spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদকবিতাসর্বনাশের দিকে যেতে যেতে ও অন্যান্য কবিতা

লিখেছেন : তৈমুর খান

সর্বনাশের দিকে যেতে যেতে ও অন্যান্য কবিতা

তৈমুর খান


বিবাহ
🍁

একটা যুগ আর একটা যুগের ঘরে চলে যায়
একটা সভ্যতা আর একটা সভ্যতায়
একটা মানুষ আর একটা মানুষীর কাছে
দিনও চলে যায় রাত্রির দিকে
জন্মও চলে যায় মৃত্যুর কাছে

প্রত্যেকেরই বিবাহ হয় এভাবেই
তারপর ঘর-গেরস্থালি
মাঝে মাঝে উৎসব আসে
মাঝে মাঝে বিচ্ছেদের বিপন্ন সময়

তবুও বিবাহ হয়
প্রত্যেকের একদিন বিবাহ হয়ে যায়


মধু
🍁
জীবন মধু খেতে চায়
সব মৌমাছিরা চাক গড়ছে
আর মধু জমা করছে
যেদিকেই হাঁটছি —মধুর বাজার

এখানে কল্পনার বাড়ি এসে
ভারি হাসিখুশি জীবনের
বিশ্রামের দোকানে সাজানো আছে ঘুম
যে যেমন পরিমাণ চায়
সে তাই নেয়
এখানে সবাই আলো, বোধের কুটুম

পুকুর ভর্তি সব নীল নীল মাছেরা খেলা করছে
জীবন মাছের ঢেউ দেখতে দেখতে
জলেই নামার উপক্রম
তাকে সতর্ক করা হল

জীবন মধু খেতে চায়
কল্পনা, ওকে মধু এনে দাও।


সর্বনাশের দিকে যেতে যেতে
🍁

সর্বনাশের দিকে চলে যেতে যেতে
আর কিছু দিন থাকতে চেয়েছি
আর কিছু দিন শুনতে চেয়েছি বাঁশি
আর কিছু দিন বলতে চেয়েছি :
তোমাকেই ভালোবাসি!

সবাই জানে সব মিথ্যে কথা
এখন সত্যের মতো ব্যবহার হয়
এখন সবাই জানে আলোতেও লুকিয়ে থাকে অন্ধকার
বৃষ্টি হয় তো হবে, ছাতাহীন নেমেছি রাস্তায়

বিকেল ফুরিয়ে যাচ্ছে, আরও উজ্জ্বল হচ্ছে শেয়ালের চোখ
পূর্ণিমা আসবে যদিও, ওর জ্যোৎস্নায় মিশে
যাবে শোক।

আমিও মানুষ কিনা
🍁

বলতে বলতে থেমে যাচ্ছি
এই দ্বিধাদ্বন্দ্বের আত্মপরিচয়
কী বলে দাঁড়াবো?
আকাশ আয়নার মতো
মৃত্তিকার ঘনীভূত উচ্চারণে
নিজেকে প্রকাশ করি
নিজেকে নিজেরই সন্নিধানে

বাঁচার তাগিদটুকু চলে যাচ্ছে এখন
মাথা তুলে তুলে আর কতদূর দেখা যায়?
অতীত ও ভবিষ্যতের সেতুতে এক চিলতে বর্তমান
সূর্যহীন ঘোলাটে বিজ্ঞাপন আঁকা
অসমর্থ ঘোড়ার মতো দাঁড়িয়ে থাকি

বিশ্বাস ও অবিশ্বাস সন্তান-সন্ততি
প্রজন্মের ধারণা নিয়ে এসেছে কাছে
কী আছে তাদের? শুধুই অগৌরব
আর ভ্রান্তির মরীচিকার কাহিনি

আমিও মানুষ কিনা এখনও ঘোষণা করিনি
শুধু মানুষের মতোই এক প্রাণী

স্বপ্নকুমারী
🍁

কোথাও নদী আর এক চিলতে কাঠের নৌকা
শুধু এপার-ওপার করছি সারাদিন
কিছুতেই ধরতে পারছি না ওকে
বহুদিন থেকে স্বপ্নে দেখেছি যাকে

জল আনতে এসেছে সে
নিচোল ভিজে গেলে
একটি গল্পের মতো
নিজেকে নিজের ভেতর লুকিয়ে নিয়েছি

ছলাৎ ছলাৎ শুধু তার জলের শব্দ পাই
মহুয়া ফুলের মতো তার শরীরের ঘ্রাণ আসে

বনপথে ঝরাপাতা কুড়িয়ে কুড়িয়ে
গুঁজে রাখি আমাদের কবিতার কাছে
অবেলায় কে খুঁজবে আর রামধনু লীলা!


তীব্র
🍁
সবাই তীব্র হয়ে উঠুক
আমি নিরীহ বিক্রি করে
এসেছি নীরবের ঘরে
আমার সময় এখন অসময়

সব সঙ্গমে জ্বর, সব উরু জ্যোৎস্নার
সব গহ্বর অন্ধকারের ইতিহাস
শুধু যুদ্ধ লেপটে আছে, শুধু যুদ্ধের চিৎকার
সভ্যতা খুন হয় শ্লীলতাহানির পর

এ রাস্তায় তীব্র আসে, ও আকাশে তীব্র যায়
গানের মসলা গানে মেশায় ফেরিওয়ালা
আমরা সবাই রোজ কত গান খাই
সহিষ্ণু কণ্ঠের বাঁশিতে অসহিষ্ণু সুর

তবুও জলের কাছে তৃষ্ণা আসে,তৃষ্ণার সঙ্গে কাতর
রাতের তীব্রতা এসে খেয়ে নেয় ভোর
অথবা ভোরের চৌকি নিলাম হলে কাঁদে শয়ন ঘর
আমিও মাটির কাছে মাটি, খুঁড়ে চলি দীর্ঘ কবর


আমরা তৃষ্ণার্ত
🍁

বালতি আছে, শুধু দড়ি থাকলেই
কুয়ো থেকে জল তোলা যাবে
পূর্ব পুরুষেরা কুয়ো খুঁড়ে চলে গেছে
আমরা জল পান করব
তৃষ্ণা বড় কাতর করে আমাদের

প্রতিদিন আমরা নির্বাসনের আদেশ পাই
প্রতিদিন আমরা নতুন নতুন রাতের সামনে দাঁড়াই
প্রতিদিন আমরা অরণ্যের আতঙ্কে থাকি
হৃ—দ—য় হৃ—দ—য় বলে চেঁচাই
প্রতিধ্বনিত হাওয়া ফিরে ফিরে আসে

দড়ি পাকানোর আয়োজন করতে করতে
বিকেল ফুরিয়ে যায় আমাদের
পুরোনো সব দড়িগুলি টুকরো টুকরো হয়ে
পড়ে থাকে ; কারও গিঁট সহ্য হয় আর?
কুয়ো আছে, কুয়োয় জলও আছে শুধু দড়ি নেই

রাস্তায় বিজ্ঞাপনের পাশে দাঁড়িয়ে থাকি
কে শুনবে আর আমাদেরও পিপাসা পায়!


নিঃশব্দ মানুষটি
🍁

নিঃশব্দ মানুষটি আমার মধ্যেই জেগে ওঠে
এই পথে কারা কলহ করে রোজ?
জাত-ধর্মের পতাকা ওড়ায়?

মানুষটি শিরদাঁড়া সোজা করে দাঁড়াতে চায়
তবু সময়ের ভারী পাথর পিঠে উঠে আসে
মিথ্যুক যুক্তিজাল তর্ক বাধায়

নিঃশব্দ মানুষটি নোনা ঢেউ ভাঙে
উদ্দাম সমুদ্র স্রোতে শোনে কচ্ছপের গান
মানবিক হোক ঢেউগুলি
একটিই আবেদন তার

যুদ্ধ ঘোষণার পর
🍁

সবাই কাঁদতে এসেছে
কান্নায় কান্নায় শূন্যে ভাসছে মৃতদেহ

শোক দুঃখ শূন্যতায় স্তব্ধতার কাছাকাছি
আমি একা কাঁদতে পারি নাকো
পরমার্থ অন্ধকারে একা বসে আছি

কারা সব ঘর বানায়, বিবাহের আয়োজন করে
অথবা প্রেমের মূল্যে শরীর কিনে নেয়….

যুদ্ধ ঘোষণার পর সতর্ক পাহারা
আয়োজন চলতে থাকে

তবু এত কাঁদা!
তবু এত শোকের জ্যোৎস্নায় মাথা কোটে রাধা!

১০

শিউলি খাতুন আজ এসেছিল
🍁

শিউলি খাতুন আজ এসেছিল বহুদিন পর
আজ বর্ষা নেই, কবেই মেঘ চলে গেছে
শিউলিও চলে গেল সন্ধ্যার আগে
এখন আমার নৌকা শুকনো খাতে পড়ে আছে
ভাসতে পারে না, হাসতে পারে না
দাঁড়ও কোথায় চলে গেছে

আমাদের সব সম্পর্কগুলি এখন এরকমই নদী
জল থাকে না, শিউলিরা এসে চলে যায়
আর অন্য সব লোকেরা বালি তুলে নেয়
আমাদের সব স্বপ্নের লাশ বালি হয়ে যায়

শিউলি প্রথম প্রথম এসে বলেছিল:
একদিন ঠিক ফুটব, ফুটবই তোমার ছাদে!
হলুদ বিকেল এসে চুমু খেয়েছিল সেদিন
বিশ্বাসের আলো ঝরেছিল চোখে মুখে

তারপর অনেক হলুদ বিকেল পার হলে
আমিও আশ্বাসের নৌকা বানালাম
দ্রুত গতি বয়ে গেল সম্পর্ক প্রবাহ
দাঁড় হল আমারই এক স্নিগ্ধ মনোবল

শিউলি খাতুন এখন অন্য পাড়ায় থাকে
যত মেঘ বৃষ্টি দেয় ওর পাড়াতেই
শরৎ উজ্জ্বল হয় এখন ওর ছাদে
সুগন্ধে ভরে থাকে স্বপ্নদের পাড়া

১১

ময়না
🍁

ময়না বাড়ি ফিরবে না
একটা গল্প হারিয়ে গেল
আমরা সারাদিন মনখারাপের কাছে বসে থাকলাম

পাশ দিয়ে অনেক টিয়া উড়লো
অনেক ঘুঘু উড়লো
অনেক কাক কা-কা ডেকে গেল
আমরা কেউ বিরক্ত হলাম না

আমাদের সোনার খাঁচায় এখন শুধু বাতাস
আমাদের সোনার খাঁচায় এখন শুধু স্মৃতির পালক

১২
আত্মদর্শন
🍁

চলো আলোর কাছে যাই
আমরা পতঙ্গ নই
সামান্য অন্ধকারে মুখ দেখে আসি

আমাদেরও বাগান আছে
বাগানে বিবেকের ফুল ফোটে
রোজ কত বিবেকের মধু নিতে আসে মৌমাছি

যদিও এখন আলো বেশ কম
চেনা ইতিহাসের সড়কে নেই সন্নিধান
কেবল পড়ে আছে দুর্গম স্নানাগার

সময়ের তাপ অনুতাপ ঝরে গেছে
আমাদের দীর্ঘশ্বাসে বয়ে গেছে ঝড়
ধুলো ও রক্ত লাগা বিশ্বাসের অবক্ষয়

থাক, সব থাক,যেটুকু গরিমা আছে
দেখে আসি, নিজের সামনে নিজেই দাঁড়াই
মানুষ ছিলাম তবে, এখনও মানুষই আছি!

১৩
স্বয়ংক্রিয়
🍁

নতুন বাঁশিটি কিনে বাজাইনি কোনোদিন
দুবেলা দেখেছি তাকে
অব্যক্ত সুরের ঢেউ লেগে আছে

বাজাবো বাজাবো বলে
প্রস্তুতির সিঁড়ি নির্মাণ করেছি একে একে
তারপরও সূচনা হয়নি—
ঝরনা বয়ে গেছে
পাখি উড়ে গেছে
বরফের উপর রোদ পড়ে চিকচিক করেছে

বাঁশিটি এখন নিজেই বাজে
তার সুরে সুরে সংসার ভেসে যায়
আমি শুধু চেয়ে চেয়ে দেখি
আমি শুধু ভাষাহারা হই…

১৪
উৎসর্গ
🍁

তুমি পোশাক পরছো না পোশাক খুলছো
তুমি ভালোবাসছো না ঘৃণা করছো
তুমি কাছে ডাকছো না দূরে যেতে বলছো আরও
কিছুই বুঝিনি আমি
দূর থেকে প্রহর গুনে গুনে অপেক্ষা করেছি শুধু
আর তোমাকে দেখেছি, শুধুই তোমাকে

কত কী দেখার ছিল আমার
কত দিকে যাওয়ার রাস্তা ছিল আমার
স্বপ্নের জানালা ছিল
জানালায় জ্যোৎস্নারাও এসে ডেকেছিল

আমি যাইনি
একটি জীবন শুধু তোমাকেই দিতে চেয়েছি
একটি হৃদয় শুধু উবুড় করেছি তোমার কাছেই
সবটুকু নাও তবে, আমার যা কিছু সবটুকু….
কান্না শুধু নীরবতা জানে!

১৫
মৎস্য শিকারি
🍁

সব মাছগুলিই হাত ফসকে বেরিয়ে যাচ্ছে
অনেক অনেক জল ঘেঁটে
আজও জলেই বসত গড়েছি
নিজের সেরকম জাল নেই,
জেলেও ছিলাম না কোনো কালে
শুধুই মাছের নেশা আমার
অনেক অনেক স্বপ্নের মাছ—
কোনোটা পাঁকাল,কোনোটা উড়ন্ত ডানাওয়ালা

অনেকের অনেক মাছ
বাজার আলো করে বসে মাছের পসরায়
জ্যান্ত উজ্জ্বল তরতাজা মাছেরা তড়পায়
হাসিখুশি চণ্ডাল লড়াক্কু সবাই মাছ কেনে

আমার বাজার নেই, পসরা নেই
জলের জীবনে ডুবে থাকা,অথবা ভাসা
নিজেই নিজের তরী ঢেউ গুনে গুনে আশা খোঁজা
একবার দম নিই,তারপর আবার ডুব
ডুবে ডুবে পেরিয়ে যাই এই আয়ুর সীমানা…

১৬
গণ্ডি
🍁

কাঁচা পিরিত কেউ আর পাকার অপেক্ষাই করে না
সদ্য পেড়ে খেতে বসে, লবণ পর্যন্ত নেয় না
বারান্দায় পাঁয়চারি করতে করতে কত গান ভেসে যায়
ছেলেমেয়েরা আলো-অন্ধকারের ভেতর প্রবেশ করে
একে একে সব পুতুলের ঘুম ভাঙে তখন

বাড়ির কাছে আরশিনগরের দিকে কেউ আর যায় না
সব পুণ্যফল জলে ভাসতে থাকে
কতদূর যেতে পারে মানুষ? কতদূর যেতে পারে আর!
কাঁচা পিরিতও একদিন রাস্তা বদলায়,বসন্ত বদলায়
অপার্থিব নীরবতা এসে তার সব গান কেড়ে নেয়…

১৭
নদীলিপি
🍁

উদ্যম একেবারেই নেই
শুকনো নদীর চড়ায় বালিতেই লিখে যাচ্ছি নাম
আজ ২৭ শে আশ্বিন, কাশফুলকে ভালবেসে ছিলাম
এই নদীর চড়ায় দু ফোঁটা অশ্রু ফেলে গেলাম

কত বাঁশি সুর ছড়িয়ে গেছে
কত নৌকার ইতিহাস, ইতিহাসে ঘুমিয়ে পড়েছে
পুরুষ হৃদয় জেগে আছে এখনও নৌকায়
এপারে ওপারে যুগ, যুগে যুগে রাধা পার হয়

বিড়ম্বিত স্রোতে নদীও অশ্রুমতী হলে
তীরে তার আবেগ ছলকায়
আবেগে ভেসে যায় নৌকার পুরুষ
উদ্যম ফেরে না কিছুতেই, সামনে এক রমণী দাঁড়ায়!

১৮
চাঁদ
🍁
চাঁদটা চলে যাচ্ছে অন্ধকার কলোনির দিকে
আমরা কাত্যায়িনীর কাছে ফিরে যাচ্ছি
আমাদের কপালে চাঁদ নেই
স্বপ্নবিচ্ছেদের জ্বরে দারুণ কাঁপন লেগে আছে

সব রমণীরাই কি চাঁদ হয় তবে?
তাদের জ্যোৎস্নায় কলঙ্কিত পরিতাপ ঝরে
নিসর্গ-নক্ষত্রপথে মহিমার কান্না শুনে শুনে
আমাদের রাত পার হয়

যদিও সকাল নেই এ রাতের
যদিও চাঁদের কাছে প্রাণভিক্ষা চায় আত্মহত্যাগুলি।

১৯
মধ্যবর্তী
🍁
একবার ডাকো, আসতে বলাে, ফিরে তাকাও
সন্ধে হয়ে আসছে, রাস্তা ভুলে যাবার আগে সংকেত পাঠাও

আকাশ পড়ে আছে আকাশেই, ঘর ছেড়ে চলে গেছে মানুষ।
বাতাসে শুধু ভেসে আসে ছায়া
অনভ্যাসে তুমিও তাে ভুলে যাবে সব !

প্রতিদিন নদীজলে যে সূর্য দ্যাখাে
সেই কি তােমার হারানাে মুখ ?
সন্ধেয় ফেলে যাও যাকে, সন্ধে তাকেই ডেকে নেবে

তুমি দূরে মধ্যবর্তী দেশ
দুপাশে তুষার যুগ, সমুদ্র চমকায়।

২০
চাঁদনি
🍁
ভাঙা সাঁকো, দু চারটে ডােবা জলস্রোত
পেরিয়ে গ্রামে ঢােকার রাস্তা
গাছপালার ঘ্রাণে তুমি মিশে আছ
অথবা ঘুঁটের দেওয়ালে তােমার পাঁচ আঙুলের দাগ
আধময়লা লালপেড়ে শাড়ি
দুদিনের স্নান না করা বাসি চুল

আজ কি রান্না হবে—পুঁটিমাছ তেঁতুল শাক…?
ভাতের হাঁড়ি নামিয়ে চা করাে উনানে
কতদিন পর বলাে আজ কুটুম এলাম
কতদিন তােমাকে দেখিনি আমার আকাশে!

২১
পানপাতা
🍁

পানপাতা মুখখানি যেদিন পান দিয়ে গেলে
সেদিনই প্রথম ছোঁয়া আমার হৃদয়-বরজে
কথা ফুটল মুগ্ধ আরতির মন্ত্রে জেগে উঠল ভাষা
তোমার সবুজ ফ্রকে হল পান আঁকা

জীবনের কত পথ, পথে পথে কত পানের বিপণি
রঙিন পিকে টুকটুকে কত লালমুখ
কারও কাছে যেতে পারি নাকো
হৃদয়ের গভীরে আজও একটি বরজ, ডাকে পানপাতা

মেঘের ভেলায় বেলা যায়, তবু তুমি আছ
ব্যাখ্যাহীন স্মৃতির ভেতর নিজস্ব মহিমায়
সমস্ত আকাশ জুড়ে পান, পানময় এ সংসার
একটি ছোঁয়ার নিমেষ স্পন্দন তোলে জীবনভর

যদিও তাম্বুল হও, নন্দিত রাধার কাছে প্রেমের সওগাত
আমি সেই তৃষ্ণার্ত বাঁশি শুনতে শুনতে আজও উন্মুখ
একে একে বিরহ পর্ব পার করি, কাঁদে জ্যোৎস্না-নিশি
এ গোকুলে তোমারই বাঁধন শুধু আর সব নিঃস্ব করতালি

২২
রিক্সা
🍁

দু একটি আজব রিক্সা চলেছে অবিরাম
আমাদের স্মৃতির জ্যোৎস্নায়
প্রত্নযুগের কোনো মানুষ তার মানসীকে
নিয়ে যায় আশ্চর্য সঙ্গমের দিকে

কে চালায় রিক্সা?

নিরুত্তর নির্জন পথে চাকার ঘর্ষণ শুধু
বিবর্ণ চালকের গান ঝরে পড়ে
শাড়ির আঁচলে ঢাকা রূপসির মুখ
হাতের হলুদ ঘ্রাণে শিহরন খেলা করে

সারি সারি রিক্সাগুলি অনন্ত রাতের দিকে যায়
আমাদের নিঃস্ব বারান্দা, কাঁপা কাঁপা গুবাক তরু
মহা বিস্ময়ে চেয়ে থাকে জানালায় ;

তবুও রঙিন পা অপার্থিব নূপুরে বাজতে চায়!
কোথাও থামে না রিক্সাগুলি
আমাদের শব্দগুলি যেতে চায় ওইসব প্রত্ন রিক্সায়

  ২৩

হুল্লোড়
🍁

সমস্ত হুল্লোড়ের ভেতর
গান হারিয়ে যাচ্ছে
আমরা চিৎকার নিয়ে বাড়ি ফিরছি রোজ

২৪
আমাদের সংস্কৃতি পাড়া
🍁

শরীরের ভাষা পড়তে পড়তে সভ্যতার সকাল হয়
শরীরের ভাষা পড়তে পড়তে সভ্যতার রাত্রি আসে
শরীরী গানের স্বরলিপি বেজে উঠলে
আমরা আকৃষ্ট হতে হতে চেতনা হারাই

আমাদের শৈশব মরে যায়,আমাদের ঈশ্বর মরে যায়
আমাদের সব আলো শুষে নেয় যৌনজ্বর
আমাদের বার্ধক্য উঠতে চায় অলৌকিক গাছে
আমাদের গার্হস্থ্য জীবন বিক্ষুব্ধ নির্বাসনে দাঁড়ায়

সংস্কৃতির পাড়ায় নামে অস্থির বিষণ্নতা
স্বার্থপর দৈত্যের লেলিহান ক্ষুধা ছেয়ে যায়
সবাই বিপ্লব আনে, সবাই কাপড় খুলতে চায়
মঞ্চে মঞ্চে সুচারু মসৃণ অন্ধকার ভাষণ দেয়

এখানে মানবতা বলে কেউ থাকে না আর
এখানে হৃদয় বলে কেউ থাকে না আর
মহান দিঘিতে শুচিস্মিতা পদ্ম ফোটে না আর
শুধু ঘোলা জলে পাঁক ঘেঁটে ঘেঁটে ঘোরে শিকারি মাগুর মাছ!

২৫
পশুর বাজার
🍁
খুব ভালো ভালো পশুর ক্রয়-বিক্রয় হয়
আর এই পৃথিবী একটা পশুর বাজার
এপাশে কসাইখানা, ওপাশে চিড়িয়াখানা, রাস্তাঘাটও অরণ্যময়, দারুণ চমৎকার

একটা পশু আর একটা পশুর দিকে চেয়ে থাকে
একটা পশু আর একটা পশুর কাছে যায়
একটা পশু আর একটা পশুকে চাটে
একটা পশু আর একটা পশুকে ফেরে ডেকে ডেকে

সস্তা পশু, দামি পশু, নিশাচর ও দিবসচর
শিংওয়ালা এবং শিংহীন, গর্জনকারী এবং নিরীহ
ঘাসপাতা খাওয়া অথবা মাংসভোজী
সবাই আছে, নাম জানি অথবা জানি না

লেজ নেড়ে নেড়ে, লেজ নেড়ে নেড়ে
নিজেও দাঁড়িয়ে আছি; বৃহৎ বাজারে
আমার কী নাম তবে? কী পরিচয়?
বিক্রি হব আমি,আমিও রোজ বিক্রি হতে চাই!

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ

কাজী জহিরুল ইসলাম on বাংলা একাডেমির মুখোস উন্মোচন