spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদসাম্প্রতিকজুলাই গণহত্যাকে অস্বীকার করে দীর্ঘমেয়াদি মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ছে ইন্ডিয়া

লিখেছেন : মুসতাইন জহির

জুলাই গণহত্যাকে অস্বীকার করে দীর্ঘমেয়াদি মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ছে ইন্ডিয়া

মুসতাইন জহির

২০২৪ সালে এসে বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে পরিচালিত একটি গণহত্যার সত‍্যকে অস্বীকার করা, খোদ গণহত্যায় নেতৃত্বদানকারী দল ও ব্যক্তিদের আশ্রয় প্রদান করা—বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে কার্যত একটি বৈরী যুদ্ধনীতি বজায় রাখার শামিল। এই নীতি গ্রহণের ফলে, বাংলাদেশের সাথে, বাংলাদেশের জনগণের সাথে ইন্ডিয়ার মনস্তাত্ত্বিক দূরত্ব ও বিরোধ অমীমাংসেয় দ্বন্দের সৃষ্টি করবে। যা কোনভাবেই বাংলাদেশের সাথে ইন্ডিয়ার রাজনৈতিক সম্পর্কের নবায়নের পথ প্রশস্ত করবে না। 

ইন্ডিয়া যতদিন পর্যন্ত বাংলাদেশের জনগণের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে শেখ হাসিনাকে বেছে নেওয়ার নীতি বজায় রাখবে, ততদিন ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ সম্পর্কের একটি নতুন সূচনা হওয়ার কোন সম্ভাবনা নাই। 

ইন্ডিয়া যদি সত্যিকার অর্থেই বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক চায়, বাংলাদেশের জনগণ ও রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে তাদের একটি মৌলিক নীতিগত পদক্ষেপ নিতে হবে। তাদের ন‍্যূনতন একটি কাজ করতে হবে। জুলাই ম‍্যাসাকার—২০২৪ সালে বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে পরিচালিত গণহত্যার সত্যকে অস্বীকারের নীতি সুস্পষ্টভাবে বাদ দিতে হবে। গণহত্যার স্বীকৃতি এবং এর বিরুদ্ধে পরিচালিত যাবতীয় প্রচারণা ও আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ডিজইনফর্মেশন ক্যাম্পেইন বন্ধ করার আন্তরিক অবস্থান গ্রহণ করে তাকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে হবে।

বাংলাদেশে শেখ হাসিনার হাতে একটি গণহত্যা সংগঠিত হয়েছে। গণহত্যাকারী দল আওয়ামী লীগ এবং গণহত্যায় নেতৃত্বদানকারী শেখ হাসিনাকে আশ্রয়, সহযোগিতা ও রক্ষা করার কাজে ইন্ডিয়ার বর্তমান বিদেশনীতি ও অবস্থান বজায় থাকলে ১৯৭১ সালের গণহত্যাকে অস্বীকার করার কারণে পাকিস্তানের সাথে আমাদের যে ঐতিহাসিক মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব, দূরত্ব ও পারস্পরিক অনাস্থার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, তা ইন্ডিয়ার সাথেও থাকবে। 

এই সিদ্ধান্ত ইন্ডিয়ার। তারা কোন পথে যাবে? তাদের যদি এই স্বপ্ন থেকে থাকে যে কিছুদিন পর তারা বাংলাদেশের জনগণকে এই প্রশ্ন ভুলিয়ে দিতে পারবে, কোনদিন শেখ হাসিনা কিংবা তার দল আবার বাংলাদেশের রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হবে এবং শেখ হাসিনার হাতে পরিচালিত গণহত্যার দায়দায়িত্ব আমাদের স্মৃতি থেকে মুছে দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসকে ২০২৪ এর আগের জায়গায় ফিরিয়ে নিতে পারবে, তাহলে তাদের এই দিবাস্বপ্ন নিয়ে তারা থাকতে পারে। আমাদের তাতে কোনো দায় নেই।

তাদেরকে শুধু একটা কথা স্মরণ রাখলে চলবে। ১৯৭১ সালে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণকারী সদস্যের সংখ্যা লাখ দুয়েকের বেশি নয়। প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে আলোচনা কিংবা বিতর্কটা বাদ রেখেও বলা যায়, এখন যে কোনো বিচারে ২০২৪ সালে বাংলাদেশে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণকারী ছাত্র-জনতা, যারা রাস্তায় নেমেছে পুলিশ বিজিবি সেনাসদস্যদের বন্দুকের মুখে আবু সাইয়ীদের মতো নিঃসংকোচে বুক পেতে দিয়ে, নিজের জীবনের তোয়াক্কা না করে আত্মোৎসর্গের জন্য রাস্তায় নেমে ৩৬ শে জুলাই পর্যন্ত লড়াই করেছে—এই সংখ্যাটার ব্যাপ্তি কত বড় তা অনুধাবন করতে পারলেই চলবে।

এই যে লক্ষ লক্ষ তরুণ নতুন মুক্তিযোদ্ধা! এই যে সম্পূর্ণ একটি নতুন প্রজন্ম তৈরি হয়েছে, যাদের জীবনের প্রারম্ভেই এই বিপ্লবী অভিজ্ঞতা, এই স্মৃতি এবং নিজেদের পরিচয়বোধে প্রোথিত হয়েছে ৩৬ জুলাই তাকে অস্বীকার করে, তার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ইন্ডিয়া বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক রচনার অলিক, অসম্ভব ভাবনায় বিভোর থাকলে ক্ষতি এবং ক্ষত বাড়বে। কারো জন্যই তা সুফল বয়ে আনবে না। 

আমরা আমাদের মত করে এগিয়ে যেতে পারবো। আমাদের ইন্ডিয়ার জন্য বসে থাকতে হবে না। যেভাবে আমরা জুলাই মাসে পৃথিবীর কোন পরাশক্তির মুখ চেয়ে, অপেক্ষা করে আমাদের গণতন্ত্র রক্ষার লড়াই শুরু করি নাই। আমরা নিজেদের শক্তিতে, রক্ত এবং জীবনের বিনিময়ে অর্জন করেছি বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা। আমাদের ভবিষ্যৎ তৈরিতেও এই আত্মবিশ্বাস কাজে লাগিয়ে আমরা এগিয়ে যেতে পারবো। ইনশাআল্লাহ।

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ