তাজ ইসলাম
‘স্বৈরাচারের ফাঁসি চাই ‘ ছোটদের কাগজ ছোটকাগজ ‘ তারাফুল’। উল্লেখিত স্লোগানটি তাদের চলমান সংখ্যার প্রচ্ছদের বিপ্লবী প্রতীকে অঙ্কিত। সফল জুলাই বিপ্লবের পর ‘তারাফুল ‘ প্রকাশ করেছে ‘ অক্টোবর- নভেম্বর ২০২৪ ‘সংখ্যা। তাদের সাধ্য সংকোচিত, স্বাদ অফুরান।ইচ্ছার প্রাচুর্যে তারা আন্দোলিত। কাজ করার প্রবল তাগাদা। যতটুকু সামর্থ্য আছে ততটুকু নিয়েই নেমে গেছে মাঠে।
‘তারাফুল ‘একটি ছোটকাগজ। শিল্প সাহিত্য নিয়ে তারা কাজ করে। বস্তুত ছোটদের সাহিত্যের মাঠে উদ্বুদ্ধ করার প্রচেষ্টারত তারাফুল ও তার টিম ।
ইতিহাস রচনা করেছে এই ছোটরা।২৪ এর ইতিহাসের সাহসী নায়ক তারা। রণাঙ্গনের নায়কেরা এবার সাহিত্যে মনোযোগী হয়েছে। তারা মুষ্টিবদ্ধ হাতে নিয়েছিল মুক্তির স্লোগান।বিজয় হয়েছে ৫ আগস্টে।এখন হাতে তুলে নিয়েছে কলম। নেমে পড়েছে ইতিহাস লিপিবদ্ধকরণের কাজে। ‘ ২৪ জুলাই বিকেল ৫ টা নাগাদ পৌছে গেলাম কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে। ‘ ( কবি ও কবিতার কারাবাস: আবু বকর চৌধুরী)’। এই কথা আজ আবু বকর চৌধুরী লিখে রাখলেন ‘ তারাফুল’ এ। জানা হল অনেকের। না জানলে হারিয়ে যে যেত না তার কোন নিশ্চয়তা নাই।এভাবে ছোট ছোট আয়োজনে লিখে রাখলে,লিখিতগুলো প্রচার হলে, ছোট আয়োজনগুলোই বড় পরিসরে একদিন প্রকাশ ও প্রচার হবে।
‘নতুন স্বাধীনতা’ শিরোনাম দিয়ে নিজের লেখা শুরু করেছেন ইয়াহইয়া মাহমুদ। কী ভয়াবহ ছিল পরিস্থিতি! তা আজ সময় অতিক্রম করলে আগামীকালের অনাগত শ্রোতা,দর্শক,জনতা উপলব্ধি করতে কষ্ট হবে। কিন্ত প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান লাঘব করবে এই বাঁধা। যখন তারা পড়বে,
‘ সেদিন বাসে বসেও নিজেকে নিরাপত্তা দিতে পারিনি। কখন যেন কাঁচ ফেটে গুলি লাগে আমার গায়ে।’ ফ্যাসিস্ট হাসিনার বুলেট থেকে রক্ষা পায়নি নিজের বসবাস গৃহে অবুঝ শিশু। রক্ষা পায়নি বৃদ্ধ। আপন গৃহে ফ্যাসিস্টের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছে নিরাপরাধ মানুষ।ইয়াহইয়া মাহমুদের আছে লেখক সত্তা। তাই তিনি লিখে জানিয়ে দিয়েছেন। তারাফুল তা প্রকাশ করে অবগত করেছেন পাঠককে।
‘ছাত্র আন্দোলনে আমার প্রথম দিন’ লিখেছেন সবিস্তারে মোঃ তাসনীম হোসেন।
‘ দিন দিন আন্দোলন বেগবান হতে হতে ৫ ই আগস্ট আমরা ছাত্ররা আমাদের মাতৃভূমিকে দ্বিতীয় বার স্বাধীন করি। স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় এবং মাদ্রাসার ছাত্ররা একযোগে এই আন্দোলনকে উজ্জীবিত করেছিল।’ ( এ কে খান, চট্টগ্রাম, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্রগ্রাম)।
‘ পেটোয়া দল মারলো ছ’ জন/
সাঈদ ছিলো সামনে/ বুকটা পেতে বলেছিলো/ জানটা নিয়ে দাম নে/( রানা জামান)’। ছড়া কবিতা লিখেছেন আরো যারা তারা হলেন; শফিকুল ইসলাম, মাহবুবা তামান্না,সুয়াইব মোহাম্মদ নাহিদ,লাবিবা লাইবা,মুহাম্মদ নূর ইসলাম। ছড়া কবিতাতেও ৫ আগস্ট,বিজয়,আন্দোলন চিত্রিত হয়েছে ছন্দে তালে। হাসনাত যুবায়ের তার ছড়ায় লংমার্চকে অঙ্কন করেছেন চমৎকারভাবে।’ পাঁচে আগস্ট লংমার্চ/ ছুটে চল ঢাকা/ সরকারি নির্দেশে/ ঘুরবে না চাকা।/ না চলুক গাড়ি রেল / হেঁটে যাব পথ/ আমরা তরুণ আছে/ বুকভরা হিম্মত/( হাসনাত যুবায়ের)’। কবিতার পর্বে আরও আছেন,
মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ হক,জাহিদ বিন হিকমত,আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ উসমান,লগ্নাবৈভংশী আচার্য্য আরাধ্যা, মোঃ সৈয়দুল ইসলাম প্রমুখ।
রাফিক বিন সিদ্দিক নিজের বয়ানে বর্ণনা করেছেন ‘ স্বৈরাচার পতনের দিনগুলো’ কাহিনী।’১৮ জুলাই শুক্রবার। চলমান শাটডাউনের দ্বিতীয় দিন। বাদ ফজর বেরিয়ে পড়লাম বিশ্বরোডের পানে।’ এরপর বলে গেছেন সারাদিনের কথা।কথা বলতে বলতেই বলেন ‘ নেট না থাকায় বহু ধরণের গুজব শুনলাম।… বিভিন্ন মিডিয়ার বরাতে জানতে পারলাম আন্দোলনে আজ ৮৬ জন শাহাদাত বরণ করেছেন।’দিনলিপির মতো করে তিনি বয়ান করেছেন ৫ আগস্ট পর্যন্ত। যার ভেতরে আছে আওয়ামীলীগ,পুলিশ,সরকারী বাহিনীর অবর্ণনীয় নিপীড়ন, নির্যাতনের কথা।সাথীদের শাহাদাতের কথা।রক্তাক্ত রাজপথের কথা। আব্দুল্লাহ মাসউদ ও উবাইদুল্লাহ তারানগরী অভ্যুত্থান ও তার নায়কদের নিয়ে লিখেছেন তথ্যবহুল লেখা। ‘তারাফুল’ তাদের এ সংখ্যার নাম দিয়ে ‘ স্বৈরাচার পতন সংখ্যা।সংখ্যাটির কলেবর আরও বৃদ্ধি পাক এ আশা পাঠকের। অব্যহত রাখুক তার চলার যাত্রা।
‘ তারাফুল’ এর সম্পাদক : নকীব মাহমুদ,
প্রধান সম্পাদক : সায়ীদ উসমান।
যোগাযোগ : ৫২ পূর্ব রাজা বাজার,শেরেবাংলা নগর,ফার্মগেট,ঢাকা- ১২১৫।
তারাফুল কিনুন,লিখুন,পাশে থাকুন।