আমান আবদুহু
সাংবাদিক ইলিয়াসের নামে সুশীলদের নানা অভিযোগ শোনা যায়। সে না কি অনির্ভরযোগ্য খবর ছড়ায়। গুজব ছড়ায়। এমন কি মিথ্যা খবর ছড়ায়।
এই বিষয়ে বলার আগে শুধু সংক্ষেপে এক নাম্বার পয়েন্ট হিসেবে শুধু এতোটুকু মনে করিয়ে দেই, এইসব সুশীলদের বর্তমান প্রিয় নেত্রী (সম্ভবত পরিস্থিতির চাপে এবং অন্য কোন উপায় না দেখে), আসলে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের প্রিয় নেত্রী খালেদা জিয়া বহু বছর আগে যখন বলেছিলো, আওয়ামী লীগ দেশ বিক্রি করবে তখন এ সুশীলরাই তার এই কথাকে নিয়ে হাসাহাসি করতো। অতিরঞ্জিত কথন বলতো। ফিয়ার মঙ্গারিং বলতো। এমন কি ঠাট্টা করে বলতো, দেশ কি পেয়াজ রসুনের মতো বিক্রি করা যায় কি না। খেয়াল করলে একটা মজার সাযুজ্য দেখবেন। ঐ প্রসঙ্গে ঐ সময় যারা খালেদা জিয়ার সাথে বিবেক ও যুক্তি করতো তাকে ডিসক্রেটিডেট করার জন্য, ঠিক সেই মানুষগুলো এবং সেই শ্রেণীর মানুষগুলোই এখন ইলিয়াস হোসেনের সাথে বিবেক ও যুক্তি করে তাকে ডিসক্রেডিটেড করার জন্য। এই মিল কি অর্থহীন?
দুই নাম্বার, ইলিয়াস হোসেন সাংবাদিক হিসেবে বাংলাদেশের নিরানব্বই ভাগ সাংবাদিক পেশাগত জীবনে যা অর্জন করতে পারে তার চেয়ে বেশি অগ্রসর ছিলো কিন্তু তারপর সে জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশ থেকে নির্বাসনে যেতে বাধ্য হয়েছিলো। এরপর থেকে ইন্টারনেটের সুবাদে সে যতটা না সাংবাদিক তারচেয়ে বেশি পলিটিকাল একটিভিস্ট। এইটা সে নিজেও বলেছে। এইটা তার হাইব্রিড আইডেন্টিটি। বর্তমান দুনিয়ায় এটা কেউ না বুঝলে সে বলদ। ইলিয়াসের কাছ থেকে সাংবাদিকের অথেনটিসিটি যতটুকু আশা করা যায়, সমান সমান আশা করা যায় এবং গ্রহণ করতে হবে একটিভিস্টের রেটোরিক। এইটা তার অধিকারও বটে।
তিন নাম্বার, সাংবাদিক ইলিয়াসের বিপক্ষে আপনি কাদেরকে স্ট্যান্ডার্ড মনে করেন? মিথ্যাবাদী রুমা পালদেরকে। চাটুয়ার আনিস আলমগীরদেরকে বা ফটকাবাজ খালেদ মুহিউদ্দিনদেরকে। হিন্দু মহিলার কপালে সিদুর ইমপোজ করা মাহফুজ-মতিউর, মজু গুন্ডার মুর্তির সামনে ছবি তুলে ধন্য হওয়া শফিকুল আলম; এদেরকেই তো। বাংলাদেশের কোন সাংবাদিক আছে যাকে আপনি সত্য, ন্যায়, ইনসাফ, বিবেকের কণ্ঠস্বর বানাবেন, তাকে দেখান এবং সেই রকম একজন সত্যপরায়ণ সাংবাদিককে বলেন ইলিয়াসের সাংবাদিকতার বিচার করে তার নিন্দা করতে, সেই মানুষের কথা মেনে নিবো। কিন্তু অন্য কোন বাঙ্গু অথবা বাঙ্গু সাংবাদিক বা তথাকথিত বুদ্ধিজীবীদের মন্তব্য এই ক্ষেত্রে সমান দাম রাখে না আমার কাছে। সরি। আপনি যদি এদের কথার দাম দেন সেইটা আপনার সমস্যা।
চার নাম্বার, ইলিয়াসের অনেক দোষ আছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি যেটা অপছন্দ করি তা হলো জিহাদি উম্মাদদের পৃষ্ঠপোষকতা। এই কাজ করে সে মাইনফিল্ডে নেমেছে। কিন্তু রাজনৈতিক প্রসঙ্গে তার দেয়া সংবাদে আমি কোন সমস্যা দেখি না। সে সত্যি কথাই বলতেছে। আমি আমার জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে জানি তার কথা সত্য, সুতরাং তার কথার সোর্স খোঁজার কোন দরকার আমার নাই। যেই ব্যবস্থা বাস্তবে নির্যাতিত আমাকে মিডিয়ায় ও জনমানসে অবলীলায় জঙ্গি বা অপরাধী বানিয়ে দেয়, সেই ব্যবস্থার সাথে খাপ খাওয়ানোর জন্য ইলিয়াসের খবরের সোর্স বের করার কোন দায় আমার নাই।
আপাতত শেষ পয়েন্ট হলো ইলিয়াসের দেয়া সংবাদে যারা সমস্যা দেখে, তাদেরকে আমি চিনি। তারা হয়তো ফেইসবুকে, পত্রিকায়, টিভিতে গভীর বিশ্লেষণ (আসলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আলগা/চটকা) করতে পারে, তাদের অনেকের ডক্টরেট আছে, অনেকের বড় পদ আছে যার কারণে পাবলিক তাদেরকে চাটে, অনেকে বড়/উঁচা সার্কেলের সাথে চলে যার কারণে পাবলিক তাদেরকে চাটে, কিন্তু তাদের কারো ইলিয়াসের মতো সাহস, নৈতিক দৃঢ়তা ও বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের প্রতি কমিটমেন্ট নাই। এইটা আমি পনেরো বছরে নিজ অভিজ্ঞতায় জেনেছি। এইটা বুঝার জন্য অন্য কারো মুখে ঝাল খাওয়ার দুই পয়সার জরুরত দেখি না। হাসিনার অন্ধকার সময়ে বছরের পর বছর ইলিয়াস-পিনাকীরা যখন নির্যাতিত নিষ্পেষিত মানুষদের মনে নিভৃতে আশার নিভু নিভু একটা মোমবাতি জ্বালিয়ে রেখেছিলো, তখন এইসব এলিটদের দেশে ও বিদেশের স্বাচ্ছন্দ্যের জীবনযাপনে প্রকৃতপক্ষে কোন সমস্যা হয়নাই। অন্যদিকে বাকশালীদের জন্য ইলিয়াস এতো বড় হুমকি যে তাকে আমেরিকাতে গিয়েও ক্রমাগত মামলা হামলার মুখে পড়তে হয়েছে। সুতরাং ওদের সমস্ত যুক্তি এবং বিবেক (মিথ্যা) গোল করে নিজেদের পিছনে ঢুকিয়ে রাখুক কিংবা ভন্ডামীর সুশীলতা চালিয়ে যাক, তাতে আমি থোড়াই কেয়ার করি। বরং এদের কথায় যখন আমার মতো আরেকজন সাধারণ মানুষ, সাধারণ বাংলাদেশী আপনি বিভ্রান্ত হন, টেনশনে পড়ে যান, তখন আমি বিচলিত হই। ওদের কারণে না, আপনার কারণেই আমার এ স্ট্যাটাস লেখা।
সুতরাং ইলিয়াসের ক্ষেত্রে আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন রোজাভেল্টের সেই বিখ্যাত উক্তিকে আমি পলিসি হিসেবে মেনে চলি, যখন তিনি নিকারাগুয়ার ডিক্টেটর আনাসতাসিয়া সমোজা সম্পর্কে বলেছিলেন, হি মে বি এ সন অফ এ বিচ বাট হি ইজ আওয়ার সন অফ এ বিচ। ইলিয়াস আমার স্বার্থের পক্ষে লড়ছে। তার বিপক্ষে বাটপার সুশীল বাঙ্গু ফটকাবাজ ধান্দাবাজ জাতে ওঠতে চাওয়ার প্রত্যাশী তথাকথিত শিক্ষিত কাঙাল ভন্ড অভিজাত পেশাজীবী বুদ্ধিজীবী ফাউলদের চুলকানি দেখে আমার কেবল বিদ্রুপের হাসিই আসে। এরা হয়তো উমেদারি বাটপারি করে মন্ত্রনালয়ের উপদেষ্টার সহকারী প্রেস সেক্রেটারি কমিশন সদস্য অমুক কমিটি তমুক নেটওয়ার্ক এরকম অনেক কিছুই হতে পারবে, বাংলাদেশ এমনই দেশ, কিন্তু মানুষ হিসেবে ইলিয়াসের একটা চুলের সমান হতে পারবে না। এমনকি সাংবাদিক হিসেবেও না। ইলিয়াসের সমস্ত বাড়াবাড়ির পরেও। দরকার হলে ইলিয়াসের সমালোচনা আমরা করবো। করি। কিন্তু ইলিয়াসের সমালোচনায় ওদের লাফালাফি কেবলই বানর নৃত্য।