spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদসাম্প্রতিক'জামায়াতের রাজনৈতিক বালখিল্যতা' কাটেনি

লিখেছেন : আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু

‘জামায়াতের রাজনৈতিক বালখিল্যতা’ কাটেনি

আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু

ইংরেজিতে একটি কথা আছে “লেট দ্য ডাস্ট সেটল” — কোনো বড় ঘটনার পর পরিস্থিতিকে শান্ত হতে দেওয়া। ছাত্র বিপ্লবের সাফল্যের এক মাসও পূর্ণ  হয়নি। কিন্তু কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের নেতারা তাদের ঘর গোছানো বাদ দিয়ে মাঠে ময়দানে নেমে আগ বাড়িয়ে কথাবার্তা বলতে শুরু করেছেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দল বেঁধে গলি পেরিয়ে প্রধান সড়কে আসাও যাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না, তারা ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের ভাষায় কথা বলতে শুরু করেছেন।  

২০১৪ সাল থেকে তারা “বিনা ভোটের নির্বাচন“, “নিশিরাতের ভোট“ ইত্যাদি বললেও আওয়ামী লীগ ৫ বছর পর পর তাদের মতো করে নির্বাচন করিয়ে নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে। ২০২৪ এ নির্বাচনের ৬ মাস পর শুরু হওয়া ছাত্রবিপ্লব সফল না হলে আগামী নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে ২০২৮ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতো। বিপ্লবের ফসল নিজ নিজ ঘরে তোলার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর তাড়াহুড়ো করার কি আছে! তারা তো “বিনা ভোটের নির্বাচন” মেনে নিয়েই গত সাড়ে ১৫টি বছর কাটিয়ে দিয়েছেন। তারা এ সরকারকে নির্বাচনের জন্য “যৌক্তিক সময় বেঁধে দেওয়ার কে? বিগত সাড়ে ১৫ বছরে তাদের একটি আন্দোলনও তো  সাফল্যের মুখ দেখেনি। 

রাজনীতি না করেও শুধু সবার জন্য চাকুরির সুযোগ অবাধ করার জন্য মাত্র তিন সপ্তাহে যাদের শত শত জন জীবন দিতে পারে, হাজার হাজার জন্ আহত হতে পারে, সে তুলনায় দেশ ও জাতির সামগ্রিক স্বার্থ নিয়ে কাজ করার দাবিদার দলগুলো একটি জাতির ওপর তিন মেয়াদে চেপে থাকা একটি নিপীড়ক স্বৈরাচারী সরকারকে উৎখাত করতে কেন জীবন বাজি রাখতে পারলো না, সেই আত্মসমালোচনা করা প্রয়োজন রাজনৈতিক দলগুলোর। 

প্রধান উপদেষ্টার সাথে আলোচনায় রাজনৈতিক দলগুলো নানা পরামর্শ  দিয়েছেন, সামনেও নিশ্চয়ই দেবেন। ছাত্র বিপ্লবীরা যেভাবে “বিচারিক ক্যু প্রচেষ্টা“ ব্যর্থ  করে প্রধান বিচারপতিকে পদত্যাগে বাধ্য করেছে, “আনসারদের দ্বারা সচিবালয় ঘেরাও“ করে প্রশাসনকে জিম্মি বানানোর চেষ্টা নস্যাৎ করেছে, তারা যদি রাজনৈতিক দলগুলোর অতি উৎসাহ দমাতে অনুরূপ উদ্যোগ গ্রহণ করে, তাহলে বিষয়টি খুব কল্যাণকর হবে না। অতএব, রাজনৈতিক দলগুলোকে বঙ্কিমের ভাষায় বলতে হয় “ওহে ধীরে, রজনী ধীরে। এ পুরী আলো কর, কিন্তু দাহ কর কেন| “   

১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী ৩০০ আসনে প্রার্থী দিয়ে মাত্র ৩টি আসনে জিতেছিল। অর্থ্যাৎ আল্লাহ জামায়াতকে ১% হারে বিজয় দানে ধন্য করেছিলেন। সুবহানআল্লাহ!  নির্বাচনের পর আমি একটি নিবন্ধে “জামায়াতের রাজনৈতিক বালখিল্যতা’র কথাই লিখেছিলাম। জামায়াত নেতারা তা হজম করতে পারেননি। শিকার হতে হয়েছিল আমাকে। আমি আমার লেখা বন্ধ করিনি। ১৯৯৮ এ দৈনিক মানবজমিনে লেখা আমার এক নিবন্ধের শিরোনাম ছিল “ভুলে ভরা জামায়াতের ইতিহাস।” পরবর্তী জামায়াতকে কীভাবে ভুলের খেসারত দিতে হয়েছে, তা সবার জানা। জামায়াত কি আবারও নিজেদের একই ভুলের ফাঁদে পা ফেলতে যাচ্ছে? 

জামায়াতের তাবড় তাবড় নেতারা আর নেই। দ্বিতীয় ও তৃতীয় সারির নেতারা শীর্ষে  উঠে এসেছেন। জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য যৌক্তিক সময় দিয়েছেন অন্তবর্তীকালীন সরকারকে। ভালো কথা। হিন্দু নাগরিকদের সঙ্গে জামায়াতের যে দূরত্ব ছিল, তা কমিয়ে আনার উদ্যোগ হিসেবে তিনি বিভিন্ন মন্দিরে গেছেন, জামায়াতের কর্মীরা মন্দির পাহারা দিয়েছে; এমনকি “আমাদের বাড়ি যদি পাহারা দিতে না হয়, হিন্দু ভাইদের বাড়ি কেন পাহারা দিতে হবে?” এমন বক্তব্যও দিয়েছেন, যা প্রশংসিত হয়েছে। 

কিন্তু তার মুখে “কারও বিরুদ্ধে আমাদের অভিযোগ নেই,” “আমরা আওয়ামী লীগকে ক্ষমা করে দিলাম,” বক্তব্য প্রতিক্রিয়া ও প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে। রাজনৈতিক বিচারবুদ্ধি সম্পন্ন প্রায় সকলের প্রশ্ন যে তিনি আওয়ামী লীগকে ক্ষমা করার কে? অন্যদিকে জামায়াতের সাবেক আমির অধ্যাপক গোলাম আজমের ছেলে সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমান আজমী আয়নাঘরে তাকে দীর্ঘ  ৮ বছর আটক রেখে তার ওপর অত্যাচারের কাহিনি জানাতে আয়োজিত ব্যক্তিগত সাংবাদিক সম্মেলনে তার রাষ্ট্র সংস্কার প্রস্তাবের অংশ হিসেবে “জাতীয় সঙ্গীতের পরিবর্তন দাবি” করেন। তিনি সঙ্গত কাজ করেননি। 

সাবেক ব্রি: জে: আজমী একটি অশান্ত পরিস্থিতির মধ্যে “জাতীয় সঙ্গীত পরিবর্তন” দাবি করে অহেতুক বিতর্ক সৃষ্টি এবং বিপ্লবীদের ভয়ে যারা মুখ বন্ধ রেখেছে, তাদের বিবৃতি দেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। “লেফট রাইট করলে মাথার ঘিলু হাঁটুতে“ নেমে আসে বলে অনেক বাঙালি যে ঠা্ট্টা-মস্করা করে, তিনি কথাটির যথার্থতাই প্রমাণ করেছেন। একথা সত্য গণতন্ত্র একজন নাগরিককে তার মতামত ব্যক্ত করার স্বাধীনতা দেয়। কিন্তু বাংলাদেশ আমেরিকা নয় যে, আপনি বাংলাদেশে জাতীয় পতাকা দিয়ে আমেরিকানদের মতো জাঙ্গিয়া, প্যান্টি, ব্রা বানাতে পারবেন। মিলিটারি একাডেমিতে তিনি যে শপথ নিয়েছেন তিনি তাও ভুলে গেছেন। আগে বাংলাদেশকে এবং বাংলাদেশের অগ্রাধিকার বুঝতে হবে। এখন অগ্রাধিকার কোনোভাবেই জাতীয় সঙ্গীত নয়। বিপ্লবীদের এমন দাবি ছিলও না, এখনও নেই। অন্যের এনে দেওয়া বিজয়ের সুযোগ দাবি তোলা বিচক্ষণতার লক্ষণ নয়।

এখন অগ্রাধিকার রাষ্ট্রের চরিত্র, বৈশিষ্ট, কাঠামো পরিবর্তন। এজন্য  সংবিধান নতুন করে প্রণয়ন প্রয়োজন। এখন জরুরী হলো মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা। ক্ষমা নয়, বিপ্লবীদের যারা গুলি করার হুকুম দিয়ে, যারা গুলি করে হত্যা, যারা মৃতদেহকে অপমান করার জন্য দায়ী এখন জরুরী হলে তাদের বিচারের আওতায় আনা। কোনো শাসক যাতে স্বৈরাচারী হয়ে উঠতে না পারে, কেউ যাতে রাষ্ট্রের সম্পদ অবাধে লুণ্ঠন না করতে পারে, এসব নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করা সরকারের প্রথম কাজ। কিন্তু তা না করে জামায়াত তাদের আগের ভুলগুলোর মতো “ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ে দেওয়ার” চেষ্টা করছেন। 

তারা যেহেতু “আল্লাহর আইন ও সৎ লোকের শাসন” ছাড়া কিছু চান না, কিন্তু বার বার আল্লাহর ইশারা ভুল ব্যাখ্যা করে  বিপদে পড়েন। তারা যাতে আবার ফান্দে না পড়েন সেজন্য আমি কেবল দোয়া করতে পারি, “হে ওপরওয়ালা, তুমি তোমার এই নির্বোধ বান্দাদের মাথায় আরও কিছু ঘিলু দান করো এবং আসমানি ও দুনিয়াবি বালা-মুসিবত থেকে তাদের রক্ষা করো। আমিন!”

……….

সেপ্টেম্বর ০৪, ২০২৪

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ