spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদগদ্যপ্রসঙ্গ : কবি আহমদ বাসির

লিখেছেন : তাজ ইসলাম

প্রসঙ্গ : কবি আহমদ বাসির

ক.

অসংকোচে অপ্রিয় সত্য বলতেন আহমদ বাসির

…………..

একবার নজরুল একাডেমিতে কবি ফররুখ আহমদকে নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠানে আমরা উপস্থিত ছিলাম।ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে কবি মহিবুর রহিম এসেছিলেন।মহিবুর রহিম ছিলেন সে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্হাপক।কবি পুত্র আহমদ আখতারও ছিলেন।অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন উচ্চ পদস্থ সাবেক সরকারী কর্মকর্তা। তিনি তার বক্তব্যে কিছু ভুল ইনফরমেশন দিয়েছিলেন।আমরা একসাথে বসা ছিলাম।পাশে তরুণ এক ডক্টর।বাসির আর সেই ডক্টর ফিসফিস করে একে অপরকে তাদের বক্তব্যে অসঙ্গতির বিষয় তুলে ধরার প্রস্তাব দিচ্ছিলেন।যথারীতি ডক্টর সাহেব বাইম মাছের বক্তব্য দিয়ে নেমে গেলেন।আহমদ বাসির মঞ্চে দাঁড়িয়ে কথা বলতে বলতে শান্ত অথচ তীব্রভাবে  

সেই আমলার বক্তব্যের বিরোধীতা করলেন।অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ও অন্যান্য মেহমানদের চেহারা স্পষ্টত মলিন রেখা দেখা দিয়েছিল।উল্লেখ্য প্রধান অতিথি তার ব্যস্ততার কারণে আগেভাগেই বক্তব্য দিয়ে চলে গিয়েছিলেন।

২.

আহমদ বাসির ছিলেন প্রখর মেধাবী, তুখোড় বক্তা। যে কোন বিষয়ে,যে কোন পরিবেশে তিনি তার মেধার স্বাক্ষর রাখতেন নিজের বক্তব্যে।কোরআন রিসার্স ফাউন্ডেশনের সূচনালগ্নে আমরা উপস্থিত ছিলাম। অনেক কবি সাহিত্যিকই সেখানে হাজির ছিলেন সেদিন।অনেকের বক্তব্য ছিল গতানুগতিক। সেদিন বাসিরের বক্তব্যে চমকে উঠেছিলাম। ইতিহাস -ঐতিহ্য, সাহিত্য – সংস্কৃতির সূত্র উল্লেখ করে স্মরণ রাখার মত বক্তব্য দিয়েছিল আহমদ বাসির।সেটি সাত আট বছর আগের কথা।

আরো আগে ১৪/১৫ বছর হবে।তখন দৈনিক সমকাল পত্রিকার সাহিত্য পাতা কালের খেয়া সাহিত্য প্রেমীদের নজর কাড়ে।কালের খেয়ায় ফররুখ আহমদকে নিয়ে এক লেখায় বিতর্ক তৈরী হয়।তখন এই বিতর্কে জড়িয়ে যায় বাসির।পক্ষে বিপক্ষে কয়েক সংখ্যায় চিঠি আদান প্রদান হয়।অবশেষে বিভাগীয় সম্পাদক ঘোষণা দিয়ে এই বিতর্কের অবসান ঘটান।তিনি ঘোষণা দেন এ সংক্রান্ত আর কোন লেখা ছাপা হবে না।সেদিনও কবি ফররুখ আহমদের পক্ষে একা লড়েছিলেন কবি আহমদ বাসির।আমি বা আমরা বাসিরের পল্লবীর বাসায় বসে প্রস্তুতি নিয়েছিলাম পাল্টা জবাবের।কিন্ত আর দেয়া লাগেনি।কালের খেয়ার পুরোনো সংখ্যাগুলো খোঁজ নিলে এসব চিঠি পাওয়া যাবে।

খ.

আহমদ বাসির ও কিছু ভাবনা

…………

আহমদ বাসির মারা গেছেন।আর দশজন মানুষ থেকে তার চলে যাওয়ায় আছে কিছু ব্যতিক্রম।তিনি অন্যদশজনের মত রেখে যাননি অর্থবিত্ত।রেখে গেছেন চিত্তের খোরাক জীবন দিয়ে রচনা করা তার কিছু সৃষ্টি। তাই তাকে নিয়ে আহমদ বাসির’ র বন্ধু, ভক্ত,স্বজন,সুহৃদগণ স্মরণ করবেন,করতে চাইবেন নানাভাবে।আপনার আবেগকে অসন্মান বা আপনার চিন্তার সাথে দ্বিমত না করে আপনার পদক্ষেপের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেই আমি আমার মতামত পেশ করছি।আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ প্রথমই তার অপ্রকাশিত লেখা সমূহ প্রকাশ করা।হতে পারে খণ্ড খণ্ড অথবা অখণ্ড মলাট।এগিয়ে আসতে পারে ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠান। সাতশত পৃষ্ঠার ব্যয়ভার বহন করার সক্ষমতা না থাকলে ৪৮ পৃষ্ঠা করেন,না পারলে ২৪ পৃষ্ঠা করেন।একজনে না পারলে দশজনে দায়িত্ব নেন।দুশ তিনশ টাকা দেয়ার সামর্থ্যবানের অভাব হবে না।সব করে ফেলব ভাব নিয়ে কিছুই না করার থেকে সামান্য কিছু করা উত্তম মনে করি।আমরা যদি খণ্ডে খণ্ডেও তার রচনা সমুহ প্রকাশের দায়িত্ব নেই তবু আহমদ বাসির অপ্রকাশিত ধ্বংসের হাত থেকে নিস্কৃতি পাবে।দেশে অনেক সাহিত্য সংগঠন আছে তারা এই দায়িত্বে এগিয়ে আসতে পারে।এটিও শুধু আহমদ বাসির না অন্য কবিদের বেলায়ও অনুসরণ করা যেতে পারে।কেউ যদি সমগ্র রচনার দায়ভার বহন করে সেটা আরো ভালো।কবি বা শিল্পীকে নিয়ে স্মৃতিচারণ স্মারক প্রকাশ দ্বিতীয় পর্যায়ে করা যায় সবার আগে তার মৌলিক অপ্রকাশিত রচনাগুলোর প্রকাশের তাগিদ অনুভব করি।।কিংবা যারা স্মারক- স্মৃতি গ্রন্থেই মনোযোগী তারাও তাদের এই গ্রন্থের কিছু অংশ অপ্রকাশিত রচনাবলির জন্য বরাদ্দ রাখতে পারে।

২.

পরকালীন জীবনে বাসিরের জন্য এখন দুয়াটা  জরুরী।দুনিয়ার জিন্দেগী তার সমাপ্ত।শিল্পী জীবনে দুনিয়ার জীন্দেগী সমাপ্ত হয়ে গেলে কিছু  অসমাপ্ত কাজ থেকে যায়।তাই বাসিরের জন্য দুয়া করুন নীরবে প্রচার করুন সরবে।এই প্রচারে ভিন্ন ভিন্ন পরিকল্পনা থাকতে পারে।শোকসভা,দোয়া মাহফিল,নাগরিক শোকসভা। সবই করুন।আমি কেবল আমার কথা বলছি।দোয়াতো জায়নামাজ বসেই করা যায়।তাকে স্মরণ বা তুলে ধরার নামে আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠান করার সময় তার এতিম বাচ্চা,অসহায় পরিবারটির কথাও মাথায় রাখতে হবে।মোটাদাগের ক্ষণস্থায়ী অনুষ্ঠানের ব্যয়ের পরিমাণ কমিয়ে সম্ভব হলে কিছু অর্থ বা সহযোগিতার চিন্তা করা যায়।বরঞ্চ কখনো কখনো একটি পরিবারের একটি সাহায্যের হাত অতীব জরুরী।আমি মনে করি এক লক্ষ টাকা  বাজেটের অনুষ্ঠান দশ হাজারে নামিয়ে এনে বাকি নব্বই হাজার টাকা এতিম পোষ্যদের হাতে তুলে দেয়াই উত্তম।এবং আমি এটিরই পক্ষে।

৩.

ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মিলিত উদ্যোগেই হোক বা একক উদ্যোগেই হোক আহমদ বাসিরের বাচ্চাদের  শিক্ষা জীবনের অনিশ্চিত অন্ধকারে আলোর ব্যবস্হা নিশ্চিত করা।

যে কোন অর্থনৈতিক সহায়ক কর্মকাণ্ড শুরুর আগে পরিবারের সম্মতি নেয়া এবং মর্যাদা রক্ষা করা।

তার প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানে তার স্বপ্নের বাস্তবায়ন।এবং অন্যন্য স্বপ্নসমূহ বাস্তবায়ন করা।

 ৬

আহমদ বাসির র পাওনাগুলো স্বতঃস্ফূর্তভাবে তার স্ত্রীর হাতে পৌছে দেয়া নৈতিক দায়িত্ব।

আরো কথা আছে।পরে বলব।দ্বিমত থাকতে পারে আপনার,থাকতে পারে আমারও।সমন্বয় করেই পৌছতে হবে একমতে।হতে হবে ঐক্যবদ্ধ।করে যেতে হবে কাজ।আসুন কাজ করি।কাজে ব্রতী হই।মনে রাখতে হবে মতামত ভালো বিরুদ্ধাচারণ ভালো নয়।এটি এড়িয়ে চলাই মঙ্গল।সবাই মঙ্গলের পথে চলব।

আশা করি প্রিয়জন লেখাটি পড়বেন, একমত হবেন।কিংবা দ্বিমত দেখাবেন।কেন দ্বিমত সহনশীলতার সাথে সেটিও জানাবেন।আপনার মতকে সম্মান জানাব অবশ্যই।

গ.

আহমদ বাসির

১৮.১১.২০২০

এই দিনে তিনি বিদায় নিলেন এ দুনিয়া থেকে।

আল্লাহ তাকে জান্নাতবাসী করুন।

তার সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

……………..

আহমদ বাসির।একাধারে কবি,কথাশিল্পী, প্রাবন্ধিক,গবেষক,সাংবাদিক,আবৃত্তিশিল্পী,টিভি উপস্হাপক ও সাংস্কৃতিক সংগঠক।দীর্ঘ দুই দশক ধরে তিনি লেখালেখি করে আসছেন।সঙ্গীতের সঙ্গে রয়েছে তার গভীর সম্পর্ক। কবি আহমদ বাসির প্রায় সাত শতাধিক গান লিখেছেন।গত কয়েক বছর ধরে গান রচনা,সুরারোপ,কণ্ঠসাধনায় মনোযোগ দিয়ছেন তিনি।সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য গড়ে তুলেছেন স্কুল।এখানে শিশুদের শিক্ষা দেয়া হয় গান শিখানো হয় চিত্রাঙ্কন। তার প্রকৃত নাম বাছিট আহমদ।সংস্কৃতির অঙ্গনে আহমদ বাসির নামেই পরিচিত।তিনি ১৩৮৭ বঙ্গাব্দের পয়লা চৈত্র নোয়াখালী জেলার চাটখিল থানাধীন পশ্চিম দেলিয়াই গ্রামের ঐতিহ্যবাহী ইমান আলী মোল্লাবাড়িতে জন্ম গ্রহণ করেন।তার পিতা মো,আলী আকবর অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক।মাতা নুর নেহার বেগম গৃহিণী।তারা চার ভাই,চার বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়, ভাইদের মধ্যে দ্বিতীয়। তিনি গত  ৩ অগ্রহায়ন ১৪২৭

(১৮/১১/২০২০) রোজ বুধবার রাত আনুমানিক ৮ টায় স্ট্রোক করেন।হাসপাতালে নেয়ার পথে  তিন সন্তান, স্ত্রী,ভাই বোন ও অসংখ্য ভক্তকুলকে কাঁদিয়ে মহান রবের দরবারে চলে যান।রাতেই তার লাশ গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। পরদিন অর্থাৎ ১৯/১১/২০২০ বৃহস্পতিবার সকাল দশটায় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্হানে চিরশান্তির ঘুমে ঘুমিয়ে যান।তার প্রকাশিত গ্রন্হের মাঝে ” গোপন মাটির বীজতলা” “দীনেশের কালোরাত” উল্লেখযোগ্য। এছাড়া অসংখ্য পতপত্রিকা সম্পাদনায় তিনি জড়িত ছিলেন।”উৎসঙ্গ সৃজন চিন্তন ” সাহিত্য সংগঠনের তিনি পরিচালক ছিলেন।দেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় তার লেখা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।

(অনেক দায়,অনেক ব্যর্থতা,অনেক অক্ষমতা স্বীকার করে হৃদয়ে ঝড়তোলা শোক নিয়ে এবং বুক ভরা অভিমান নিয়ে  স্মরণ করছি হে প্রিয়।আল্লাহ আপনাকে জান্নাতবাসী করুন।)

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ