Site icon বাংলা রিভিউ

‘রিয়া গোপ এবং পাকিস্তানের উপর দিয়ে যে প্লেন উড়ে যায় ‘

 আরিফ রহমান 

আমার জীবনের একটা সময় আইকনিক হিরো হয়ে ছিলেন জাফর ইকবাল স্যার। আমাদের প্রজন্মের উপর এককভাবে আর কোন মানুষ এতোটা প্রভাব বিস্তার করতে পেরেছেন বলে আমার জানা নাই।

অন্য অনেকের চাইতে স্যার আমার জীবনে বেশি প্রভাব বিস্তার করেছিলেন। স্কুলে থাকতে দেখলাম স্যার গণিত অলিম্পিয়াড করেন, এজন্য আমি অংকে ফেল করেও অলিম্পিয়াডে যেতাম। পাইয়ের মান মুখস্ত করে ফেলেছিলাম ১৫০ ঘর। স্যারের উপন্যাসের চরিত্র স্কুল ব্যাগে মোটর, ম্যাগনিফাইং গ্লাস আর হোমিওপ্যাথি শিশি নিয়ে ঘুরে বেড়ায়, আমিও ঘুরতাম। স্যার বিজ্ঞানের কথা বলতেন আমিও ইঞ্জিনিয়ার হতে চাইতাম। স্যার মুক্তিযুদ্ধের কথা বলতেন, যুদ্ধাপরাধের বিচারের কথা বলতেন। আমারও মনে হতো পৃথিবীর একমাত্র ভালো কাজ হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের কথা বলা, যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য আন্দোলন করা।

স্যার বলতেন পাকিস্তানকে উনি এতো ঘৃণা করেন যে যেই প্লেন পাকিস্তানের উপর দিয়ে যায় সেটাতে উনি ওঠেন না। ওনার একটা উপন্যাস আছে, পাকিস্তানের ইমামের ইমামতিতে মৃতের জানাজা হতে দেয়নি একদল দেশপ্রেমী যুবক। এসব পড়ে আক্ষরিক অর্থেই কাঁদতাম। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজকর্ম করবার জন্য নিজের ভেতর দায় অনুভব করতাম।

এভাবে কেটে গেলো এক যুগেরও বেশি সময়। ঐ ছায়ার পেছনে হাটতে হাটতে আমি মুক্তিযুদ্ধকে আমার একমাত্র ধ্যান-জ্ঞানে পরিণত করলাম। গণহত্যার তথ্য সংগ্রহ, মুক্তিযোদ্ধাদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ, সংকলন, তথ্য পর্যালোচনা করা হয়ে উঠলো পরিবারের দেখভাল না করা মধ্যবিত্ত পরিবারের একমাত্র ছেলের ‘কস্টলি’ নেশা।

এসব কাজ করতে গিয়ে দিনের পর দিন কাছ থেকে দেখলাম অধিকাংশ নামজাদা মুক্তিযুদ্ধ গবেষকদের চুরি-বাটপারি-অসততা। বিপরীতে গ্রামে-গঞ্জে জরিপ করতে গিয়ে দেখলাম শহরের গবেষকেরা যেই গ্র্যান্ড ন্যারেটিভ বানিয়ে রেখেছেন, গ্রামগঞ্জের শহীদ পরিবারগুলোর ন্যারেটিভ সম্পূর্ণ ভিন্ন।

এসব আজকের আলাপ না। বৃদ্ধ বয়সে বায়োগ্রাফি লেখার জন্য রেখে দিয়েছি এসব গল্প। আজকে বরং ঐ প্লেনে না ওঠার বিষয়টা নিয়ে আলাপ করি।

আমি বেশি পাগল ছিলাম। জীবনের একটা সময় স্যারের সান্নিধ্য আর স্নেহও পেয়েছিলাম। স্যার আমার প্রথম বইয়ের ভূমিকা লিখে আমাকে রাতারাতি স্টার বানিয়ে দেন। স্যারকে আমি ভালোবাসতাম। মনে কোন প্রশ্ন আসলে সরাসরি স্যারকে লিখে পাঠাতাম।

যেমন একবার একটা গবেষনার কাজে একাত্তরের পরবর্তী সময়ের পত্রিকার কালেকশন ঘাটতে গিয়ে দেখি স্যারদের পুরো পরিবারকে আওয়ামী লীগের রক্ষীবাহিনী বাড়ি থেকে উৎখাত করা নিয়ে গণকন্ঠের বড় এক রিপোর্ট। পরের দিনের পত্রিকায় দেখি ঘটনার ফলোআপ। ফলোআপে দেখি আহমদ ছফা গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছিলেন রক্ষিবাহিনীর সেই গুন্ডামির প্রতিবাদে। আহমদ ছফার কারণে সেদিন তারা ঘর ফিরে পান।

আমি স্যারকে পত্রিকার কাটিংগুলো ছবি তুলে মেইল করলাম। সাথে লিখলাম আবেগপূর্ণ একটা কাব্যিক চিঠি। বললাম স্যার চলেন, আমরা খুঁজে বের করি সেই রক্ষীবাহিনীর লোকগুলোকে, এই রিপোর্টে তো অনেকের নাম আছে। দেখে আসি ওরা কেমন আছে।

স্যার আমাকে রিপ্লাই দিলেন, এই মুহূর্তে সরকারকে বিব্রত করা উচিত হবে না।

২০১৮ সালে স্যার সহ সাস্টের কয়েকজন শিক্ষক তৎকালীন উপাচার্যের পদত্যাগের দাবীতে অবস্থান কর্মসূচী দিয়েছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা সেই সময় সেই কর্মসূচিতে অংশ নেয়া শিক্ষকদের বাজে ভাবে লাঞ্ছিত করে, ব্যানার কেড়ে নেয়। এই ঘটনায় কয়েকজন শিক্ষক আহত হন। লাঞ্ছিত শিক্ষকদের ভেতর আমাদের জাফর স্যার আর ইয়াসমিন ম্যামও ছিলেন। সেদিন স্যার বৃষ্টিতে অসহায়ভাবে সাস্টের শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে বসে ছিলেন। সেই ছবি আমাদের সবার চোখে জল আনে।

কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে কিছুদিন পরেই হামলাকারী ছাত্রলীগের কর্মীরা সেই হামলা ‘ভুল বুঝে করেছিলো’ বয়ান হাজির করে সন্ত্রাসীদের বুকে টেনে নেন আমার প্রিয় স্যার।

একই বছর কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় সরকারের মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী যখন অন্যায়ভাবে ছাত্রদের রাজাকার বললেন, স্যার তখন চুপ থাকলেন। কিছুদিন পর আন্দোলনরত একটি ছেলে টি-শার্টে ‘আমি রাজাকার’ লিখতেই স্যারের চেতনা জেগে ওঠে। উনি লিখলেন:

‘২০১৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীদের কোটা বিরোধী আন্দোলনের ফলাফল হিসেবে যখন দেখি একজন ছাত্র নিজের বুকে “আমি রাজাকার” কথাটি লিখে গর্বভরে দাড়িয়ে আছে আমি সেটি বিশ্বাস করতে পারিনি। মাথায় আগুন ধরে যাওয়া বলে একটা কথা আছে, এই কথাটির প্রকৃত অর্থ কী আমি এই ছবিটি দেখে প্রথমবার সেটি অনুভব করেছি।’

একটু খটকা লাগলো। যে অন্যায়ভাবে তকমা দিল তার প্রতিবাদ আমি করলাম না, কিন্তু তকমাটাকে ডিজ-অবিডিয়েন্সের সিম্বল হিসেবে ব্যাবহারে বিষয়ে আমার মাথায় আগুন ধরে গেলো। এ কেমন বিজ্ঞান!

আস্তে আস্তে আমি দেখতে থাকলাম স্যারের ‘মনের ভেতর ঘৃণার আগুন’, ‘মাথার ভেতরের আগুন’– ধরে যাওয়ার বিষয়গুলো দল নিরপেক্ষ থাকছে না।

শিবিরের ছাত্রদের কনডম ছিনতাইয়ের ঘটনা যেভাবে তিনি বারবার বলেন তার লেখায়, একই লোকের লেখায় এম সি কলেজের এক গৃহবধূ গণধর্ষণে ছাত্রলীগের কর্মীদের অংশগ্রহণের বিষয়টা বারবার উদাহরণ হিসেবে আসে না।

উনি হয়তো মাঝেমধ্যে ছাত্রলীগকে হাল্কা বকুনি দেন, কিন্তু ওনার বুকে ঘৃণার আগুন এই সন্ত্রাসীরা জ্বালাতে পারে না।

অথচ ঘটনার সংখ্যার অনুপাতে বিচার করলে স্বাধীনতার পরের ৫৩ বছরে দেশের সমস্ত ছাত্র সংগঠন যেমন: ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, ছাত্রসমাজের সমস্ত অপরাধকে যোগ করলেও ছাত্রলীগের অপকর্ম বাদবাকিদের চাইতে বেশিই হবে।

যাই হোক, ২০১৮ সালের পর ছয় বছর কেটে গেলো। ২০২৪ সালের মহা অভ্যুত্থানের সময় যখন পুলিশ আর ছাত্রলীগ নির্বিচারে মানুষকে আক্রমণ করছে, গুলি করছে, হত্যা করছে, তখন স্যার লিখছেন:

‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমার বিশ্ববিদ্যালয়, আমার প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়। তবে আমি মনে হয় আর কোনোদিন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে চাইব না। ছাত্র-ছাত্রীদের দেখলেই মনে হবে, এরাই হয়তো সেই রাজাকার। আর যে কয়দিন বেঁচে আছি, আমি কোনো রাজাকারের মুখ দেখতে চাই না। একটাই তো জীবন। সেই জীবনে আবার কেন নূতন করে রাজাকারদের দেখতে হবে?’

একজন লোক, যার প্রিয় পিতাকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নির্মমভাবে হত্যা করেছে, তার ট্রমা তিনি আজীবন বইবেন এটাতে দোষের কিছু নাই। তিনি রাজাকার শব্দ দেখলে, পাকিস্তান শব্দ দেখলে উত্তেজিত হয়ে যাবেন এটাও হয়তো ওনার জন্য অত্যন্ত সঠিক কাজ।

কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো এই- যেই মুহূর্তে তিনি জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীদের এক বাক্যে রাজাকার বলে দিলেন, ঠিক সেই মুহূর্তে ওনার প্রিয় সরকারের পুলিশের গুলিতে মানুষ মরছে রাস্তায়।

ঠিক যেইদিন তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করছেন সেই দিনই রংপুরে প্রকাশ্য দিবালোকে পুলিশের গুলিতে মৃত্যুবরণ করলেন আবু সাইদ। সরকারের মন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত এই শহীদকে বললেন ড্রাগ এডিক্ট। কি ভয়াবহ অসম্মান!

স্যার কিন্তু এবার আরাফাতকে হাল্কা বকুনিটুকুও দিলেন না, শহীদ সেই ছাত্রের জন্য দুঃখও প্রকাশ করলেন না। ওনার বুকে ঘৃনার আগুন জ্বলে উঠলো না। উনি রাজাকার নিয়ে আছেন।

দিন যেতে থাকলো নিহতের সংখ্যা বাড়তে থাকলো। এক থেকে সংখ্যাটা দশ হলো। দশ থেকে একশ হলো। আমার স্যারের একটাবার মনে হল না এই দেশটাতে এভাবে পাখির মতো মানুষকে মারা হচ্ছে অথচ আমি কোন কথা বলছি না।

এই সংখ্যা একশ থেকে দুইশ হলো। এটা একটা গণহত্যার দিকে মোড় নিতে লাগলো। ঘর থেকে ধরে ধরে মানুষকে মারা হতে থাকলো। ছাদে খেলতে গিয়ে মাথায় গুলি খেয়ে মারা গেলো শিশু রিয়া গোপ। সদ্য বাচ্চা প্রসব করা সুমাইয়া বারান্দায় গুলি খেয়ে মারা গেলো। সতেরোজন রিকশাচালক মারা গেলো।

আমার শৈশব কৈশোর আর যৌবনের আবেগ জাফর স্যার ঘর থেকে বের হলেন না, স্যার বললেন না: “এভাবে মানুষ মারা চলবে না/মানুষকে বাঁচতে দাও।”

এই হত্যা হাজারের ঘর ছাড়ালো। আহত দশ হাজারের বেশি হল। স্যার চুপ রইলেন। স্যারের বুকের ভেতর ঘৃনার আগুন জ্বলে উঠলো না।

জাফর স্যারের বাবাকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নির্মম ভাবে হত্যা করে। স্যার এরপর পাকিস্তানের উপর দিয়ে যায় এমন প্লেনে চড়েন না। পাকিস্তানের কোন পণ্য কেনেন না। যারা কেনেন তাদের দেশপ্রেম নিয়ে স্যার প্রশ্ন তোলেন। এইসব ঘটনা আমি যখন প্রথম জানি তখন আমি ক্লাস সেভেনে পড়ি। সেই আবেগ আমার মধ্যে সঞ্চারিত হয়। ক্লাস সেভেনে থাকতে বাণিজ্যমেলায় পাকিস্তানের স্টলে কাপড় বিক্রি করতে দেখে আমি একা একাই মারামারি করতে চলে গিয়েছিলাম দোকানদারের সাথে।

আমার বৃহৎ পরিবারে মুক্তিযোদ্ধা, ভাষা সৈনিক, গণহত্যায় শহীদ সবাই থাকলেও তাদের আবেগ আমাকে যতোটা কাবু করে, তার চেয়ে অনেক বেশি কাবু করে জাফর স্যারের পিতা শহীদ ফয়জুর রহমান আহমদের মৃত্যুর গল্পটা। স্যার যেভাবে কবর খুঁড়ে বাবার মোজাটা শনাক্ত করলেন সেই গল্পটা। কিভাবে তিনি নিজের বোবা বোনকে বাবার মৃত্যুর খবরটা নিশ্চিত করলেন সেই গল্পটা।

পরেরবার স্যারের সাথে কোনদিন আমার দেখা হলে আমি ওনাকে আসাদের গল্পটা বলবো। উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের আসাদ না; চব্বিশের চার বছরের শহীদ আসাদ ছেলেটার কথা। চার বছরের বাচ্চাটার চোখে এসে গুলি লেগে মাথা দিয়ে বেরিয়ে যায়। দৌড়ে ছুটে এসে বাবার পা জড়িয়ে ধরে আসাদ। বাপ দেখে ছেলের মাথা থেকে রক্ত বের হচ্ছে।

শহীদ ফয়জুর রহমান আহমদের গল্প আমাকে আক্রান্ত করেছিলো। আমি কোন কানেকশন না থাকার পরেও বাণিজ্যমেলায় একা একা মারামারি করতে চলে গিয়েছিলাম।

আজকে আমি যদি মানুষ হয়ে থাকি, আমার যদি নুন্যতম বিবেক থাকে, তাহলে চার বছরের শহীদ আসাদের গল্পেও আমাকে আক্রান্ত হতে হয় স্যার।

এই যে স্যারের আওয়ামী তোষণ, স্যারের ওপর হামলা চালানো ছাত্রলীগকে মাফ করে দেওয়া- এসব ঘটনায় আমার তখন অভিমান হতো। কপট প্রেমিকাসূচক অভিমান। তাই বলে স্যারকে ভালোবাসতে আমার সমস্যা হতো না। ঐ অভিমান আমার ভালোবাসার চাইতে অনেক অনেক তুচ্ছ ছিলো। স্যারের জন্য আমার যেই প্রেম ছিলো, সেই প্রেম বুকে পুষে এক জীবন কাটিয়ে দেয়া অসম্ভব ছিলো না।

কিন্তু দেশে একটা ফুল স্কেল ম্যাসাকার চালানোর পর সমস্ত অংকগুলো ঘুরে যেতে থাকে। আমার সামনে এসে আমার চেতনার পথ রোধ করে দাঁড়ায় ছয় বছরের শিশু রিয়া গোপ।

দুপুরে খাওয়ার পর ছাদে খেলতে গিয়েছিলো মেয়েটা। খানিক পরেই রাস্তায় সংঘর্ষ। বাসার সামনে হই-হল্লা শুনে বাবা ছুটে যান ছাদ থেকে মেয়েকে ঘরে আনতে। মেয়েকে কোলে নিতেই পুলিশের ছোঁড়া একটি বুলেট এসে বিদ্ধ হয় রিয়ার মাথায়। মুহূর্তেই ছোট্ট দেহটি ঢলে পড়ে বাবার কোলে।

স্যারের মুক্তিযোদ্ধা পিতা শহীদ ফয়জুর রহমান আহমদের হত্যাকাণ্ডের আবেগ আমার ভেতর সম্প্রসারিত হলে শিশু রিয়া গোপ হত্যাকাণ্ডের যাতনা আমাকে কাবু করবে না– এই মাটির সাথে এমন নিমক হারামি আর যে সাজে না।

স্যারের বই পড়তে পড়তেই শিখেছি বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে সংগঠিত গণহত্যার ভয়াবহতা সঠিকভাবে বোঝা যায় যদি আমরা আর্মেনিয়া, কম্বোডিয়া, রুয়ান্ডার মতো দেশগুলোর গণহত্যাকে বিশ্লেষণ করি। তো কম্বোডিয়াতে ১৯৭৯ সালে যেই গণহত্যাটা সংগঠিত হয় সেটার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন গণতান্ত্রিক কাম্পুচিয়ার প্রধানমন্ত্রী পল পট। হাসিনার কায়দাতেই তাদের স্ট্যান্ডার্ডে যা কিছু ‘অশুদ্ধ কাজ’ যা কিছু তাদের ‘চেতনা পরিপন্থি কাজ’ সেটা করার অপরাধে নিজের দেশের মানুষকে নির্বিচারে নির্মূল করেন পল পট।

এই কাজে পল পটকে যেমন তার দেশের মিলিটারি সাহায্য করে, একইভাবে সেই ‘খারাপ মানুষ’ আসলে কারা, তাদের শনাক্ত করতে থিওরি নির্মাণ করতে সাহায্য করে পল পটের অনুগত বুদ্ধিজীবীরা।

দুঃখজনক হলেও সত্য হলো এই যে– চব্বিশ সালে আমার প্রিয় স্যারের ভূমিকা পল পটের পোষা বুদ্ধিজীবীদের চাইতে কম কিছু ছিলো না।

আমি জানি এই লেখার কারণে স্যারের কিছুই যাবে আসবে না। রিয়া গোপ, সুমাইয়া, মুগ্ধ কিংবা আবু সাইদের মর্মান্তিক হত্যাকান্ডের পরেও স্যার আওয়ামী লীগ কিংবা ছাত্রলীগকে কোন দোষ দেবেন না।

এই লেখার কারণে আমার সাথে স্যারের সম্পর্কটা হয়তো চিরদিনের জন্য খারাপ হয়ে যাবে। তবে কি করবো বলেন, আমার মতো তুচ্ছতর মানুষেরও তো আবেগ আছে।

আবেগ স্যারেরও ছিলো। বৃষ্টিতে ব্যাঙের ডাক শোনার জন্য যেই মানুষটি বেল রিসার্চ ছেড়ে এক পাড়াগাঁয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে এসেছিলেন–সেই মানুষটার আবেগ নিয়ে প্রশ্ন তোলা তো অন্যায়।

কিন্তু সেই মানুষটাই যখন নিজের দেশের মানুষকে অপর করে চেনার বয়ানে এমনই বুদ হয়ে যান যে চোখের সামনে এক হাজার মানুষের মৃত্যু তাকে এক বিন্দু বিচলিত করতে পারে না, তখন আর সেই মানুষটার প্রতি শ্রদ্ধ্যাবোধ ধরে রাখা যায় না।

আমার চোখের পানি যার লেখা বইয়ের পাতায় পাতায় আজও লেগে আছে, যার পায়ের কাছে এক মিনিট বসে থাকার সুযোগ পাবো বলে সারারাত বাসে করে সিলেট যেতে পারতাম, যেই লোকটার ডাকে হয়তো জীবন দিতে দ্বিধা করতাম না, আজকে সেই মানুষটাকে আমি ঘৃণা করি। আমি ঘৃণা করি চব্বিশের গণহত্যার সমস্ত কুশীলবদের।

“চব্বিশের গণহত্যার কুশীলবদের বিচার চাই…”

Exit mobile version