন্ত্রী ও সংস্কৃতিমন্ত্রীর সঙ্গেই আমার ছবি আছে। সেটা নিয়ে যদি কথা বলতে আসেন তাহলে নিজের মূর্খতাই প্রমাণ করবেন। কারণ একজন প্রতিষ্ঠিত লেখক ও সাংবাদিকের সমাজের সকল স্তরের ব্যক্তির সঙ্গেই যোগাযোগ থাকে।
আরেকটি কথা, আমি কখনও কোন সরকারের কাছ থেকেই ব্যক্তিগত বাড়তি সুবিধা নিইনি। সেটার প্রয়োজন পড়েনি। আমার মেধা ও শিক্ষাগত যোগ্যতার জোরেই এই পেশায় টিকে আছি।
এই সময়ের জন্য খুব দরকারী একটি লেখা। আমি শেয়ার করছি। সবাই শেয়ার করা দরকার।
অনেক ধন্যবাদ। পতিত স্বৈরাচারের দোসররা নানাভাবে আমাকে হয়রানি করছে। আপনাদের সমর্থন অবশ্যই আমাকে সাহস দিবে।
চমৎকার সময় উপযোগী লেখার জন্য ধন্যবাদ শান্তা মারিয়া আপুকে
অনেক ধন্যবাদ ভাই।
অসাধারণ একটি আয়োজন। অত্যন্ত সময়োপযোগি। ধন্যবাদ এমন সাহসী পদক্ষেপের জন্য।
অনেক ধন্যবাদ।