spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

লিখেছেন : কাজী জহিরুল ইসলাম

৫ টি সনেট


কাজী জহিরুল ইসলাম

১.
নুয়ে পড়ো
…………….

ধারালো বল্লম ভেঙে দেয় কত পাথুরে দেয়াল
অথচ সে কিনা ভেঙে পড়ে নিজে নরোম কাদায়।
কাদার ক্ষমতা বোঝো? বোঝো নাকি মূর্খ গাওয়াল।
ভেঙে পড়ো প্রত্যহ কর্দমাঘাতে, কাকে দেবে দায়,
নতজানু হও নরোমের কাছে, যদি পেয়ে যাও
ক্ষমা। যদি সে তোমাকে দেয় কিছু প্রেমের করুণা,
আত্মম্ভরিতা সরিয়ে রেখে সমতার গান গাও,
পৃথিবীতে আছে অসম সাম্যের সহস্র নমুনা।

এমন কী দরোজায় চুপচাপ শুয়ে যে পাপোশ
সাফ করে দেয় রোজ জুতোর তলায় লেগে থাকা
ধূলি-কাদা, তার প্রতি কেনো ক্রোধ, কিসের আক্রোশ?
ধুলায় নমিত করো নির্লজ্জ এ-দম্ভের পতাকা।
সকল বসন খুলে তুমি দ্বিধাহীন শুয়ে পড়ো
যদি বা দাঁড়াও, হও ফলবতী গাছ, নুয়ে পড়ো।

হলিসউড, নিউইয়র্ক। ২৬ এপ্রিল ২০২১।

২.
টিউলিপ
…………..

টিউলিপের বেগুনি ধোয়া থেকে নির্মিত আকাশে
একদল ঘিয়ে রঙের মাতাল ভেড়া ভারসাম্য
হারিয়ে ভাসছে লক্ষ্যহীন এক লক্ষ্যের সন্ত্রাসে।
ভয়ে নুয়ে পড়া নতজানু দুপুর কারোর কাম্য
নয়। সকলেই এক প্রশস্ত দিনের ঔজ্জ্বল্যের
দিকে মুখ রেখে উচ্চকন্ঠে গায় প্রার্থনা-সঙ্গীত;
অবাধ্য দুপুর তবু নিয়মের ভারে সাফোকের
ঝাউবনে হেলে পড়ে। এক অজানা ভয়ের শীত

বেজে ওঠে বিচিত্র পুষ্পবীথির দীর্ঘ কোল জুড়ে।
অন্ধকার ঘন হতে হতে সব রঙ খেয়ে ফেলে
আনন্দ-উৎসবের। আলোর বর্তুল বহু দূরে
ভেসে যায়; হয়ত কোথাও, উল্টো পৃথিবীতে মেলে
ধরে ততোধিক উজ্জ্বল, নতুন এক আলো-রেখা।
এ-আঁধারে প্রসারিত করতল, যদি মেলে দেখা।

হলিসউড, নিউইয়র্ক। ১৮ এপ্রিল ২০২১

৩.
অতিলৌকিক বিহঙ্গ
………………..

মনে হচ্ছে একটি অতিলৌকিক পাখির প্রকাণ্ড
ডানা আজ সবকিছু ঢেকে রেখেছে ছায়াবৃত্তের
মধ্যে। খুব সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার ধীরকাণ্ড
এগিয়ে চলেছে স্থির কোনো এক অমোঘ লক্ষ্যের
দিকে। ফিরে যেতে যেতে সুবিশাল পাখিটি নিজস্ব
নীড়ে, তুলে নিচ্ছে তার পছন্দের আহার চোখের
ইশারায়। গ্রাম, লোকালয়, নগর মুহূর্তে ভষ্ম
করে দিচ্ছে অগ্নিগর্ভ চঞ্চু থেকে ছুঁড়ে আগুনের
ফেনা। ওর দেহের গভীর অন্ধকারে একে একে
ডুবে যাচ্ছে পৃথিবীর অযুত স্বজন। মানুষের
ক্রন্দনে পাখির ডানা কাঁপে না কিঞ্চিৎ। এঁকেবেঁকে
ছুটে চলা গ্রাম্য মেঠোপথ, অতিসভ্য শহরের
অট্টালিকা ওর অসাম্প্রদায়িক অন্ধকারে গুম
হয়ে যাচ্ছে। আতঙ্কের তাপে আজ পৃথিবী নির্ঘুম।

হলিসউড, নিউইয়র্ক। ১৭ এপ্রিল ২০২১।

৪.
গোলাপি অর্কিড
…………..

গোলাপি অর্কিড ফুলেরা এতোটা নিম্ফোমেনিয়াক
জানা ছিল না কিছুতে। পাতার আড়াল নেই মোটে
তা তো সকলেই জানে, নগ্ন দেহ তার খোলা থাক;
কে না জানে ওরা সকালের মৃদু আলোতেই ফোটে।
ভালোবাসে আলো-ছায়া খেলা, মায়াবী হাতের ছোঁয়া;
আদরে আদরে মেয়ে খুলে দেয় নিজের গোপন,
আলোতে উজ্জ্বল ফুল, আঁধারে এতোটা বেপরোয়া
পাইনি তো টের, নিদ্রাতেও সে কী কামনাপ্রবণ!
ওকে আমি তুলে আনি দূর-কাদামাখা ধূলিপথ
থেকে। সারা গায়ে ছিল বারোয়ারী পথের কলঙ্ক;
ঝেড়ে-মুছে দিয়েছি নরোম কোল, পথের শপথ
করে বলেছিল যাবে না দূরের পথে। সব অঙ্ক
শূন্যে পৌঁছে দিয়ে আজ সে নেমেছে পুরনো রাস্তার
বাঁকে। গৃহ, প্রেম নয় তবে কে আপন আজ তার?

হলিসউড, নিউইয়র্ক। ১৬ এপ্রিল ২০২১।

৫.
পাঁচটি কঙ্কাল
……………

পাঁচটি নরমুণ্ডের সপ্রতিভ কঙ্কাল হাসছে
বহুকাল থেকে। মাঝে মাঝে ওরা রেগে তিরস্কার
করে খুব; আগরবাতির ঘ্রাণ, বাতাসে ভাসছে
ভয়ের নিষ্ঠুর নীল ধোঁয়া, সখ্য ওদের সন্ধ্যার
সঙ্গে বহু পুরনো। প্রাচীন ধর্মাশ্রয়ী সংস্কৃতি
এখন লিভিংরুমের ঐতিহ্য এবং আভিজাত্য
দুই কূল রক্ষা করে অর্থহীন কালের নিস্কৃতি
দিয়েছে। পার্থক্য যদিও ঘোচেনি কুলিন ও ব্রাত্য।
নরমুণ্ডগুচ্ছ মাঝরাতে শ্বাস ছাড়ে, ভয়াবহ
কোরাস সঙ্গীত ভেসে বেড়ায় সমস্ত বসবাসে,
কেমন একটা গা-কাটা দেওয়া ভয়ের আবহ
সর্বত্র। হঠাৎ ওরা মিহি সুরে মিষ্টি করে হাসে,
মাঝে মাঝে কিছু একটা ভাঙার জোর দাবী তোলে
তখন আলোর চাবি এসে রাতের দরোজা খোলে।

হলিসউড, নিউইয়র্ক। ১৩ এপ্রিল ২০২১।

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ