মীর সালমান শামিল
…….
সাত নভেম্বর বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের গত ৫৩ বছরের ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন। যদি জেনারেল জিয়া দক্ষভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না নিতেন তাহলে পূর্ব বাংলা লাইব্রেরিয়ার মত একটা গৃহ-যুদ্ধের মধ্যে পরে যেত এবং চূড়ান্তভাবে ভারতের পরিকল্পনা অনুযায়ী অখন্ড ভারতের অংশ হয়ে যেত।
৭১ সালে দেশভাগের পর দেশে চরমতম অস্থিরতা তৈরি হয়েছিলো। প্রথমে ভারতীয় বাহিনীর লুটপাট এবং আওয়ামী লীগের লুটপাটে দুর্ভিক্ষ, সব রাজনৈতিক দল এবং সংবাদপত্র বন্ধ, মজিবের নিজেকে আমরণ প্রেসিডেন্ট/সম্রাট ঘোষণা করা, জাসদ, ভাসানী ন্যাপের হাজার হাজার নেতা-কর্মীদের হত্যাসহ সব মিলিয়ে একেবারে…। ভারত এবং ইজরাইলের অস্ত্র-টাকা নিয়ে গন্ডগোল করার শাস্তি বাঙালি পেয়ে যায় ইমিডিয়েটলি।
১৯৭৫ সালে নভেম্বরে দেশে বিবাদমান পক্ষ ছিল চারটা।
এক— জেনারেল খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর একাংশ, আওয়ামী লীগ/বাকশাল এবং রক্ষীবাহিনী।
দুই— সিরাজুল আলম খান এবং কর্ণেল তাহেরে জাসদ এবং তাদের সশস্ত্র গণবাহিনী।
তিন— মোশতাকের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ এবং সেনাবাহিনীর একানংশ।
চার- এই তিন দলের বাইরে সেনাবাহিনীর পেশাদার, অরাজনৈতিক অংশ এবং জনতা।
উপরের তিন দল ক্ষমতার দখল করতে লড়ছিলো। সেনাপ্রধান জেনারেল জিয়া যদিও চতুর্থ দল তথা ক্ষমতার লড়াইয়ের বাইরে ছিলেন তবে ক্যারিশমাটিক ব্যক্তিত্বের জন্য তার সেনাবাহিনী এবং জনগণের মাঝে বিপুল জনপ্রিয়তা ছিল।
১৫ আগস্টের পাল্টা অভ্যুত্থান হিসেবে খালেদ বিদ্রোহ করে করে৷ মোশতাক পাল্টা সরকারের ভয়ে আওয়ামী লীগের বড় চার নেতাকে জেলের ভেতরে হত্যা করে। খালেদের শক্তি বৃদ্ধি হয় ক্ষমতা দখল করে এবং জিয়াকে বন্দী করে। এই অবস্থাতে সেনাবাহিনীর অরাজনৈতিক অংশ এবং জনতা সক্রিয় হয়। জিয়াকে জেল থেকে ধরে এনে ক্ষমতার কেন্দ্রে বসিয়ে দেয়। জিয়া দক্ষভাবে বিবাদমান পক্ষকে নিয়ন্ত্রণে আনে। সিপাহি-জনতার এই বিদ্রোহে তাহের, সিরাজের সমর্থন ছিল।
এই চারটা পক্ষই অস্ত্র, জনবলে যথেষ্ট শক্তিশালী ছিল এবং তাদের বৈদেশিক বন্ধুও ছিল (চতুর্থ দল বাদে)। যদি জিয়া পরিস্থিতি শান্ত না করতে পারতেন তাহলে এই চার দল দীর্ঘ মেয়াদি গৃহযুদ্ধে জরিয়ে যেত এবং পূর্ব পরিকল্পনা অনুসারে ভারত দেশ দখল করে নিতো।
…….
লেখক : গবেষক, ব্রেমেন ইউনিভার্সিটি, জার্মানী।