এই নদী এই হাওয়া ও অন্যান্য কবিতা

লিখেছেন : আমিনুল ইসলাম

0
194

আমিনুল ইসলাম
…………….
স্বপ্ন স্বপ্ন খেলা
…………….

হাজার বছর ধরে একটি স্বপ্নের পেছনে ছুটছি;
সে ঢেউ হলে আমিও ঢেউ হই;
সে ধ্রুব দেখালে
আমি হালে হাত দিই;
সে ঝড় দেখালে
আমি নোঙর দেখাই;
কিন্ত সে যদি হরিণ হয়
আমি চিতাবাঘ হতে চাইনিকো।

একবার সে আমার
ঘুড়িতে সোয়ার হলে
সুতোয় টান দিয়েছি;
জোরে টান পড়ায়
ডুরিটা ছিঁড়ে গেছে;

ঘুড়ি ছুটছে আবার
আকাশ হতে আকাশে;
কখনো তা মাটি ছুঁয়ে,
কখনোবা উর্ধ্বাকাশে।
আমিও ছুটছি
পেরিয়ে শহর গ্রাম
খানা-খন্দক-জঙ্গল…

পায়ের তলার সে ক্ষতটা
জেগে উঠছে আবার।

…….
কুটুম
…….

মিথ্যাবাদী রাখালের চোখে দিবানিদ্রা
সে ফাঁকে বাঘ ঢুকেছে আমাদের এ-পাড়ায়
ডোরাকাটা শরীরে লেখা-নরখাদক নই।
আমরা তাকে ছাগল দিচ্ছি; গরু দিচ্ছি;
আর বলছি-খাও বাছাধন! তুমি থাকলে
আমাদের কুচ পরওয়া নেহি। ও’পাড়ার
কুকুর-শেয়ালের ভয় র’লো না আর;
গরীবের সংসারে বাবা তুমিই তো নারায়ণ!
একটাই মিনতি-আমাদের ছেড়ে যেও না।

মাঝে মাঝে ও’পাড়ায় হাম্বা ডাক; আর
অতিথির চোখে ও মুখে উদ্ভাসিত চঞ্চলতা!
তা দেখে আমাদের ঘরের খুঁটিতেও জ্বর!
কিন্তু একথা মহা-অতিথিকে বলি কী করে!

………….
এই নদী এই হাওয়া
………….

যা কিছু সবুজ নিবিড় মাটিতে মূল
অলখে নিয়ত খায় কৌটিল্যের ঘুণে
রঙিন গেলাসে আড্ডা হুলস্থূল
মাটির কলসে কান্না উঠেছে জমে।

সবুজ আঁচল ঘুড্ডি হাওয়ার রেসে
বাতাসের মুখে ছিন্নভিন্ন লাগাম
পানের বরজে বর্গী বন্ধুবেশে
রসুনে যাবে না—দোয়েল বলেছে আগাম।

যুবকের চোখে বাঁধা অশ্বের পটি
পিতৃকুলজী নিষেধাজ্ঞার খাতায়
বোধের মিনারে উঠেছে বিভেদচটি
পায়ের ধুলো জমেছে পুঁথির পাতায়।

শ্মশানে ডাকিয়া সুমনাকে পিশাচীনি
জীবনের মানে শোনায় প্রেতস্বরে
কুটিল শহরে আড়ালের বিকিকিনি
মগজ পড়েছে নগদের খপ্পরে।

প্রজ্ঞার কোষে লোহিত রক্তকণায়
ধোলাই আঙুল ধূর্ত সুচিক্কন
আমরা জড়িয়ে আত্মনাশী ফণায়
ঊর্ণসমাধি রচিছে ঠোঁটের কোণ।

ফসলের ক্ষেতে ঘুঘু ঝাপটায় ডানা
দুচোখে জমিছে বাস্তুভিটার ধুলো
কাণ্ডারীদের ঘরমুখ হওয়া মানা
স্রোতের আঙুলে ঝুলছে রঙিন মুলো।

কুটিল আলোর প্রান্তে তিমির-রাত
ফুরিয়েছে তেল সারেঙবউয়ের ঘরে
আমরা যাত্রী স্রোত-শেওলার সাথ
হাঙরের নাক অধীর করেছে তারে।

…………..
স্বপ্নের সিংহাসন
…………..

অথচ আমরা একটু ঘুমাবো বলে
জেগে থাকি রোজ
অজস্র জগতশেঠদিন
কীর্তিনাশা নদীটির কূলে
দূরের সমুদ্র হতে আমাদের ঘুমে এসে
দাঁত মেলে
শুভ্রডানা তিনটি হাঙর;

হায় স্বপ্ন, এখন তুমিই বলো-
কী করে তোমার হাতে ধরা দিই?
কে দেবে পাহারা?
ফেরেনি মোহনলাল-,
মীরমদনও মোছে না মরিচা;
তবু এই ভাগ্য নিয়ে আমরা চেয়েছি
অনেক স্বপ্নের সিংহাসন
একূল ওকূল করা নদীটির তীরে।

………….
আমাদের ভালোবাসার গল্প
………….

এবং আমাদের শুরু কবুল নামক আসমানি কবিতার যৌথ আবৃত্তি দিয়ে;
তবে নদীবর্তী অনার্য জুটির মতো ভালোবাসার বিশ্বসংগীত গাওয়াতেই
অধিক আনন্দ আমাদের:– ‘মোরা আর জনমে হংস-মিথুন ছিলাম…’

কিন্তু তাই বলে আমাদের বিছানা রেকি করতে এসো না হে লম্পট,
আমাদের ঘরে ইঁদুর ধরার ফাঁদ আছে: ঘ্যাচাং! আর হে ডাকাত,
সোনারঙের শস্যে ভরা গোলা আর রুপালি পাখনার ইলিশমাছের
উৎসব দেখে আমাদের এই মায়ামমতায় ভরা ছোটো ভিটায়
নজর দিয়ো না; ঈসা খাঁর তলোয়ার জাদুঘরে জমা দিয়ে এসেছি
বটে কিন্তু আমাদের জামার নিচে স্নাইপার রাইফেলের চেয়েও
লক্ষ্যভেদী অস্ত্র আছে। ট্রেনিং নেই ভাবছো? আছে। আছে। আমি
কবিতা লেখার আগে বিদ্রোহী কবির মতোই যুদ্ধক্ষেত্রে ছিলাম;

বেহুলা ঠোঁটের লীনাকে দেখে জল আসছে জিহ্বায়? আসতেই পারে।
ওর গানের গলায় রয়েল বেঙ্গল টাইগারের চোখেও ঝিমুনি আসে;
কিন্তু আমি বাসর রাতেই চমকে উঠেছিলাম তার রক্তে প্রীতিলতা-
লায়লা খালিদের আগুনের উত্তাপ পেয়ে; প্রথমে ভয় পেয়েছিলাম;
কিন্তু পালানোর পথ ছিল না কারণ আমার কোমর পেঁচিয়ে রেখেছিল
আসক্ত দুটি হাত; আর তার বুকে বুক রেখে সে রাতেই তারপিনের
ডানায় উধাও হয়ে গিয়েছিল আমার অবশিষ্ট কাপুরুষতা; নাভির
নিচে হাত দিয়ে বলে উঠেছিলাম: হে কিউপিডের তীর-ধনুক, হে শুভ
উদবোধনের রাত, আমি পারবো! আমি পারবো! আমি পারবো।

তোমরা তো স্বচক্ষে দেখে আসছো, সংগমতৃপ্ত আমরা কারো
ঘরের জানালায় উঁকি দিই না কোনোদিন; কারো ভিটায় শস্যের
পালা দেখে একটুও লোভ জাগে না কাটারিভোগের খোশবুতে
মুগ্ধ আমাদের কাচমতি-করতোয়া মনে। মৌরসি প্রাণে আমরা
মূলত প্রেমিক-প্রেমিকা; এখনও আমাদের অনেক ম্যারাথন চুম্বন
বাকি; এখনও আমাদের অনেক টি টুয়েন্টি সহবাস অবশিষ্ট।

তোমাদের লাম্পট্যের সিলসিলা– তোমাদের ডাকাতির সাফল্য
তোমাদেরই থাক্। সেসব নিয়ে আমরা কানাঘুষাও করতে যাব না।
একটুকু উঠোনে শুধু আনডিস্টার্ব ভালোবেসে যেতে চাই আমরা।

ভালোবাসতে না জানলে না জানো, দু:খ নাই,–আমাদের ভিটায় রাসেল ভাইপার পাঠিয়ো না।

                      ----০০০----

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here