spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদবই নিয়েসৌন্দর্যের সাধক কবি শারদুল সজল

লিখেছেন : মাহমুদ নোমান

সৌন্দর্যের সাধক কবি শারদুল সজল


| মাহমুদ নোমান |

সহজ সরল বয়ানে ভাবিত কল্পজগত সরাসরি বলে দিতে তেমন প্যাঁচ লাগিয়ে বলার ধার ধারেন না অথচ শিল্পিত স্পন্দনবেগ আর চিত্রকল্পের দৃশ্যগত ইন্দ্রিয়গম্যে চমৎকার দাগ টেনে দেওয়ার কবিতা লিখেন শারদুল সজল। কবিতা নিয়ে নিরীক্ষার নিজস্ব রুমে যাওয়ার আগে প্রত্যেক কবির ভেবে দেখা উচিত কবিতাটি লেখা হচ্ছে কীনা, বরঞ্চ কবিতা হলেই সেটি নিয়ে বিভিন্ন আঙ্গিকে নিরিখে নিরীক্ষিত করা যায় নচেৎ সময় গেলে ফেরত আসা তো যাবেই না হতাশার সঙ্গী হয়ে; তখন যা লিখবেন আপনাকেই ভেংচি দেবে! কবিজীবন বড়ই বিচিত্র, একেবারেই একাকী খেলা,নৃশংস- এসব কথা মিলিয়ে নিতে পারেন শারদুল সজলের সম্প্রতি প্রকাশিত ‘ সুন্দরের বিরুদ্ধে যাইনি’ কবিতার বইয়ের কবিতা পড়ে…এক সত্যিকে অন্য সত্যির মধ্যে দিয়ে যে প্রকাশ, শারদুল সজল সেখানে উপমার বন্ধনে বেখাপ্পা লাগে এমনকিছু প্রক্রিয়াধীন শব্দের অবতারণা করান না বরঞ সহজাত ঘটনের বিবিধ সৌন্দর্য সাধনে লিপ্ত হন। এছাড়া শব্দ নিয়ে বাড়াবাড়ি নেই, শব্দের যে নিজস্ব খেয়াল আছে স্বাভাবিকভাবে পছন্দসই কবির কাছেই বাঁধাই হয়, যেন এক গায়েবি ভক্তির আয়না….
যে মানুষ হৃদয়ের পক্ষে থাকে- সে মানুষ সুন্দর।
তাকে কোন কলুষতা স্পর্শ করতে পারে না
সে চিরদিন হৃদয়ের উচ্চাঙ্গ সংগীত

চারদিকে যে সুন্দর ফুটে আছে
তার নাম তৃষ্ণা
তার নাম সৌন্দর্য

ভাঙনেরও সৌন্দর্য আছে-
যেমন নদী ভেঙে ভেঙে বড় হয়
আর হৃদয় ভেঙে যেন কী হয়!

এই এক প্রশ্নে বিশ্বজগতের সকল স্নিগ্ধতা
কোটি কোটি বছর ধরে
হাওয়ার হৃদপিণ্ডকে কুর্ণিশ করে ঝুলে আছে
আর বলছে –
‘ সুন্দরের বিরুদ্ধে যাইনি’

এই সুন্দর হচ্ছে সত্য, সত্য হচ মানুষ
মানুষ হচ্ছে প্রেম আর প্রেম হচ্ছে চুমুর পারফিউম
যা ছড়াতে ছড়াতে তোমার দিকে যাই
সুন্দরের দিকে যাই…
( ফ্ল্যাপের কবিতা)

কবিতাকে নিজের ভেবে অর্থ্যাৎ কবিতা কখনো কারো ছিল না এমন হাল-হাকিক্বতে, বহাল তবিয়তে সত্যিকারের কবি নিজেদের মধ্যে একটা ঘোর তৈরি করে। সেই ঘোরে আলোর বেড়ি আর অন্ধকারের বিবিধ সৌন্দর্য বিন্যস্ত করে একান্তে; দিনশেষে কবি হয়তো সবার সাথে মিশে আমাদের হয়ে যায়, আমাদেরই কথা বলে এমন মনে হবে শারদুল সজলের কবিতা পড়তে পড়তে;
সরাসরি বললে শারদুল সজল স্ব-সচেতন কবি৷ বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার অন্তরঙ্গে হিসাবনিকাশ বেশ বুঝেসুঝে মিলিয়ে দেয় আধ্যাত্মিক মায়াময়ে; সেজন্যই শারদুল সজলের কবিতার কখনো কয়েকটা লাইন আলোচনার টেবিলে তুলে দেওয়া বিভ্রান্তিকর মনে করি; শারদুল সজলের কবিতার মেজাজ ও মেসেজ বুঝতে হলে পুরো কবিতাই পড়ার গুরুত্ব অনেক, অক্ষরের সাথে অক্ষরের যেই বন্ধন প্রীতির সম্পর্ক সারল্যে নিরূপিত; তবুও কয়েকটা লাইন পড়তে পারেন-

মানুষ আসলেই কি বোঝে একে অন্যকে!
বোঝে কতটা
নিজের ভেতরেই মানুষ চিরদিন একা

  • মানুষ;৭৮পৃ.)

খ.
দুই টুকরো কাপড়
একসাথে যুক্ত হলো
শুরু হলো নতুন জীবন

চলতে
চলতে
কখনো একখণ্ডের কিছুটা ছিঁড়ে যায়

ছিঁড়ে যাওয়া ঐ অংশটা
রিফু করে চলার নাম সংসার

  • সংসার;৭৬পৃ.)

গ.
মুচকি হাসির মতো ঝুলে আছে রুপালি চাঁদ
আকাশে

আর আমি ঝুলে আছি
তোমার শূন্যে

  • হ্যাংগিং;১৫পৃ.)

একজন কবির প্রতিভা থাকাটাও জরুরি কিন্তু কবিতা নিয়ে কবির যে একটা যাপন সেটি বয়ে চলাটা বেশ সাধনার; কামনায় বাসনায় কবিতা কবিতা করে সমর্পিত সত্যি হল শারদুল সজলের কবিতা ; সুন্দরের জয়গানে জীবন চলার পথে উঁচিয়ে ধরা প্লেকার্ডে লেখা যেন- ‘সুন্দরের বিরুদ্ধে যাইনি’

||
সুন্দরের বিরুদ্ধে যাইনি
শারদুল সজল
দেশ পাবলিকেশন্স
প্রচ্ছদ: আল নোমান
মূল্য: ২০০টাকা

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ