আরিফ চৌধুরী
…………..
আমি মাটি উদগত এক কবি
(কবি আল মাহমুদকে নিবেদিত)
…………..
তোমাদের উঠোনে আমার পদচিহ্ন রেখে এসেছি
তোমাদের উঠোন জুড়ে ঘুরে বেড়ানো
জোনাকিরা আমাকে চেনে,
আমার অস্তিত্ব টের পায় নিস্তব্ধতায়
ওরা আমার পদশব্দে উঠোন ঘিরে
আঁকে আলোর ছায়া।
আমি স্বপ্নবান এক কবির কাছে
আমার করতলের স্বপ্নগুলো
হাতের মুঠোয় জমা রেখে এসেছি,
তেমাদের শব্দের মালায় আমার সকল পংক্তিমালা সাজিয়ে দিয়েছি
পাখির কাছে, ফুলের কাছে।
আমি আছি এ মাটির অস্তিত্বে
পানকৌড়ির ঠোঁটের লাবণ্য চোখে
ইলশে ভোরে নদীর কাছে
পলাতক ছায়ার মতো
তোমাদের দিনরাত্রির কবিতায়।
আমি দিগন্ত বিস্তৃত ফসলের মাঠে
ফোটা সর্ষেফুলের দোলায় ভ্রমর হয়ে
ডাহুকের ভোরের ডানা ঝাপটানো
অন্তহীন তৃষার জলের মতো
ফোটা কদমের গায়ে বৃষ্টির জলে
লজ্জ্বাবতী নারীর লাজের ছন্দে
অস্তমিত সূর্যের গৌধূলি হয়ে আছি এ তল্লাটে।
অযাচিত যে হাত রেখেছিলো আমার কাঁধে
তাকে তুচ্ছ করে
তোমাদের গহন অসীম সৌন্দর্যের মৌনতায়
আমি আছি নিরন্তর রাখালির পথচলায়।
আমি তোমাদের অন্ত সৌন্দর্যের মাঝে
বিকিরণ ছড়িয়েছি কবিতার বাঙময়,
নিরাকার অসীমের মাঝে আমি চিলিষ্ঙ
স্তবক হয়ে ফোটাই মাধুরী
নারীর দেহে প্রেমের বিমূর্ত ছবিতে
প্রতিমা খুঁজেছি গীতল সুষমায়,
জোছনা প্লাবিত স্নিগ্ধ দিঘির জলে
অমরাবতীর স্বপ্নে বিভোর বেদনায়।
আমি চিহ্ন রেখেছি ময়ূরের পেখম তোলা সৌন্দর্যে
আমি রিলকের গোলাপের মতো
এক বিন্দু আর্তনাদের মতো অর্ফিয়সের বাঁশির
মতো ছড়িয়েছি গানে,
আমার পদশব্দ প্রতিনিয়ত শুনতে পাবো
ভোরের উঠোন।
আমি জীবনের ছুটে চলা পদচিহ্নে আছি,
আমি আছি লৌকিক ঐতিহ্যে
অহংকারের অস্তিত্বে
আমি আছি, আমি থাকবো
আমি মাটির গন্ধমাখা কর্দমাক্ত জল
আমি উদগত এক কবি।
…………….
চিত্রকল্প-৬
……………..
তোমার ব্যাকুল চাহনিতে লোভ নেই
তবু কেন ফেরাতে পারিনা এ দু” চোখ
শরীর জুড়ে মোহনীয় বাঁকের ছন্দে
এঁকে দিয়ে যাও চোখে
লাবন্যের ঝড় কামনার,
আমিতো অহংকারে সর্বাঙ্গে
ছড়িয়ে দিতে পারি কামনার বিষ।
তবুও তোমার এই আসছি বলে
অলৌকিক প্রহরে চলে যাওয়া
পথ করে দেয় অপেক্ষার বেদনা
সর্ন্তপনে জেগে থাকা এ কেমন স্বপ্ন
অধরে জাগায় কাঁপন,
তবুও স্মৃতির দীর্ঘ পথে ফিরে যাওয়া
জীবনের অবগাহনের অনুরণন
ফুরোতে চায়না না কখনো।
……………
চিত্রকল্প-৭
…………….
নীরব দৃষ্টির ভাষা মানবিক হলে
অনন্তকাল কাটানো যায় প্রতীক্ষার প্রহরে
অর্কের সীমানায় মাতোয়ালী রাতে
চাঁদ জাগলে,
নিঃসঙ্গ পিয়ানোর মতো জেগে থাকো
সাজানো ডয়িংরুমে একা।
অনিমেষ জাগে অনিকেত ভয়,
উদ্ভুট আঁধার কেটে নিলিপ্ত চাহনিতে
প্রশ্ন গুলো ছুঁড়ে দাও,
সংরাগ মিলায় বাতাসে,
শূন্য চন্দ্রবিন্দুর মতোন বেলা- অবেলায় রাত্রিলোকে, তোমার বাগানে
কোন স্পর্শে ফোটে অচেনা ফুল।
…………….
ওমর আলী
(কবি ওমর আলীর ৯ম মৃত্যুবার্ষিকীতে নিবেদিত)
…………….
না থাকাটাই সত্য আজ
সত্যকে মাড়িয়ে একে একে দূরে চলে যাওয়া
এ মৃত্তিকা, এ এক নিবিড় মমতায়
শিশিরের ছোঁয়া ছেড়ে
সব আয়োজন সাঙ্গ করে
নিয়তির প্রাণিত বিশ্বাসে,
তবুও জেনো নিসর্গে ফোটে ফুল
মাটি ও প্রকৃতি মিলায়
স্বপ্ন ও আপন স্বত্বায়।
না থাকাটাই সত্য আজ
স্বপ্নের পূর্ণ প্রাণে, আলো নেই ল্যাম্বপোষ্টে
অন্ধকারে চোখ রেখে আলো ছায়ার খেলায়
একান্তে চলে যাওয়া।
এ দেশে শ্যামল রমনীর ছায়া
প্রতিদিন উঠোনে ফেলে স্বপ্ন,
মনের লাবণ্য নিয়ে নারীরা
মেলে দৃষ্টি দূর সীমানায়
হাটুরে ফেরে বাড়ি
ফেরা হয়না কবি চেনা পথের মোড় ফেলে
সত্য ও বিশ্বাসে।
মা থাকাটাই সত্য আজ
সত্য কেবল একে একে অনুপস্থিতি জানান দেয়
মাটির মৌনতায়,
তবু এক ফালি চাঁদের আলোয় কবি
অস্তিত্বে মিশে যাও কবিতার জমিনে।